মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৮৬- ভালবাসার জন্য সব করতে পারে

এক
.
রাসেল চাচার বলা ঠিকানা মত
বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। কিন্তু
দাড়োয়ান ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই
চাচার কাছে কল দিল
-কি রে রাসেল তুই কোথায়? বাসা
পেয়েছিস?
-হ্যা। পেয়েছি। কিন্তু দারোয়ান
ঢুকতে দিচ্ছে না।
-আচ্ছা আমি ফোনে আবুলকে বলে
দিচ্ছি। আবুল তোকে বাসার ভেতরে
নিয়ে যাবে।
.
একজন এসে বলল
-আপনার নাম রাসেল?
-হ্যা।আমার নাম রাসেল।
-ও। সাহেব আমারে আপনার কথা
বলেছে। আমার সাথে আসুন।
-চলুন।
-এইদিকে এই রুমটা আপনার জন্য দেওয়া
হয়েছে।আজ থেকে আপনি এই রুমে
থাকবেন।
-আমাকে আপনি বলছেন কেন? আমি
আপনার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট।
-আপনি সাহেবের ভাতিজা।
আপনাকে আপনি তো বলবো।
-তাই কি হয়েছে?আপনিও মানুষ। আমিও
মানুষ। তাই আপনি বলবেন না।
-আচ্ছা।
.
রাসেল চাচার কথামত পড়ালেখা
করার জন্য শহরে এসেছে। রাসেলের
কলেজ পাশ করে ডিগ্রিতে ভর্তি
হওয়ার ইচ্ছা ছিল।কারন গ্রামের কাছে
কোন ইউনিভার্সিটি নেই।কিন্তু তার
চাচা বলল "ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হ।
তুই আমার এখানে থেকে পড়ালেখা
করবি। যা খরচ লাগে আমি দিবো"
তাই চাচার কথামত ইউনিভার্সিটিতে
পরিক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ
পেয়েছে। এটা রাসেলের আপন চাচা।
চলে আসলো শহরে।
.
দুই
.
রুমকি রাফিদ সাহেবের একমাত্র
আদরের মেয়ে। রুমকি রাফিদ
সাহেবকে বলছে
-বাবা একটা কথা বোলবো।
-আচ্ছা। বল।
-আব্বু। তুমি আমাদের বাসা থেকে ওই
গেঁয়ো ভূতটাকে বিদায় করে দাও।
-কেনরে মা। কি করেছে?
-দশদিন এসে অনেক কিছুই করেছে।
বাসার কোন নিয়ম মানে না। সবকিছু
গেঁয়ো। আমার ওকে ভাল লাগছে না।
-ওকে বিদায় করলে ও যাবে কোথায়?
-সেটা আমি জানি না।তুমি ওকে
বাসা থেকে বিদায় করবে এটা
জানি।
-মারে। ওটা তোর আপন চাচার ছেলে।
ওকে বাসা থেকে বের করে দিলে
যাওয়ার জায়গা নেই। ওর তো আমার মত
চাচা আছে।কিন্তু আমার কেউ ছিল
না। আমি যখন কলেজ পাশ করলাম তখন ওর
বাবা কৃষিকাজ করে আমাকে টাকা
দিয়েছে। আজ আমি এত টাকার
মালিক। এতকিছু সবকিছু শুধু ওই
রাসেলের বাবার জন্য হয়েছে। একটু কষ্ট
করে সহ্য কর। দেখবি আসতে আসতে সব
ঠিক হয়ে যাবে।
-তুমি ওকে রাখবেই!! তাহলে থাক।কি
আর করা।
.
তিন
.
বিকেলে রাসেল তার চাচাত
বোনকে ডাকছে।
-তোমাকে চাচি ডাকছে।
-তুমি গিয়ে বলো আমি ফেসবুক
চালাচ্ছি।আর ফেসবুকে কাজ করছি।
তুমি মাকে গিয়ে বলো আমি আসতে
পারবো না।
-চাচিকে গিয়ে বলছি।
-এই দাড়াও। কাকে কি বোঝাচ্ছি?
গেয়ো ভুত। তুমি ফেসবুকের কি বুঝবে?
তোমাকে বলতে হবে না। তুমি যাও।
-আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
.
রাসেল বাসার ছাদে দাড়িয়ে আছে।
রুমকি তাকে গেঁয়ো ভূত বলে এতে তার
কিছু মনে হয় না। রুমকি আগের চেয়ে
দেখতে অনেক ভাল হয়েছে। আগের
চেয়ে রুপ বেড়েছে সাথে অহংকারও।
ধনী লোকের মেয়েরা অহংকার
করতেই পারে এটা কোন বেপার না।
.
রাসেল ছাদে আপন মনে দাড়িয়ে
আছে। তার আজ গ্রামের কথা মনে
পরছে। গ্রামের কথা মনে পরলেই
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সবকিছু শহরের মনে হলেও আকাশটাকে
গ্রামের মনে হয়। তাই মন খারাপ
থাকলে আকাশের দিকে তাকিয়ে
থাকে।
.
চার
.
রুমকি তার জগতে তার মত থাকে।
সবকিছু নিজের পছন্দ মত করে। ফেসবুকে
একজনের সাথে তার পরিচয় হয়েছে।
ছেকেটার লেখা ভাল লাগতে
ছেলেটাকেও ভাল লেগে গেছে।
অনেক ভেবেও যখন ডেখলো সত্যি
ছেলেটাকে ভালবাসে তখন
ছেলেটাকে মেসেজ দিল
-আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক
ভেবে দেখেছি তবুও তোমাকে
ভালবাসি।
-কি বলছো এইসব?
-যা বলছি ঠিক বলছি। আমি আমার ছবি
পাঠালাম। দেখ ভাল লাগে নাকি?
-এটা হয় না।
-কেন হয় না? আমি দেখতে খারাপ?
-তা না। তুমি কি আমাকে দেখেছ?
তুমি কি জানো আমি কেমন? কি করি?
আমার সম্পর্কে কতটুকু জানো?
-যেটুকু জানি তাতেই হবে।তুমি কি
আমাকে ভালবাসো?
-সেটা না হয় দেখা হলেই বলবো।
.
পাঁচ
.
রাসেল এই বাসায় আর থাকবে না বলে
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মেস ঠিক করা
হয়ে গেছে। তার এই বাড়িতে কেমন
যেন লাগে। তার চাচার ব্যাবহার
ভাল। কিন্তু রুমকির অপমানের পরিমাণ
মাঝে মাঝে বেশি হয়ে যায়। তার
চাচিও মনে হয় তাকে সহ্য করতে পারে
না। এটা আকার ইঙ্গিতে বোঝায়।
চাইলেই তো আর গ্রামের সবকিছু ভুলে
শহুরে হওয়া যায় না।
.
এই এক মাস কোনরকম কষ্টে কাটিয়েছে।
এখন আর তার পক্ষে থাকা সম্ভব না। তার
চাচাও এখন চায় না রাসেল এই বাসায়
থাকুক। তার চাচির প্রেমের কাছে
চাচাও হার মেনেছে। তার চাচা
প্রেম করে বিয়ে করেছে। তাই চাচির
মন রক্ষা করে। চাচা বলল
-চলে যখন যাবি। টাকা পয়সা লাগলে
বলিস। আমি দিবো।
-না কাকা।টাকা লাগবে না।আমি
টিউশানি যোগার করেছি। আর গ্রাম
থেকে টাকা পয়সা পাঠাবে।
-আমার উপর রাগ করিস না।আমি কি
করবো? কেউ চায় না তুই এখানে থাক।
আমি একা কি করবো? বল।
-আপনার কোন দোষ নেই।আপনি
পরিস্থিতির শিকার।
.
এই এক মাসে সবচেয়ে আপন করে
পেয়েছে আবুল মিয়াকে। কেউ তাকে
পছন্দ না করলেও আবুল মিয়া পছন্দ করে।
আবুল মিয়া বলল
-বাজান।আমারে ছাইরা যাইয়োনা।
-না চাচা। কেউ চায় না আমি এখানে
থাকি। তাই না থাকলেই ভাল হবে।
-আমি তো চাই। তুমি যাইয়োনা।
-আমার জন্য দোয়া করবেন কালকে
অথবা পরশু চলে যাবো।
-সবাই এমন কেন? আমার ছেকেকেও
আমি কষ্ট করে পড়ালেখা
শিখিয়েছি।এখন সে অনেক বড় সাহেব।
অনেক টাকার মানুষ। আমাকে চিনে
না।
-চাচা মন খারাপ করবেন না। সবই
নিয়তি। জিবনে নিয়তিকে মেনে
নিতে হয়।
-তোমার জন্য দোয়া করি বাবা।
জিবনে অনেক বড় হও।
.
ছয়
.
রুমকি ফেসবুকের সেই ছেলেটির সাথে
একমাস ফোনে কথা বলছে। একমাসের
মধ্যে অবেকবার দেখা করতে
চেয়েছে। কিন্তু রাজি হয় নি। আজ
ছেলেটি ফোনে বলল
-আমি তোমার সাথে দেখা করতে
চাই।
-সত্যি বলছো!!! কখন।কবে। কোথায়?
-এখনি দেখা করতে চাই।
-এই রাতে দেখা করবে?
-তুমি তো বলেছ আমার জন্য অনেক কিছুই
করতে পারবে। এই সামান্য কাজ করতে
পারবে না?
-কিন্তু রাতে...
-সমস্যা নেই।বেশি দুরে না। তুমি
তোমাদের ছাদে আসো।
-আচ্ছা আমি ফোনটা কাটছি না। আমি
এখনই ছাদে আসছি।
-আসো।
.
ছাদে এসে রুমকি বলল
-তুমি কোথায়?
-পিছনে ঘোরো।
-তুমি!!!!
-হ্যা।আমি। এই গেঁয়ো ভুত তোমার সেই
ফেসবুকের ভালবাসার মানুষ।
-কিন্তু তুমি ফেসবুক...
-তুমি কি ভেবেছিলে? সবকিছু শুধু
তোমাদের শহরের মানুষরাই পারে?
আমরা গ্রামের মানুষ কিছু পারি না।
শোনো আমরা গ্রামের মানুষও এই
ফেসবুক চালাতে পারি। আমরা
গ্রামের মানুষগুলো শহরের লোকগুলোর
থেকে কম নই। হতে পারি আমরা কম
শিক্ষিত।
-বুঝলাম। কিন্তু এতদিন দেখা করো নি
কেন? আর আমাকে ভালবাসতে চাও
নি কেন?
-কারন আমি গেঁয়ো ভূত।আমাকে
দেখলে তোমার পছন্দ হবে না।আমার
সবকিছু গেঁয়ো।কালকে তো চলে
যাচ্ছি। তাই তোমার আশাটা পুরন
করলাম। তোমার সাথে দেখা করলাম।
-যদি আমি তোমাকে এখনও ভালবাসি?
-কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসতে
পারবো না।
-কিন্তু কেন?
-আমাদের এ ভালবাসা হবে ক্ষনিকের
ভালবাসা হবে। কোনদিন বাস্তব রুপ
বিয়েতে পরিনত হবে না।
-আমাকে ভালবাসতে পারলে বিয়ে
করতে পারবে না কেন?
-আমি কোন শহুরে মেয়েকে বিয়ে
করে আমার আমার বাবা-মাকে ভুলে
যেতে চাই না। যেমন তোমার বাবা
ভুলে গেছে তার আপন ভাইকে।
-সবাই কি এক?
-ভালবাসা সব পারে। তোমার বাবা
কে পরিবর্তন করতে পারলে আমাকেও
পারবে।
-তাহলে কি করলে আমি তোমাকে
সারাজিবনের জন্য পাবো?
-পারবে এই শহুরে জিবন ছেড়ে গ্রামের
জিবনে বাস করতে?পারবে গ্রাম
গিয়ে আমার সাথে থাকতে?
-........
.
সাত
.
চার বছর পর....
রাসেল এখন গ্রামে বাস করে। তার
এলাকার একটি কলেজে চাকরি করে।
খুব ভালভাবে সংসার চলে। আর সে এখন
রুমকির সাথেই আছে।রাসেল
পড়ালেখা শেষ করে যহন গ্রামে চলে
আসে। রুমকিও সেদিন ভালবাসার
টানে শহুরে জিবন ছেড়ে গ্রামে চলে
এসেছিল।
.
রুমকি গ্রামে এসে শহরের মত সবসময়
বিদ্যুৎ পায় নি। শহরের অনেক সুযোগ
সুবিধা পায় নি।
কিন্তু পেয়েছে রাসেলের
ভালবাসা।যেই ভালবাসা হয়তো
শহরের ইট পাথরের মধ্যে খুজে পাওয়া
যায় না।
.
ভালবাসার জন্য মানুষ সব করতে পারে।
যদি সেই ভালবাসা হয় আসল
ভালবাসা।
.
লেখা-- Pabnar Tarcera Balok