মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৭৬- একটি ভালবাসার জন্য

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে
অরনা।সাদাসিধে মধ্যবৃত্ত ঘরের মেয়ে।
এইতো দুই বছর আগেও মেয়েটা ছিল তার
বাবার একমাত্র সম্ভল।এখন সব কিছুই যেন
অতীত। আজ প্রায় দুইবছর ধরে সেই পুরানো
অরনাকে এখন আর দেখতে পাওয়া যায়
না তার আগের রুপে।দুই বছর অনেক দিন,
অনেকটা সময়।তবুও কিছু অতীত যেন আজও
নতুন তার কাছে।রুপের দিক থেকে
অরনাকে বলা যেতে পারে
নাটোরের বনলতা সেন।কিন্তু সেই
রুপের সৌন্দ্রয আজ আর কাওকেই দেখতে
ইচ্ছা হয় না তার।এখন আর যেন দুষ্টুমি
করতে ভাল লাগে না।অরনা এখন বাইশ
বছরের যুবতী মেয়ে।তাকেঘিরেই
রয়েছে তার বাবা মা।কিন্তু তার মনে
আজ নেই কোন শান্তি, নেই কোন।
সুখ,আছে না পাওয়ার যন্ত্রণা।
এই দুই বছর আগের কথা। ইন্টারমিডিয়েট
এক্সাম শেষ হয়েছে।বাবা তাকে নতুন
একটা ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে।আজ
অরনা অনেক খুশি নতুন ল্যাপটপ পেয়ে।
অরনার ফেসবুকের প্রতি প্রচণ্ড নেশা
ছিল। নেশাটা তৈরী হয়েছে তার
বান্ধবীদের থেকে।বাসায় ফেসবুক
চালানোর মত তেমন কিছু না থাকায়
সেই সপ্ন টা যেন সপ্নই থেকে যায়।
কিন্তু আজ সে ইন্টারনেট জগতে নাম
লিখাবে।লিখিয়ে ফেললল তার নাম।
ফেসবুকের তার নাম অরনা খন্দকার।
নিজের একটা সুন্দর সেলফি হল তার
ফেসবুকের প্রোফাইলের প্রোফাইল
পিকচার।নিজের মনের মতন করে
ফেসবুকটা কে সাজিয়ে নিল সে।
অনেক বন্ধু ও হয়ে গেল তার। দিন গুলি খুব
ভাল ভাবেই যাচ্ছে তার।বিশেষকরে
সময় গুলি কিভাবে চলে যাচ্ছে অরনা
বুজতেই পারছে না।এভাবেই
একমাস..........
ইদানীং ফেসবুকের অনলাইনে
অরনাকে দেখা যায় না ঠিক ই কিন্তু
অরনার সাথে চলে আদ্র মেসেজিং।
আদ্র লন্ডন প্রবাসী। ওখানের একটা
প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে
কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে এম.এস
করছে। অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।
অরনা আর আদ্র প্রতিদিনই মেসেজিং এ
কথা বলত।আস্তে আস্তে সেটা থেকে
ফোন নাম্বার আদান প্রদান হয়।এখন আর
অরনা কে ফেসবুকে পাওয়া যায় না।
এখন রাতে আদ্র কে সময় দেয় সে।
প্রতিদিন রাত ১২ টা থেকে রাত দুইটা,
তিনটা অথবা সারারাত তারা কথা
বলে।এভাবেই তারা একে অপর কে
ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে।
আদ্র অরনাকে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলে।
এভাবেই চলতে লাগল আট টি মাস।
অরনা এখন আদ্রকে সামনে থেকে
দেখে নি।অরনা আদ্র কে দেখার জন্য
পাগল হয়ে পড়ল।অরনা ভাবতো "যে
মানুষটা আমাকে না দেখেই এতটা
ভালবাসতে পারে সে আমার কাছে
মানুষ না।"আসলেই তাই।
আদ্র ও মরিয়া হয়ে উঠেছে অরনাকে
দেখতে।এভাবেই কেটে গেল আরো
দুটি মাস।
আজ আদ্র দেশে আসবে।অরনা পৃিথবীর
মধ্যে আজ অনেক খুশি একজন মানুশ।আর
কয়েক দিনের মধ্যে অরনা আদ্রকে
দেখতে পাবে।সব কিছুই ঠিকঠাক।আদ্র
এখন দেশে।আগামী পরশু ওরা দেখা
করবে।
আগামী পরশু একটা বিশেষ দিন। পহেলা
ফাল্গুন। ওরা ঠিক করল ওরা শাহবাগে
দেখা করবে তারপর সারা ঢাকা শহর
রিক্সা নিয়ে ঘুরবে।
আজ পহেলা ফাল্গুন।সকাল সাড়ে নয়টা
বাজে। অরনা অপেক্ষা করছে আদ্রর জন্য।
অপরুপ সুন্দর লাগছে অরনাকে। হলুদ
শাড়ীতে যেন অরনা কে কেউ বলবেই
না ও এই জগতের কেউ।চুলগুলি খোলা
থাকায় যেন আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
আদ্র রিক্সা থেকে নেমেই অরনাকে
ফোন দেয়।প্রথম দেখাতেই আদ্র যেন
আরেক বার প্রেমে পড়ে গেল।আদ্র
বিশ্বাস করতে পারছিল না যে এটাই
অরনা।তারপর সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরি,
আনন্দময় দিন কাটালো তারা।তাদের
ভালবাসাটা যেন আরো বেড়ে গেল।
প্রতিদিনই বিকেল বেলা তাদের
দেখা যেত ঢাকা বিশব্বিদ্যালয়ে না
হলে কোন রেস্টুরেন্টে অথবা
দিয়াবাড়ীর কোন একজায়গায়।
এভাবেই কেটে গেল দুটি মাস.........
আজ সতেরোই এপ্রিল।আজ অরনার
জন্মদিন।আদ্র অরনাকে ফোন করলো।
আদ্র অপেক্ষা করছে অরনার জন্য।অরনা
এসে দেখলো আদ্র তার জন্য একটা ছোট
কেক নিয়ে একটা নীল পাঞ্জাবী
পরে দারিয়ে আছে।কেক কেটে
অরনার জন্মদিন পালন করলো। যদিও খুবই
ছোট খাট একটা পার্টি হলেও তার
মধ্যে ভালবাসার কোন কমতি ছিল না।
আদ্র অরনাকে একটা আংটি পড়িয়ে
দিল। আর রিটার্ন গিফট হিসাবে একটা
জিনিস চাইলো। অরনা আদ্রকে সব
দিতে রাজি। কারন অরনা আদ্রকে প্রচুর
ভালবাসত।আদ্র অরনাকে বল্ল সে যেন
সারাজীবন আদ্রর হয়েই থাকে।কথাটা
খুব ছোট কিন্তু দায়িত্ব টা অনেক বড়।
অরনা তাকে প্রমিস করলো সে শুধুই
আদ্ররই থাকবে।
আজ আদ্র হাসপাতালে।অরনা তার
পাসেই বসে আছে।বাকরুদ্ধ আদ্র অরনার
হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে।অরনার
চোখে জল গড়িয়ে পরছে আদ্রর হাতে।
অরনা কিছুই বলতে পারছে না। সুধু
কেদেই যাচ্ছে।আজ সতেরো দিন আদ্র
কোমায়।ডান পাশে অরনা আর বা
পাসে আদ্রর পরিবার।আদ্রর ব্রেইন
ক্যান্সার। একবারে শেষ সময়।চোখ
দুইটির নিচে কালো দাগ পরে গেসে,
মুখ টা কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে
গেসে।অরনা আদ্রর দিকে তাকিয়ে
অবিরাম কেদে চলেছে হঠাৎ অরনার
হাতটা আদ্র আরো শক্ত করে ধরে চাপ
দিল। অরনা কিছুই বুঝে উঠার আগেই
চলে গেল আদ্র। সাথে সাথেই অরনা ও
তার হারিয়ে ফেলল তার
ভালবাসাকে, তার সপ্নকে।
তার পর থেকেই অরনা শান্ত হয়ে
গেসে,এখন সুধু বিষননতা কে আর তার
ভালবাসার কিছু সময় কে নিয়েই
বেচে আছে সে।আর প্রতিনিয়ত সে
তার কথা রেখে চলেছে যা সে
আদ্রকে দিয়েছিল। এখন অরনা আদ্র র ই
আছে আর হয়তবা সারাজীবন এভাবেই
থাকবে।