বৃষ্টি নেমেছে তাই রিক্সাটার হুড
উঠিয়ে দিতে হলো । এতেই যত
বিপত্তি । রনো এতক্ষন যতটুকু পারে
সাইডে চেপে বসেছিলো কিন্তু এখন
আর পারলো না। তার গা অরিণের
সাথে ঘেষে গেছে । রিক্সাওয়ালার
কাছে তেরপাল চেয়েছিল কিন্তু তাও
নেই । এদিকে বৃষ্টির আরো জোরে
নেমেছে । দুজনের ভিজে একাকার
হবার অবস্থা । রনো খুবই বিব্রত । তবে
একদিক দিয়ে খারাপ লাগছে না
রনোর । অরিণের চুলের সুবাস পাচ্ছে।
'বোধ হয় শ্যাম্পু করেছে আজ তাই' -রনো
ভাবল ।
অরিণের খারাপ লাগেনি যখন রনোর
গা তার গায়ের সাথে ঘেষেছে ।
ছেলেটা খুব লাজুক। এতক্ষন সাইডে
চেপেছিল কিন্তু হুড তোলায় আর
সাইডে চাপতে পারছে না তাই
অনেকটা বিব্রত , অরিণের বুঝতে বাকি
রইল না । অরিণের ইচ্ছে করছে হুড
নামিয়ে দিয়ে ভিজতে কিন্তু তা
পারছে না ।
'মামা রাস্তার এইপাড় না ওইপাড়
নামবেন' -রিক্সাওয়ালার ডাকে
দুজনের চিন্তায় বাধা পরল ।
'ওইপাড়ে নামান মামা' - শপিংমলের
সামনের দিকে হাতে ইশারা করে
রনো ।
আজ রমজানের বাইশ তারিখ । বৃষ্টি
নেমেছে তবুও এখানে অনেক ভীর
দেখা গেলো ।
গতমাসেই বিয়ে হয়েছে রনো আর
অরিণের । তেমন ধুমধাম কিছু না । রনোর
পরিবার বলতে শুধু ওর মা। তিনি গ্রামে
একা থাকেন । রনো ঢাকায় একটা
চাকরি পেয়ে এখানেই স্যাটেল হয় ।
অরিণকে দেখে রনোর মার ভালো
লাগাতে পরবর্তী সপ্তাহের শুক্রবারে
ছোট খাট আয়োজনের মধ্যে বিয়ের
কাজ সেরে ফেলে । বিয়ের পর রনোর
দুরুমের বাসায় ওঠে তারা । ছিমছাম
হলেও রনো ভালোই গুছিয়েছে বাসা।
ঘরটাকে কিছুদিনের মাঝেই আপন করে
নিলেও রনোকে আপন করতে পারেনি
অরিণ । রনোর নিজের মাঝে গুটিয়ে
থাকাই হয়ত তার কারণ.....
....................
মোটামোটি কাকভেজা হয়েই দুজন
শপিং মলে ঢুকলো । অরিণ ঘুরে ঘুরে
দেখতে লাগলো।
অভিজাত শপিং মলের আকাশচুম্বী
দামের আশংকায় রনো তার
মানিব্যাগ নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত।
বাসা ভাড়া আর গ্রামে মায়ের
কাছে টাকা পাঠিয়ে প্রায় ফাঁকা
মানিব্যাগ ।
'এটা ক্যামন হবে ? '- নীল রঙের একটা
শাড়ি দেখিয়ে বলছে অরিণ
'পচ্ছন্দ হলে নিয়ে নেই , এটার প্রাইস
ক্যামন হবে ভাই' - দোকানিকে
জিগ্যেস করে রনো
দাম শুনে রনো তার মানিব্যাগে
থাকা টাকার পরিমাণ হিশেব করলো ।
হিশেবে দেখা গেলো একেবারে
ফাঁকা হয়ে যায় মানিব্যাগ । কিন্তু
অরিনের আলোয় ভরা চোখে
তাকিয়ে হিশেব আর করা হলো না।
দাম মিটিয়ে আরো কিছুক্ষন
ঘোরাঘুরি করার পর রনো বলল - 'বাসায়
রওনা দেই'
'আপনার জন্যে কিছু কিনবেন না'
'না , আমি পরে আবার এসে দেখবো'
'আমি পচ্ছন্দ করে দেই'
'না পরে আবার আসব'
বাইরে তখন বৃষ্টি নেই । বেরিয়ে
রিক্সা ডাক দিল রনো।
_____________________________________
আজ শেষ রমজানের রাত । কালই ঈদ ।
আগের ঈদের পাঞ্জাবিটা ইস্ত্রি
করতে হবে- রনো সিড়ি বেয়ে
দোতলায় উঠতে উঠতে ভাবছে ।
সিড়ির শেষ ধাপে আসতেই অরিণ
দরজা খুলল । রনো খেয়াল করেছে
প্রতিদিনই প্রায় শেষ ধাপে আসতেই
অরিণ দরজা খোলে । কোনো ভাবে
টের পেয়ে যায় হয়ত সে আসছে ।
ভেতরে ঢুকে রনো এক গ্লাস পানি
চাইলো । শোবার ঘরে ঢুকে বিছানায়
একটা শপিং ব্যাগ দেখল রনো । কি
হতে পারে ভাবতে ভাবতেই অরিণ
পানি নিয়ে ঢুকল।
'আজ সে মলে গিয়েছিলাম । আমার
শাড়িটা হঠাৎ করেই ক্যামন যেনো
লাগছিলো । রঙটা ভালো লাগছিলো
না তাই বদলিয়ে অন্যটা এনেছি ।
অনেকগুলো টাকা বেঁচে যাওয়ায়
আপনার জন্য একটা পাঞ্জাবি এনেছি ।
দেখেন তো ভালো হয়েছে কিনা ? '
রনো সরাসরি অরিণের চোখে
তাকালো । অরিণ চোখ সরিয়ে নিলো
। চোখে চোখ রেখে মিথ্যের অভিনয়
করা যায় না ।
তবুও যে মিথ্যায় হাসি ফোটে তার
পাপ হয়ত আল্লাহ সুবহানাতা'লা মাফ
করেন ।
.......................
পরদিন বিকেলে দুজন নব দম্পতীকে
রিক্সায় হাতে হাত রেখে ঘুরতে
দেখা গেলো
লেখা - রাশেল খান শজীব