প্রায় ৫বছর পর নদীতে গোসল করতে
আসলাম ৷ এর মাঝে, নদীতে গোসল
করার সাধ যে জাগেনি তা নয় ৷খুুব
ইচ্ছে করতো কিন্তু সময় আর সুযোগ
দুটোকে মানিয়ে নিতে পারতাম না ৷
তাই হয়নি হয়তো ৷
.
অনেকদিন পর নদীর দু-কূল ছাপিয়ে
পানি দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল ৷
পুরোনো বন্ধু আর কাজিনগুলো কে
নিয়ে এসেছি নদীর পাড়ে ৷ অনেক
মজা করে গোসল করবো সেই প্লান
করেছি ৷
.
হঠাৎ পেছন থেকে কোন বদমাইশ
কাজিন টা যে হাল্কা ধাক্কা দিল
আর অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়লাম
পানিতে ৷
ভেবেছিলাম সাতার ভুলেই গেছি ৷
আর ঐ জায়গাটায় পানি ছিল অল্প ৷ ভয়
পেয়ে হাফাতে শুরু করেছিলাম ৷ পরে
যখন পায়ের নিচে মাটি খুজে পেলাম
তখন বুঝলাম বেশ গভীর না জায়গাটা ৷
.
মনে মনে ভাবছিলাম, যাক মিছে
মিছে ভয় পাওয়াটা কেউ বোঝেনি
হয়তো ৷
.
হঠাৎ কানে ভেসে আসলো কারো
হাসির শব্দ ৷
এপাশ ওপাশ করতেই একটু দূরে চোখে
পড়লো কয়েটা মেয়েকে পা ডুবিয়ে
নদীর পাড়ে বসে আছে ৷ ওদের মাঝে
শুধু খালোত বোন নুপূরকে চিনলাম ৷
.
একটু লজ্জা পেলাম ৷ তবে ঠোটের
পাশের তিল যে মেয়েটার সেই
মেয়েটার হাসিটা কেনো যেনো খুব
চেনা চেনা লাগছে ৷ হেসেই চলছে
তারা ৷ বুঝলাম, আমার মিছে মিছে ভয়
পাওয়াটা বুঝতে পেরেছে ৷
.
বলেই ফেল্লাম
এই যে……
পাশে কি দেখেন? আপ্নাকেই বলছি,
তিল ওয়ালী, কারো ভুল দেখে
তাচ্ছিল্য করতে নেই বরং সাহস
জুগিয়ে দিতে হয় যেন সেই কাজটি
সঠিকভাবে করতে পারে ৷
.
শুধু তালগাছের মত বড় হইছেন কিন্তু কিচ্ছু
শেখেন নি ৷
.
তিলওয়ালী বেশি হাসছিলো তাই
তাকেই বললাম ৷
.
হাসিটা থেমে গেলো ৷ আর মেয়েটা
মুখটা বাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘোরাল ৷
এই মুখ বাকানো টাও কেন জানি খুব
পরিচিত লাগছিল ৷ তারপর আবার সেই
হাসি দিয়ে চলে গেল ৷
.
গোসল সেরে বাসায় আসলাম ৷
নুপূরকে জিজ্ঞেগ করলাম নদীর পাড়ে
ওই মেয়েটা কে ছিল রে ৷
.
হুট করেই সেই তিল ওয়ালী নুপূর নুপূর বলে
ডাকতে শুরু করলো ৷
.
নুপূর কিছু বললো না, হাসি দিয়ে চলে
গেল ৷
.
মনে মনে ভাবছিলাম কে হতে পারে
মেয়েটা ৷
হঠাৎ মনে পড়লো নুপূরের একটা ফুপাত
বোন
ছিলো তো, এই মেয়েটাই কি তাহলেই
সেটা ৷
যদি হয় তাহলে তো অনেক ভালো ৷
ছোটবেলার একটা খেলার সাথী
ফিরে পেতাম ৷
.
অনেক ছোট থেকে আমি মেজো
খালামণির বাসায় থাকতাম ৷
এখানকার স্কুলে পড়তাম ৷
নুপূরের একটা ফুপাতো বোন ছিল ৷ সেও
বেশিরভাগ সময় এখানেই থাকতো ৷
আমার খেলার সাথী ছিল ৷
.
খুব দুষ্টু ছিলাম ৷ ওর পুতুল গুলো চুরি করতাম
৷ মাটি দিয়ে বানানো ছোট ছোট
ঘরগুলো ভেঙে দিতাম ৷ ওকে খুব
কাদাতাম ৷ আর তখন অনেক ছোট ছিলাম
তো তাই অত বুঝতাম না ৷
.
ও রাগ করে বলতো তুমি পচা ছেলে ৷
তোমার সাথে আর কথা বলবো না ৷
.
আমি আবার নতুন ঘর বানিয়ে দিতাম,
পুতুল ফিরিয়ে দিতাম ৷
ওর চোখদুটো আনন্দে ছলছল করে উঠতো
তখন ৷
.
ক্লাস ফোর এ আমি আমাদের বাসায়
চলে আসি ৷ তারপর আর তেমন দেখা
হতো না ৷
.
একসময় নিজেকে নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত
হয়ে পড়ি, ক্যারিয়ার গড়ে নিতে
এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে সব স্মৃতি
ভুলতে বসি ৷
.
কতোদিন পর যে এখানে বেড়াতে
আসলাম ৷ আসতাম না, আম্মু খুব করে
বললো আর মেডিক্যালের লেখাপড়া
শেষ করলাম কেবল তাই ভাবলাম একটু
কোথা থেকে ঘুরে আসলে মন্দ হয়না ৷
.
রাতে খেতে বসেছি সবার সাথে ৷
হঠাৎ মা ছড়া ছড়া বলে ডাকতে
লাগলো ৷
আমি বললাম ছড়াকে কই পেলে তুমি
আম্মু?
.
একি, সেই তিলওয়ালী খাবার
টেবিলে এসে হাজির ৷
.
বুঝতে বাকি রইলো না এটাই আমার
ছোটবেলার খেলার সাথী ৷ কারন ওর
নামটাও ছড়া ছিল ৷
.
আম্মু বললো, সে কি রে তুই ওকে দেখিস
নি? বাসায় কে আসে কে যায় এটাও
খেয়াল করিসনা বুঝি ৷
.
বললাম, না মানে দেখিনি তো তাই
আর কি ৷
.
আড়চোখে দেখলাম তিল ওয়ালী
হাসছে ৷
কোনোমতে খাবার শেষে ঘুমুতে
গেলাম ৷ রাতে অনেক কথা মনে পড়লো
৷ ওর সাথে দুষ্টুমি করার মুহূর্তগুলো, ওকে
কাদানো, ওর মুখ বাকিয়ে কথা বলার
মুহূর্তগুলো মনে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে
পড়লাম ৷
.
পরদিন অনেক পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে
গেলাম ৷ সবাই মিলে পুরোনো
বটগাছের টং টার নিচে বসে পড়লাম
আড্ডা দিতে ৷
এই টং টাতে আগে কতো বসতাম,আড্ডা
দিতাম ৷
.
একটা জিনিস খেয়াল করলাম ৷ সেটা
হলো সবাই নিজেদের মধ্যে কি যেনো
বলাবলি করছিল ৷ মনে হচ্ছে কিছু নতুন
পরিকল্পনা করছে ৷
.
মনে মনে ভাবলাম সেই ছোট বেলায়
যত আম,কাঠাল,লিচু,ডাব চুরি করে
পেড়ে খাওযার, দুষ্টুমি করার প্লান
করতাম সবটাতে আমি নেতা ছিলাম
কিন্তু আজ এরা কি এমন প্লান করছে
যেটা আমি ছাড়াই হয়ে যাবে ৷
.
আড্ডা তেমন জমলো না ৷ দুপুর গড়িয়ে
পড়তে লাগলো ৷ সূর্য প্রখর তাপ দিচ্ছিল ৷
সবাই বাসায় চলে যেতে শুরু করলাম ৷
.
তবে সব থেকে অদ্ভুদ ব্যাপার হলো
সবাই আমাকে হ্যাপি ম্যারিড লাইফ
বলে উইশ করে বাসায় চলে গেল ৷ কিছুই
বুঝলাম না ব্যাপারটা ৷
বিয়ে না করতেই উইশ ৷ এইটা কেমন ¿¿
.
বাড়ি ফিরলাম ৷ কেউ নেই বাড়িতে,
সবাই নাকি কিসের শপিং করতে
গেছে ৷
.
সন্ধেবেলায় সবাই ফিরলো বাসায় ৷
সবার সাথেই অনেক অনেক জিনিস ৷
তবে অদ্ভুদ ব্যাপার হলো সবগুলোর
বিয়ের জিনিসপত্র ৷ ভাবলাম বিয়ে
আবার কে করছে ৷
.
হঠাৎ আম্মু রুমে ঢুুকে বললো দেখিতো
এই পাঞ্জাবিতে তোকে কেমন
মানায় ৷ সাথে আন্টি আর সব কাজিন
গুলো ঢুকে বললো বাহ্ চমৎকার
মানিয়েছে ৷
.
আম্মু বললো দেখতে হবে তো পচ্ছন্দটা
কার ৷
নুপূর বললো ছড়া আপুর পচ্ছন্দ সত্যিই
অসাধারন ৷
.
আমি এসবের মাঝে আবুলের মতো বলে
উঠলাম বিয়ের পাঞ্জাবী আমাকে
মানিয়ে কি হবে যে বর তার গাযে়
দিয়ে দেখ ৷
.
আম্মু বললো যে বর তার গায়েই দিয়ে
দেখছি ৷
.
আমি বললাম যে বর মানে!!! তুমি কি
আমার বিয়ের বন্দোবস্ত করছো নাকি?
.
আম্মু বললো সেটা তোমাকে বুঝতে
হবে না ৷ তুমি বর ব্যাস এটুকু জানলেই
হবে ৷
.
আমি বললাম কনে টা কে শুনি ৷
.
আম্মু বললো, তুমি তো বলতে যে আম্মু
তুমি যে মেয়েটাকে আমার বউ
হিসেবে পচ্ছন্দ করবে
সেই মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো ৷
.
আমি বললাম, তাই বলে আমি জানবোও
না কে সে আর হুট করেই তুমি আমার
বিয়েতে লেগে পড়লে কেনো?
এখানে কি তাহলে এনেছো বিয়ে
দিতেই?
.
আম্মু কিছু বললো না ৷
.
শুধু বললো হুমম
.
ছড়া দরজার পাশে দাড়িয়ে ছিল ৷ যখন
কনের কথা তুললাম তখন মুচকি হাসি
দিয়ে চলে গেল ৷
.
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কে
হবে এই বিয়ের বর আর কনে ৷
.
বুঝলাম আম্মু বিয়ে দিতেই এখানে
আমাকে বেড়ানোর ছলে নিয়ে
এসেছে ৷
.
আমি জানি আম্মুর পচ্ছন্দ কখোনো
আমার পচ্ছন্দের বিরুদ্ধে যাবে না তাই
বলতাম তোমার পচ্ছন্দই আমার পচ্ছন্দ ৷
.
রাতের খাবার সেরে বারান্দায় বসে
পড়লাম জ্যোছনা রাতটাকে উপভোগ
করতে ৷
.
হঠাৎ পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব
করলাম ৷ চমকে উঠলাম ৷
.
ছড়া বললো ভয় পেয়ো না আমি, ছড়া ৷
.
আমি বললাম, ও বসো ৷
.
কিছুক্ষন নিরবতা ভাঙিয়ে বললাম
চুপচাপ কেনো তিলওয়ালী?
.
আবার একটু নিরবতা, তারপর অভিমানী
কন্ঠে বললো তুমি আমাকে চিনতে
পারোনি কেনো সেদিন?
.
আমি বললাম, কতোদিন পর দেখলাম ৷
সেই ছোট বেলায় কেমন ছিলে আর এখন
কেমন হইছো চিনি কীভাবে?
.
ও বললো
:টান থাকলে চেনা যায়় বুঝলে
.
:টান নেই বলতে চাচ্ছো?
.
:জানিনা
.
:আচ্ছা বাবা সরি ৷
.
কিছু বললো না ৷
.
আবার বললাম সরি তো, এই দেখ কানে
ধরছি ৷
.
হুট করে বললো
:সত্যিই আমি কিচ্ছু শিখিনি?
.
আমি বললাম,
:আরে পাগলী তুমি সেদিনের রেশ
এখোনো ধরে আছ?
পাগলী মেয়ে একটা ৷ আমার বউটা কিছু
শেখেনি কে বললো ৷
.
:তুমিই বললে তো সেদিন ৷
.
:সেদিন এমনি বলেছিলাম ৷ আর
তোমার হাসি থামাতে আর রাগ
তুলতে বলেছিলাম ৷
.
:ও, তাই বুঝি!
.
:হুমম…
.
এবারে হয়তো মহারানীর অভিমানটা
একটু কমে গেলো ৷
.
আমি হুট করেই বলে উঠলাম তোমার
পাশে কালো কাপড়ে ওটা কে ৷
.
ও, ভয় পেয়ে আউ বলে চিল্লানি দিয়ে
পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই ৷
.
জানতাম একশন চালু হবে এখন ৷ তাই
হলো, দুম দুম করে বসিয়ে দিয়ে বললো
ফাজিল কোথাকার ৷
এভাবে ভয় দেখায় ৷
.
আমি হেসে উঠলাম ৷
আমার হাসিতে ও স্থির থাকলো না ৷
দুজনে হাসতে লাগলাম আর আমাদের এই
হাসিটা দেখে জ্যোছনা রাতের
তারার মাঝে ডুবে থাকা বাকা
চাঁদটাও মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো ৷
.
কেউ দেখিনি চাঁদটার হাসি, শুধু আমি
দেখেছি ৷
.
.
লেখক: নিঃশেষিত শুকতারা