লেখাঃ Kamruzzaman Anik
আজ রিহাবের ২৮ তম জন্মদিন!
বাড়ির বাইরে; হোস্টেলে বন্ধুদের
সাথে অনেক হৈ-হুল্লোর
করে দিনটা পার করে ও। রাত
১২টার দিকে ফুল্লি মাতাল
হয়ে বাড়ি ফেরে। ওর মা আর ওর
মিষ্টি বোনটি ওর জন্য ডাইনিং-এ
রিহাবের অপেক্ষায় আছে আর ওর
বাবা বেড-এ; ঘুমায়নি ও জানে। ওর
জন্মদিনে ওর বাবা শামসুল হক
কোনদিন ওর আগে খায়নি। এক সময় ওর
জন্মদিনে ওকে সবাই উইশ করতো;
রিহাবের জীবনটাও তখন সাদা-
কালো ছিলো। আজ ওর জীবন
থেকে সাদা অংশটা হারিয়ে গেছে;
পুরোটাই এখন ঘনকালো আর
চারদিকে অন্ধকার!
.
শামসুল হক ছেলের জীবনের এই
পরিণতির জন্য নিজেকেই
দায়ী করেন আর প্রতিনিয়ত
নিজেকে এর
সাজা দিয়ে যাচ্ছেন। একসময়
উনি নামাজ পড়তেন না। আজ
তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন
আর ছেলের জন্য দোয়া করেন।
কোনদিন ছেলের কোন ইচ্ছার কাজ
উনি করতে দেননি; সবসময় ছেলের
ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করেছেন যার
ফলে আজ রিহাবের এই অবস্থা।
.
ডায়নিং-এর
দিকে না গিয়ে বিছানায়........
- ভাইয়া, খাবিনা।
- না, তোরা খেয়ে নে।
- মা সেই
সন্ধ্যা থেকে না খেয়ে বসে আছেন।
আর বাবা আজ সকাল থেকেই কিছু
খায়নি আর তুই বলছিস
খেয়ে নিতে?
- ওহ্! (বিরক্ত গলায়) তোদের ইমোশন
কখনো গেলোনা।
আমাকে ছাড়া কি কেউ
খেতে পারেনা?
পৃথীবি কি আমার জন্য
থেমে আছে?
- ভাইয়া, একটা ভুলের জন্য আর কত
কষ্ট দিবি?
- আমি? আমি কষ্ট দেই? কষ্ট
দিতে হলে নিজের পাওয়ার
থাকতে হয়। আছে আমার সেই
পাওয়ার?
- আর কি পাওয়ার থাকতে হয়রে কষ্ট
দেবার জন্য?
- পাওয়ার থাকলে আজ আমি ড্রাঙ্ক
হয়ে এখানে পড়ে থাকতাম না।
.
- রিহু! (ওর মা) আর কষ্ট দিস
না বাবা! আয় খেতে আয়।
আমি তোর বাবাকে তুলছি।
- যাও, আসছি।
.
খাওয়ার টেবিলে আজ সবাই
একসাথে খাচ্ছে। একমাত্র ওর মনটাই
বেদনায় খুশি; আর সবার মন খারাপ।
আজ থেকে ১২ বছর পূর্বেও এভাবেই
সবাই একসাথে খেত
যেখানে রিহাবের মন বেদনায়
ব্যথিত থাকতো।
.
- এই রিহু, স্কুলে যাবিনা?
- হ্যাঁ! এক মিনিট দাড়া।
আমি আসছি।
- রিহাব। (ওর বাবা)
- জ্বি বাবা।
- ও কে?
- বন্ধু।
- সেইম গ্রুপ?
- হুঁম।
- রোল কত?
- ৩২
- ওর বাবা কি করে?
- কৃষক।
- চাষার ছেলে তোমার বন্ধু?
- ..........
- আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাস
করছি রিহাব (ধমকের স্বরে)
- থাকনা, ওর স্কুলের টাইম
হয়ে গেছে। (ওর মা)
- তুমি চুপ করো। ওর এমন বন্ধু
আমি মানবো কিভাবে?
- আচ্ছা, পরে বলো। যা বাবা, তুই
স্কুলে যা।
.
আজ রিহাবের মনটা খুব খারাপ।
কারো সাথে কথা বলছেনা; কোন
রকম দুষ্টুমি করছেনা; স্যারের
প্রশ্নের উত্তরের
বাইরে উল্টো প্রশ্ন করছেনা; কেমন
যেন অদ্ভুত উদাসীনতার ছাপ ওর
মধ্যে। প্রায়ই ওর মধ্যে এমন
হয়ে থাকে। কিন্তু আজ যেন আর
পেরে উঠছেনা বাস্তবতার সাথে।
.
- রিহু। (অতি আপন একটা কন্ঠ)
- হুঁম।
- কি হইছে?
- কই? কিছু হয় নাই তো।
- তুই বললেই হলো?
- না, ওইযে আমার প্রব্লেম
তো একটাই।
- ভাবিসনা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
- সেই জন্যইতো মনে হয় বেঁচে আছি।
- চল। বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
- ক্লাস আছে তো।
- আরে আর কত ক্লাস করব? পরীক্ষারই
তো আছে আর ক'টা দিন।
- আচ্ছা চল।
.
সিমু। রিহাবের
কষ্টগুলো যারা চেহারা দেখে পড়তে পারে তাঁদের
মধ্যে একজন। খুব কাছের একজন
ভাবে সিমুকে। অনেকেই তাদের
সম্পর্কটাকে অন্যভাবে দেখে কিন্তু
সিমু এসবের পাত্তা দেয়না। ওর
কাছে বন্ধুত্বটাই বড়; আর রিহাব বন্ধু
হিসেবে খুব ভাল, খুব কম
কথা বলে ও। কিন্তু চোখের
ভাষা দিয়ে অনেক কিছু
বোঝানোর মত ক্ষমতা আল্লাহ্
অনেককে দিয়ে থাকেন; তাঁদের
মধ্যে হয়তো রিহাব অন্যতম।
.
- রিহু।
- হ্যাঁ মা।
- বাবার কথায় রাগ করেছিস?
- না, মা।
বাবা তো ভালোবাসেন বলেই
এসব করেন। কিন্তু মাঝে মাঝে একটু
বেশিই ভালবেসে ফেলেন যা সহ্য
করার ক্ষমতা হয়তো আল্লাহ্ আমায়
দেননি।
- রাগ করেনা বাবা।
বাবা সারাদিন ব্যাস্ত থাকেন,
রাগের মাথায়
কি না কি বলে ফেলেন।
- রাগের মাথায় উনি আমায় বলেন
আমিতো কোন ভুল করিনি! অন্য
কারো ভুল আমার উপর
দিয়ে যাবে কেন?
- আচ্ছা বাবা, আর রাগ
করতে হবেনা; যা, ফ্রেস হয়ে নে।
একটা সারপ্রাইজ আছে।
- আচ্ছা।
.
আজ রিহাবের মা ওর টেবিলে ওর
ডায়রিটা দেখেছিলো।
ডায়রিটার
ট্যাগলাইনটা দেখে উনি বুঝতে পেরেছেন
তার ছেলে অনেক কষ্টে আছে।
ট্যাগলাইনটা ছিলঃ
.
"কষ্ট যখন বুকের ভেতর সমুদ্রের মত
প্রসারিত হতে শুরু করে সুখগুলো তখন
মরীচিকার মত
ধোঁয়া ধোঁয়া হতে শুরু করে!!
একাকী জীবনটা তখন
কিণারা খুঁজতে শুরু থাকে কিন্তু
জীবন নিজেও জানে এর
কিণারা খুঁজাটা কতটা বোকামি!!!"
.
আসলেইতো তাঁর ছেলে অনেক
কষ্টে আছে যা তাঁরা বুঝার মত
মানষিকতা রাখেন না। ডায়রির
পরের পাতা উল্টানোর মত দুঃসাহস
উনার হয়ে উঠেনি। যত্ন
করে তা রেখে দিয়ে চলে আসেন
ওখান থেকে।
.
- ভাইয়া।
- হ্যাঁ, বল।
- তোর কি হয়েছে রে?
- কই কিছু হয় নাই তো। হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
ব্যাপারটা কি?
- না, এমনিতেই জিজ্ঞাস করলাম।
কেন? প্রশ্ন করতে পারিনা?
- ঠিক তা বলছিনা। তুই
বুড়ি যদি আমায় প্রশ্ন না করিস,
কেয়ার না করিস তবে আর
কে করবে শুনি।
- কত লাইলি আছে! কে জানে?
-
বেশি পাকামো হয়ে যাচ্ছে না?
- আমি কিছু বললেই
পাকামো হয়ে যায়! যা,
তোরা কেউ আমায় ভালবাসিস
না। সব্বাই তোরা স্বার্থপর।
- এই পাগলী!
তোকে ভালবাসবনা কেন?
তোকে আমরা এত্তগুলা ভালবাসি।
এই দেখ আজো তোর কিটক্যাট
আনতে ভুলিনি কিন্তু!!
- ...........(ছোঁ মেরে নিয়ে) আমার
লক্ষ্মী ভাইয়া! উম্মাহ।
- পাগলী!
- আমারটা?
- উম্মাহ।
- আচ্ছা ভাইয়া,
একটা কথা জিজ্ঞাস করলে সঠিক
উত্তর দিবি?
- হ্যাঁ, বলনা।
- সত্যি বলতে হবে কিন্তু, প্রমিস কর।
- আচ্ছা বাবা, প্রমিস।
- সিমু আপ্পিকে খুব ভালবাসিস না?
- তোকে কে বলেছে?
- তোর ডায়রি।
- হ্যাঁ, এই একটু আধটু।
- গাধামি করবিনা।
ওকে বলিসনি কেন এখনো?
- ভয় হয়। যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।
আর থাকুক না যেভাবে আছে।
- থাকতে হবেনা। কালই
বলে দিবি। আর শোন, এই গিফট
বক্সটা ধর। এগুলো পড়ে নিচে আয়।
- আচ্ছা।
.
সত্যিই ও
সিমুকে ভালবেসে ফেলেছে।
বাঁধনটা বন্ধুত্বতে আর
বেঁধে রাখতে পারছেনা। ওর
বোনটা ওকে পাগলের মত
ভালবাসে। একবারতো জ্বর
হয়েছিলো ওর আর ওর
পাগলী বোনটা সারারাত
জেগে ছিলো। বয়স আর কত হয়েছে;
মাত্র ৮ বছর। এই বয়সেই ভাইয়ার
কষ্টগুলো চোখ
দেখে পড়তে শিখে গেছে।
উপরওয়ালা মনে হয় কিছু
মানুষকে এমন করেই বিশেষ
ভাবে কারোর জন্য
দুনিয়াতে পাঠান।
.
- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ;
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ;
হ্যাপি বার্থডে টু রিহু;
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ........!
.
আকাশ থেকে পড়ার ময়
চমকেছিলো রিহাব। ওর
বার্থডে ওরই মনে নেই। যাক,
অবশেষে অনেক অনেক
খুশি নিয়ে জন্মদিন টা শুরু হল।
রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই
দেখে একটা এসএমএস
.
"বসন্ত লগ্নে জন্ম তোর; সেই বসন্তের
মতই রঙিন, ভালবাসাময় হয়ে উঠোক
তোর আগামী প্রত্যেকটা মূহুর্ত!
হ্যাপি বার্থডে পাগলা"
.
এমন খুশি মনে হয় ও আর কোন
বার্থডেতে হয়না যেই খুশি আজ
হয়েছে। এই একটা এসএমএস-ই এত খুশির
কারন।
.
- কিরে ভাইয়া। কই গেলি?
এদিকে আয়।
- কি? (দরজা খুলে স্বাভাবিক
ভাবে বলতেই ওর মুখে ওর বোনের
হাতের ছোঁয়া পেল; ক্রীম)
- ভাবীর পক্ষ থেকে।
- ........(প্রচন্ড রাগে) তবে রে! বের
করছি তোর ভাবি। (বলেই নিতুর
হাতগুলো ধরে ওর গালেই
ঘসে দিল)
- দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে। (বলেই
পেছন পেছন দৌড়)
.
সারা ঘর ক্রীম দিয়ে একাকার
করে ফেলেছে দুই ভাই-বোন আর
দাড়িয়ে থেকে নিরব স্রোতার মত
তা উপভোগ করলো ওর বাবা-মা।
.
সকালে উঠেই স্কুলের দিকে ছোটল
রিহাব। আজ ওর বোনের
কথামতো সিমুকে ওর মনের
কথাগুলো বলে দেবে এই উদ্দেশ্যে।
গিয়ে সারা স্কুল খুঁজেও
সিমুকে পেলনা ও। হঠাৎ ওর ফোন
ভাইব্রেট করতে শুরু করলো।
.
- হ্যালো। কই তুই?
স্কুলে এলিনা কেন?
- পার্কে আয় বলছি।
- পার্কে কেন?
- আগে আয় তারপর বলছি।
- আচ্ছা আসছি।
.
- কিরে, বার্থডে ইনভাইট
তো করলি না।
- আরে আমারই মনে ছিলোনা;
সেখানে তোকে কিভাবে বলবো?
- তাইলে ট্রিট দেওয়ার কথাও
বইলা দিয়ে হইবো নাকি?
- না না, আয়।
.
আজও বলা হলোনা।
কিভাবে বলবে সে চিন্তায় এখন ও
চিন্তিত। বাসায় আবার নিতু ওর জন্য
অপেক্ষা করছে। না, এখন বলবেই না।
একেবারে কলেজে উঠে।
.
- ভাইয়া?
- হয়নি রে!
- কেন?
- পরের জন্য রেখে আসছি।
কলেজে উঠে বলবো।
- তোর বোকামির জন্য না আবার
মিস করে ফেলিস, কে জানে?
আমি তোর জায়গায়
হলে ডিরেক্টলি সামনে যেতাম
আর হাতটা ধরে........
(ওকে থামিয়ে দিয়ে)
- আবার পাকামো?
- না, আর করবোনা। যা, ফ্রেস
হয়ে আয়।
- ওকে।
.
কিছুদিন পর.......
.
আজ রিহাবের ইন্টারমিডিয়েট
ভর্তি। ভাল রেজাল্ট
করেছে রিহাব। ওর সাইন্স পড়ার
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওর
বাবা ওকে একরকম জোর করেই
সাইন্স না পড়িয়ে কমার্স
পড়াচ্ছেন। তাঁর ভবিষ্যত দরকার;
উত্তরাধিকার দরকার
যে কি না তাঁর বিজনেস
দেখবে তাই ছেলের
ইচ্ছাকে গলা টিপে হত্যা করে তাঁর
ইচ্ছানুযায়ী পড়াচ্ছে। অনেক
চেষ্টা করেছে এই
অচেনা সাব্জেক্ট
টাকে ছাড়তে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর
সম্ভব হয়নি। আর ঐদিকে সিমু সাইন্স
নিয়েই পড়ছে। ধীরে ধীরে ওদের
দেখা করা, কথা বলা, আড্ডা সবই
কমতে থাকে কিন্তু অটুট রয়ে যায়
মনের টান।
.
- সিমু। আজ
তোকে একটা কথা বলবো।
- বলনা!
- কিভাবে শুরু
করবো বুঝতে পারছিনা।
- বলে ফেলনা, আমি কিছু
মনে কিরবোনা। প্রমিস!
- আসলে আমি তোকে.......
- হ্যাঁ। তুই আমাকে, তারপর?
- ........(হাঁটু গেড়ে ওর
সামনে বসে একটা লাল গোলাপ
বাড়িয়ে দিয়ে) Will you take me as
your life partner?
- .........(হাসি দিয়ে চোখের
কিণারায় এক ফোটা জলের
ঝিলিক দিয়ে) Yes! I'll....
- ইয়াহুউউউউউ!!!
.
জন্ম হল নতুন একটা প্রেমকাহিনীর।
কিন্তু শেষটা ভাল হবেতো? না,
ভাল হয়নি! ওর
বাবা এটা জানতে পেরে যায়
এবং এটাও
জানতে পারে যে মেয়েটা মধ্যবিত্ত।
এইচএসসি রেজাল্টের পর ওর
বাবা ওকে অন্য
বোর্ডে সরিয়ে নেয়। কারন
উনি মনে করেন ঐ মেয়ের জন্যই
উনার ছেলের রেজাল্ট খারাপ
হয়েছে আর মরণ হয় নতুন
প্রেমকাহিনীর।
.
২ বছর........
.
আজ ওর ২০তম জন্মদিন। এখন ও
বাড়িতে আর সাথে কিছু শূণ্যতা।
এখানে ফিরে অনেক খুঁজেও
দেখা পায়নি সিমুর
এমনকি জানতেও পারেনি ওর
ব্যাপারে কোন কিছু।
১২ টা বাজার পর কেক
কেটে নিরামিষ কিছু আনন্দ
উপভোগ
করে রুমে ফিরে ফোনটা হাতে নিল।
আর মেসেজটা দেখে ওর
পিলে চমকে গেল।
.
"২০ টা গ্রীষ্ম;
২০ টা বর্ষা;
২০ টা শরৎ;
২০ টা হেমন্ত
২০ টা শীত পেড়িয়ে....
এসেছে ২০তম বসন্ত তোর জীবনে!
তোর জীবনের প্রত্যেক ছোঁয়ায়
যেন সবার জীবনে বসন্ত আসে সেই
কামনায়! ভাল থাকিস আর আমায়
নিয়ে ভাবিস না; আমি ভালোই
আছি।
.
After all, Special wish for you that your
upcoming days would be bright as
Diamond."
.
আরো ৬ বছর পর........
.
- বাবা, তোমায় কিছু বলার ছিলো।
- হ্যাঁ বলো।
- আজ আমার অনার্স রেজাল্ট
পাব্লিশ হয়েছে।
- ও হ্যাঁ। তা, রেজাল্ট কেমন
হয়েছে?
- ভাল না।
- আচ্ছা বাদ দাও। ওটা ম্যাটার না।
আর কাল
থেকে তুমি অফিসে আসছো।
- না, আমি আসছিনা।
- তবে কি কিছুদিন পরে আসবে।
আচ্ছা, অনার্স কমপ্লিট করেছো এখন
কিছুদিন ঘুরেফিরে দেখ, ওকে?
- ইট'জ নট ওকে!
- তবে কি করতে চাও?
- তুমি আমায় জন্ম দিয়েছো; লালন-
পালন করেছো; খায়িয়েছো;
পড়িয়েছো; আর
একটা সার্টিফিকেট চেয়েছো।
সেটা আজ এসেছে, বাবা।
(কেঁদে কেঁদে)
তুমি কোনদিন আমার কোন
ব্যাপারে আমার কাছে জিজ্ঞেস
করোনি; আমি ছোট। অন্যের
সাথে কথা বলে তুমি আমার
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেছো; আমার
সাথে কেন নয় বাবা? তুমি আমার
পছন্দ নিজে করেছো। কি খেতে,
কি পড়তে, কি দেখতে,
কি খেলতে, কার
সাথে চলতে ভালবাসি তার কোন
দামই নেই তোমার কাছে;
তুমি স্রেফ তোমার পছন্দের
পথে আমায় হাঁটিয়েছ।
আমি ক্লান্ত বাবা। এই
একঘেঁয়ে চলার জন্য আমার কোন
বন্ধুও নেই; আমার ভালভাসা আমায়
ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছে;
জানিনা অভিমান নিয়ে কোথায়
নিরুদ্দেশ হয়েছে। লাইফটা আমার
বাবা, এখানে আমাকেই
চলতে হবে। তুমি শুধু ইন্সট্রাকশন
দিয়ে দিতে পার; আমার লাইফের
পথে তোমার মত
যদি চলি তবে আমার লাইফের
দামটা কি রইলো?
আমি মুক্তি চাই বাবা; আমার এই বদ্ধ
জীবন আর ভালো লাগেনা।
মুক্তি দাও আমায়, প্লিজ! (চিৎকার
করে)........
তুমি কোনদিন বাবা হবার
চেষ্টা করেছো? সবসময় আমার
সাথে অচেনার মত আচরণ
করে গেছো। "একজন বাবা"
হতে গেলে তাঁর
মধ্যে যা থাকতে হয় তার কিছু
আছে তোমার মধ্যে। "একজন বাবা"
হয় সন্তানের বন্ধু। সবসময় সব কিছু
শেয়ার করে আর তুমি এখনো আমায়
"তুমি" বলেই সম্বোধন করেই
চলেছো।
- তুমি এসব আমায়
আগে বলোনি কেন? (নরম স্বরে)
- কোনদিন সুযোগ দিয়েছো বলার?
- হ্যাঁ, তাইতো।
যা হয়েছে তা তো আর তোমার
জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারবোনা তবে এখন
থেকে যেন আর না হয় সেই চেষ্টাই
করবো। আর "একজন বাবা" হবার
চেষ্টা করবো কিন্তু এখন না।
এখনো সময় হইনি তোমাকে "তুই"
করে বলার। সময় হলে তবেই বলবো।
.
আজ.......
- রিহু! (বাবার মুখে এমন ডাক
শুনে রিহাবের
পিলে চমকে উঠলো)
- হ্যাঁ বাবা।
- আজ মনে হয় তোর "একজন বাবা"র
কিছুটা হলেও হতে পেরেছি।
- মানে?
- সিমু!
এদিকে আয়তো মা (ওকে দেখে রিহাবের
সব ঘোর কেটে গেল)
- কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।
- স্বপ্ন না। সত্যিই। (নিতু)
- কিভাবে কি হলো?
- পরে বলবো। এখন খেয়ে নে।
ভাবী, এদিকে আস।
- মা, কি হচ্ছে এসব?
বুঝতেছিনা তো কিছুই।
- পরে বুঝবি, এখন খা।
- হুঁম্মম! (মাথা নিচের দিকে দিয়ে)
.
আজ ওর মনটা খুব খুশি থাকার
কথা কিন্তু হতে পারছেনা।
বাবাকে মনে হয় ভুল করে অনেক কষ্ট
দিয়ে ফেলেছে।
.
- সিমু! কিভাবে কি হল?
- কিভাবে মানে? তুমি কিছু
জাননা?
- তুমি করে বলছিস কেন?
- এমনিতেই আজ থেকে তুমিও আমায়
তুমি করে বলবা, ওকে?
- হুঁম, ওকে। বাট কিভাবে?
- এইচএসসি রেজাল্টের দিন
একটা এক্সিডেন্টে বাবা-
মা মারা যান। তোমায় ফোন
দিয়েছিলাম; তুমি ছিলেনা তখন
বাবা ফোন রিসিভ করেছিলেন
আর আমি সব বলেছিলাম। তখন
উনি সব ব্যবস্থা করে আমায় তোমার
কাছ থেকে দূরে পাঠিয়ে দেন
আমাদের ভালোর জন্য।
(কাঁন্নাভেজা কন্ঠে কথাগুলো বলে শেষ
করলো ও)
- আমিতো ভুল করে ফেলেছি। (ওর
ঘটনাগুলো বলো)
- যাও এক্ষুণি ক্ষমা চেয়ে আসো।
- আচ্ছা যাচ্ছি।
.
শামসুল হক নিজের পায়ে পানির
স্পর্শ পেলেন আর
সাথে সাথে জেগে উঠলেন;
উঠে দেখেন তাঁর ছেলে তাঁর
পা ধরে কাঁদছে।
.
- এই পাগল! কি করছিস?
- বাবা, আমাকে মাফ করে দাও।
তুমিই আমার সেই বাবা যার
মধ্যে আমার "একজন বাবা" আছে।
- হয়েছে। এখন বিয়ে কবে কিরছিস?
- যাও বাবা! তুমি আমার সাথে এসব
বল কিভাবে? (লজ্জা পেয়ে)
- তুই না বললি তোর "একজন বাবা"
সন্তানের সাথে বন্ধুর মত
কথা বলবে।
- তুমিও না। (বলেই উঠে এলো ও)
.
আজ শামসুল হকের
মুখে মিষ্টি একটা হাসি। "একজন
বাবা"র হাসি। সত্যিই তিনি আজ
পরিপূর্ণ "একজন বাবা"
হতে পেরেছেন।
.
.
[বিঃ দ্রঃ ছোট মানুষ হয়ে কি বড়
কথা বলে ফেলেছি কে জানে?
উল্টোপাল্টা কিছু
বলে থাকলে ক্ষমা করবেন। আর
আমি কোন সন্তানকে তাঁর বাবার
প্রতি অসম্মান দেখানোর
কথা বলিনি আর কোন
বাবাকে এটাও
বুঝাইনি যে আপনার
সন্তানকে উপদেশ দেবেন না। শুধু
এটাই
বুঝাতে চেয়েছি যে "সন্তানকে কোন
খেলনা করে ফেলবেন না, ছোট
হলেও তার মন আছে; তার মনের
দিকটাও দেখার চেষ্টা করুন। "একজন
বাবা" হবার চেষ্টা করুন, ধন্যবাদ!
আর আমি বাবা না; ফেলনা এক
সন্তান"]