লেখা:- নিশ্চুপ হিমু
টিএসসির রাস্তায় খালি পায়ে
হাটছি, পকেটে মাত্র পাচ টাকা আছে
আমার।সময় দুপুর দুই টার কাছাকাছি
পেটে ক্ষুধা লেগেছে প্রচুর।
ভাবছি আজকে আর দুপুরে কিছু
খাবনা, ৪টাকায় একটা সিগারেট আর
দুই গ্লাস পানি গেয়ে দুপুরের ক্ষুধা কাটাব।
তারপর আধঘণ্টা হেটে মেসে যাব
গিয়েই লম্বা একটা ঘুম দেব রাত ৮
টার সময় উঠব অবশ্য লম্বা সময়
ঘুমানোর একটা অভ্যাস আছে আমার।
তারপর ঘুম থেকে উঠে রহিম চাচার
হোটেল থেকে হালকা খাওয়া
দাওয়া করে জোসনা দেখতে বের হব
আর সারা রাত ঘুরা ঘুরে জোসনা
দেখব। এগুলো ভাবতে ভাবতে একটা
দোকানের সামনে গেলাম সেখান
থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে
দিলাম।পাচঁ টাকার নোটটা দিলাম
দোকান ধারাকে সে আমায় এক টাকা
পিরতে দিচ্ছে আমি বললাম থাক
লাগবেনা রেখে দেন এই বলে
বেরিয়ে পড়লাম।আমি আর পিছন ফিরে
তাকালাম না সোজা হাটতে
লাগলাম গন্তব্য মেস তবে কোন
দোকান থেকে চট করে দুই গ্লাস
পানি খেতে হবে। সিগারেট টানছি
আর হাটছি গরম রাস্তায় খালি পায়ে
হাঁটায় এক রকম মঝা আছে যে কউ তা
বুঝেনা। হাঠৎ আমার ভাঙ্গা চুরা
মোবাইলা টা চিৎকার করে ঢাকা
ঢাকি শুরু করে দিল। আমি জানি এখন
এক মাত্র মিথিলা ছাড়া আর কেউ
আমাকে ফোন দিবেনা। ফোন দিয়ে
জিজ্ঞেস করবে আমি কোথায়?
দুপুরের খাবার খেয়েচি কিনা?
রোদের মধ্যে যেন হাটা হাটি না
করি আর হাজার কথা। ফোনটা হাতে
নিয়ে দেখি ৪টা মিসড কল ভাবনার
মাঝে এত হারিয়ে গেছি যে ভুলেই
গেছি মিথিলা ফোন করেছে। আবার
ফোনটা বেজে ওঠলো এবার ধরলাম। হ্যাল
মিথিলা: হ্যাল" তুমি কোথায়?
দুপুরে খেয়েছ? হুম খেয়েছি, এখন মেসে ""তুমি
খেয়েছ?। মাঝে মাঝে আমি ওকে
মিথ্যা বলি এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছো
মিথিলা: হুম" তুমি কি আজ আমার
সাথে দেখা করবে বিকেলে?
দেখা করব তবে বিকেলে না রাত
১০টায় তোমাদের বাড়ির বারান্দায়।
মিথিলা:কি পাগল নাকি? এত রাতে
কেউ দেখা করে? আমি পারবো না এত
রাতে দেখা করতে।
আমি কিন্তু ১০টা বাজে তোমাদের
বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকব
তোমাকে দেখার জন্য। তুমি নিল
কাপড় পড়ে কপালে নিল টিপ দিয়ে
আমার জন্য অপেক্ষা করবে আমি
আসব।
মিথিলা: তুমি এর আগেও আসবে বলে
আসনি আজ ও আসবেনা আমি জানি। তাই আমি সাজব না।
আমি আসবে আজ সত্যি সত্যি। তুমি
আমার জন্য অপেক্ষা কর। এই বলে
ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ
করে দিলাম। আপন জনের সাথে বেশি
কথা বলতে নেই তা হলে মায়া বেড়ে
যায়া। ময়া খুব খারাপ জিনিস এটা
থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করি
আমি। মেসের সামনে চলে এসেছি হাটতে
হাটতে, রাস্তার পাশের দোকান
থেকে দুই গ্লাস পানি খেলাম
খেয়ে মেসে ঢুকে গেলাম। আমার
ছোট্ট ঘরটায় গেলাম মোটামুটি
অন্ধকার ঘর আলো আসার তেমন
বেবস্থা নেই দরজা দিয়ে যা টুকু
আসে। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে
দিলাম এখন পুরপুরি অন্ধকার খেলা
করছে আমার ছোট্ট ঘরে। বিছানায়
গিয়ে শুয়ে পড়লাম এখন একটা কিছু
নিয়ে ভাবতে হবে ভাবতে ভাবতে
ঘুমিয়ে পড়ব।ভাবছি আজ মিথিলাকে
দেখতে কেমন লাগবে চারদিকে
জোসনা জোসনার আলোয় ওকে
দেখতে ঠিক রাত পরি দের মত লাগবে।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে
পাড়লাম বুঝতে পারলাম না যখন ঘুম
ভাঙ্গল তখন ঘরে পুর আধার শুনশান
নিরব। মোবাইল টা খুললাম দেখলাম
৮:০৫ মিনিট তার মানে ৫মিনিট
বেশি ঘুমিয়েছে বেপার না। এখন
ওঠতে হবে হারুন চাচার হোটেল
গিয়ে বাকিতে কিছু খেতে হবে।
তাই বিছানা থেকে ওঠলাম ওঠে
বাইরে এলাম ঢাকা শহর এখন আলোর
সাজে সজ্জিত পুর শহরে আলো
খেলা করছে।আকাশে যে জোসনা
আছে তা বুঝা সত্যি বড় দায়।
হাটতে হাটতে হারুন চাচার
হোটেলে গেলাম চাচা আমাকে
দেখে বলল। কি বাপ জান কেমন আছ?
সারা দিন দেহি নাই যে?
চাচা ভালো আছি, আর এতখন ঘুমিয়ে
ছিলাম। আপনি কেমন আছেন? ব্যবসা
কেমন চলছে?
হ বাপ জান সব ভাল, আমি আমার
ব্যবসা। বহ কি খাইবা?
ভাত থাকলে ভাত দিন আর সাথে যে
কোন তরকারি।
আইচ্ছা বাপজান। বলে তিনি এক
ছেলে কে ডেকে বলল আমাকে ভাত
তরকারি দিতে যা আছে।
তারপর ও আমাকে ভাত আর তরকারি
দিয়ে গেল
আমি সাথে সাথে খাওয়া শুরু করে
দিলাম খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওঠে
চাচার কাছে গেলাম। চাচা লিখে
রাখেন টাকা হলে দিয়ে দিব।
চাচা হাসি মুখে বললেন আইচ্ছা
বাপজান।
সত্যি লোকটা অনেক ভাল অনেক
টাকা হয়েছে ওনার হোটেলে আমার,
তবু কিছু বলেন না শুধু হাসেন আর
বলেন আইচ্ছা।
হোটেল থেকে বের হলাম রাত ৯টার
কাছা কাছি আকাশে চাদ আছে
কিন্তু জোসনা এখোনো পুর পুরি
বুঝা যাচ্ছেন। তবে দশটার দিকে
মোটামুটি বোঝা যাবে আর তখনি
আমি মিথিলার সাথে দেখা করতে
যাব। যদিও সে বলেছে সে দেখা
করতে পারবেনা তবু আমি জানি সে
ঠিকি আমার জন্য দাড়িয়ে থাকবে
সুন্দর করে সাজবে আমার জন্য।
আমি ঢাকা শহরের আলোকিত
রাস্তা গুলোর পাশ ধরে হাটছি আর
কত বিচিত্র মানুষের হাটা চলা
দেখছি।প্রায় এক ঘন্টা যাবত হাটতে
হাটতে মিথিলাদের বাড়ির সামনে
চলে আসলাম। আর একটু গেলেই ওদের
বারান্দা দেখা যাবে। এখন অবশ্য এই
ব্যস্ত শহরে অনেক খানি জোসনা
ছড়িয়েছে। আমি ওদের বারান্দার সামনে গিয়ে
একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে
গেলাম আর দেখলাম মিথিলা
বারান্দায় দাড়িয়ে আছে আর আমার
মোবাইলে ট্রাই করছে আমি এখানে
আসার আগেই আমার মোবাইল বন্ধ করে
রেখেছি। সে শুধু মোবাইল কানে
নিচ্ছে আবার চোখের সামনে আনচে
আর বাইরে দিকে দেখছে যদি আমি
দাড়িয়ে থাকি। কিন্তু আমি
ঝোপের আড়ালে দাড়িয়ে আছি আর
ওকে দেখছি।চাদরে এক পালি আলো
এসে পড়ছে ওর আনিন্দ সুন্দর
মুখটিতে। যেন এক নিল পরি আমার
সামনে দাড়িয়ে আছে, সোন্দর্যের
দেবতা যেন ওকে তৈরি করতে একটু
খানি কৃপণতা ও করেন নি।জোসনার
আলো যেন আজ ওর সোন্দর্যের কাছে
হার মানচে। চাদরে আলোয় ওর
অস্থিরতা যেন ওর সোন্দর্যে কে
আর বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওর
সামনে গিয়ে দাড়াই ওক বলি"
"""এসো বন্ধু আজ তোমায় আমি নিয়ে
জোসনা বিলাস করব "তোমার হাতে
হাত রেখে পাড়ি দেব আমি অন্তিম
সপ্নের পথ ""তোমার চোখে একে দেব
আমার রাত জাগা সপ্ন গুল, ""
ভালবাসা দিয়ে তোমায় গড়ে দেব
এক সুখের নীড় "" এসো বন্ধ তুমি
এসো""
কিন্তু সেটা আমি করবো না কারণ
ভালবাসার মানুষের থেকে দূরে
থাকলে তার প্রতি ভালবাসা অনেক
খানি বেড়ে যায়। তাকে দেখার
জন্য যে ইচ্ছে জন্মে সেই ইচ্ছে
থেকেই তার প্রতি ভালবাসা
সৃষ্টি হয় আর তা আসতে আসতে
বাড়তে থাকে। সব সময় দেখলে
ভালবাসা খুব বেশি বুঝা যায়না।
প্রায় ১১টার কাছাকাছি হয়ে গেছে
মিথিলা বুঝে গেছে আজ আর আমি
আসব না তাই সে চলে গেছে আর মনে
মনে ভাবছে সত্যি একটা পাগল আমি।
আমিও এবার রাস্তায় ওঠে হাটা
শুরু করলাম রাস্তাটা এখন
মোটামুটি নিরব। আজ চাদটা খুব
ভাল ভাবে নিজেকে বিলিয়ে
দিয়েছে প্রকৃতির মাঝে।জোসনা
বৃষ্টি হচ্ছে এই ইট পাথরের শহরে
আজ অনেক বেশি জোসনা বৃষ্টি
হচ্ছে। আর আমি এই জোসনা
বৃষ্টিতি ভিজবো আর গুরে
বেড়াবো এই নিস্তব্ধ শহরে।