মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩০৮- ভালবাসা আর সুখ

লেখা-- Pabnar Tarcera Balok

পকেট থেকে মোবাইল বের করলো
রাসেল। ভাবলো জেনিফাকে একবার
ফোনে চাকরির কথা বলা উচিৎ। পরে
আবার ভাবলো ফোনে না বলাই ভাল।
যার কাছে রাসেলের দাম নেই।
তাকে চাকরির কথা বলার কি দরকার?
.
পকেটে মোবাইল রেখে পকেট থেকে
সিগারেট বের করে মুখে লাগিয়ে
দিয়াশলাই খুঁজতে গিয়ে দিয়াশলাই
পেল না।
হয়তো ফুরিয়ে গেছে। আর হয়তো
হারিয়ে গেছে। মনে নেই রাসেলের।
মানসিক অশান্তিতে থাকলে অনেক
জরুরি জিনিস ভুলে যেতে হয়।
রাসেলের ও তেমন হয়েছে।
.
সিগারেট ধরিয়ে পুরোনো দিনের
কথাগুলো রাসেল মনে করার চেষ্টা
করছে। পুরোনো কথাগুলো রাসেল ভুলে
যায় নি। কারন দুঃখের কথা সহজেই
ভোলা যায় না।
.
রাসেল ছিল বাবা মায়ের একমাত্র
আদরের সন্তান। বাবা দিনমজুরের কাজ
করলেও ভালবাসার কমতি ছিল না।ছোট
আবদারগুলো রাসেলের বাবা পুরন
করতো।
.
বেশিদিন রাসেলের কপালে সুখ
সইলো না। রাসেলের দশ বছর বয়সেই
রাসেলের বাবা মারা যায়।
পরিবারের উপার্জন করার মত তার
বাবাই ছিল। বাবা মারা যাওয়ার
পরে রাসেলের মা অন্যের বাড়িতে
কাজ করে। আর রাসেলকে এতিম
খানায় দিয়ে আসে।
.
কিছুদিন পরে রাসেল এতিম খানা
থেকে মায়ের অসুস্থতার কারনে চলে
আসে। রাসেল কাজ করতে থাকে।
অনেক কষ্টেও রাসেল তার মা কে
বাঁচাতে পারে না।
.
মা মারা যাওয়ার পরে রাসেল
ছন্নছাড়া হয়ে যায়। রাস্তায় ঘোরে।
কোনোকিছুর ঠিক থাকে না।
.
একদিন রাস্তায় রাসেলকে রফিক
সাহেব নামের একজন দেখে।
রাসেলকে দেখেই রফিক সাহেবের
মায়া জমে যায়। রফিক সাহেব
রাসেলকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
.
রফিক সাহেব তার মেয়ে জেনিফার
খেলার সাথি হিসেবে রাসেলকে
বাড়িতে নিয়ে আসে।
.
রাসেলকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি
করে।রাসেল রফিক সাহেবের বাসায়
থেকে পড়ালেখা করতে থাকে।
.
রফিক সাহেব রাসেলকে অনেক
ভালবাসলেও তার মেয়ে জেনিফা
রাসেলকে মেনে নিতে পারে নি।
তাই সব সময় রাসেলকে কষ্ট দেওয়ার
চেষ্টা করতো। রাসেলের গায়ে হাত
তুলতো।
.
একদিন রফিক সাহেব জেনিফার এই
ব্যাবহার দেখার পরে রাসেলকে
বোডিং স্কুলে ভর্তি করে দেয়।
.
বোডিং স্কুলের নিয়ম আর করা শাষনে
রাসেল বড় হতে থাকে। লেখাপড়ার সব
খরচ রফিক সাহেব দিত।
.
বোডিং স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে
কলেজ পাশ করে পড়ালেখা শেষ করার
পরে রাসেল আবার রফিক সাহেবের
বাড়িতে থাকে।
.
একদিন রফিক সাহেব রাসেলকে বলে
-বাবা। তুমি আমার একটা কথা রাখবে?
-অবশ্যই রাখবো চাচা বলেন।
-তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে কর।
-কিন্তু চাচা।আমি তো বেকার।
-তাতে কি? একদিন চাকরি হয়ে
যাবে।
-আচ্ছা। আপনি বললে আমি রাজি।
.
জেনিফার সাথে রাসেলের বিয়ে
হয়ে যায়। রাসেল জেনিফাকে মেনে
নিলেও জেনিফা রাসেলকে মন
থেকে মেনে নিতে পারে না। সবার
সামনে ভাল ব্যাবহার করলেও আড়ালে
রাসেলকে অনেক ধরনের কথা বলে।
.
একদিন রফিক সাহেব স্ট্রোক করে
মারা যান। আর তারপর থেকে
রাসেলকে আরো অনেক ভাবে
অপমানিত হতে হয়।
.
রাসেল বেকারের কারনে সবসময়
রাসেলকে খোটা দেয়। রাসেল
চাকরি খোঁজে। কিন্তু সহজে চাকরি
পায় না। চাকরি পেতে প্রতিভার
চেয়ে টাকাই আগে লাগে।
.
রাসেল ইচ্ছা করলেই টাকা দিয়ে
চাকরি নিতে পারে। রফিক সাহেব
মারা যাওয়ার আগে সবকিছু রাসেলের
নামে লিখে দিয়ে গেছে। কিন্তু
রাসেল রফিক সাহেবের এক টাকাও
হাত দেয় নি।
.
রাসেল বেকার বলে জেনিফা
রাসেলকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠানে
যেতে চায় না। এতে নাকি তার
সন্মাম থাকে না।
.
.
আজ সকালে রাসেল চাকরির খোঁজে।
প্রথম ইন্টার্ভিউ দেওয়ার পরেই রাসেল
চাকরি পেয়ে গেল। আর ভাল বেতনও
আছে।
.
চাকরি পাওয়ার পরে রাসেলকে আজ
স্বাধিন মনে হচ্ছে।কারন অন্যের কাছে
থাকার কারনে সবসময় বেকার বলে
খোটা দিতে পারবে না।
.
আজ থেকে রাসেল আর ওই বাড়িতে
থাকবে না বলে ঠিক করেছে। তাই নতুন
একটা বাসাও ঠিক করে ফেলেছে।
.
রাসেল জেনিফাকে খুঁজে পেল না।
খুঁজে না পেলেও তার কিছু না।
.
রাসেল তার ব্যাগে কাপড়গুলো ভরছে।
সবকিছু ব্যাগে ভরার পরে রাসেল
ওয়ারড্রব খুলল। কারন এখানে তার তার
মায়ের একটা শাড়ি রাখা আছে।
.
রাসেল শাড়ি সরাতেই একটি ডাইরি
বের হয়ে এল। রাসেলের অন্যের ডাইরি
পরার ইচ্ছা নেই। ডাইরির উপরে লেখা
জেনিফা ও রাসেল।তাই কৌতুহল
নিয়ে ডাইরিটা হাতে নিল।প্রথম
পাতায় লেখা এইএকম
.
৩-২-২০১৫
.
আজ আমার বিয়ে। আমার বিয়ে হচ্ছে
আমার বাবার পছন্দের পাত্রের সাথে।
ছেলেটার নাম রাসেল। ছোট বেলায়
ছেলেটাকে আমার বাবা কুড়িয়ে
নিয়ে আসে। কোনদিন ভাবিনি যে
তার সাথে আমার বিয়ে হবে।
বিয়েতে আমার মত না থাকলেও
বিয়ে করতেই হল। আজকে আর লিখবো
না।
.
২৩-৩-২০১৫
.
অনেকদিন পরে আবার লিখতে বসলাম।
কারন আমি আজকে নিরিহ মানুষটিকে
অনেক কথা বলেছি। এতে মনে হয় তার
মন খারাপ হয়েছে। আমি মাঝে মাঝে
বেকার বলে খোটা দেই।আজকে এক
জায়গায় যাওয়ার সময়ে সাথে নেই নি
বেকার বলে। কেন বোঝে না। যদি
মানুষ তাকে বেকার বলে তাহলে
আমার চেয়ে তাকেই বেশি কষ্ট
পেতে হবে। ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ আমার
নেই।তাই ক্ষমা চাইতে পারছি না।
.
১০-৪-২০১৫
.
আল্লাহ কে ধন্যবাদ। কারন আমার
স্বামিকে সুস্থ করে দিয়েছে। এখন
তাকে আমার স্বামি ভাবতে খুব ভাল
লাগে। সারারাত জেগে তার সেবা
করেছি। কিন্তু সেটা এখন আমার কাছে
মুখ্য মনে হচ্ছে। কারন আমার স্বামি
কঠিন জর থেকে এখন সুস্থ হয়েছে।
.
২৯-৪-২০১৫
.
আজকে আমি আমার স্বামিকে
সারপ্রাইজ দিবো।তাই তার প্রিয়
অনেক কাজ করেছি। চুরি করে তার
ডাইরি থেকে সব জেনেছি।
অনেক রাগ আছে আমার প্রতি। জানি
না আমি তার রাগ শেষ করতে পারবো
নাকি?জানি না সে আমাকে ক্ষমা
করেছে নাকি?
.
অপেক্ষা করার পরে জেনিফা আসলো।
রাসেল জেনিফার সামনে দলিল
এগিয়ে দিল। জেনিফা বলল
-এটা আমার হাতে দিচ্ছ কেন?বাবার
কাছে ওয়াদা করেছিলে তুমি আমার
এবং সবকিছুর দায়িত্ব নিবে।
-এইসবের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো
না। সবকিছু থেকে আমি আজ মুক্তি
পেতে চাই।
-সবকিছু থেকে মুক্তি পেলেও আমার
থেকে কি মুক্তি পেতে পারবে?
-এভাবে থাকার চেয়ে মুক্ত হওয়া ভাল
নয় কি?
-আমি যদি তোমাকে জড়িয়ে বাঁচতে
চাই। তাহলে কি আমাকে তোমার
সাথে জড়িয়ে নিবে?
-কি বলছো?
-হ্যা। তোমার সাথে থেকে কখন
তোমায় ভালবেসেছি। বুঝতে পারি
নি।
-ভেবেছিলাম জীবনে দুঃখ পেয়ে
যাবো। কিন্তু আজ আমি ভালবাসা
পেয়েছি যার ভেতরে সুখ আছে।যেটা
অনেক কষ্টে পেতে হয়।