শায়লা দেখতে যে সুন্দর,তাতে কোন
সন্দেহ নেই। বরং তাকে শুধু সুন্দর
বললে একটু যেন ভুলই বলা হয়। তিনি সুন্দর,যথেষ্ট সুন্দর। এবং এই
ব্যাপারটাই সাগরের জীবনে পদে পদে বিপদ
ডেকে আনছে।
-এই যে,ইয়াং ম্যান। নাম কি ?
-জ্বি ? ! সাগর !
-স্ট্যান্ড আপ !!
-জ্বি ম্যাম,আমার নাম সাগর।
-ও ! তা মিস্টার সাগর,আমি এতক্ষণ যাবত্
যা পড়াচ্ছি,আপনি কি তা মনোযোগ
দিয়ে শুনছেন ?
-
জ্বি,মানে না...জ্বি না ম্যাম,শুনি নি।
-ও তাই নাকি ? বসে বসে তাহলে বড়ই গর্বের
কাজ করছেন,কি বলেন ?
-জ্বি না ম্যাম। স্যরি ম্যাম।
-ওকে,দেন কাম অন আপ টু
দ্যা ব্ল্যাকবোর্ড।
আসো,এসে একশো বার লিখো," আমি এখন
থেকে ক্লাসে মনোযোগ দিবো। "
..
..
..
* * *
..
..
..
সাগর ক্লাস টেনে পড়ে। কিছুদিন
হলো তাদের স্কুলে নতুন কেমিষ্ট্রি টিচার
নেয়া হয়েছে,সে হিসাবে জয়েন করেছেন মিস
শায়লা। তিনি তাদের ক্লাস টিচার।
দেখতে শুনতে তিনি অত্যন্ত
সুন্দর,কমবয়সীও বটে।
সাগর এমনিতে তেমন একটা ভাল ছাত্র
না,মাথাটা কোনদিনই সময়মতো কাজ
করে না ওর। ওর বাবার সন্দেহ
ছেলে তাঁর
মানসিক প্রতিবন্ধী,নইলে একই
ক্লাসে তিনবার থাকবে কেন !
বদলি হয়ে অনেকগুলো টাকা ডোনেশন
দিয়ে এই নামী স্কুলে এসেছে মাস তিনেক
হলো। বহু কষ্টে অন্যান্য বিষয়গুলোর
মধ্যে যাও এই কেমিষ্ট্রিটাই
হালকা পাতলা বুঝতো,মিস শায়লা আসার
পর থেকে তাও এলোমেলো হয়ে গেছে।
মিস শায়লা কেমিষ্ট্রি যদিও খুবই ভাল
পড়ান,কিন্তু তবু সাগরের তাতে উপকারের
বদলে অপকারই হচ্ছে বেশি। পড়ায় মন
দিতে পারছে না সে,একদমই না।
..
..
..
* * *
..
..
..
বোর্ড থেকে ফিরে এসে সাগর চুপচাপ তার
ডেস্কে বসে পড়লো। সে বুঝতে পারলো যে এভাবে বেশিদিন
চলা সম্ভব না। এরকম করলে তার
লেখাপড়া সোজা সপ্তম আকাশে পাড়ি জমাবে। সাগর
জানে যে মিস শায়লাকে দেখলে যে তার ভাল
লাগে,বুক কেমন যেন করে; এগুলো সবই সাময়িক।
সবই বয়ঃসন্ধি নামক অস্থির এক সময়ের
ভ্রান্ত কিছু অনুভূতি। এই অনুভূতির উত্স
রয়েছে মানুষের প্রতিটা কোষে,প্রতিটা ডিএনএ অণুতে।
প্রাচীন যুগের পূর্বপুরুষরা বিলীন
হয়ে গেছেন,কিন্তু নারীর সৌন্দর্যের
প্রতি অসীম আকর্ষণের ছাপ
তারা রেখে গেছেন বংশধরদের
মাঝে। হঠাৎ পাশের ডেস্ক থেকে সাগরের
গায়ে টোকা পড়লো। সেদিকে ফিরতেই
ক্লাসের ফার্ষ্ট বয় রাকিব ওর দিকে সামান্য ঝুঁকে এলো। ঠোঁট
যথাসম্ভব না নাড়িয়ে বললো," কি,সাগর
বাবু,টিচারের প্রেমে পড়া হয়েছে বুঝি ? "
রাকিবের অশ্লীল ভঙ্গি ও কুত্সিত হাসিটা যদিও মিস শায়লার
চোখে পড়লো না,তবে যা তার
চোখে পড়লো তা হলো ফার্ষ্ট বয়ের নাক
বরাবর মারা সাগরের ঘুষিটা।
-কেন মারলে ওকে সাগর ?
প্রশ্নটা এলো মিস শায়লার কাছ
থেকে।
রেগে গেছেন তিনি। এ
মুহূর্তে তাকে আরও
সুন্দর দেখাচ্ছে। রক্তিম বর্ণ ধারণ
করেছে গাল দুটো। সাগর তার এই তরল
ভাবের
জন্য নিজেই
নিজেকে দুটা গালি দিল।
-কি হলো ? সাগর না তোমার নাম ?
হ্যাঁ,জবাব
দিচ্ছো না কেন ?
সাগর কোন জবাব দিলো না। বলবার কিছু
নেই। রাকিবের বলার ভঙ্গিটার
মধ্যে নোংরামি ছিল-
এটা যে টিচারকে বলা যায় না,এটুকু বোঝার
মত বুদ্ধি ওর আছে।
ওদিকে মিস শায়লা রাকিবের
চেহারা পরীক্ষা করে দেখছেন। নাক
ফেটে রক্ত পড়ছে ফার্ষ্ট বয়ের।
-সাগর তোমাকে মেরেছে কেন ?
-আমি জানি না ম্যাম।
জবাব দিলো রাকিব। দু'চোখ জ্বলছে তার।
ক্লাসের ক্যাপ্টেন সে। সুযোগ পেলেই
প্রতিশোধ নিবে বলে মনস্থির করে ফেলেছে।
আর সাগরকে আবার
ফিরতে হলো ব্ল্যাকবোর্ডের
কাছে। এবার তাকে লিখতে হলো :
আমি আর রাকিবের গায়ে হাত তুলবো না।
আমি আর রাকিবের গায়ে হাত
তুলবো না।
আমি আর. . . . লেখা শেষে ফিরে এসে ডেস্কে বসতেই
রাকিব হিসিয়ে উঠলো,"
দেখিস,আজকে থেকে তোর জীবন আমি নরক
বানিয়ে ছাড়বো ! "
ক্ষমা চাইতে গেল সাগর। আর চাইতে গিয়েই
ধরা পড়ল টিচারের চোখে। কিছুই করার নেই।
রাকিবের মত লুকিয়ে কথা চালাচালিতে যে সাগর
পারদর্শী না। তাকে
ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে দেখা গেল :
আমি আর ক্লাসে কথা বলবো না।
আমি আর ক্লাসে কথা বলবো না।
আমি আর ক্লাসে কথা. . . .
-রাকিব,আজ থেকে তুমি সাগরের ওপর
বিশেষ নজর রাখবে।
ক্লাস শেষে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুললেন মিস শায়লা।
-" ও যদি কোথাও
কোন
বাঁদরামি করে,আমাকে তুমি সরাসরি রিপোর্ট করবে। "
সেদিন থেকে সত্যিই নারকীয়
আনন্দে সাগরের জীবনটাকে দূর্বিষহ
করে তুললো রাকিব। ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডে ওকে বিভিন্ন
কথা লিখে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেল।
কোন টিচারের ক্লাসে শাস্তি এড়িয়ে যাবার
সম্ভাবনা দেখা দিলেই মিথ্যে অভিযোগে ওকে ফাঁসিয়ে দিতে লাগলো রাকিব।
সাগর একা থাকতে ভালবাসে। তার উপর
নতুন আসায় তেমন কোন বন্ধু-বান্ধবও
গড়ে ওঠেনি ওর,ফলে সাহায্য পাবে এমন
কাউকেও হাতের কাছে পেল না ও।
..
..
..
* * *
..
..
..
পরদিন সকাল। ছেলেমেয়েরা একে একে স্কুলে আসতে শুরু করেছে।
স্কুলটা দোতলা। সেকেন্ডারি সব
ক্লাস হয় দোতলায়। তাই সিঁড়িতে ওঠার
মুখে মোক্ষম জায়গায় বাছলো রাকিব। আর তার
ফলে মিস শায়লার ক্লাসে সাগরকে নিয়মিত লিখতে হলো :
আমি আর সিঁড়িতে কাগজ ফেলবো না. . . .
অ্যাসেম্বলিতে আমি আর শিস বাজাবো না. . . .
সিঁড়িতে আমি আর থুতু ফেলবো না. . .
শেষে আর সহ্য করতে না পেরে রাকিবকে লোভ
দেখাবার সিদ্ধান্ত নিলো সাগর। সিনেমায়
যাবার কথা বলতেই রাকিব নাক সিটকালো।
-দেখি না আমি তোদের ওইসব
সিনেমা টিনেমা।
-তাহলে চকলেট খাবি ?
-শালা দুধের বাচ্চা ! তোর শখ
হলে তুই
খা গিয়ে যা।
মোটকথা কোনভাবেই
রাকিবকে বাগে আনতে না পেরে হতাশ
হয়ে হাল ছেড়ে দিল সাগর।
শেষে বললো,"
প্রশ্নটা এলো মিস শায়লার কাছ
থেকে।
রেগে গেছেন তিনি। এ
মুহূর্তে তাকে আরও
সুন্দর দেখাচ্ছে। রক্তিম বর্ণ ধারণ
করেছে গাল দুটো। সাগর তার এই তরল
ভাবের
জন্য নিজেই
নিজেকে দুটা গালি দিল।
-কি হলো ? সাগর না তোমার নাম ?
হ্যাঁ,জবাব
দিচ্ছো না কেন ?
সাগর কোন জবাব দিলো না। বলবার কিছু
নেই। রাকিবের বলার ভঙ্গিটার
মধ্যে নোংরামি ছিল-
এটা যে টিচারকে বলা যায় না,এটুকু বোঝার
মত বুদ্ধি ওর আছে।
ওদিকে মিস শায়লা রাকিবের
চেহারা পরীক্ষা করে দেখছেন। নাক
ফেটে রক্ত পড়ছে ফার্ষ্ট বয়ের।
-সাগর তোমাকে মেরেছে কেন ?
-আমি জানি না ম্যাম।
জবাব দিলো রাকিব। দু'চোখ জ্বলছে তার।
ক্লাসের ক্যাপ্টেন সে। সুযোগ পেলেই
প্রতিশোধ নিবে বলে মনস্থির করে ফেলেছে।
আর সাগরকে আবার
ফিরতে হলো ব্ল্যাকবোর্ডের
কাছে। এবার তাকে লিখতে হলো :
আমি আর রাকিবের গায়ে হাত তুলবো না।
আমি আর রাকিবের গায়ে হাত
তুলবো না।
আমি আর. . . . লেখা শেষে ফিরে এসে ডেস্কে বসতেই
রাকিব হিসিয়ে উঠলো,"
দেখিস,আজকে থেকে তোর জীবন আমি নরক
বানিয়ে ছাড়বো ! "
ক্ষমা চাইতে গেল সাগর। আর চাইতে গিয়েই
ধরা পড়ল টিচারের চোখে। কিছুই করার নেই।
রাকিবের মত লুকিয়ে কথা চালাচালিতে যে সাগর
পারদর্শী না। তাকে
ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে দেখা গেল :
আমি আর ক্লাসে কথা বলবো না।
আমি আর ক্লাসে কথা বলবো না।
আমি আর ক্লাসে কথা. . . .
-রাকিব,আজ থেকে তুমি সাগরের ওপর
বিশেষ নজর রাখবে।
ক্লাস শেষে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুললেন মিস শায়লা।
-" ও যদি কোথাও
কোন
বাঁদরামি করে,আমাকে তুমি সরাসরি রিপোর্ট করবে। "
সেদিন থেকে সত্যিই নারকীয়
আনন্দে সাগরের জীবনটাকে দূর্বিষহ
করে তুললো রাকিব। ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডে ওকে বিভিন্ন
কথা লিখে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেল।
কোন টিচারের ক্লাসে শাস্তি এড়িয়ে যাবার
সম্ভাবনা দেখা দিলেই মিথ্যে অভিযোগে ওকে ফাঁসিয়ে দিতে লাগলো রাকিব।
সাগর একা থাকতে ভালবাসে। তার উপর
নতুন আসায় তেমন কোন বন্ধু-বান্ধবও
গড়ে ওঠেনি ওর,ফলে সাহায্য পাবে এমন
কাউকেও হাতের কাছে পেল না ও।
..
..
..
* * *
..
..
..
পরদিন সকাল। ছেলেমেয়েরা একে একে স্কুলে আসতে শুরু করেছে।
স্কুলটা দোতলা। সেকেন্ডারি সব
ক্লাস হয় দোতলায়। তাই সিঁড়িতে ওঠার
মুখে মোক্ষম জায়গায় বাছলো রাকিব। আর তার
ফলে মিস শায়লার ক্লাসে সাগরকে নিয়মিত লিখতে হলো :
আমি আর সিঁড়িতে কাগজ ফেলবো না. . . .
অ্যাসেম্বলিতে আমি আর শিস বাজাবো না. . . .
সিঁড়িতে আমি আর থুতু ফেলবো না. . .
শেষে আর সহ্য করতে না পেরে রাকিবকে লোভ
দেখাবার সিদ্ধান্ত নিলো সাগর। সিনেমায়
যাবার কথা বলতেই রাকিব নাক সিটকালো।
-দেখি না আমি তোদের ওইসব
সিনেমা টিনেমা।
-তাহলে চকলেট খাবি ?
-শালা দুধের বাচ্চা ! তোর শখ
হলে তুই
খা গিয়ে যা।
মোটকথা কোনভাবেই
রাকিবকে বাগে আনতে না পেরে হতাশ
হয়ে হাল ছেড়ে দিল সাগর।
শেষে বললো,"
ঠিক
আছে,এক কাজ কর।
আমি তোকে ঘুষি মেরেছি,তুইও
আমাকে একটা মার;শোধ হয়ে যাক। "
-আমি বাজে ছেলেদের মত
মারামারি করি না।
-তা পারবি কেন ? পারিস শুধু
টিচারের
নামে যা-তা বলতে !!
রাগ
না সামলাতে পেরে বলে বসলো সাগর।
বলেই বুঝলো বড় ভুল করে ফেলেছে।
শত্রুতা না কমিয়ে বরং আরও
বাড়িয়েছে ও।
বিচারের
সাথে সাথে ব্ল্যাকবোর্ডে সাগরের
লেখার পরিমাণও বেড়ে গেল :
সিঁড়িতে আমি আর চেঁচাবো না. . . .
দেয়ালে আমি আর লিখবো না. . . .
একবারে আমি আর দু'ধাপ
সিঁড়ি টপকাবো না. . . .
সাগরের হাতের লেখা ভাল হয়ে গেল। সাগর
আশা করলো এটা হয়তো মিস শায়লার
চোখে পড়বে। কিন্তু পড়লো না। তিনি তখন
ক্লাস নিতে ব্যস্ত। হয়তোবা জৈব যৌগের
জটিল পারমাণবিক আকার
পড়াচ্ছেন,আর নয়তো অন্য কিছুতে ব্যস্ত।
তবে শিকে ছিঁড়লো অঙ্ক পরীক্ষার দিন।
সাগরের ভাগ্য যেন সবদিক দিয়েই
খারাপ,সেদিন মিস শায়লাই আসলেন
গার্ড হিসেবে।পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎই
যেন বন্ধু বত্সল হয়ে উঠলো রাকিব।
খাতাটা আড় করে সাগরের দেখার ব্যবস্থা করে দিলো।
একে তো কঠিন অঙ্ক,তার উপর সাগর
পারে না কিছু; তাই লোভ
সামলাতে পারলো না,মাথা বাঁকিয়ে দেখার
চেষ্টা করলো খাতাটা। কিন্তু
সে কি আর জানত,রাকিব মনে মনে কোন জটিল
অঙ্ক মিলিয়ে বস আছে ! সাগর উঁকি দেবার
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলো সে।
মিসকে তাকাতে বলে উঠলো," সাগর
আমারটা নকল করছে ! "
রাকিব ক্লাসের ফার্ষ্ট বয়,কাজেই
বিন্দুমাত্র সন্দেহ করলেন না মিস শায়লা।
সাথে সাথে সাগরকে গিয়ে বোর্ডে লিখতে হলো :
আমি আর টেস্টে নকল করবো না. . . .
আমি আর টেস্টে নকল করবো না. . . .
আমি আর টেস্টে. . . .
এরপর মিস শায়লা ও প্রিন্সিপাল সাহেব
মিলে অনিবার্যভাবে সাগরের অভিভাবকদের তলব করলেন।
..
..
..
* * *
..
..
..
-সাগর ? এই সাগর ? স্কুলে যাবি না ?
পরদিন সকাল। সাগরের মা মিসেস রহমান
এসে সাগরকে ডাকতে লাগলেন। সাগর
তার রুমে চুপ করে বস আছে। মায়ের
ডাকে মাথা তুললো। তার চোখ লাল।
-কি হলো বাবা ? স্কুলে যাবি না ?
-মা,আমি কি এতই খারাপ ?
সাগরের চোখে জল টলমল করে উঠে।
এটা দেখে মিসেস রহমানের গতকালের
কথা মনে পড়ে। গতকাল স্কুলে সাগরের ক্লাস টিচার ওর
বিপক্ষে অনেকগুলো অপরাধের বিচার
দেন। ক্লাসে অমনোযোগ,টেস্টে নকল
করা,স্কুলের জিনিস নষ্ট করাসহ আরও
অনেক কিছু। সবশেষে প্রিন্সিপাল স্যার
মিঃ রহমানকে বলে দেন যে যদি এরকম
চলতে থাকে,তাহলে তিনি আর
সাগরকে এই স্কুলে রাখতে পারবেন না।
সাগরের বাবা বাড়িতে এসে সাগরের
সাথে প্রচন্ড রাগারাগি করেন।
ওকে যা মুখে আসে তাই বলেন;অপদার্থ,গর
ু,গাধা,ইডিয়ট,কুকুর - কিছুই
বাকি রাখেন
না। এমনকি সাগরের গায়ে হাত পর্যন্ত
তুলেন ! ঘটনাগুলো মনে করে সাগরের মার
চোখেও জল এসে পড়ে,তাড়াতাড়ি হাত
দিয়ে চোখ মুছেন তিনি।
-না রে বাবা ! অমন কথা বলে না।
-তাহলে বাবা এমন করেন কেন আমার
সাথে ? আমাকে দেখতেই পারেন না !
-তা না বাবা। তোর
বাবা তো ইচ্ছে করে করেন না রে ! মনের
কষ্টে করেন। জানিস,কালকে তোকে বকে আজকে উনি অফিসে গিয়েছেন
না খেয়ে।
-কি,তাই ?
-হ্যা রে বাবা।
তিনি ইচ্ছে করে তোর সাথে অমন করেন না।
সামনে থেকে ভালমত পড়িস, কেমন ?
-ঠিক আছে মা।
-আচ্ছা এখন
তাহলে স্কুলে যা বাবা,কেমন ?
-ঠিক আছে মা,যাচ্ছি।
..
..
..
* * *
..
..
..
দৌঁড়ে স্কুল
বিল্ডিংয়ে ঢুকলো সাগর।
সকালে দেরি করে বের হওয়াতে আজ বাস
মিস করেছে সে,তাই আসতে লেট হয়ে গেল।
সিঁড়ি খালি,ছেলেমেয়েরা আগেই যার
যার রুমে ঢুকে গেছে। সিঁড়ির প্রথম অর্ধেক পেরিয়ে মোড়
ঘুরতেই সাগর দমে গেল। সিঁড়ির মাথায়
যমদূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে রাকিব।
চেহারা গম্ভীর,যেন সাংঘাতিক কোন
অপরাধ করে ধরা পড়ে গেছে সাগর।
ও পাশ কাটাতে যেতেই কাঁধ থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিলো রাকিব।
একটা বই বের করে ছিঁড়ে দু'টুকরো করেই
বললো," ও,পড়া না পেরে এখন
তাহলে রাগের
চোটে বই ছেঁড়া হচ্ছে,তাই না ? "
..
..
..
..
..
ক্লাসের বেল এখনো বাজেনি। ক্লাসে টিচার না আসায় এখনও হাউকাউ করছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
বাইরে থেকে কেউই তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে না। বেল
বাজার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সাগর দৌঁড়ে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়লো।
মিস শায়লা মুখ তুলে তাকালেন। আজকে তিনি কিছুটা আগেই
ক্লাসে এসেছেন।
" একেবারে শেষ সময়ে আসো কেন তুমি ?" এটুকু বলার
আগেই
ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে পৌঁছে গেল সাগর।
চক তুলে নিয়ে লিখতে শুরু করলো :
আমি আর সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . .
আমি আর সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . . আমি আর সিঁড়ি থেকে. . . .
প্রায় দশলাইন লেখার পর টিচার কথাটার
মর্মোদ্ধার করতে পারলেন।
ছুটে সিঁড়ির গোড়ায় চলে এলেন মিস শায়লা। দেখলেন
সিঁড়ির নিচে দলামোচড়া হয়ে পড়ে আছে ক্লাসের
ফার্ষ্ট বয়। ঘাড়টা বেকায়দা ভঙ্গিতে বেঁকে আছে তার।
মুখে হাত দিয়ে চাপা চিত্কার
করে উঠলেন
মিস শায়লা।
তাঁর চিত্কারে পুরো স্কুলের
মানুষ যখন
সিঁড়ির
কাছে ভেঙে পড়েছে,ওদিকে সাগর
তখন ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে চলেছে : আমি আর
সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . .
আমি আর
সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . .
বহুদিন পর আজ সে সত্যিকারের
অপরাধের
জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। তাই আজ
সাগর
থামবে না।
সে লিখে যাবে,বিরামহীনভা
বে লিখে যাবে।
তার হাতের চক ক্ষয়ে আসছে......
আছে,এক কাজ কর।
আমি তোকে ঘুষি মেরেছি,তুইও
আমাকে একটা মার;শোধ হয়ে যাক। "
-আমি বাজে ছেলেদের মত
মারামারি করি না।
-তা পারবি কেন ? পারিস শুধু
টিচারের
নামে যা-তা বলতে !!
রাগ
না সামলাতে পেরে বলে বসলো সাগর।
বলেই বুঝলো বড় ভুল করে ফেলেছে।
শত্রুতা না কমিয়ে বরং আরও
বাড়িয়েছে ও।
বিচারের
সাথে সাথে ব্ল্যাকবোর্ডে সাগরের
লেখার পরিমাণও বেড়ে গেল :
সিঁড়িতে আমি আর চেঁচাবো না. . . .
দেয়ালে আমি আর লিখবো না. . . .
একবারে আমি আর দু'ধাপ
সিঁড়ি টপকাবো না. . . .
সাগরের হাতের লেখা ভাল হয়ে গেল। সাগর
আশা করলো এটা হয়তো মিস শায়লার
চোখে পড়বে। কিন্তু পড়লো না। তিনি তখন
ক্লাস নিতে ব্যস্ত। হয়তোবা জৈব যৌগের
জটিল পারমাণবিক আকার
পড়াচ্ছেন,আর নয়তো অন্য কিছুতে ব্যস্ত।
তবে শিকে ছিঁড়লো অঙ্ক পরীক্ষার দিন।
সাগরের ভাগ্য যেন সবদিক দিয়েই
খারাপ,সেদিন মিস শায়লাই আসলেন
গার্ড হিসেবে।পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎই
যেন বন্ধু বত্সল হয়ে উঠলো রাকিব।
খাতাটা আড় করে সাগরের দেখার ব্যবস্থা করে দিলো।
একে তো কঠিন অঙ্ক,তার উপর সাগর
পারে না কিছু; তাই লোভ
সামলাতে পারলো না,মাথা বাঁকিয়ে দেখার
চেষ্টা করলো খাতাটা। কিন্তু
সে কি আর জানত,রাকিব মনে মনে কোন জটিল
অঙ্ক মিলিয়ে বস আছে ! সাগর উঁকি দেবার
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলো সে।
মিসকে তাকাতে বলে উঠলো," সাগর
আমারটা নকল করছে ! "
রাকিব ক্লাসের ফার্ষ্ট বয়,কাজেই
বিন্দুমাত্র সন্দেহ করলেন না মিস শায়লা।
সাথে সাথে সাগরকে গিয়ে বোর্ডে লিখতে হলো :
আমি আর টেস্টে নকল করবো না. . . .
আমি আর টেস্টে নকল করবো না. . . .
আমি আর টেস্টে. . . .
এরপর মিস শায়লা ও প্রিন্সিপাল সাহেব
মিলে অনিবার্যভাবে সাগরের অভিভাবকদের তলব করলেন।
..
..
..
* * *
..
..
..
-সাগর ? এই সাগর ? স্কুলে যাবি না ?
পরদিন সকাল। সাগরের মা মিসেস রহমান
এসে সাগরকে ডাকতে লাগলেন। সাগর
তার রুমে চুপ করে বস আছে। মায়ের
ডাকে মাথা তুললো। তার চোখ লাল।
-কি হলো বাবা ? স্কুলে যাবি না ?
-মা,আমি কি এতই খারাপ ?
সাগরের চোখে জল টলমল করে উঠে।
এটা দেখে মিসেস রহমানের গতকালের
কথা মনে পড়ে। গতকাল স্কুলে সাগরের ক্লাস টিচার ওর
বিপক্ষে অনেকগুলো অপরাধের বিচার
দেন। ক্লাসে অমনোযোগ,টেস্টে নকল
করা,স্কুলের জিনিস নষ্ট করাসহ আরও
অনেক কিছু। সবশেষে প্রিন্সিপাল স্যার
মিঃ রহমানকে বলে দেন যে যদি এরকম
চলতে থাকে,তাহলে তিনি আর
সাগরকে এই স্কুলে রাখতে পারবেন না।
সাগরের বাবা বাড়িতে এসে সাগরের
সাথে প্রচন্ড রাগারাগি করেন।
ওকে যা মুখে আসে তাই বলেন;অপদার্থ,গর
ু,গাধা,ইডিয়ট,কুকুর - কিছুই
বাকি রাখেন
না। এমনকি সাগরের গায়ে হাত পর্যন্ত
তুলেন ! ঘটনাগুলো মনে করে সাগরের মার
চোখেও জল এসে পড়ে,তাড়াতাড়ি হাত
দিয়ে চোখ মুছেন তিনি।
-না রে বাবা ! অমন কথা বলে না।
-তাহলে বাবা এমন করেন কেন আমার
সাথে ? আমাকে দেখতেই পারেন না !
-তা না বাবা। তোর
বাবা তো ইচ্ছে করে করেন না রে ! মনের
কষ্টে করেন। জানিস,কালকে তোকে বকে আজকে উনি অফিসে গিয়েছেন
না খেয়ে।
-কি,তাই ?
-হ্যা রে বাবা।
তিনি ইচ্ছে করে তোর সাথে অমন করেন না।
সামনে থেকে ভালমত পড়িস, কেমন ?
-ঠিক আছে মা।
-আচ্ছা এখন
তাহলে স্কুলে যা বাবা,কেমন ?
-ঠিক আছে মা,যাচ্ছি।
..
..
..
* * *
..
..
..
দৌঁড়ে স্কুল
বিল্ডিংয়ে ঢুকলো সাগর।
সকালে দেরি করে বের হওয়াতে আজ বাস
মিস করেছে সে,তাই আসতে লেট হয়ে গেল।
সিঁড়ি খালি,ছেলেমেয়েরা আগেই যার
যার রুমে ঢুকে গেছে। সিঁড়ির প্রথম অর্ধেক পেরিয়ে মোড়
ঘুরতেই সাগর দমে গেল। সিঁড়ির মাথায়
যমদূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে রাকিব।
চেহারা গম্ভীর,যেন সাংঘাতিক কোন
অপরাধ করে ধরা পড়ে গেছে সাগর।
ও পাশ কাটাতে যেতেই কাঁধ থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিলো রাকিব।
একটা বই বের করে ছিঁড়ে দু'টুকরো করেই
বললো," ও,পড়া না পেরে এখন
তাহলে রাগের
চোটে বই ছেঁড়া হচ্ছে,তাই না ? "
..
..
..
..
..
ক্লাসের বেল এখনো বাজেনি। ক্লাসে টিচার না আসায় এখনও হাউকাউ করছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
বাইরে থেকে কেউই তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে না। বেল
বাজার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সাগর দৌঁড়ে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়লো।
মিস শায়লা মুখ তুলে তাকালেন। আজকে তিনি কিছুটা আগেই
ক্লাসে এসেছেন।
" একেবারে শেষ সময়ে আসো কেন তুমি ?" এটুকু বলার
আগেই
ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে পৌঁছে গেল সাগর।
চক তুলে নিয়ে লিখতে শুরু করলো :
আমি আর সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . .
আমি আর সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . . আমি আর সিঁড়ি থেকে. . . .
প্রায় দশলাইন লেখার পর টিচার কথাটার
মর্মোদ্ধার করতে পারলেন।
ছুটে সিঁড়ির গোড়ায় চলে এলেন মিস শায়লা। দেখলেন
সিঁড়ির নিচে দলামোচড়া হয়ে পড়ে আছে ক্লাসের
ফার্ষ্ট বয়। ঘাড়টা বেকায়দা ভঙ্গিতে বেঁকে আছে তার।
মুখে হাত দিয়ে চাপা চিত্কার
করে উঠলেন
মিস শায়লা।
তাঁর চিত্কারে পুরো স্কুলের
মানুষ যখন
সিঁড়ির
কাছে ভেঙে পড়েছে,ওদিকে সাগর
তখন ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে চলেছে : আমি আর
সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . .
আমি আর
সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে রাকিবকে খুন
করবো না. . . .
বহুদিন পর আজ সে সত্যিকারের
অপরাধের
জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। তাই আজ
সাগর
থামবে না।
সে লিখে যাবে,বিরামহীনভা
বে লিখে যাবে।
তার হাতের চক ক্ষয়ে আসছে......