মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৯৬- তোমারই জন্য নীলাদ্রি

লেখা:-অস্পষ্ট আমি(আপন)

কালো BMW গাড়িটি থেকে বের
হচ্ছে নিলয়। নিজের অফিসের সামনে
নেমেই অফিসের ভিতরে চলে যায়
সে। ড্রাইভার গাড়িটি পার্ক করে
রাখে পার্কিং লজ এ। এই অফিসে
এমডি পদে আছে নিলয়। কোম্পানি টি
নিলয়ের বড় ফুফুর স্বামীর। ওনার কোন
সন্তান না থাকায় নিলয় কেই ওনারা
নিজের সন্তানের মত দেখে। আর
অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে উচ্চশিক্ষিত
করেছেন। নিলয়ের পরিবার অতটা সচ্ছল
নয়। তাই নিলয়ের সমস্ত দায়ীত্ব ওর ফুফুই
নিয়েছিলেন। নিলয় অফিসে জয়ন
করেছে চার দিন হয়। ওর একজন পিএ
প্রয়োজন। মেয়ে হলেই ভালো হয়। তাই
আজ একটা ইন্টার্ভিউ এর ব্যবস্থা
করেছে অফিস কতৃপক্ষ। নিলয় সেই
ইন্টার্ভিউ নিজেই নিবে। তাই ওর
রুমেই আয়জন করা হয়েছে। তাই আজ একটু
তারাতারি অফিসে চলে এসেছে
সে।
যথারিতি ইন্টার্ভিউ নেয়া শুরু
হয়েছে। দুজন শেষে আরেকজন কে
ডাকা হয়েছে। মেয়েটি ইন্টার্ভিউ
রুমে এসে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
নিলয় মেয়েটি কে না দেখেই
স্বাভাবিক ভাবেই বস্তে বলে।
মেয়েটি বসে ওর বায়োডাটা
নিলয়ের সামনে বাড়িয়ে দেয়।
বায়োডাটায় নাম নীলাদ্রি দেখেই
মেয়েটির চেহারার দিকে তাকায়।
বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে নিলয়।
হঠাৎ করেই নিলয়ের মুখ গম্ভীর হয়ে
যায়। কিন্তু নীলাদ্রির কোন কিছু না
দেখে ফাইল অফ করেই নীলাদ্রি কে
বলে কাল থাকে চাকরি তে জয়ন করার
জন্য। আর পিওন কে ডেকে বাকি সবাই
কে না করে দিয়েছে। নীলাদ্রি ও
বুঝতে পারছে না নিলয় ওকে সত্যি
চাকরি দিলো কি না। কারণ এই
নীলাদ্রি একসময় নিলয়ের সাথে
অনেক অন্যায় করেছে। হ্যা নিলয় আর
নীলাদ্রির পরিচয় অনেক আগে থেকেই
ছিলো। আর কি ছিলো ওদের সম্পর্ক
সেটা জানতে হলে আমাদের যেতে
হবে বেশ কিছুটা পিছনে।
চলুন তাহলে যাওয়া যাক........
★★★
তখন নিলয় ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
খুব ভালো ছাত্র ছিলো সে। তখন
পরিবারের সাথেই ছিলো। কারণ ওর
ফুফুরা তখন ওকে নেয় নি। আগেই বলেছি
নিলয়ের পরিবার ততটা সচ্ছল ছিলো
না। তাই নিলয় ও কলেজে তেমন স্টাইল
করে চলাফেরা করতে পারতো না।
কিন্তু সবাই নিলয় কে খুব ভালো ছাত্র
হিসেবেই চিনতো। নিলয়ের পড়াশুনা
ভালোই চলছিলো। কিন্তু নিলয়
ইদানীং একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু
খাচ্ছে। মেয়েটির নাম নীলাদ্রি।
তবে নীলাদ্রি নিলয় কে প্রথমে
পাত্তা না দিলেও একসময় নিলয়ের
ভালোবাসা দেখে ভালোবাসতে
বাধ্য হয় নীলাদ্রি। কিন্তু নিলয় কে সে
কথায় কথায় ওর যোগ্যতা নিয়ে খোটা
দিতো।
এতে নিলয় কষ্ট পেলেও কিছু বলে না
যদি নীলাদ্রি ওকে ছেরে চলে যায়।
এভাবে নিলয় নীলাদ্রির
ভালোবাসা আর অবহেলা নিয়ে খুব
ভালোই ছিলো। এটুকু শান্তনা মন কে
দিতে পারতো যে নীলাদ্রি তো ওর ই
আছে।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে কিছুদিন পর। নিলয়
জানতে পারে নীলাদ্রি নাকি
বিভিন্ন ছেলেদের সাথে
মেলামেশা করে। নিলয় কে এভয়েড
করার চেষ্টা করে নীলাদ্রি। নিলয় ওর
সামনে গেলেই বিভিন্ন ভাবে
অপমান করতে থাকে। ছোটলোক,
আনকালচার, আরো অনেক কথা শুনায়
নীলাদ্রি। সেদিনের পর থেকে নিলয়
আর নীলাদ্রির সামনে যায় নি। চলে
এসেছিলো ফুফুর কাছে ঢাকায়।
এখানে থেকেই অস্ট্রেলিয়া চলে
যায় নিলয়। নিলয়ের মনে ছিলো যে
ওকে দূরে সরিয়ে নীলাদ্রি যদি
ভালো থাকে তাহলে ক্ষতি কি? থাক
না একটু ভালো।
★★★
নিলয় চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। এদিকে
নিলয় চলে যাওয়ার পর নীলাদ্রির
জীবনের মোর ঘুরতে থাকে।
নীলাদ্রির বাবার একের পর এক ব্যবসায়
লস হতে থাকে। নিজের এমন অধঃপতন
দেখে সহ্য করতে পারে নি নীলাদ্রির
বাবা। স্টোক করে দুইবার। কিন্তু ভাগ্য
জোরে বেঁচে যায় দুইবার ই। বাবার এমন
দূরবস্থা দেখে নীলাদ্রি ও ঠিক
থাকতে পারে নি। টেনশনে আর
বিভিন্ন চাপে অসুস্থ হয়ে পরে
নীলাদ্রি। আগের সৌন্দর্য নীলাদ্রির
নেই। কাছের ফ্রেন্ড গুলো ও আস্তে
আসস্তে দূরে চলে যাচ্ছে নীলাদ্রির
থেকে। ভেঙে যাচ্ছে নীলাদ্রির সব
অভিজাত্ব অহংকার,, নীলাদ্রি
হারিয়ে যাচ্ছে এক অন্য নীলাদ্রি
তে। তারপর থেকে নীলাদ্রিদের
অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তবুও
টেনেটুনে পড়াশুনা টা শেষ করে
নীলাদ্রি। তারপর অসুস্থ বাবার
চিকিৎসা আর সংসার চালাতে
বিভিন্ন অফিসে অফিসে ঘুরে
চাকরির সন্ধান করতে থাকে
নীলাদ্রি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।
দুইদিন আগে একটা পত্রিকায় চাকরির
বিজ্ঞাপন দেখে আজ ইন্টার্ভিউ
দিতে এসেছে নীলাদ্রি।
আর এদিকে নিলয় অস্ট্রেলিয়া থেকে
পড়শুনা শেষ করে দেশে ফিরেছে।
ফিরিয়েই নিজের একমাত্র ফুফুর
কোম্পানি তে এমডি পদে জয়ন করেছে।
মনে মনে অনেক খুঁজেছে নীলাদ্রি
কে, কোথাও পায় নি। তবে নীলাদ্রি
কে খুঁজতে গিয়ে নীলাদ্রির সবথেকে
কাছের বান্ধবী তিনার নাছে
নীলাদ্রির জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা
গুলোর কথা জানতে পারে। কিন্তু আজ
হঠাৎ নীলাদ্রি কে ওয়েটিং রুমে
দেখতে পায় নিলয়। দেখেই বুঝেছিল
চাকরির জন্য এসেছে। নীলাদ্রি কে
দেখে নিলয়ের মনের ভেতর টা কেমন
যেন করে উঠে। সেই আগে
ভালোবাসা আবার জেগে উঠে
নিলয়ের মনে।
★★★
নিলয়ের সামনের চেয়ার টি তে
বিস্ময় ভরা চোখে এখনও বসে আছে
নীলাদ্রি। কিছুটা আড় চোখেই
তাকাচ্ছে নিলয়ের দিকে। সরাসরি
তাকানোর সাহস পাচ্ছে না
নীলাদ্রি। নিলয় পিওন কে ডেকে
বলে ওদের জন্য কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে
আসতে। পিওন চলে যাওয়ার পর নিলয়
নীলাদ্রি কে বলে.....
★নীলাদ্রি আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে
এসে তোমাকে অনেক খুঁজেছি।
তোমার সবগুলো বন্ধুর কাছে খবর
নিয়েছি তোমার বেপারে। জানতে
তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই
অনাকাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত গুলোর কথাও।
জানি তুমি আমাকে এখানে আশা
করো নি। অথবা আমি এখানে জানলে
তুমি আসতে না। কারণ তুমি নিজেকে
অপরাধী মনে করছো। তুমি ভাবছো
আমি এখনও তোমার উপর রাগ করে আছি।
বা তোমার জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার দূরে
যাওয়াতে কোন কষ্ট পাই নি। কারণ
আমার থেকে দূরে গিয়ে তুমি হয়তো
ভালো থাকবে তাই নিয়তি কে
মেনে নিয়েছিলাম। কিন্ত তোমাকে
মিস করেছি প্রতিটি সেকেন্ডে।
আমি তোমার খুঁজ রাখতাম। কিন্তু হঠাৎ
করেই তোমার আর কোন খুঁজ পাই নি।
কিছুদিন আগে দেশে আসলাম।
তোমাকে অনেক খুঁজে ও যখন পাই নি
তখন তোমার বন্ধুদের কাছে গিয়েছি।
আজ হঠাৎ অফিসে এসেই তোমাকে
দেখে অবাক হয়েছিলাম। কিন্ত
বুঝিতে পেরেছি তুমি চাকরির জন্য
এসেছ।
নীলাদ্রি এতকিছুর পর ও একটা প্রশ্ন
করবো। উত্তর দিবে......
--বলুন...? (খুব শান্ত গলায় বলে
নীলাদ্রি। বুঝাই যাচ্ছে কথা বলতে
পারছে না। কান্না আসছে)
নিলয় আবার বলে:-
-- আমি অফিসের নয়, জীবনের দায়ীত্ব
নিবে.....?(মাথাটা নিচু করেই বলে
নিলয়)
প্রশ্ন টি শুনে নীলাদ্রি ও মাথা নিচু
করে ফেলেছে। কারণ চোখের পানি
গুলো দেখাতে চায় না নিলয় কে।
মাথা নিচু করেই নীলাদ্রি বলে..
--আমি এটা করতে পারবো না নিলয়।
কারণ এটা করলে পৃথিবী আমাকে
স্বার্থপর বলবে।
--কিন্তু আমার জীবনে তোমাকে
অনেক প্রয়োজন নীলাদ্রি। আমি বাকি
জীবনটা তোমাকে নিয়ে কাটাতে
চাই।
--আমি পারবো না। আমাকে ক্ষমা
করবেন।
বলেই নীলাদ্রি উঠে চলে যেতে চায়।
কিন্তু পিছন থেকে নিলয় নীলাদ্রির
হাত ধরে টান দিয়ে ওর বুকে জড়িয়ে
নেয়। শুভসূচনা হয় আরো একটি
ভালোবাসার।
আর দরজার পাশে দাড়িয়ে বেচারা
পিওন মিটিমিটি হাসছে। কারণ এই
প্রথম ওর বসে মুখে হাসি দেখেছে।