মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩০৭- অদৃশ্য এ ভালবাসা

by__ Nazmul Hossain Nayeem

.
-এই, আমার চকলেট খেয়েছিস কেন?
-কিসের চকলেট?
-একদম ভালো সাজার চেষ্টা করবি
না!
-আমি জানিনা।
-ফের মিথ্যে কথা! এখনও তোর মুখে
লেগে আছে।
-না! মুখ ধুয়ে আসছি তো!
-!!!
-মানে.. মানে..
-পুরোটাই খেয়ে ফেললি?
-আমি খাইনি তো।
এবার আর সহ্য হলো না রিমার। ওর
প্রিয় ক্যাটবেরি চকলেট এনেছিলো
মামা। পরে খাবে বলে রেখে
দিয়েছিল। আর ঐ ছোঁছাটায়
নিজেরটা তো খেয়েছেই,
রিমারটাও খেয়ে নিলো। তারপর
আবার সমানে মিথ্যে বলে যাচ্ছে!
ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো
রিফাতের গালে। রিফাতও ছাড়বার
পাত্র নয়। নিজের গায়ে নিজেই বেশ
কয়েকটা খামচি দিয়েই জোরে
জোরে কান্না শুরু করে দিলো।
রিমা এবার অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
তাড়াতাড়ি গিয়ে রিফাতের মুখ
চেপে ধরলো।
-লক্ষ্মী ভাই আমার। কান্নাটা বন্ধ কর
প্লিজ। আম্মু শুনবে।
-আম্মুউ উ উঃ
-ভাই শোন লক্ষ্মীটি, আম্মুকে ডাকিস
না।
-আম্মুউ উ! ভ্যাঁ অ্যা অ্যা
রিমা আরও জোড়ে ওর মুখে চেপে
ধরতে গেল। তখন রিফাত একটা জোড়ে
কামড় বসিয়ে দিলো রিমার হাতে।
ততক্ষণে রান্না ঘর থেকে ওদের আম্মু
চলে আসলো।
-আম্মু বুবু আমাকে মেরেছে।
-না আম্মু! মারিনি আমি
-এই দেখো, আমার হাত খামচে কি
করছে!
-না আম্মু, এটা ও নিজেই করেছে। আর
এই দেখো, ও আমার হাতে কামড়ে
দিয়েছে।
- ভ্যাঁ অ্যা অ্যা। ও আমায় আগেও
মেরেছে...।
রেহানা বেগম সারাক্ষণ রান্নাঘরে
কাজ করে এমনিতেই বিরক্ত। তার উপর
এই বিচ্ছু দু’টির যন্ত্রনা! মাথাই খারাপ
করে দিচ্ছে। গিয়ে ঠাস করে চড়
বসিয়ে দিলেন মেয়ের গালে।
তারপর কিছুক্ষণ বকাঝকা করে
রান্নাঘরে চলে গেলেন। রিমা
গালে হাত দিয়ে বসে বসে কাঁদছে।
-এই বুবু, শোন না।
-
-সরি বলছি তো। আর কখনও এমন করবো
না।
-
-প্লিজ তুই কাঁদিস না। সত্যিই ভুল হয়ে
গেছে।
-তুই কথা বলবি না আমার সাথে।
আমাকে মার খাইয়েই তো খুশি তুই!
এখন যা আমার চোখের সামনে
থেকে।
-বুবু, সত্যিই এমনটি আর করবো না। প্লিজ
তুই আর কাঁদিস না।
-
-এই দেখ বুবু। অর্ধেক ক্যাটবেরি তোর
জন্য রেখে দিয়েছিলাম। প্লিজ তুই
আর কাঁদিস না। তুই কাঁদলে যে আমারও
কান্না চলে আসে।
এবার আর ভাইটির উপর রাগ করে
থাকতে পারল না রিমা। ওকে টেনে
কাছে বসিয়ে ক্যাটবেরিটা নিয়ে
খেতে শুরু করে। এক কামড় দিতে না
দিতেই খিল খিল করে হাসতে শুরু
করে রিফাত। আর বলে,
-ওটা তখন নিচে পড়ে গিয়েছিলো।
তাই আর খাইনি আমি।
রিয়া ক্যাটবেরিটা বাহিরে ছুড়ে
ফেলে দিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে
থাকে।
.
এভাবেই টম এন্ড জেরি খেলা চলে দুই
ভাই-বোনের মধ্যে। সারাটা দিন
দুষ্টমি, মারামারি আর মান-
অভিমানের মধ্য দিয়েই কাটে
দুজনের। রিমা রিফাতের থেকে চার
বছরের বড়। রিমা পড়ে ক্লাস সিক্সে
আর রিফাত পড়ে থ্রী’তে। সারাদিন
ক্লাসের পর যেটুকু সময় ওরা একসাথে
থাকে, ততক্ষণ ভালবাসার চেয়ে
মারামারিটাই যেন বেশি হয় ওদের।
রিফাতের কাজ হচ্ছে কিভাবে
রিমাকে আম্মুর হাতে মার
খাওয়ানো যায়, তাই নিয়ে লেগে
থাকা। এই তো সেদিনের কথা। “সচিন
টেন্ডুলকার” ভালো খেলে, না কি
“সৌরভ গাঙ্গুলী” ভালো খেলে তাই
নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটি,
ঝগড়া এমনকি মারামারি করে
রক্তারক্তি কান্ড বাঁধিয়ে দেয়
দুজনে। একটু পরেই দেখা যায়, বোন
ভাইয়ের ক্ষতস্থানে স্যাভলন
লাগিয়ে দিচ্ছে।
.
যেই ভাই সারাক্ষণ বোনের
ছোটখাটো দোষগুলো আম্মুর কাছে
নালিশ করে মার খাওয়ায়, সেই
ভাইটিই আবার বোনের বড় কোন
অপরাধ হলে পিটুনি খাওয়া থেকে
বাঁচায় বোনকে। সেদিনের কথাই
বলা যাক। রিমা তার এক বান্ধবীর
জন্মদিনের অনূষ্ঠানে তাদের বাসায়
গিয়েছিলো। ফিরতে একটু রাত হয়ে
যায়। আব্বু-আম্মু তো রেগে পুরো
বাড়ি তোলপার করে তোলে। তখন
রিফাই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে
আব্বু-আম্মুর চোখ ফাঁকি দিয়ে
বোনকে ঘরের মধ্যে আনে। আবার
সেদিন রিফাতের জ্বর হলো। এত
রাতে আব্বু-আম্মুর ঘুম ভাঙ্গায়নি
রিমা। সারারাত ওর মাথার পাশে
বসে থেকে ভাইয়ের সেবা করে
বোনটি। কখনও মাথায় জলপট্টি দিয়ে
দেয়, কখনও বা মাথায় পানি দেয়।
এভাবে সারা রাত না ঘুমিয়ে
কাটিয়ে দেয় রিমা।
***
.
দেখতে দেখতে নয়টি বছর কেটে
গেল। কাল রিমার বিয়ে। সারা
বাড়ি মেহমানে ভর্তি। সবাই নানান
কাজে ব্যস্ত। হৈ-হুল্লোর, হট্টগোল
আর হাসি তামাশায় মেতে আছে
সবাই। রিমার মুখে হাসি নেই শুধু। একা
ঘরে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। একটু
পরে রিফাত ঢুকলো ঘরে।
-এই আমার লাল টি-শার্টটা কোথায়
বলতে পারিস?
-ওটা তোর ওয়্যারড্রোবে রাখা
আছে।
-তুই এখানে পেঁচোর মত মুখ করে বসে
আছিস ক্যান?
-তুইও একটু বস না আমার পাশে।
-আমার এখন সময় নাই। অনেক কাজ পড়ে
আছে। আচ্ছা বসলাম, বল।
-আমি তো কাল চলে যাবো। একদম
দুষ্টমি করবি না। মন দিয়ে পড়াশুনা
করবি। আম্মুর সাথে একদম রাগ
দেখাবি না। যা বলবে শুনিস একটু। আর
আব্বুর দিকে খেয়াল রাখিস একটু।
প্লিজ ভাই আমার, একদম মন খারাপ
করবি না আমার জন্য।
-কোন দুঃখে??
এই বলে হো হো করে হেসে উঠলো
রিফাত। রিমা অবাক হয়ে গেল।
-কি রে! তুই হাসছিস কেন?
-তোকে চোখে কাজল লাগাতে কে
বলেছে? পুরো গাল কালো করে
ফেলেছিস! আর কি বললি তুই? আমি
তোর জন্য মন খারাপ করবো? তাও
আবার তোর জন্য! তুই না থাকলেই তো
আমার ভালো। আম্মু যা ভাল কিছু
রান্না করবে, তা একাই খেতে
পারবো। টিভি দেখার সময় এখন আর
কেউ রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি
করবেনা। তোর পেইন্টের সব
ইনসট্রুমেন্ট তো আমি একাই ইউজ করতে
পারবো। আব্বু বাজার থেকে কিছু
আনলে তার আর কোনো ভাগিদার
থাকবে না। ভাবতেই কি যে লাগছে
আমার!
আরও এক দফা চোখের কাজল গালে
এসে লেপ্টে গেল রিমার। এইসব বলতে
বলতে রিফাত চলে যাচ্ছিল। দরজা
পর্যন্ত গিয়েই আবার ফিরে এসে
বোনের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো
সে।
-তুই চলে গেলে আমার খুব খারাপ
লাগবে রে বুবু। খুবই খারাপ লাগবে। তুই
চলে গেলে কে আমাকে খাইয়ে
দেবে? কে আমার জামা-কাপড়
গুছিয়ে দেবে? আমার ব্যাট-বল এখন
কার কাছে লুকিয়ে রাখবো?
খেলতে গিয়ে হাত-পা কেটে
গেলে আম্মুর পিটুনি থেকে কে
আমাকে বাঁচাবে বুবু? ক্যাটবেরি
চকলেট নিয়ে আমি কার সাথে ঝগড়া
করবো? বল না বুবু, কে আমাকে ভূতের
গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে?
তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো
না রে বুবু। আমি সত্যিই থাকতে
পারবো না।
-ধূর বোকা! তুই এখনও বড় হসনি? দেখবি
আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর
আমি কি চিরদিনের জন্য যাচ্ছি
নাকি? তোর সাথে দেখা না করে
আমি থাকতে পারবো বল?
-দেখলি তো? তোকে কেমন
কাঁদিয়ে দিলাম! এই নে টিস্যু। পুরো
গাল তো কাজলে কালো বানিয়ে
ফেলেছিস। মুছে নে এখন।
বলে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল
রিফাত। আর রিমা একটা
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে পেছন থেকে
ওর চলে যাওয়া দেখছে। ভাইটি যে
তার সেই ছোটই রয়ে গেছে এখনও!