লিখাঃ রংবাজ (Sabi)
সকাল 7 টা
টেও টেও টেও....ক্রিং ক্রি
উফ!!! এই সকালে আবার কে ফোন করলো !
প্রবল বিরক্তি নিয়ে কে ফোন করেছে তা না জেনেই
ফোনটা উঠালো রাহাত ।
: হ্যালো কে?
: কিরে শালা কুমির!!এখনো ঘুম ।প্রাইভেটে আয়
- আসতেছি । রাখ
: ওকে ।আয়
.
রাহাত আর মেঘ । ওরা বন্ধু ।মেঘ কলেজের অন্যতম সুদর্শন
ছেলে ।আর রাহাত! ও হচ্ছে কলেজের হ্যান্ডসাম লুক
ওরা একজন আরেকজনের এরকম বন্ধু যে জানটাও দিতে পারে ।
ওরা যা করে একসাথে । ওদের পছন্দও এক । ওরা জমজ ভাই
হলে মন্দ হতো না ।
একবার যখন মেঘ খুব সিক ছিল তখন রাহাত খাওয়া দাওয়া বন্ধ
করে দিয়েছিল । রাহাত মেঘের জন্য অনেক কিছু করে । মেঘ
অতটা করে না । তবুও রাহাতকে বলে "শালা সব কষ্ট তুই নিবি?"
জবাবে রাহাত বলে "তোর জন্য এতটা না পারলে চলে বন্ধু?"
এরকমটা চলে আসছে ওদের
.
সকাল 8 টা
মেঘের ফোন পেয়ে রাহাত প্রাইভেটে চলে গেল । আর মেঘ
মাঝের বেঞ্চে বসেছে ।রাহাত ওর ডান পাশে । আর মেঘের বাম
পাশের বেঞ্চে বসেছে প্রিয়তা । কলেজের সবথেকে কিউট গার্ল ।
মেঘ ওকে দেখে একটু চমকে যায় । মেঘকে আজ একটু চন্ঞ্চল
লাগছে । একটু বদলা বদলা লাগছে । একটু বোকা বোকাও
লাগছে ওকে ।
নাহ্! মেঘ আজ প্রাইভেট টা ঠিক করে পড়তে পারছে না । ওর
মনোযোগ চলে যাচ্ছে শুধু প্রিয়তার দিকে
অনেক কষ্টে একটা ঘন্টা কাটলো আর প্রাইভেটটা ছুটি হলো ।
রাহাত আর মেঘ গেল তাদের চির পরিচিত মাঠটাতে । সাথে ছিল
পাঁচটা গোল্ডলিফ আর একটা লাইটার ।প্রতিদিনের মত আজও
ওরা ওদের নির্দিষ্ট যায়গাটায় বসলো । রাহাত
বসলো মাটিটে গাড়া একটা বাঁশে হেলান দিয়ে । আর মেঘ ওর
পাশে ।
দুইজন দুইটা সিগারেট ধরিয়ে নিল
: মেঘ?
- বল দোস্ত ।
: আজকে প্রাইভেটে কি হইছিল তোর?
আমতা আমতে করে মেঘ বললো
- আরে কিছুই না ।শরীরটা খারাপ ছিল একটু
: ও!ঠিক আছে ।
- কিরে? কিছু বলবি ভাই?
: প্রেমে পরছিস কখনো?
- ইয়ে মানে !
: ঠিক জানতাম পড়ছিস । তা কে সে?
- আগে তোরটা বল
: ওকে ।একটা মেয়ে আছে । কলেজেরই । ভাই । ট্রু
বলতেছি মেয়েটারে খুব ভালবাসি! আমার ভাল বন্ধু ও ।
ভাবতেছি প্রপোজটা করবো
- তাই নাকি! তা কে ও!
: প্রিয়তা !
- প্রিয়তা!!
(পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল মেঘের ।মেঘও
যে প্রিয়তাকেই ভালবাসে । এ কেমন পরীক্ষা! মেঘ এবার
কি করবে?রাহাতকে বলবে!!
আর রাহাত ।ও মেঘের জন্য কি না করে ও!ভাইয়ের থেকেও
বেশি ভালবাসে ওকে ।এই রাহাতকে ও কস্ট দেবে?পারবে না ও ।
ভালবাসার কস্টটা ও সয়ে নেবে তার চেয়ে!তবুও রাহাতকে ও
জানতে দেবে না কিছু)
হঠাৎ রাহাত মেঘের কাঁধে একটা আলতো করে ধাক্কা দিল
: কিরে? কি হলো!গুম হয়ে গেলি যে?
কালবৈশাখীর চেয়েও প্রবল আঘাত প্রাপ্ত
মনটাকে চেপে রেখে মেঘ মুখে একগুচ্ছ হাসি আনলো
- আর আমাদার প্রিয়তা? বেশ ভাল ম্যাচিং তো!! তর
চয়েসতো ব্যাপকরে ভাই ।কবে প্রপোজ করতেছিস আর
পার্টি কবে?মেয়েটাতো আমারও ভাল ফ্রেন্ড
: আগে একসেপ্ট তো করুক ও ।বিকালে প্রপোজ করবো ।
থাকবি তুই!
- আরে করবে !করবে !তোর মত ছেলে আর পাবে ও?আর হু!
থাকবো
কথাটা বলেই আরেকটা সিগারেট ধরালো মেঘ
: করলে তো আমি পাগল । আর হু । তোর কাকে না পছন্দ?
কে ও
- আরে ধুর শালা! ঢপ মারছি ।
রাহাত আর কিছু বললোনা
ওরা এবার চুপ!হঠাৎ রাহাত সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট
বের করতে নিল । একি?প্যাকেট খালি!
: মেঘ? সব সিগারেট কিকরে একা খাইলি! ওই তর কি হইছে?
- কিছু না রে! চল বাড়ি যাই!বিকালের জন্য রেডি হ ।
: ওকে চল
.
দুপুর 2 টা
মেঘের মনে টর্নেডো বইছে । টর্নেডোর আঘাতে ওর মনের
বাগান চুরমার হয়ে গেছে । চোখের পানি আজ বাধ ভেঙেছে ।তবুও
ও রাহাতকে খুশি দেখতে চায় ।
রাহাতের ভাল চায়
ও ডায়েরি লিখছে
" রাহাতের ভালবাসা ওকে পাইয়ে দেব । আমার যত কষ্টই হোক
। রাহাত খুশি থাকুক তবেই আমার শান্তি........."
হঠাত ফোনে রিং এলো
: হ্যা রাহাত বল!
- কই তুই?পার্কে আয়
: ওকে আসতেছি
.
বিকাল 3:30
রাহাত পার্কে বসে আছে । প্রিয়তা কেবল এলো ওর বান্ধবীর
সাথে ।
মেঘও চলে এলো ।
এবার ছোট ছোট পায়ে রাহাত একটা লাল গোলাপ আর
চিঠি দিয়ে পার্কের এক মাঠ লোকের সামনে প্রিয়তাকে প্রপোজ
করলো!
প্রিয়তা চুপ ছিল । রাহাতের মুখ একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেল ।
> আই লাভ ইউ টু রাহাত
রাহাত যেন আকাশ থেকে পড়লো । আর মেঘ! ওর দিকে কেও
তাকায় নি
শুরু হলো রাহাত আর প্রিয়তার প্রেম ।ওদিকে মেঘের নরকবাস
শুরু
কিছুদিন পর
রাহাত আর মেঘ সকালে প্রাইভেটে গেছে ।হঠাৎ রাহাত
দেখলো যে মেঘের বামহাতের কব্জিতে কাটা ।মেঘকে অবশন্য
লাগছে কিরকম!
: মেঘ? কি হয়েছে?
- কিছু না!গাড়ি মেরে দিছিলো তাই । ভাই একটু
বাড়ি পৌছে দে!আজ পড়বো না
রাহাত মেঘকে নিয়ে বাড়ি গেল । রাস্তায় থাকতেই
ডাক্টারকে ফোন করে রাহাত । ডাক্টার এসে মেঘকে চেক আপ
করলো আর বললো যে শরীরে রক্তশূন্যতা মেঘের
মেঘের মা রাহাতকে মেঘকে ওর ঘরে নিয়ে যেতে বললো
রাহাত খুব মন খারাপ করলো । ও মেঘকে ওর ঘরে নিয়ে গেল ।
মেঘ ঘুমাচ্ছে আর রাহাত মেঘের টেবিলে বসে আছে....
.
কিছুদিন পর
রাহাত আর প্রিয়তাকে একটা সময় দিচ্ছে না । আর
এদিকে মেঘটাও কিছুটা অসুস্থ । রাহাতের ভাল লাগে না ।
রাহাত সারাদিন সিগারেট খায় । আর শরীরে জখম করে ।
এছাড়া ও বাজে ছেলেদের সাথেও ঘোরে । এ
নিয়ে প্রিয়তা তাকে ফোনে বলে
: রাহাত? এরকম করছো কেন?
- আমাদের রিলেশনটা ওয়ার্ক আউট করছে না ।
: মানে? পাগল?
- ভাল লাগছে না । কাজ আছে ।বাই
: হ্যা...হ্যালো রাহাত!?
ফোনটা কেটে গেল
.
এদিকে প্রিয়তার মন খুব খারাপ ।রাহাত ওকে কেন এতটা ইগনর
করছে! এবার ও মেঘকে ফোন দিল
: হ্যালো?
- মেঘ ।আমি প্রিয়তা
: বল প্রিয়তা
- এই রাহাতের কি হয়েছে রে? ও এতটা বদলে গেল কেন?
: কি জানি!আমি দেখছি
এরপর মেঘ রাহাতের সাথে কথা বলে । কিন্তু রাহাত
নাছরবান্দা । ও বদলাবে না ।এদিকে প্রিয়তা রোজ রোজ
মেঘের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে । প্রিয়তা আবার
রাহাতকে ফোন করে
: আবার ফোন দিলা কেন?
- তোমার শেষ কথাটা জানতে
: দেখ প্রিয়তা! আমাদের আর কাজ হবে না । অন্য
কাওকে খুঁজে নাও ।
- ভাল বলেছ থাক তোমার সিগারেট নিয়ে
বলেই প্রিয়তা ফোন কেটে দেয় আর মেঘকে জানায় ।
প্রিয়তা মেঘকে বলে যে মেঘ যেন প্রিয়তাকে না ছেড়ে যায় । মেঘ
আকাশ থেকে পড়ে । ও প্রিয়তাকে কিছু বলে না ।
মেঘ রাহাতের সাথে কথা বলে ।কিন্তু রাহাত রাগারাগি করে আর
ও হাত কেটে প্রচুর সিগারেট খেয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে । আর
ওকে হসপিটালে নেয়া হয়
.
তিনদিন পর কোমা থেকে ফিরেছে রাহাত মেঘ কাঁদছে বেডের
বাইরে দাড়িয়ে ।ডাক্টার বেরিয়ে এলো ।
: মেঘ কে?
- আমি!
: রাহাত আপনাকে ডেকেছে
মেঘ রাহাতের বেডে ঢুকলো
: রাহাত?
- এই মেঘ! কাঁদছিস যে!!
: তো কি করবোরে
- দেখ! আমার টাইম শেষ । আমি যাবার পর আমার ঘরের
ড্রয়ারে একটা চিঠি আছে ।ওটা পড়িস
কথাগুলো বলে ও ঘুমিয়ে যায় ।
.
তিন দিন পর রাহাত ওপারে পাড়ি জমায় ।মেঘ একদম চুপ ছিল ।
রাহাতের জানাজা শেষে ওকে গ্রামের বাড়িতে দাফন
করে এসে মেঘ ওর ঘরের ড্রয়ারে একটা চিঠি পায়
" মেঘ?
শালা!! তুই একটা মেয়েকে ভালবাসিস আর আমার জন্য
ওকে ছেড়ে দিবি! ভাল সেক্রিফাইস করতে শিখছ তাই না! কানের
নিচে একটা দিমু শালা ।
একটা কথা বলি দোস্ত! প্রিয়তার
সামনে নিজেকে বাজে করে দেখিয়েছি যেন ও আমার
থেকে দুরে যায় ।
ভাই ওকে বিয়ে করিস আর তোর প্রথম ছেলের নাম রাখিস
"রাহাত"
বিদায়"
কান্নায় ভেঙে পড়ে মেঘ । রাহাতের শেষ ইচ্ছার জন্যে ও ওর
মা বাবাকে প্রিয়তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়
প্রিয়তাকে ও বলে
: বলেছিলি তো তোর সাথে থাকতে! থাকবো
.
2 মাস পর
আজ প্রিয়তা আর মেঘের বিয়ে । ঘর আলোতে সেজেছে আর
মেঘ তাকিয়ে আছে রাহাতের ছবিটার দিকে আর
মনে মনে বলছে "সব কষ্ট শালা একাই নিলি"
.
5 বছর পর
মেঘ অফিস থেকে ফিরেছে ঁ ফিরে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ
হয়ে এসেছে । মা বাবা ঘুমাচ্ছে । মা বাবার ঘরে একটু
উকি দিয়ে এলো ও ।প্রিয়তা কোথায়??
প্রিয়তা!! ও কি করবে? ছোট্ট রাহাতের সাথে খেলা করছে ।
ছোট্ট রাহাতকে দেখে মেঘ মনে মনে বলছে "তোর ইচ্ছা পুরন
হলো রাহাত"
রাহাত হয়তো ওপরে মেঘদল হয়ে ওদের দেখছে । মেঘ বারান্দার
গিয়ে আকাশের দিকে তাকালো
গধূলীবেলার মেঘের দিকে তাকিয়ে ও বলছে
" আমার দোস্ত রাহাতকে ভালো রেখ মেঘদল"
হঠাত বৃষ্টি শুরু হলো.....ভিজছে মেঘ.........