প্রায় একঘন্টার জ্যামে আঁটকে আছে
গাড়িগুলো। একটুও নড়ছেনা।
পাশাপাশি দুটি বাস স্থির হয়ে
আছে। বিপরীতমূখী।কিছুক্ষন পর পর
গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে আবার বন্ধ হচ্ছে।
কিন্তু একটুও সামনে এগুচ্ছে না।
.
মুখোমুখী জানালা দুটি।ছেলেটা
সাধারনত গাড়িতে উঠলে জানালা
খোলাই রাখে।
.
হঠাৎ অপর বাসের বন্ধ জানালাটি
খুলে একটি মেয়ে মাথা বের করল।
এদিক-ওদিক দেখল। এবার গলা সমেত
জানালার বাইরে বের করে সামনে
দেখে নিল।গাড়ির লাইন কত লম্বা
হয়তো তাই দেখে নিল।
.
এক আমড়া বিক্রেতা মাথায় আমড়ার
গামলা নিয়ে,'আমড়া,আমড়া' করতে
লাগল।মেয়েটির জানালার পাশ
দিয়ে যেতেই সে হাত দিয়ে একটা
আমড়া নিয়ে নিল।বিক্রেতার
অজান্তে।ছেলেটার দিকে
তাকিয়ে আবার কি ভেবে রেখে
দিল।
.
ছেলেটা ব্যাপারটা আড় চোখে
দেখছিল।মেয়েটার দুষ্টুমি দেখে
মুচকি হাসল।
.
মেয়েটা অন্য দিকে তাকালে
ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে
থাকে আর মেয়েটা তাকালে
ছেলেটা।কখনো বা চোখে চোখ
পড়ে যায়। দু'জন্ই জোর করে সরিয়ে
নেয়।
.
অসম্ভব সুন্দর কোন বস্তু থেকে চোখ
জোর করে সরিয়ে রাখা যায়না।
মনের অজান্তেই চোখ যায়। এ যেন
চুম্বকের উত্তর মেরু-দক্ষিন মেরু।
.
কেউ কারো সাথে কথা বলেনা।
বলতে যায় না যে তা নয়।কিন্তু চোখ
ভাষ্য চলতেই থাকে.....
.
মেয়েটির চোখের ভাষা থেকেঃ
----এই ছেলে! এই ছেলে!! জন্মের পর
তোমার আম্মু কাজলটা একটু বেশীই
দিয়ে ফেলেছে বোধহয়।হিঃ হিঃ
বার বার চোখ সরিয়ে নাও কেন।
নাকি আমাকে ভয় পাও।হিঃ হিঃ.
.
আচ্ছা আমি যে ওইসময় আমড়াটা
নিয়েছিলাম তুমি কি আমাকে
খারাপ ভেবেছিলে? একদম না।
ঠ্য়াং ভেঙ্গে দিব।
আমি তোমার সাথে কথা বলার
প্ল্য়ান করেছিলাম।ভেবেছি তুমি
'চোর,চোর' বলে চেঁচিয়ে উঠবে।আর
আমি তোমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে
বলব,তুমি চুরি করেছ। তখন আমাদের
ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে।আমার না এইরকম
ঝগড়া করতে খুব ভালো লাগে।
.
ছেলেটির চোখের ভাষাঃ
----ওই চাশমিস মাইয়া তোর চোখ
তুইলা ফালামু। বার বার চশমার ফাঁক
দিয়া এইদিকে তাকাস ক্যান।!!!
হিঃ হিঃ কি ভড়কে দিলামতো!
তোমার চোখ তুলতে যাবো কেন।
এতো সুন্দর প্যাঁচা মার্কা চোখগুলার
দিকে তাকাতেই মন চায়না।হিঃ
হিঃ আবার দিলাম না!
তোমার চোখগুলা আসলেই ....... থাক
বেশী পাম দিবনা। এক কথায়
বলি,চোখদুটি যেকোন মদনের
স্যরি,যেকোন বালকের হৃদয় হরন করার
জন্য পারফেক্ট।
.
চাশমিস মেয়েগুলার চোখ এমনিতেই
সুন্দর।কি জানি,হয়তো চশমার
প্রটেক্টের কারনে..
.
মেয়েটির আঁখিকাব্য থেকেঃ
---তোমার চুলগুলো এলোমেলো কেন?
থাক গুছিয়োনা। এরকম্ই আমার
ভাল্লাগে।আমি চাই কারো
অগোছালো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে।
এই তুমি কি ঠোঁটে লিপস্টিক দাও
নাকি।হাঃ হাঃ ঠোঁট লাল কেন!!!
হিঃ হিঃ
.
আমার মতো একটা কিউট মেয়ের
সাথে এখনো কথা না বলে কিভাবে
বসে আছো হুঁ!!
তোমাকেও আমার অন্নেক কিউট
লাগে।
ইচ্ছে করে গাল দুটো টেনে দিই।
রোবটের মতো বসে আছো কেন!কথা
বললে কি হয়???
.
.
মেয়েটির কিছু শিশুসুলভ আচরণ
ছেলেটি আড় চোখে লক্ষ করে। এর্ই
মাঝে মেয়েটি একবার জানালা বন্ধ
করে ও খুলে দেয়।
.
ছেলেটির আঁখিকাব্যঃ
---আমার্ও ইচ্ছে করে তোমার
কানদুটো টেনে দিতে।হিঃ হিঃ
কাউকে ভড়কে দেওয়াই আমার কাজ।
শিশুসুলভ আচরণকারী মেয়েগুলার
মহাকর্ষ বল বেশি,যেখানে অপর
বস্তুটি আমি।
.
থাকনা চুলগুলো ঝুলে।
কপাল থেকে গাল বেয়ে,
চোখটা ঢেকে,
ক্ষতি কি তাতে,
কি দরকার!
কষ্ট করে বারবার!
কানের পিছে টেনে নেওয়ার.....
.
গাল ঢেকে থাকলেতো ব্রণগুলোও
দেখা যায়না।হিঃ হিঃ. ও ব্রণতো
নেই। তাই বুঝি বারবার ঐ মুখখানা
দেখাচ্ছ!! হিঃ হিঃ.. ঢং!সব ঢং!
.
আচ্ছা তোমার নাম কি?
'রিয়া'? নাহ। এই নামের সাথে
চেহারা মিলেনা।
আমার বোন বলেছিল,সে চেহারা
দেখেই নাম বলতে পারে।পুরা বলা
না,মানে আ।চ করতে পারে।কারো
নামের সাথে নাকি চেহারার মিল
থাকে।
তাহলে,'মীম'. নাহ,এটাও না।
মুমু!হ্যাঁ এটাই মিলে।মুমুই হবে।
.
ওই তুমি ঠিকমত হাঁসতে পারোনা!মুখ
বন্ধ করে কিসের হাঁসি। নাকি দাঁত
পোকা খেয়ে ফেলেছে।হিঃ হিঃ
.
যানজট শিথীল হতে শুরু করেছে। বাস
এখনি ছেড়ে দিবে।মেয়েটির
চোখে ভয় টাইপের একটা ছাপ স্পষ্ট।
.
''বাসতো এখনি ছেড়ে দিবে।
তোমার নামতো এখন জানা
হলোনা''-মেয়েটা ভাবল।
'এই আপনার নাম কি?'-ভাবতে ভাবতে
একটু জোরেই বলে দিল।
.
ছেলেটাও এটাই চাচ্ছিল। তারপর্ও
হঠাৎ এই প্রশ্নে অপ্রস্তুত গেল।
'মৃ-মৃ-মৃন্ময়'-তোতলানো স্বরে বলল।সে
আর পাল্টা প্রশ্ন করলনা।
.
বাস চলতে শুরু করল।আরো কি দু-একটা
কথা হয়েছিল তাদের মাঝে।
.
দূরত্ব বাড়ছে। বাস থেকে বাসের।
চোখ থেকে চোখের.....
.
.
কয়েক বছর পর।
রাত।
কোনো এক নবদম্পতির ঘরে নিভূ নিভূ
মোমের আলো জ্বলছে। চাশমিস
মেয়েটি ঘুমন্ত ছেলেটির
অগোছালো চুলগুলো গুছিয়ে দিচ্ছে।
এক সময় গাল দুটোও টেনে দিল।
ছেলেটার ঠোঁটগুলো এখনো লাল্ই
আছে। তার ঠোঁটের লাল লিপষ্টিক
দিয়ে আরেকটু লাল করে দিতে ইচ্ছা
করছে....