লেখা:অস্পষ্ট আমি(আপন)
------------★-------------★------------
আপু আপু.... তোমাকে ঐ ভাইয়া টা
ডাকছে। মন একটা মিষ্টি কন্ঠ শুনে পিছু
ফিরে তাকায় নীলাদ্রি।
তাকিয়ে দেখতে পায় একটা ৬-৭
বছরে বাচ্চা নীলাদ্রির ওরনা
ধরে টানছে আর হাতের আঙুলের
ইশারায় একটা ছেলে কে
দেখিয়ে বলছে যে ছেলেটি
নাকি নীলাদ্রি কে ডাকছে।
নীলাদ্রি ছেলেটি কে দেখেই
চিনতে পারে। সে প্রতিদিন এই
পথ দিয়ে কোচিং থেকে
ফিরার সময় ছেলেটি বসে
থাকে ওর জন্য। দেখতে একটু
মাস্তান টাইপের। প্রথমে
নীলাদ্রি যেতে একটু ইতস্তত
করলে ও পরে ভাবে যে
ডেকেছে যখন তখন না গেলে
অভদ্র বলবে। তাই এগিয়ে যায় নীলাদ্রি।
--জী.. আমাকে ডেকেছেন?
(শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে
নীলাদ্রি)
--হ্যা ডেকেছি। গতকাল তুমি
এদিক দিয়ে যাও নি কেন?
(বাইকের উপর হেলান দিয়ে বসে
একটু ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করে
একটু মাস্তান টাইপের ছেলেটি)
--আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম।
হেটে যেতে সমস্যা হচ্ছিলো।
তাই অন্য ঐ রাস্তা দিয়ে
রিক্সায় করে গিয়েছিলাম।(একটু
ভয়ে ভয়ে বলে নীলাদ্রি)
--অসুস্থ মানে? কি হইছে তোমার?
(একটু আতংকিত হয়ে জিজ্ঞেস
করে ছেলেটি)
--কিছু না।
বলেই চলে যায় নীলাদ্রি। আর
পিছু ফিরে তাকায় না। কিন্তু
ছেলেটি তাকিয়ে আছে
নীলাদ্রির যাওয়া
পথের দিকে। নীলাদ্রি চলে
যাচ্ছে। ছেলেটির সাথে কথা
বলতে চায় না নীলাদ্রি। এটা
ভেবে ছেলেটির খুব কষ্ট হয় যে
নীলাদ্রি ছেলেটি কে
বিরক্তির চোখে দেখে।
ছেলেটির নাম নিলয়। নিলয়
ছেলেটি একটু মাস্তান টাইপের।
এলাকায় সবাই নিলয় কে ভয় পায়।
রাজনীতির ছত্র ছায়ায় থেকে
নিলয় বিভিন্ন অপরাধ করে। মানুষ
কে মারধর করে। বিভিন্ন
অসামাজিক কাজে লিপ্ত নিলয়।
মারামারি, চাঁদাবাজি এমনকি
এলাকায় ড্রাগসের ব্যবসা ও করে
সে। কিন্তু এত একটা খারাপ
মানুষের আরালে ওর সুন্দর একটা
মন আছে। আর সেই মনের
ভালোবাসা হিসেবে বেছে
নিয়েছে নীলাদ্রি কে। হ্যা
নিলয় নীলাদ্রি কে
ভালোবাসে। যেদিন প্রথম
নীলাদ্রি কে ওদের কলেজের
নবিন বরণে দেখেছিলো সেদিন
ই ভালো লেগে যায় নীলাদ্রি
কে। তারপর থেকে রোজ নিলয়
নীলাদ্রির আসা যাওয়ার
রাস্তায় অপেক্ষা করতো কখন
নীলাদ্রি এদিক দিয়ে যাবে।
একদিন নীলাদ্রি রাস্তা দিয়ে
যাচ্ছিলো। এমন সময় কিছু ছেলে
এসে নীলাদ্রি কে বিরক্ত করে।
ঠিক তখনি নিলয় এসে ওদের
সামনে দাড়ায়। ছেলে গুলো
ছিলো নিলয়ের বিপক্ষ দলের।
কিন্তু ছেলেগুলো নিলয় কে কিছু
না বলে চলে যায়। সেদিন ই প্রথম
নিলয় কথা বলেছিলো
নীলাদ্রির সাথে। এর আগে কথা
বলার সাহস পায় নি কখনও।
দুনিয়ার সবার সামনে নিলয় বাঘ
হয়ে যেতে পারে। কিন্তু
নীলাদ্রির সামনে নিলয় একটা
শান্ত ছেলে। সেদিন থেকে
নিলয় মাঝে মাঝে নীলাদ্রি
কে ডেকে কথা বলতে চাইলেও
নীলাদ্রি বিরক্ত হতো। কথা
বলতো না নিলয়ের সাথে। ঘৃণা
করতো নিলয় কে। নিলয় সেটা
বুঝতে পারতো। তবুও নিলয়
নীলাদ্রি কে ভালোবাসতো।
আজও নিলয় নীলাদ্রি কে
ফেলেছিলো। কিন্তু সে আজও
কথা বলে নি। নীলাদ্রির এ ঘৃণা
নিলয়ের সহ্য হচ্ছে না আর। সে
ভাবছে আবার দেখা হলে
নিজের মনের কথা খুলে বলবে
নীলাদ্রি কে।
পরদিন ঠিক একই সময় নীলাদ্রির
অপেক্ষায় নিলয় দাড়িয়ে আছে
সেই রাস্তার পাশে। আজ নিলয়
কে চেনা যাচ্ছে না। আগের মত
বড় চুল নেই। কানে জিনিস নেই।
গলায় মোটা মোটা চেন আর
হাতে ব্রেসলেট ও নেই। শার্ট এর
বোতাম ও আজ ঠিক ভাবে
লাগিয়েছে নিলয়। দেখে মনেই
হচ্ছে না যে এ নিলয় ই এলাকার
সেই মাস্তান নিলয়। নিলয় আজ
সুন্দর, পরিপাটি ও খুব ভদ্র সেজে
এসেছে। কারণ আজ সে
নীলাদ্রি কে ওর মনের কথা
বলবে। একটু পরেই নীলাদ্রি
আসে। কিন্তু একটা বারও তাকায়
নি নিলয়ের দিকে। নিলয়ের
সামনে দিয়ে চলে যাবে ঠিক
এমন সময় নিলয় নীলাদ্রি কে
থামায়.....
নিলয়:- নীলাদ্রি, একটু শুনবে?
(বিনয়ের সুরে)
নীলাদ্রি : কি বলবেন
তারাতারি বলুন। (নিচের দিকে
তাকিয়েই বলে নীলাদ্রি)
--নীলাদ্রি আমি গুছিয়ে কথা
বলতে পারি না। ঘুরিয়ে
পেচিয়েও বলতে পারি না।
তাই সরাসরি বলছি। নীলাদ্রি
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
--আর কিছু বলবেন?
--নীলাদ্রি, আমার কথা তুমি
বুঝতে পারো নি?
--বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমার
পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা
সম্ভব না। কারণ কোন গুন্ডা কে
আমার বাবা মা মেনে নিবে
না। আর আমি তো না ই।
--নীলাদ্রি, এই দেখ, আজ আমি
আর সেই আগের নিলয় নেই। আমি
নতুন এক নিলয়। তুমি চোখ তুলে
দেখো। আমি ভালো হয়ে
গিয়েছি নীলাদ্রি। তোমার
ভালোবাসা পেলে আমি সম্পূর্ণ
ভালো হয়ে যাবো নীলাদ্রি।
--কিন্তু আমি আপনাকে
ভালোবাসতে পারবো না। আজ
হয়তো আপনি ভালো হওয়ার নাটক
করছেন। কিন্তু কাল আবার আগের
মতই হয়ে যাবেন। কারণ কুকুরের
লেজ কখনও সোজা হয় না। কুকুর কুকুর
ই থাকে।
--নীলাদ্রি আমি কথা দিচ্ছি,
আমি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবো।
আর কখনও বাজে পথে পা
বাড়াবো না। বিশ্বাস করো
আমাকে।
--এর পর থেকে আপনাকে এখানে
না দেখলেই আমি বেশি খুশি
হবো।
বলেই নীলাদ্রি চলে যায়
নিলয়ের সামনে দিয়ে। নিলয়
তখন চোখের পানি আটকাতে
পারছিলো না। যাও জীবনে
প্রথম কাওকে
ভালোবেসেছিলো কিন্তু
পেলো না ওর এই নোংরা
জীবনের কারণে। নিলয় ভাবে
সে আর নীলাদ্রির সামনে
গিয়ে দাড়াবে না। নীলাদ্রি
ওর নিজের মত করেই থাক। যেদিন
নিজেকে পুরপুরি ভালো করতে
পারবে তখনই নীলাদ্রির সামনে
এসে দাড়াবে নিলয়। সেদিন
থেকেই নিলয় নামের মাস্তান
ছেলেটা ঐ এলাকা থেকে
কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
এখনও নীলাদ্রি প্রতিদিন এই
রাস্তা দিয়ে যায়। কিন্তু
নীলাদ্রি সেই আগের মত মাথা
নিচু করে যায় না। ওর চোখ দুটু
চঞ্চল হয়ে এদিক ওদিক কি যেন
খুঁজে বেরায়। হ্যা, নীলাদ্রি
নিলয় কে খুঁজে। বেশ কিছুদিন
যাবত নিলয় কে না দেখে
পাগলের মত এদিক ওদিক খুঁজতে
থাকে নীলাদ্রি। কিন্তু
কোথাও পায় না। কার কাছে
যেন শুনেছিলো যে এলাকার
মাস্তান নিলয় নাকি হঠাৎ উধাও
হয়ে গিয়েছে। হয়তো
বিরুধিপক্ষের কেউ মেরে
ফেলেছে। কথাটা শুনে খুব
চিন্তায় পরে যায় নীলাদ্রি।
আসলে নীলাদ্রিও নিলয় কে
মনে মনে ভালোবাসতে শুরু
করেছিলো। কিন্তু সেই
ভালোবাসা প্রকাশ করছিলো
না। কারণ কখন নিলয় কে
হারাতে হয় এই ভয়ে। নিলয়ের
জন্যই নীলাদ্রি প্রতিদিন এই
রাস্তা দিয়ে কোচিং এ যেত।
এখনো রোজ যায় এই ভেবে যে
যদি কখনও নিলয় ফিরে আসে। এমন
করে প্রায় ছয় মাস কেটে যায়। তবু
নিলয় কে খুঁজে পায় নি
নীলাদ্রি। তখন নীলাদ্রি
ভেবেই নিয়েছিলো যে নিলয়
আর বেঁচে নেই। কিন্তু তবুও নিলয়
কে একবার দেখার আশায় এই
রাস্তা দিয়েই যায় নীলাদ্রি।
তেমনি একদিন বিকেলে
নীলাদ্রি ফিরছিলো কোচিং
থেকে সেই রাস্তা দিয়েই। সেই
আগের মতই চঞ্চল হয়ে ওর চোখ দুটু
খুঁজে বেরাচ্ছিলো নিলয় কে।
ঠিক তখন দূরে একটা ছেলে কে
দাড়িয়ে থাকতে দেখে
নীলাদ্রি। নীলাদ্রি আস্তে
আস্তে হেটে যায় সেদিকে।
একটু কাছে গিয়ে নিলয় কে
দেখেই চিনতে পারে
নীলাদ্রি। যতই কাছে যাচ্ছে
চোখ দুটু যেন আরো ঝাপসা হয়ে
আসছে নীলাদ্রির। একসময়
নীলাদ্রি গিয়ে নিলয়ের
সামনে দাডায়। হঠাৎ আকাশ
বাতাস কাঁপিয়ে ঠাস করে
একটা শব্দ হয়। পথের কিছু পথিক
দেখতে পায় একটা ছেলে
গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে
আছে। কিছু লোক উৎসাহ নিয়ে
দেখতে আসে এখানে কি হচ্ছে।
আবার কেউ আসছে এই ভেবে যে
ছেলেটা হয়তো মেয়েটা কে
কিছু বলেছে। লোকজন কাছে
এসেই নীলাদ্রি কে জিজ্ঞেস
করে কি হয়েছে। নিলয় তখন
মাথা নিচু করে ছিলো।
লোকজনের প্রশ্নের জবাবে
নীলাদ্রি বলে যে "এটা
আমাদের স্বামী স্ত্রী র বেপার।
আপনারা এর মাঝে না আসলে
খুশি হই।" কথাটা শুনেই অবাক হয়ে
মাথা উঁচু করে তাকায় নিলয়।
নিলয় কে দেখে সব লোকজন
দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে।
কিন্তু নিলয়ের সেদিকে কোন
লক্ষ্য নেই। নিলয় তাকিয়ে আছে
শুধু নীলাদ্রির দিকে। আর
নীলাদ্রি লজ্জায় নিজের মুখটা
লুকুয় নিলয়ের বুকে।