দুপুর তিনটা বেজে পঁচিশ মিনিট।
আবির সবে মাত্র দুপুরের খাবার
খেয়ে কাজে বসল।আজ কাজের অনেক
চাপ।আবির মন দিয়ে কাজ করছে।হঠাৎ
পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠল।
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বন্যার
ফোন।ফোনটা রিসিভ করতেই :
--কই তুই?
--কেন? জানস না এখন আমি কোথায়
থাকি?
--তাড়াতাড়ি বাসায় আয়, জরুরী
কথা আছে।
--এখন আসতে পারব না।আজ কাজের
অনেক চাপ।
--তোকে আসতে বলছি।তাড়াতাড়ি
আয়।আর কোন কথা বলবি না।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দেয়
বন্যা। কি মেয়েরে বাবা!! যখন যা
মনচায় তাই করে।আমি যেন তার
খেলার পুতুল।
.
বন্যা আবিরের খালাত বোন।
পাশাপাশি বাসায় থাকে তারা।
ছোটবেলা থেকেই তারা একসাথে বড়
হয়েছে।তাই তারা একজন আরেকজনকে
তুই করে সম্বোধন করে।ছোটবেলা যখন
আবির ক্লাস দশম শ্রেনীর ছাত্র তখন
এক সড়ক দূর্ঘটনায় আবির তার আব্বা-
আম্মাকে হারায়।তখন বন্যার
পরিবার তার পাশে দাড়ায়।তখন
থেকে বন্যা আবিরের সব খেয়াল
রাখত।এমনকি আবির কোথায় কোন
ড্রেস পরে যাবে তাও ঠিক করে দিত
বন্যা।মেয়েটা আবিরকে প্রচন্ড
ভালবাসে।আবিরও বন্যাকে
ভালবাসে।কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত
মুখ ফুটে বলেনি।দুজনের ভালবাসা
মনের ভেতরেই রয়ে গেছে।
.
আফিসের অনেক কাজ থাকা
সত্ত্বেও বাসায় চলে আসে আবির।
বাসায় এসে দেখে বন্যা খাবার
টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে।
--আফিস থেকে আসতে এত সময় লাগে?
--আমি কি মেশিন নাকি?
--তুই ফ্রেশ হয়ে নে।তোর জন্য আজ
খিচুরি রান্না করেছি।তোর না
খিচুরি খুব পছন্দ!! খেতে আয়।
--এইটাই তোর জরুরী কথা?
--হ্যা।
.
আবিরের খুব রাগ হচ্ছে কারন আজ
তার কাজটা অনেক জরুরী ছিল।কাল
অফিসে গেলে অবশ্যই বস তাকে
অনেক বকা দিবে।
--কিরে দাড়িয়ে আছিস কেন? যা
ফ্রেশ হয়ে আয়।এমনিতে দেরী করে
এসেছিস।তার উপর আবার দাড়িয়ে
আছিস।খিচুরি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে
তো।
.
আবির বন্যার উপর বেশি রাগ করে
থাকতে পারল না কারন যাকে
ভালবাসা যায় তার উপর রাগ করা যায়
না।তাই হাত মুখ ধুয়ে এসে খেতে
বসে যায় আবির।আর বন্যা আবিরের
খাবার খাওয়ার দৃশ্যটা অবলোকন
করছিল।একটু পর আবিরঃ-
--কিরে এভাবে চেয়ে আছিস কেন?
--আচ্ছা আমার যদি বিয়ে হয়ে যায়,
তাহলে তোকে কে রান্না করে
খাওয়াবে এসব খাবার?
--এটা কোন ব্যাপার? তোর যেখানে
বিয়ে হবে তার আশেপাশে একটা
বাসা ভাড়া নেব।তার তুই প্রতিদিন
এসে খাবার দিয়ে যাবি।সমস্যা
সমাধান।
--কেন আমাকে অন্যের ঘরে না
পাঠিয়ে সারাজীবনের জন্য নিজের
করে রেখে দেয়া যায় না ? (আলত
গলায়)
--কি বললি বুঝলাম না? (বুঝেও না
বুঝার ভান)
--কিছু না।তাড়াতাড়ি খাবার শেষ
কর।বাসায় আমার অনেক কাজ আছে।
.
আবিরের খাবার শেষ হবার পর বন্যা
চলে যায়।বন্যা চলে যাবার পর আবির
বন্যার কথাটা নিয়ে চিন্তা করে।
সত্যিই বন্যাকে অন্যের হাতে
দিবে কেন? বন্যাকে তার
ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করতে
পারে।আর বন্যার বিয়ের জন্য একের
পর এক প্রস্তাব আসছে।যদি তাকে
খালা-খালু অন্যত্র বিয়ে দিয়ে
দেয়? গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল
সে।
.
তাই পরের দিন সকালে অফিসে
যাওয়ার আগে আবির বন্যাদের
বাসায় তার নিজের বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে যায় কারন তার কেউ
ছিল না আর বন্যা তখন ভার্সিটির
জন্য বাসা থেকে বের হয়েছে।এক
পর্যায়ে আবিরের খালা-খালু
রাজি হয়ে যায় আর আবির এই
ব্যাপারটা বন্যার কাছে গোপন
রাখার জন্য তাদের কাছে অনুরোধ
করে কারন আবির বন্যাকে
সারপ্রাইজ দিতে চায়।আবিরের কথা
মত বন্যার কাছে তারা ব্যাপারটা
গোপন রাখে এবং বলে তারা বিয়ে
অন্যত্র ঠিক করা হয়েছে।
.
রাত আটটা।আবির সবে মাত্র অফিস
থেকে বাসায় ফিরেছে।একটু পর
বন্যা আগমন।
--কিরে আজ আবার কি রান্না করে
নিয়ে আসলি?
বন্যা কোন উওর না দিয়ে কান্না
শুরু করল।
--কিরে কাঁদছিস কেন?
--আব্বা-আম্মা আমার জন্য অন্য
জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছে।
--তো কি হয়েছে?
--প্লিজ!! তুই আমাকে বাচাঁ।আমি
তোকে ছাড়া বাঁচবো না।
.
সেদিন রাতে বন্যা তার ভালবাসার
কথা বলে ফেলে কিন্তু আবির
তাকে অনেক বুঝিয়ে বাসায়
পাঠিয়ে দেয় কারন যখন জানতে
পারবে যার সাথে বিয়ে হবে সেই
ছেলেটা আবির তখন কতটাই না খুশি
হবে।
দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দিন
আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এসেছে।
বন্যা প্রতিদিন আবিরের কাছে
ছুটে আসে আর প্রতিবারই বন্যাকে
ফিরিয়ে দেয় কারন বন্যাকে যে সে
সারপ্রাইজ দিতে চায় আবির।
.
বিয়ের দিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট।আবির
ঘুমিয়ে আছে।হঠাৎ পাশে রাখা
মোবাইলটা বেজে উঠল।মোবাইল
হাতে নিয়ে দেখে খালার ফোন।
ফোনটা রিসিভ করতেইঃ
--আবির তুই তাড়াতাড়ি আমাদের
বাসায় চলে আয়।
এই কথা বলেই ফোনটা কেটে দিলেন
তিনি।আবিরের মনের ভিতর কেমন
জানি একটা অজানা ভয় কাজ করতে
লাগল এবং খালার গলাটাও কেমন
জানি শুনাচ্ছিল।তাই ছুটে গেল
খালার বাসায়।বাসায় গিয়ে দেখে
মাঝখানে বন্যা শুয়ে আছে।আর তার
চারপাশে বসে কাঁদছে সবাই।
আবিরের আর বুঝতে বাকি রইলনা যে
বন্যা আত্নহত্যা করেছে।আবিরের
মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল।
কোথায় সে বন্যাকে সারপ্রাইজ
দিবে তারউপর বন্যাই তাকে
সারপ্রাইজ দিয়ে দিল।যাবার আগে
বন্যা একটা চিঠি লিখেছি
আবিরকেঃ
প্রিয় আবির,
এতক্ষনে হয়ত জানতে পেরেছ আমার
মৃত্যুর সংবাদ।কি করব বল, আমি যে
তোমাকে ভালবাসি।অন্যকে নিয়ে
সারাজীবন কাটানো সম্ভব না।তাই
চলে গেলাম অজানা দেশে।
ইতি,
বন্যা।
.
চিঠিটা পড়ার পর আবির কাঁদতে
লাগল।নিজেকে আজ কেমন জানি
অপরাধী মনে হচ্ছে।বন্যাকে একটু
সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে বন্যাই
তাকে সারপ্রাইজ দিয়ে চলে গেল।
আবির এখনও বন্যার পাশে বসে আছে
অন্যদিকে মুখ করে কারন বন্যার
চেহারটা দেখলেই তার কান্না চলে
আসে।হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসে
তার কানে।
--কিরে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে
খুব মজা পেলি। তাই না?
কথাটা শুনেই আবির পিছনে ফিরে
দেখে বন্যা চেয়ে আছে তার দিকে।
--তু...ই কি তাহলে? না ইয়ে মানে,
আমি যা চিন্তা করেছি তা কি
ভুল? নাকি আমি স্বপ্নে?
--তুই কি ভেবেছিলি? আমি কিছুই
জানতে পারব না? আমাকে না
জানিয়ে সারপ্রাইজ দিবি? দেখ,
এখন কে কাকে সারপ্রাইজ দিল?
--জানিস আমার কতটা কষ্ট হয়েছিল?
আমি মনে মনে সিন্ধান্ত
নিয়েছিলাম আমিও আত্মহত্যা করব।
--আর যখন তুই আমার কাছে
ব্যাপারটা গোপন রেখেছিস তখন
আমার কেমন লেগেছিল? একটু
চিন্তা কর।
.
সেদিন আবির ও বন্যা বিয়ে সম্পন্ন
হয় আর আবির পরে জানতে পারে
বন্যাকে তার আব্বু-আম্মু সব
জানিয়ে দিয়েছিল আগেই।
.
আসলে লেখাটি আমার কল্পনার জগত
থেকে নেয়া।কিন্তু এই গল্পে যদি
বন্যাকে তার পিতা-মাতা সব না
জানাত, তাহলে বন্যার অভিনয়টা
বাস্তবে রুপ নিতে পারত।তাই
কারো সাথে মজা করতে গিয়ে
মিথ্যা কথা বলবেন না কারন
"একজনের নিকট যা খেলা, অন্যের
নিকট তা মৃত্যু"
.
লেখকঃ-আদরের ছোট সন্তান