“প্রিয় সুরভী, আমার
লেখা যে তোমার জন্যেই
তা কি তুমি জানো?” আমার
লেখা ছোট্ট চিরকুটটা যখন তার
হাতে দিয়েছিলাম, তখন তার
জ্বলজ্বলে চোখ
দুটোতে আমি নিজের জন্যে এক
চিলতে ভালবাসা খুজে ফিরছিলাম।
কিন্তু সে চোখে কেবল বন্ধুত্বই
ছিল, কারণ সে তো অন্য
কাউকে ভালবাসে। কিন্তু
আমি বুঝিনি, বুঝতে চাইনি। জ্ঞান
হবার পর থেকে যাকে অন্ধের মত
ভালোবেসেছি, সে যে আমার নয়
তা কি করে আমি বুঝবো?
আমি সেদিনও বুঝনি যেদিন ওর
মুখে আমি অন্য কারো নাম
শুনেছিলাম, আজো বুঝিনা।
...
সুরভী আমার পাশের বাসায় থাকত,
সে সুবাদে বোঝার বয়সের আগ
থেকেই তার সাথে বন্ধুত্ব। সেই
বন্ধুত্ব আমার
মনে কবে যে ভালবাসায় পরিণত
হল, নিজেই টের পেলাম না।
সুরভী ১০ম শ্রেণীতে পড়ার সময়
থেকেই দেখি কার সাথে যেন
কথা বলে। একদিন জিজ্ঞেস করেই
ফেললাম, “কার সাথে কথা বল?”
আমাকে ইতস্তত করে বলেই ফেলল
যে ওর ভালবাসার মানুষ হয়েছে।
মনের আকাশটা যেন মেঘাচ্ছন্ন
হয়ে গেল। খুব অভিমানী ছিলাম,
নিজের ঘরেই একা একা খুব
কাঁদলাম।
ছেলে মানুষকে কাঁদতে নেই, তাই
কান্না থামিয়ে ওকে নিয়ে কবিতা লিখলাম।
সেদিনের পর একদিন সুরভী আমার
রুমে এসে বললো,
“তুমি ওভাবে চলে গেলে কেন
সেদিন?
আমি জানি তুমি আমাকে চাও।
স্বপ্ন,
সবাইকে ভালোবাসা যায়না।
আমি খপ করে সুরভীর হাত ধরলাম।
আমি জানিনা তখন আমার কেমন
অনুভূতি কাজ করছিলো, আজও
আমি সন্দিহান সেটা রাগ
ছিলো নাকি প্রচন্ড রকমের
ভালোবাসা!
ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,
“তুমি কাকে ভালোবাসতে পারো আর
কাকে না পারো আমি তা জানিনা।
আমার জানার ইচ্ছাও নাই।
তুমি আমার কাছে আর
কখনো এসোনা”।
সুরভী প্রচন্ড অভিমানী মেয়ে,
আমি জানি। ও আমার
দিকে এতোটা ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে রইলো,
হঠাৎ আমি প্রচন্ড অসহায় বোধ
করলাম। আমার মনে হতে লাগলো,
আর কখনো আমাদের দেখা হবেনা।
আমি বললাম,
“তুমি কিভাবে আরেকজনকে ভালোবাসলা আমি জানিনা।
আমার কোন সমস্যা নেই, তুমি অনেক
ভালো থেকো। তোমার ওই
প্রেমিক পুরুষকে নিয়ে অনেক
আনন্দে জীবন কাটাও।”
ও আমাকে কিছু
না বলে চলে গেলো।
আমি বুঝতে পারলাম,
যাকে আমি আজ পর্যন্ত
কখনো এতোটুকু কষ্টও দেইনি সে আজ
আমার দ্বারাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট
পেলো। কারণ আমি ওর অনেক
কাছের বন্ধু ছিলাম,
সবচেয়ে কাছের। তাকে আজ
আমি এভাবে কষ্ট দিলাম!
সেদিন রাতেই আমি ওকে ফোন
করে বিধ্বস্ত একজন
সর্বহারা মানুষের মত বললাম,
“তুমি আমার হবে?”
ও বললো, “তোমার লজ্জা করেনা”?
ওর কন্ঠে তখন প্রচন্ড রাগ, প্রচন্ড
অভিমান। আমি টের পাই সে আমার
নয়। সে আমার কখনো ছিলোই না।
আমি হারিয়ে যাই অনেক দিনের
জন্য। নিজের বাড়িতেই যাই
নি প্রায় ৮ বছর।
...
দ্বিতীয়বার যখন সুরভীর সামনে যাই
তখন আমার চিরকুটটা ওর হাতে দেই।
ওর সামনে হয়ত কখনই যেতাম না।
তবে আবার মুখোমুখি হলাম, আমার
ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে। ও
আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“বিয়ে কবে করছ?” বলেছিলাম,
“তুমি যেদিন দ্বিতীয় বিয়ের
প্ল্যান করবে।” বলেই ওর চোখের
দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, আমার
এটা বলা ঠিক হয়নি, মাত্রই ২ বছর হল
ও ওর স্বামীকে হারিয়েছে। ও
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু
একটা বলতে চেয়েছিলো, তার
আগেই আমি বললাম,
“হ্যা আমি জানি আমি এমন একজন
যাকে ভালোবাসা যায়না, ঈটজ
ওকে। আমি স্যরি। আমি শুধু একটু
কৌতুক করলাম।”
আবার চলে আসার
আগে সুরভীকে একটা চিঠি লিখে আসলাম।
“প্রিয় সুরভী,
কেন তুমি আমাকে সব সময়
দূরে দূরে রেখেছো আমি জানিনা।
তুমি কি আমার
থেকে কখনো দূরে ছিলে?
একেবারেই না।
তুমি জানো আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি আর
কেউ তা বাসেনা, বাসতেও
পারবেনা। তুমি আট বছর
আগে এটা বুঝতে পারোনি। আর
আজকে বুঝলেও ভয়
পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছো।
তুমি বুঝতে পারছো যে আমি তোমাকে বুঝতে পারি।
আমি তোমাকে প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব
করি এটা কি জানো?
তুমি আমি যখন বন্ধু ছিলাম, তখন
তোমার
কি মনে পড়ে আমি তোমার হাত
ধরে সবসময় ঘুরতাম। তুমি তো কখনোও
আমার হাত ছাড়োনি তখন? এখন
কি এতোই বড় হয়ে গেলাম
আমরা যে একজন আরেকজনকে একটু
কাছে রাখতে পারিনা।
সুরভী তুমি আমাকে যত দূরেই রাখো,
আমি তোমাকে প্রতিটা মুহূর্তে ভালোবাসবো।
তুমি যতবার
আমাকে অবজ্ঞা করবে ততবার
আরো বেশি করে ভালোবাসব,
তুমি আমাকে আরো হাজার বছর
দূরে রাখলেও। আট বছর আগেও
তুমি চেয়েছিলে তাই
দূরে চলে গিয়েছিলাম,
আবারো যাচ্ছি। কিন্তু
মনে রেখো আমি তোমার কাছেই
থাকবো, তুমি আরো দশবার প্রেম
করলেও, একশোবার বিয়ে করলেও।”
...
সিলেটে চা বাগানে তখন
পাগলের মত কাজে ব্যাস্ত। ঠিক
সে সময় আমাকে অবাক
করে দিয়ে সুরভী ফোন করে বললো,
“ঢাকায় কবে আসবে?”
আমি বললাম,
“তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছ,
আমি এখন সিলেটি মেয়ের
সাথে প্রেম করছি, তার সাথেই
থাকব।”
সে আবার বলল,
“কবে আসবে ঢাকায়?”
আমি তাকে কখনও
না করতে পারি নি, পারবও না। সব
কাজ রেখে ঢাকায় ছুটলাম।