>ভুলে যাব?
>হ্যা ভুলে যাবি!
>চাইলেই কি সব ভোলা যায়রে তিথি ?
ওযে অামার এইখানে.... এই বুকের ভিতর এখনও
অাছে ! তিথি , অাজ সবই অাছে তবুও কিছুই নেই!
দু-চোখ ভিঁজে অাসে পৃথার,অামার
ঘাঁড়ে হাতের চাপ দিয়ে নিঃশব্দে রুম
থেকে বেড়িয়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায়।
পৃথা অামার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।এক
সাথে গাজীপুরে বড় হয়েছি,
অামরা লেখাপড়া থেকে অাড্ডা সব
কিছু এক সাথে করতাম।
একটা ঘটনা ওর জীবনটাকে বদলে দেয়। অামিও পারিপার্শ্বিক
কারনে দুরে সরে যাই ওর থেকে।
পৃথা যখন ক্লাস নাইনে পড়তো তখন পাশের বাড়ীর
পার্থ নামের একটি ছেলের
সাথে গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল।
পার্থ ছিলো তালুকদার বাড়ীর
ছেলে, বেশ প্রভাব ছিলো ওদের
গ্রামে। এক হিমালয় স্বপ্ন
নিয়ে ওরা ভালোবাসার
রংতুলিতে ওদের স্বপ্নছবি অাঁকতো। ওদের গভীর
ভালোবাসা দেখে অামার
নিজেরই ইর্ষা হতো। লেখাপড়ার
পাশাপাশি দুজন ভালোবাসার
অধ্যায়টা বেশ ভালো করে পড়তো।
ফাইভ পাশের পর পৃথার
সাথে অামার সামান্য দুরত্ব
বাড়ে কারন দুজন অনাকাঙ্ক্ষিত
ভাবে দুই স্কুলে ভর্তি হয়ে যাই।
আমি আমার গ্রামে আর ও ওদের গার্লস
স্কুলে। তবুও অামাদের বন্ধুত্বের কোন টান পড়েনি।
হঠাৎ একদিন পৃথার
লেখা একটি চিঠি পার্থর বাবার হাতে পড়াতে সব কিছু
এলোমেলো হয়ে যায়। গ্রামের
পঞ্চায়েতের সামনে পৃথার বাবা, ভাই
ও পৃথাকে করা হয় চরম অপমান।
কি অাছে তোর ? পায়ের তলায় যার
মাটি নেই! কোন যোগ্যতায় তোর
মতো ফকিরের মেয়ে অামার ছেলের
দিকে হাত বাড়াস? কামলার (দিনমজুর)
মেয়ে কামলার মেয়ে হয়েই থাকবি ?
কোনদিন ম্যামসাহেব হতে পারবি না ?
লেখাপড়া করে কোন লাভ নেই , আয়াই
হতে হবে। তালুকদার বাড়ী আয়া হবার যার যোগ্যতা নেই সে কিনা......!
অপমানের জ্বালায় পৃথা যতটা না জ্বলেছে তার চেয়ে কষ্ট
পেয়েছে পার্থর নিরবতাতে।
সেদিন পার্থ ছিল নির্বাক।সেদিন
থেকে পৃথার চোখর ঘুম হারিয়ে যায়।
তীব্র অাত্ববিস্বাস অার অপমানের
গ্লানীতে নিজেকে ভেঙ্গে অাবার
শক্ত করে গড়তে চায়। ব্যর্থতা শত
কাঁন্না মুঁছে সফলতার দুয়ারে,
পৌঁছিতে অামাকে হবেই,
জিততে অামাকে হবেই। সেই থেকে পলাশ সমস্ত
বাঁধা বিপত্তিকে অাত্ববিস্বাসের
চাঁবুক মেরে সামনের দিকে এগিয়েই চলছে।
তখন ২০০১১ সাল, সামনে ছিলো এই এস
সি পরীক্ষা, মনের অবস্থা ভালো না,
তবুও সব কিছু ভুলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়।
পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট হয়। ভর্তি হয়
ঢাকা জগন্বাথে। ঢাকাতে পড়ার
খরচ চালানোর মতো অবস্থা ছিলো না।
পরিচিত কোন লোকও ছিলো না যে,
টিউশনি নিয়ে দেবে,
অবশেষে ভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের
মাধ্যমে একটা টিউশনি জোঁটে। ওর সমস্ত
মেধা কাজে লাগিয়ে টিউশনির
ছাত্রীটাকে ক্লাসের ফাস্ট করে দেয়।
পৃথার নাম ছড়তে থাকে। অার টিউশনির
অভাব হয়না। বড় বড় লোকের
ছেলে মেয়েকে পড়ানোর সুযোগ
পেয়ে বসে। মাসে ৩০/৪০ হাজার
অনায়াসে অাসতে থাকে,
মাঝে মাঝে বাবা মাকে কিছু
পাঠায়। দেখতে দেখতে সময়ের কাঁটায়
দিন চলে যায়। সামনে পরীক্ষা। টাকার
নেশায় পৃথা পরীক্ষা ডপ করে।এক সময়
রামপুরাতে কোচিং সেন্টারর খোলে।
সফলতা বৃষ্টি পড়তে থাকে জীবনে।
পৃথার প্রচুর নাম ডাক হয় পুরা রামপুরাতে।
সবাই এক নামে চিনতো পৃথা ম্যাম।
সবাই ভালো জানতো। এর
মাঝে কি যেন
একটা জরুরী কাজে অামি ঢাকাতে যাই।
খবর শুনে তো ও ভীষন খুশি কারন
অামি ঢাকাতে খুব কম যেতাম। যাই
হোক অবশেষে ওর ওখানেই উঠলাম।
বাপরে রাজার হালে থাকে, ফ্লাট
বাসা, বেলকুনি। স্বন্ধ্যার পর
ওকে নিয়ে বের হলাম। পার্থর
কথা তুলতে ওর চোখে জল
চলে অাসতো। ভালোবাসতো,পাগলের
মতো ভালোবাসতো পার্থকে পৃথা। অাজ প্রায় তিম বছর
হলো পার্থ একবারের জন্যও খবর
নেয়নি পৃথার । পৃথাও অনড়, বড় ওকে হতেই
হবে। হঠাৎ পার্থর বিয়ে হয়ে যায়।
মেয়ে প্রাইমারী স্কুল শিক্ষিকা আর
মেয়ের বাবা আনেক ধনী । বিয়ের ছ মাস পর একদিন
অামি ওকে ফোনে জানাই, কষ্ট
পেয়েছিলো পৃথা কিন্তু
ভেঙ্গে পড়েনি। অাসলে এই দিনের
কিছু ছেলেদের ভালোবাসাটাই এমন,
কচুপাতায় এক ফোঁটা পানির মতো,
যা গড়িয়ে পড়তে কোন ঝড়ের
দরকার হয়না। একটু হাওয়া লাগলেই
গড়িয়ে পড়ে ভুতলে, অার
সঙ্গে সঙ্গে এর অস্তিত্বটুকুও মিশে যায়
মৃত্তিকার সাথে।
ওরা সু-সময়ের রঙ্গিন ফুল। একটু স্পর্শ
পাবার অাকুলতায় দু-হাত
বাড়িয়ে থাকে অার বোকার
মতো বাহুডোরে বেঁধে নেয় এ যুগের
কোকা প্রেমিকের দল। প্রেম করার সময়
এদের কি ন্যাকামো! তুমি অামার
স্বপ্নের প্রথম নারী,
তোমাকে তিলেক দন্ড
না দেখলে বুকের খাঁচার প্রান
পাখিটা শুণ্যে উড়ে যেতে চায়,
তুমি অামার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।
তোমাকে পেলে জীবনে অার কিছু
চাইনা। অথচ এই ছেলেই একদিন
মা বাবার পছন্দের কোন
টাকাওয়ালা বাপের মেয়ের
গলে জীবন মাল্য দান করে, মা বাবার
বাদ্ধ ছেলের মতো সুখের সংসার
সাঁজায়। শুধু পারেনা পৃথাদের
মতো হতচ্ছারির হাত ধরে মা বাবার
সামনে গিয়ে দাড়াতে!
ভালোবাসা মানুষকে শুধু
অন্ধকারে ঠেলে দেয়না, অালোর
পথেও নিয়ে যায়। হারানোর
বেদনা বুকে পুঁষে নিজেকে কষ্ট দেওয়া বুকামির
কাজ। বিরহ বেদনার কষ্টকে সফলতার বীজ ভেবে পৃথার
মতো এগিয়ে যাও! জয় হবে নিশ্চয়ই। বুঁকের
ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা সাহসকে জাগিয়ে তোল,
ভেঙ্গে ফেল দারিদ্রতার সকল
বন্দি শৃংখল, সফলতা তোমার হাতের
মুঠোয়; দরজার ওপারে।