বৃষ্টি আমার কাছে খুব ভাললাগে কারন
বৃষ্টির শব্দটা আমার খুব প্রিয়।আর
বৃষ্টিটা থেমে গেলে প্রকৃতিটা যেন
আবার নতুনরূপ ধারন করে।
.
আমি জোবায়ের।ছোটখাট
একটা চাকরি করি।
পরিবারে আমি,মা,আর আমার ছোট
বোন।বাবা গত হয়ে গেছেন অনেক
আগে।ঢাকার কোন
একটা বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ
থাকি।মধ্যবিত্তের
টানাপোড়া পরিবার আমাদের
যেখানে কোন কিছু পাওয়ার
চেয়ে না পাওয়ার যন্ত্রনাটাই
বেশি থাকে।
.
আষাঢ় মাসের কোন বিকেলে যখন
বৃষ্টি হচ্ছিল তখন আমি জানালার
পাশে দাড়িয়ে তা উপভোগ করছিলাম।
হঠাৎ চোখে পড়ল বাসার সামনে একটু
জায়গা ছিল
সেখানে একটি মেয়ে মুক্ত পাখির মত
ডানা মেলে বৃষ্টিতে ভিজতেছে।
মেয়েটির বৃষ্টিতে ভেজা উপভোগ
করছিলাম।কিন্তু সেটা আর বেশিক্ষন
স্থায়ী হল না কারন মেয়েটির
মা এসে মেয়েটিকে নিয়ে চলেগেলেন।
যাবার সময় মেয়েটির মুখ নিজের
সবচেয়ে কাছের কোন কিছু
হারালে যেমন হয় তেমন দেখাচ্ছিল।
মেয়েটি চলে যাবার পর আমিও
ভিতরে চলে আসলাম।চলে আসার পরও
মেয়েটির সেই
ডানা মেলে বৃষ্টিতে ভিজবার
দৃশ্যটা এখনো আমার
চোখে ভাসছে কারন
আমি আগে কখনো বৃষ্টিতে ভিজিনি।
.
পরের দিন শুক্রবার।ছুটির দিন।জুমার
নামাজ পড়ে এসে কখন
যে ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক
বুঝতে পারিনি।ঘুম ভাংল বৃষ্টির শব্দের।
মনে হচ্ছে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।
সে মেয়েটিকে আবার দেখার জন্য
দৌড়ে গেলাম জানালার পাশে কিন্তু
তাকে দেখা যাচ্ছে না।মনটা খারাপ
হয়ে গেল কারন আগের দিনের
মেয়েটির চলে যাবার দৃশ্য
মনে পড়ে গেল।ফ্রেশ হয়ে একটা কাজের
ছিল।তাই বাহিরে যাচ্ছিলাম তখন
দেখলাম সেই মেয়েটি কেন
জানি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে।
তখন কেন জানি মনের
অজান্তে বলে ফেললাম:-
--আজ বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন না যে।
.
মেয়েটি আমার সেই
বোকা মার্কা প্রশ্ন শুনে থমকে দাড়াল।
আমি তার উওরের
অপেক্ষা না করে সেই স্থান ত্যাগ
করলাম।কাজটা শেষ করে চলে গেলাম
ছাদের দিকে।ছাদে গিয়ে দেখি সেই
মেয়েটি ছাদে দাড়িয়ে আছে।
ছাদটা ছিল অনেক বড় তাই আমার
জায়গার কমতি হল না।একটু পর
দেখি মেয়েটি আমার
দিকে তাকিয়ে আছে।
মনে হচ্ছে আমাকে কিছু বলবে কিন্তু
সাহসে পেরে উঠছে না।
আমি তাকে সাহস বা সুযোগ কোনটাই
দেবার চেষ্টা করিনি।ছাদ
থেকে চলে আসলাম রুমে।
রাতে ফেসবুকে ডুকে দেখি "বৃষ্টি ভেজা বালিকা"
নামক একটা আইডি থেকে রিকুয়েস্ট
আসছে।ভিতর ডুকে একটু চেক করলাম।কিন্তু
কোন তথ্য পেলাম না।
মনে হচ্ছে আইডিটা আজ খুলা হয়েছে।
কিন্তু কেন জানি নামটা ভাললাগার
কারনে রিকুয়েস্টা এক্সচেপ্ট করলাম।
এক্সচেপ্ট করার একটু পরেই
--
আচ্ছা আপনি কি আমাকে ফলো করছেন।
.
এরকম প্রশ্ন শুনে আমি প্রায় থমকে স্তব্ধ
হয়ে গেলাম।মনের মাঝে প্রশ্ন জাগল,
"কে এই বালিকা।যে কিনা হাই
হ্যালো বলার আগেই এমন প্রশ্ন করতাছে।
ভাবনাচিন্তা গুলোর মাঝে চলে আসল
আর একটা মেসেজ
--এই যে মিস্টার উওর কই।চুপ কেন।
--আপনি কে? চিনতে পারছি না।
--বিকেলে সিড়ি বেয়ে নামার সময়
কি কোন মেয়েকে প্রশ্ন করেছেন।
তখনি মনে পড়ল সেই মেয়ের কথা।
--আপনি কি সেই মেয়ে।
--হ্যা এখন আমার কথার উওর দিন।
--আসলে প্রথমদিন যখন ডানা মেলে মুক্ত
পাখির মত বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন।তখন
মনে হচ্ছিল আপনি পৃথিবীর
সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি।ভাবলাম দ্বিতীয়
দিন কেন গেলেন না।
--
আসলে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালবাসি।
কিন্তু আম্মুর জন্য যেতে পারি না।
মাঝে মাঝে চুরি করে চলে যাই কিন্তু
পরে অনেক বকা খেতে হয়।
.
সেখান থেকে শুরু।মেয়েটির
সাথে কথা বলতে বলতে ফ্রি হয়ে যাই
এবং বন্ধুত্বের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মেয়েটির নাম ছিল বন্যা।আর আমার
ফেসবুক আইডি পেয়েছিল আমার ছোট
বোনের কাছ থেকে।সময় পেলেই
মেয়েটির সাথে ফেসবুকে কথা হত।
বন্ধুত্বের কারনে মেয়েটির জীবনের সব
কাহিনি শুনতে পাই "মেয়েটির
আগে একবার বিবাহ হয়েছিল।বিবাহের
দিন তার শ্বশুর মারা যায়।তখন তার শ্বশুর
বাড়ির লোক বন্যাকে আপবাদ
দিতে থাকে কারন তাদের ভিতর
কুসংস্কার কাজ করত।তাই বিবাহটা আর
টিকেনি।চলে আসতে হয় তার বাবার
বাড়ি।কিন্তু এখানেও
তাকে প্রতিনিয়ত কথাশুনতে হয় আম্মুর
কাছ থেকে।নিজেকে এই কষ্ট
থেকে মুক্তি দেবার জন্য অনেকবার
চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি কারন
আত্নহত্যা মহাপাপ বলে।তাই সে তার
নিয়তিকে মেনে নিয়েছে কারন তার
কপালে হয়ত এমনি লেখা ছিল।
.
এভাবে চলতে চলতে একসময়
বন্যাকে কেমন জানি ভাল লাগত।বন্যার
প্রতি কেমন জানি একটা অন্যরকম
অনুভূতি কাজ করত আমার ভিতর।কেন
জানি মনের ভিতর ভাললাগার
স্থানটা আস্তে আস্তে পেতে চলেছে।
আগে কেউ এই জায়গাটা দখল
করতে পারেনি। সামনে প্রশ্ন
এসে দাড়াল সমাজ কারন আমাদের
সমাজ ভাল কিছু না পারলেও
খারাপটা নিয়ে ভাল
সমালোচনা করতে পারে।কিন্তু
মনে হচ্ছে তাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ
থেকে যাবে।আমি সেই অসম্পূর্ণ
রাখতে চাই না।তাই নিজের
করে নিতে চাই।
তাই কোন একদিন
বিকেলে ছাদে দাড়িয়ে:-
--আচ্ছা বন্যা তোমাকে যদি কেউ
নিজের করে নিতে চায়
তাহলে কি করবে।
--নিজের করে নিতে চাই
মানে ক্লিয়ার করে বল।
--আসলে আমি তোমাকে আমার
করে নিতে চাই।আমার ভালবাসার
বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাই।
.
বন্যা আমার কথার কোন উওর
না দিয়ে চলে যায়।
রাতে ফেসবুকে গিয়ে দেখি আমাকে ব্লক
দিয়েছে।
.
তারপর আমি আমার মনের কথাগুলো আম্মুর
সাথে শেয়ার করি কারন
ছোটবেলা থেকেই আম্মু আমার বন্ধুর মত।
বন্যার আগে বিবাহ হয়েছে সব
ঘটনা খুলে বলি।আমি একজন বিবাহিত
মেয়েকে বিবাহ করার বেপারটা প্রথম
আম্মু দ্বিধামত পোষন করেন পরে আমার
দিকে চেয়ে রাজি হয়ে যায়।কোন
একদিন দুই পরিবারের
সম্মতি সাপেক্ষে আমাদের বিবাহ
কাজ সম্পন্ন হয়।বিবাহের দিন
রাতে মানে আমাদের বাসর
রাতে বউকে মানে বন্যাকে একটু আদর
করতে যাব ঠিক তখনি বাহিরে বৃষ্টির
আওয়াজ শুনতে পাই।
তখনি বন্যা--চলুন
ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি।
--আজ আমাদের বিবাহের প্রথম রাত।
কোথায় আমরা আমাদের
ভালবাসা বিনিময় করব
তা না করে বৃষ্টিতে ভিজতে চাচ্ছ।
--আহা চলুন না।
বৃষ্টিতে ভিজলে ভালবাসা কমে না।
.
আমি আর না করতে পারলাম না।কারন
তার ডানা মেলে বৃষ্টিতে ভিজার দৃশ্য
আমাকে সত্যি মুগ্ধ করে।তাই
বৃষ্টিতে ভিজা দিয়ে শুরু হল আমাদের
বিবাহ পর পরর্বতী ভালবাসার মধুময়
জীবন।
.
বি.দ্র.--লেখাটি আমার কল্পনার জগত
থেকে নেয়া।
.
লেখক- আদরের ছোট সন্তান