মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৪৫- বৃষ্টিস্নাত মেয়েটি

লিখা : নূরুজ্জামান ভূইয়া ।

সকাল থেকেই বৃষ্টি অজর ধারায় ঝরে চলছে, জানালার
পাশে থেকে ঝাঁপসা শহরটাকে দেখতে ভালই লাগছে ।
আজকের বৃষ্টিটার মাঝে কেমন একটা ভালবাসার
ছিটা জমে আছে । বার-বার ইচ্ছে করছে বৃষ্টিটায়
ভিজতে, কিন্তু শরীরের অবস্থা ভাল না ।
রেডিওটা অন করলাম, অসম্ভব সুন্দর একটা গান
বাঁজতে লাগল কানের কাছে..
বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে,
হাঁটছি আমি মেঠো পথে ।
মনের ক্যানভাসে ভাসছে তোমার ছবি,
বহুদিন তোমায় দেখিনা যে............ !
জানালার গ্রীলটায় দাড়িয়ে আনমনে হয়ে গানটার
সুরে মুগ্ধ হয়ে বৃষ্টির মাঝে থাকিয়ে আছি ।কেন
জানি গানটার কথাগুলো অসম্ভবভাবে আমার
সাথে মিলে যাচ্ছে । আজ অনেক দিন হল,
বৃষ্টিকে দেখিনা । আজ আমার বৃষ্টির কথা খুব
মনে পড়ছে ।
যে বৃষ্টিকে আমি প্রথম কোন
একটি বৃষ্টি দিনে দেখেছিলাম ! আমার ছাদ
থেকে আমি বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম, সে ছিল তার ছাদে ।
হঠাত্ হতবাক নয়ন গিয়ে পড়েছিল তার উপর, অসম্ভব
সুন্দর একটা পরি যেন বৃষ্টিতে ভিজতেছিল । বিধাতার
কাছে একটা আবদার করছিলাম, হে প্রভূ
বৃষ্টিটা আরেকটু বাড়িয়ে দাও, আমি পরিটাকে বৃষ্টির
নাচনতালে দেখব । সাথে-
সাথে আনন্দে আত্নহারা হয়ে চিত্কার করতে লাগলাম,
বৃষ্টিটা বাড়তে লাগল ! পরিটা আমার চিত্কার
শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল.. তার
চাহনিতে আমার হৃদ স্পন্দন বাড়তে লাগল, মনে হল
একটা কঁম্পনের সাথে কিছু অসীম সুখ মনের
কোটরে এসে বাসা বেঁধেছে..
সেদিন মায়ের বকুনিতে ছাদ থেকে চলে আসতে হলো ।
রুমে এসে মনে হচ্ছিল আবারো যাই- কিন্তু
একটা শীতল অনুভূতি শরীরে এসে ভর করলো ।
শুয়ে সেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা মেয়েটার কথা বার-বার
মনে পড়ছিল ।
পরের দিন সকালে, মা আমাকে দোকানে পাঠাল, তখনও
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল ।
একটা ছাতা হাতে দোকানে গেলাম, রাস্তার অপর
পাশটায় আমার চোখ আটকে গেল, আবারো সেই
মেয়েটি !
আমাকে দেখে মুচকি হাসতে লাগল ! আমি কিছু
বুঝে উঠার আগেই একটা চোখ ছিমটি খেয়ে চলে গেল ।
অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতাম তার চলে যাওয়ার পথ
পানে চেয়ে । ভাবতে লাগলাম মেয়েটার এই দুষ্টু
আচরণটা নিয়ে, এমন দুষ্টুমি আমার কাছে ভালই লাগে ।
তারপর হঠাত্ মায়ের কথা মনে পড়ল, তাই দোকান
থেকে বাসায় চলে আসলাম । বাসায় এসে ভাবনায়
আসনজুড়ে বসে পড়ল সেই বৃষ্টিস্নাত মেয়েটি !
তাকে পাওয়ার একটা আশা বুকের ভেতর ছোট্ট
করে বাসা বাঁধতে লাগল, নিজের অজান্তেই ।
প্রতিটা রাত কাটতে লাগল মেয়েটিকে পাওয়ার আশায়,
ঘুমিয়ে গেলে সে আসত দু'চোঁখে স্বপ্ন হয়ে ।
কয়েকদিন পর কলেজ খোলল, কলেজে যাইতেছিলাম,
এমন সময় আবারো দেখা মেয়েটির সাথে ...!
মেয়েটির পড়নে ছিল একটি স্কুলের ড্রেস,
বুজতে পারলাম মেয়েটা হাই-স্কুলে পড়ে । একটু দ্রুত
হেঁটে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম ।
মেয়েটা আমাকে দেখে মুচকি হাঁসতে লাগল, তার এই
মধুমাখা হাঁসিটা আমার কাছে ভিষন ভাল লাগত,
ইচ্ছে করত হাসিটাকে কিনে নিতে যেকোন মূল্যে !
একটু সাহস করে কাছে গেলাম,
-এক্সকিউজ মি ! একটু শোনবেন ?
~মেয়েটা মুখে তখনও হাঁসিটা লেগে আছে..
জ্বী বলুন !
-কিসে পড়ছেন ?
~ক্লাস টেন ।
-সে দিন বৃষ্টিতে আপনাকে ভিজতে দেখে আসাধারণ
লাগছিল !
~সেদিনতো আপনিও তো ভিজেছিলেন ।
-হুম, কিন্তু একা একা বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগছিল
না ।
~কেন ?
-সেদিন কারোও
হাতটা ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছিল বলে ।
~কেন ধরে ভিজতেন !
-সেদিন কোন আপনজনের হাত খোঁজে পায়নি এই
হাতটা ।
মেয়েটা চুপ করে রইলো, আপনার
নামটা জানতে পারি ?
~বৃষ্টি !
-নামটা শুনে আমার কাছে মনে হচ্ছিল জগতের
সবচেয়ে সুন্দর একটা নাম এটি, নামটারও
প্রেমে পড়ে গেলাম ।
কথা বলতে-বলতে মেয়েটির স্কুলের কাছে চলে আসলাম

তারপর মেয়েটি আমাকে একটা বাই
জানিয়ে স্কুলে ডুকে গেল । আমিও আমার
কলেজে এসে পড়লাম ।
কলেজে শেষে বাসা এসে নিজের মাথায় নিজেই
টোকাতে লাগলাম, মেয়েটার নাম্বারটা কেন নিলাম
না ।
পরেরদিন যথাসময়ে আবারো সেখানে দাড়িয়ে থাকলাম,
তাকে না বুঝতে দেওয়ার ভান ধরে রইলাম । আড়
চোঁখে তাকিয়ে দেখলাম সে আমার পেছনে !
সে কোথাও যেন যাচ্ছিল খুব সেজে-
গুজে মেয়েটাকে লক্ষ্য করলাম, কিছু বলতে চাইছিল !
আমি এবার কাছে গিয়ে..
-কি অবস্থা ?
~হুম, ভাল আপনি এখানে ?
-এইতো একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে আসলাম,
আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
~এক বান্ধবীর বার্থডেতে ।
-মনে চাইছিল তার নাম্বারটা নিতে, কিন্তু বলার সাহস
হচ্ছিল না- এবার কিছু সাহস সঞ্চয় করে বলে দিলাম,
আপনার নাম্বারটা দেওয়া যাবে ?
মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ রইল, তারপর বলতে লাগল তার
নাম্বারটা ।
একটা ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম বাসায় ।
মনের মাঝে একটা উত্তেজনার উত্পত্তি হল । বার-
বার মন চাইছিল ফোন দেই তাকে, কিন্তু অনেক
কষ্টে নিজেকে সামলে দিনটা পারলাম ।
রাতে নাম্বারটায় একটা মেসেজ করলাম,
কেমন আছেন ? জানি ভাল আছেন, কারণ আপনার
সাথে আমার দিনে দেখা হয়েছিল । কেমন উপভোগ
করলেন বান্ধবীর বার্থডেটা ? জানালে খুব খুশী হব ।
- আকাশ !
মেসেজের রিপ্লাইয়ের আশায় বসে ছিলাম, কিন্তু পাঁচ-
ছয় মিনিট পর রিপ্লাই আসল,
অসাধারণ কেঠেছে ! আপনার বন্ধুর
সাথে দেখা হয়েছিল ? ভাল থাকবেন ।
যথারীতি অনেকক্ষণ চ্যাটিং হল ।
সকালে আকাশটা মেঘলা আকার ধারণ করল !
একটা মেসেজ দিলাম, ছাদে আসো বৃষ্টিতে ভিজবো ।
পরক্ষনেই রিপ্লাই
আসলো "আকাশতো উপরে থাকে তো বৃষ্টির
জলে সে ভিজবে কি করে ? "
আবার রিপ্লাই দিলাম, "আজ আকাশ
বৃষ্টিতে ভিজতে নিচে নেমে আসবে প্লিজ এসোনা ।"
মুহুর্তের মাঝে আকাশের গায়ে অজর ধায়ায়
বৃষ্টি ঝরতে লাগল ! দৌড়ে গেলাম ছাদে,
গিয়ে দাড়ালাম আমার আশার বৃষ্টির অপেক্ষায়, ধুম
বৃষ্টির মাঝেও কেমন মনমরা হয়ে দাড়িয়ে রইলাম ।
সে আসেনি, আমি তার অপেক্ষায় বৃষ্টির
মাঝে দাড়িয়ে রইলাম,
হঠাত্ বৃষ্টিটা যেন আরো জোরে ঝড়তে লাগল,
আকাশে আজ পর্যন্ত কোনোদিন এমন
জোরে বৃষ্টি পড়তে দেখেনি, তার ছাদে তাকালাম ! এ
যেন কোনো এক বৃষ্টি কন্যার আগমন । যার
আগমনের সাথে-সাথে বৃষ্টি নিজের সর্বোচ্চ জোর
দিয়ে ঝরতে লাগল ।
আকাশ আজ নিচে নেমে এসেছে বৃষ্টিতে ভিজতে,
বৃষ্টিও তাকে অজরে ভিজিয়ে দিল ।
আকাশ আর বৃষ্টি একাকার হয়ে গেছে এই বৃষ্টিমাতাল
শ্রাবনের দিনে ।