নুঝহাত এবং রিগানের প্রথম পরিচয় হয়
ফেসবুকে।কে প্রথম ফ্রেড রিকোয়েস্ট
পাঠিয়েছিল, কেউই সঠিক ভাবে
বলতে পারবে না।
রিগানের ফেসবুক স্ট্যাটাস গুলো ছিল
একটু বেদনা দায়ক। রিগানের এই
স্ট্যাটাস গুলোই নুঝহাত কে প্রথম দিকে
অাকৃস্ট করে।তাই নুঝহাত, রিগানের
একটা স্ট্যাটাস এ কমেন্ট করে।
রিগানের সাথে নুঝহাতের প্রথম কথাই
হল, "এই ভাইয়া, তোমার কি খুব কস্ট। "
এই কথার পরই রিগান নুঝহাত এর আইডি
টা চেক করে। প্রথম ফেক ভেবে এড়িয়ে
যায়।
কিন্তু কি ভেবে যেন, রিগান প্রথমে
নুঝহাতকে মেসেজে নক করে।
রিগান : হায়
নুঝহাত :হ্যালো
রিগান :আচ্ছা, আমরা কি পরিচিত
হতে পারি?
নুঝহাত :hmm...পারি।আমি নুঝহাত,
আপনি?
রিগান :আমি রিগান। এসএসসি ব্যাচ।
আপনি এবার কিসে পড়েন?
নুঝহাত :আমি ও তো এসএসসি দিচ্ছি।
তুমি কোন গ্রুপ থেকে এক্সাম দিচ্ছ?
এভাবেই আপনি থেকে তুমিতে চলে
আসা।
রিগান : সাইন্স, তুমি?
নুঝহাত : আমি ও তো সাইন্স। গ্রেট,
তোমার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো
লাগল।
রিগান : hmm...আমার ও।
নুঝহাত : আচ্ছা, আজকের জন্য বাই।
মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে।
রিগান : ওকে।
এভাবেই চলে যায় রিগান আর
নুঝহাতের সময়। রিগান ফেসবুকে এসে
প্রথমেই চ্যাট লিস্ট চেক করে দেখে,
নুঝহাত চ্যাটে আছে কি না? এভাবেই
ঘন্টার পর ঘন্টা দু'জনে চ্যাট করে সময়
পার করে দেয়।রিগান এক সময় নুঝহাত
কে বন্ধুত্ব এর প্রোপস করে।নুঝহাত ও
রিগানের প্রপোজ একসেপ্ট করে।এরপর
থেকেই ওদের দুজনের চ্যাটের পরিমাণ
অনেক বেড়ে যায়। এক সময়, নাম্বার ও
ছবি দুটোই আদানপ্রদান হয়ে যায়।
নুঝহাতের ছবি দেখে রিগানের
ভালো লাগে।নাম্বার দেওয়ার পর
থেকে চ্যাটের থেকে মোবাইলেই
বেশি কথা হতো।রিগানের সকালের
ব্রেকফাস্ট অনেক দেড়িতে করত।কিন্তু
নুঝহাত এই ব্যাপার টা জানার পর
থেকেই রিগানকে সময় মত ব্রেকফাস্ট
করতে বলত, না করলে ফোনে কথা বলত
না।রিগান ও নুঝহাতের কথা রাখত।
এভাবেই ওরা ওদের লাইফের ভালো
সময়টা পার করতে লাগল।
রাতের আকাশের জোস্না, নুঝহাতের
খুব প্রিয়। রিগান এই ব্যাপার টা
জানার পর থেকে, রাতে নুঝহাতের
সাথে কথা বলার সময় স্কুলের ছাদে
চলে যেত । ওখান থেকে রাতের
জোস্নাকে খুব ভালো দেখা যেত ।
রাতের আকাশের চাদটাকে মনে হত
সোনার থালা। সময় টা শীতকাল
হওয়ায়, নুঝহাত রিগানকে ছাদে
যাওয়ার জন্য মানা করতো।কিন্তু
রিগান সবসময় বলত, প্রিয় মানুষের
সাথে কথা বলতে হলে তার প্রিয়
জায়গাতে দাড়িয়ে কথা বলতে হয়।
এই কথা শুনার পর থেকে নুঝহাত
রিগানের নতুন নাম দেয়, পাগল। নুঝহাত
রিগানের সাথে কথা বলার সময়, সবসময়
বলত পাগল একটা। নুঝহাতের এই পাগল
শব্দটা রিগানের ভালোই লাগত।
নুঝহাতের আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিল
রিগানের কথায় কথায় হাসা। এই
হাসিটাই ছিল রিগানের সবচেয়ে
প্রিয়। রিগান এই হাসিটাকে খুব
ভালোবেসে ফেলল।সাথে সাথে
মানুষটাকে ও।
আজ ওদের দুজনেরই এক্সাম শেষ । রিগান
আজ খুব খুশি আজকে রাতেই, রিগান
নুঝহাতকে ভালবাসি কথাটা বলবে।
রাতে নুঝহাতের সাথে রিগানের
কিছুসময় ফেসবুকে চ্যাট হয়।
ঠিক রাত এগারটার সময় রিগান,
নুঝহাতকে ফোন দেয় ।
রিগান : হ্যালো, কেমন আছো?
নুঝহাত : hmm....ভালো।তুমি কেমন
আছো? এই শুনো, শুনো এক্সাম কেমন
হইছে?
ড়
রিগান : আরে বাবা, একসাথে এত প্রশ্ন
করলে answer দিব কিভাবে?
নুঝহাত : আচ্ছা, প্রথমে বল, তুমি কেমন
আছ?
রিগান : hmm...ভালো আছি। এক্সাম ও
ভালো হয়েছে।
নুঝহাত : এই তোমাকেত এখন একটা প্রশ্ন
করেছি, তাহলে দুটোর answer দিলে
কেন?
রিগান : একটা বোনাস।
নুঝহাত :ও আচ্ছা। এখন কি কর?
রিগান : এইতো, তোমার ফেবারিট
প্লেছে দাড়িয়ে আছি।
নুঝহাত :এই তোমাকে না কতবার না
করেছি যে ছাদে যাবে না। তোমার
এভাবেই ঠান্ডা, আবার শীতের ভিতর,
দাড়িয়ে আছ? এই তোমাদের ছাদে
রেলিং আছে?
রিগান: আচ্ছা, আবার ও একসাথে এত্ত
গুলো প্রশ্ন?
নুঝহাত : ওকে বাবু, এখন বল তোমাদের
ছাদে রেলিং আছে কি না?
রিগান : না বাবু নাই
নুঝহাত : তাহলে লক্ষিটি, এখনই ছাদ
থেকে রুমে চলে যাও, please.
রিগান : hmm..যাচ্ছি মহারাণী। তার
আগে একটা কথা তোমাকে বলতে চাই।
নুঝহাত : এই মিস্টার, এত ভণিতা না
করে বলে ফেলেন।
রিগান : এই আমি ভণিতা করছি?
নুঝহাত : তা নয়ত কি?
ফোনে কথা বলতে বলতে কখন যে
রিগান ছাদের কিনারে এসে
দাড়িয়েছে, নিজে ও বলতে পারবে
না।
নুঝহাত : এই রিগান, তুমি না কি বলবে?
রিগান : এই নুঝহাত, আমি না তোমাকে
খুব """"""""""""
নুঝহাত : খুব কি?
রিগান : না থাক, অন্য আরেকদিন বলব।
নুঝহাত : না আজকেই বলতে হবে।
রিগান চোখ বন্ধ করে মনে মনে সাহস
সঞ্চার করে। রিগান ফোনে নুঝহাতকে
এক দমে সব বলতে থাকে,,,
রিগান : এই নুঝহাত তোমার হাসিটা খুব
সুন্দর। তোমাকে অন্নেক ভালবাসি। এই
জোস্না রাতে তোমার হাতটা কি
আমার whole লাইফের জন্য ধরতে পারি?
এই লাইনগুলো বলততেই রিগান
হাফিয়ে যায় ।অপর পাশ নিশ্চুপ।
নুঝহাত : hmm....আমি ও তোমাকে
ভালবাসি। আমি হাত বাড়িয়ে
দিয়েছি, আমার হাতটি শক্ত করে ধর
রিগান।
এই লাইন গুলো শুনতে রিগানের খুব
ভালো লাগছে।কিন্তু কখন যে ছাদের
শেষ সীমানায় চলে এসেছে, সে
বলতেই পারবে না। নুঝহাতের কথা
গুলো তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেছ,সে
যে একটা রেলিং বিহীন ছাদে
আছে, হয়তো এই কথাটা ভুলেই গেছে।
কথা বলতে বলতে সামনের দিকে
এগুচ্ছে, আরেকটু, আরেকটু, সামনে শুধু
শুণ্যতা। রিগান সেই শুণ্যতাকে বড়ন করে
নিল। আকাশে কোন মেঘ নাই, আজকে
খুব ফকফকা জোস্না। কি ভয়ংকর সুন্দর
সেই জোস্না ।
নুঝহাত : এই রিগান, কি হইছে তোমার
কথা বলছ না কেন, ফোন কেটে গেল
নাকি। এই রিগান, চিতকার কিসের।এই,
এই তোমার কি হইছে। ধ্যাত, ফোনটা
কেটে গেল।
রাত দুটা, হোস্টেলের সব ছাত্ররা আজ
সজাগ। রিগানের কিছু বন্ধু এবং স্যার
রিগানকে নিয়ে হাসিপাতালে
গেছে। রিগানের ফ্রেন্ডসরা ওর
বাবা, মাকে খবর দিয়েছে ।
রিগানের বন্ধু,বান্ধব, আত্মীয়,সজন
দিয়ে হাসিপাতাল ভরে গেছে।
রিগানের মা শুধু অঝোরে কাঁদছে,
রিগানের বাবা ডাক্তারের সাথে
কথা বলছে।
ডাক্তার : Last stage. We are very sorry.
আর কিছুক্ষণ, তারপর ই রিগান নামে এই
গ্রহে আর কেউ থাকবেনা । রিগানের
মাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে
রাখা হয়েছে।
নুঝহাত ও খবর পেয়েছে রিগানের এক
বন্ধুর কাছ থেকে। নুঝহাত ও ওর বাবাকে
নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে
এসেছে। এসেই কাউকে কিছু না বলেই
জরুরি বিভাগে চলে যায়। রিগানের
বেডের পাশে বসে খুব শক্ত করে ওর
হাতটি ধরে । এই রিগান, আমি তোমার
পাশে, এই আমার হাতটি ধরবে না।এই
রিগান, কথা বল। কি হয়েছে তোমার?
নুঝহাতের পাশেই রিগানের বাবা
দাড়িয়ে আছে। মা, এবার ওঠো। ও আর
কথা বলবে না। ও ভীষণ সারথপর মা।
নুঝহাত দৌড়ে এসে রিগানের
বাবাকে জড়িয়ে ধরে, আংকেল ও কি
আমার ওপর রাগ করেছে, ও কি আর কথা
বলবে না।
চারদিকে নিশতব্দতা নেমে আসে।
রিগান বলে, এখন আর কেউ নাই সবই আজ
স্মৃতি।
# আজ নুঝহাতের বিয়ে। বরের নাম
আরফান, ইঞ্জিনিয়ার, দেখতে শুনতে ও
ভালো। ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়ে
গেল।বাসর রাত। আরফান দের বাড়িব
ছাদটা খুব সুন্দর। নুঝহাতকে নিয়ে
আরফান ছাদে চলে আসল।জোস্না রাত,
খুব সুন্দর। আকাশে কোন মেঘ নাই।
আরফান এবং নুঝহাত, দুটা চেয়ারে
পাশাপাশি বসল নব দম্পতী, গল্প করতে
করতে জীবনের প্রথম রাতটি কাটাবে।
আরফান খুব সুন্দর সুন্দর করে কথা বলছে।
নুঝহাতের সে দিকে আগ্রহ নাই। সে
তাকিয়া আছে ছাদের দিকে। এই
ছাদে কোন রেলিং নাই।।।।।।