মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৩৭- লাল সবুজের পতাকা

" আব্দুর রহমান ,
২৫শে মার্চ ,১৯৭১...
.
হাতির উপর বসে বাড়ি ফিরছি আমি ।
সাথে আছে জুলেখা বানু ,আমার সদ্য
বিবাহিতা স্ত্রী ।।। লাল শাড়ীর
সাথে লাল কুমকুম
দিয়ে মুখটা রাঙানো ।
দুধে আলতা গাঁয়ের রঙের সাথে লাল
শাড়ি , লাল কুমকুম ,লাল আলতা যেন
আমাদের বাড়ির উঠোনের ডালিম
গাছের পাকা ডালিম ।
..বাড়ি ভর্তি মানুষ ,হৈ হুল্লোড় ।মার
হাতে বানানো নারিকেলের ছাতু
খাওয়াচ্ছে সবাইকে ।নারিকেলের
ছাতু
।।চিড়া ,মুড়ির সাথে নারিকেল
দিয়ে ঢেঁকিতে গুড়ো করে তৈরি একধরনের
জনপ্রিয় খাবার...
.
দেশের পরিস্থিতি ভাল না ।
বাবা পাশের বাড়ির সুলেমান চাচার
রেডিওতে শুনে এসেছে দেশে নাকি মিলিটিরিরা নেমেছে ।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে...
.
রাত দশটা ।।। ঝি ঝি পোকারা অনবরত
ঝি ঝি করা শুরু
করেছে...জোনাকি পোকারা নাঁচছে ।
আর আমি বসে আছি আমার নববধূর
পাশে...
কিছুক্ষণ পর ,দূর থেকে একটা কাক
কা কা করে ডেকে উঠলো ,সাথে সাথেই
শুরু হল মর্টারের শব্দ । আর সেই
সাথে মানুষের গগনবিদারী চিৎকার ।
বাতাসে ভেসে আসছে মিলিটারিদের
বুটের দাপট...
.
ঘর থেকে বের হয়ে উত্তর পাড়ার
নজরুল চাচার বাড়ির
দিকে তাকিয়ে কাঁপছি আমরা ।
পুড়ছে ঘর । পুড়ছে খড়ের পুঞ্জ...
.
২৬শে মার্চ ,১৯৭১...
.
ভোর ছয়টা ।রাতেই ঘর
বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম
আমরা সবাই । বাবা গিয়েছিল
মসজিদে । তাই বাবাকে ছেড়েই
পাশের
গ্রামের মার নানার
বাড়ি চলে গিয়েছিলাম আমরা ।
বাড়ি এসে দেখি সব কিছু ঠিকই
আছে ।ঘরও আছে ।গোঁয়াল ঘর
আছে । কিন্তু আমার টমটম নাই ।
টমটম ।। আমার গরু । টমটম যখন
দৌড় দিত তখন ঘোড়ার মত টগবগ
টগবগ শব্দ হত । ঘরের সামনে লাউ
গাছে দুটো লাউ ঝুলছিল । লাউ
দুটো হালকা মৃদু বাতাসে দুলছে...
তবে লাউ গাছের
নিচে পড়ে আছে একটি লাশ । সবুজ
ঘাসের ওপর জমাট রক্ত...
.
বাবার লাশটি দেখে মা কিছু
বলছে না ।
কাঁদছে না । শুধু অপলক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর
বলছে ,"খোকা ,আমাকে একটু রক্ত
দিবি !দিবি খোকা আমাকে একটু
রক্ত... "
.
১২ই মে ,১৯৭১...
.
আমি এখন এক পাহাড়ে ।
খোলা আকাশের
নিচে বসে বুকভরে নিশ্বাস নিচ্ছি ।
একটু আগে অপারেশন শেষ
করে আসলাম । অপারেশন ।
মিলিটারি খুন করার মিশন ।
দেশকে বাঁচানোর মিশন...
.
রেললাইনের পাশের
মিলিটারি ক্যাম্পে এ্যাটাক
করেছিলাম আমরা । ছিলাম ৩১ জন ।
এখন আছি ২৯ জন । সুবহান ভাই ।
বয়সে বাবার সমান । ছিলেন উকিল ।
কিন্তু তবুও তিনি আমাদের ভাই ।
এখানে আমরা সবাই ভাই ,ভাই । সবাই
এক মায়ের সন্তান । মায়ের মুক্তির
জন্য লড়ছি আমরা । আমাদের
মা ,আমাদের দেশ ,বাংলাদেশকে মুক্ত
করবোই করবো আমরা...
.
আমার পাশেই ছিল সুবহান ভাই ।
সুবহান ভাই এর বুকে যখন
গুলি লাগলো এগিয়ে গেলাম তার
কাছে । বুকে হাত দিয়ে দৃপ্ত
কন্ঠে তিনি বললেন ,"রহমান ,তুমি গুলি করা থামিও
না । শেষ করে দেও ওদের । ওরা যেন
একটাও বেঁচে না ফিরতে পারে এখান
থেকে । আমি মরছি না ।
আমি থাকবো রহমান ,
আমি তোমাদের হৃদয়ে ,লাল সবুজ
পতাকায় থাকবো আমি । এগিয়ে যাও
। দেশে যে জোয়ার বইছে সেই
জোয়ারটা এগিয়ে নিয়ে চল..."
.
ক্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলাম আমরা ।
সুবহান ভাই এর কথা না কিসের জন্য
জানি না আমি একাই
গুড়িয়ে দিয়েছি ।
এজন্য অবশ্য কমান্ডারের
কাছে বকাও খেয়েছি । তবু আমার
কষ্ট নেই । আমার মত লাখ লাখ
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলেও কিছু
হবে না । এ দেশ স্বাধীন হবেই...
.
সুবহান ভায়ের পকেটে একটা চিঠি ছিল
। চিঠিটা খুলি নি ।
হয়তো ভাবিকে লেখা তার এই
চিঠি ।।।
পকেটে আরেকটা ছবি ছিল । তার
মেয়ের ছবি । ছবিতে কি সুন্দর
করে হাসছে মেয়েটা !! আচ্ছা , বাবার
মৃত্যু সংবাদ
শুনে মেয়েটি কি কাঁদবে ??? বাবার
মৃত্যুতে তো আমি কাঁদি নি । বাবার
রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলাম এ
দেশকে স্বাধীন করবো । তারপর
গ্রামের এক বড় ভাই এর
সাথে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম । যুদ্ধের
প্রশিক্ষণ নিতে..
.
মা কে অনেক দিন যাবৎ দেখি না । বউ
এর সাথে কথাও বলি নি ঠিকমত । শুধু
বলেছিলাম ,"আমি ফিরে আসবো জুলেখা ।
কপালে থাকবে লাল সবুজের
পতাকা আর বগলে তোমার জন্য লাল
সবুজ শাড়ি..."
কমান্ডার স্যার ডাকছে । আজ
এখানেই শেষ করছি । জানি না আবার
লিখতে পারবো কি না তবে একটা কথা বলতে পারি এ
দেশের স্বাধীনতা কেউ
আটকিয়ে রাখতে পারবে না । দেশ
স্বাধীন হবেই...
.
২৯শে আগস্ট ,১৯৭১...
.
আজ ছদ্মবেশে রাতের
আঁধারে গিয়েছিলাম বাড়িতে ।
মা শুয়ে আছে । আর বউ ঘুমোচ্ছে..
"এসেছিস
বাবা ??"কপালে মুখে চুমো দিতে দিতে বলল
"আমি জানতাম তুই আসবি খোকা ।
আয় ভাত বেড়ে দেই..."
কতদিন পর বউকে দেখছি তবু
জুলেখা কোন কথা বলছে না ।
খাওয়া শেষ করে জুলেখাকে ডাক
দিলাম । কাঁদছে জুলেখা । কাঁদছে মা...
.
পরাণ বাবুর দোকানে ডাল
কিনতে গিয়েছিল বউ আমার । এক
রাজাকার তখন তাকে ধরে নিয়ে যায়
কুলাঙ্গারদের আড্ডখানাতে ।
অমানুষের বাচ্চাগুলো রাতভর ধর্ষণ
করে আমার বউটাকে ।রাতভর
অত্যাচার , নির্যাতন করে । জুলেখার
নরম মাংসগুলোকে ঐ অমানুষের
বাচ্চাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খায় ।
সকাল বেলা ছেড়ে দেয় জুলেখাকে ।
তবে চোখদুটিকে চিরতরে অন্ধ
করে দেয়...
.
মানুষের মৃত্যু দেখতে দেখতে এখন
আমি আর মৃত্যুকে ভয় পাই না ।
প্রথম প্রথম হিসাব করতাম
কতগুলো আমাদের মধ্যে মারা গেল
আর কতগুলোকে মারলাম আমরা ।
কিন্তু এখন এসব
পরোয়া করি না আমি ।
মরলে মরবো । তবু এ দেশকে স্বাধীন
করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ । আমার
জুলেখার ইজ্জত নিয়েছে ,অন্ধ
করে দিয়েছে ,আমার
বাবাকে হত্যা করেছে তবু এতে আমার
কষ্ট নেই । কারণ এখন আবেগ
চলে গিয়েছে , বাড়ির লাউ গাছ
গুলো যেমন
শুকিয়ে গিয়েছে তেমনি আমার আবেগ
গুলোও আজ রক্তশূন্য
হয়ে গিয়েছে...
.
আজ আমাদের জেলার
পাকিস্তানি হেড
কোয়ার্টারে আক্রমণ করবো ।
হয়তো এটাই আমার শেষ লেখা ।
তবে আমি মরি আর বাঁচি এ দেশ
একদিন স্বাধীন হবেই । বাংলাদেশের
স্বাধীনতাকে কেউ
আটকিয়ে রাখতে পারবে না ।
ভরা বর্ষায় পদ্মার বাঁধ
ভেঙ্গে গেলে গ্রাম কে গ্রাম
ভেসে যায় বন্যার পানিতে । একবার
বাঁধ ভেঙ্গে গেলে কোন শক্তিই
একে আটকিয়ে রাখতে পারে না..."
.
...ডায়েরিতে আর কিছু লেখা নেই ।
ডায়রির পাতা আছে কিন্তু লেখা নেই

এ দেশ আছে তবে নেই বীর
মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান...
.
সামনেই মার্চ মাস । স্বাধীনতার মাস
। এই স্বাধীনতার
মাসে স্বাধীনতা নিয়ে পত্রিকার জন্য
একটি প্রতিবেদন রচনা করতেই
সাবিতের
সাথে গিয়েছি একটি গ্রামে ।
একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ।
যিনি পঙ্গু । যুদ্ধে তিনি তার
মহামূল্যবান পা টি হারিয়েছেন তবু
তার কোন কষ্ট নেই । আছে হতাশা ।
দেশ স্বাধীন হয়েছে , কিন্তু যাদের
বিনিময়ে এ দেশের
স্বাধীনতা পেয়েছি তারা পায়
নি যোগ্য সম্মান....
.
জহির উদ্দীন । আবদুর রহমানের
স্ত্রী জুলেখা বানুর বড় ভাই... .
আমার আর সাবিতের মনে প্রশ্ন
রহমান সাহেবের কি হয়েছিল ।
যুদ্ধে কি তিনি শহীদ হয়েছিলেন ?
যুদ্ধে যদি শহীদই হতেন তাহলে এই
ডায়েরিটা কিভাবে রহমান সাহেব
পেলেন ! আর জহির উদ্দীনের বোন
জুলেখারই বা কি হল...
অথবা রহমানের সাহেবের মায়েরই
বা কি অবস্থা ।
তিনি কি বেঁচে আছেন...!
.
সাংবাদিকদের পেশাই এটা । কোন
জিনিস কে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বড় করা ।
যাদের কাজ হচ্ছে সমাজের সকল
প্রশ্নের উত্তর বের করা...
.
"আচ্ছা জহির নানা , তারপর
কি হয়েছিল ?"
"তবে বলছি শোনো..."
.
"১৯শে নভেম্বর ,১৯৭১ সালের কোন
এক অপারেশনে পাক বাহিনীর
হাতে ধরা পড়ে রহমান । তারপর তার
আর খোঁজ পাওয়া যায় নি ।
শুনেছি তাকে নাকি অত্যাচার করার
পর হত্যা করেছে ।।। আর তার
ডায়েরিটা দিয়েছে তার
সহযোদ্ধা আমাদের গ্রামের করিম
ভাই । দেশ যেদিন স্বাধীন হয় সেদিন
সে ডায়েরি সমেত একটি লাল সবুজ
শাড়ি আর একটা পতাকা দিয়ে যায় ।
রহমান নাকি জুলেখার জন্য
শাড়িটি কিনে রেখে গিয়েছিল ।
বলেছিল আমি বাঁচি আর মরি দেশ
যেদিন স্বাধীন হবে সেদিন যেন
এটা কেউ পৌছে দেয়... "
.
"ও আচ্ছা ,আল্লাহ উনাকে বেহেশত
নসীব করুক ।
তবে দাদা দুটি কথা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
এক. আপনার বোন এখন কোথায় ?
বেঁচে আছে ? দুই . রহমান দাদার
মা এর কি হয়েছিল ? "
.
" রহমানের মা মারা গিয়েছে ৭২
সালে আর আমার বোন..."
"কি ? থামলেন কেন বলুন দাদা..."
.
জহির উদ্দীন দাদা স্ট্রেচারে ভর
করে আমাদের একটি ঘরের
সামনে নিয়ে গেলেন । টিনের
ঘরটাতে দরজার
বাইরে দিয়ে তালাবদ্ধ আর
জানালা খোলা ।
জানালা দিয়ে দেখতে বললেন
আমাদের...
আমি আর সাবিত দেখলাম একজন
মহিলা বসে আছেন খাঁটের ওপর ।
কপালে উনার লাল সবুজ পতাকা আর
হাতে একটা লাল সবুজ শাড়ি...
.
"যে পাগল মহিলাটা দেখছো সেই
আমার হতভাগী বোন । যে তার
স্বামীকে একদিনের জন্যও পায় নি ।
দেশের জন্য হারাতে হয়েছে তার
ইজ্জত । হারাতে হয়েছে তার চোখ ।
হারাতে হয়েছে তার স্বামীকে ।
দেশের
জন্য সে তার ইচ্ছেটাকেও
কোরবানি দিয়ে দিয়েছিল । এই যুগের
কোন বউ দেয় না বিয়ের পর তার
স্বামীকে দূরে যেতে । কিন্তু তখন
আমার বোনের মত অনেকেই তাদের
স্বামীকে দেশের জন্য
বিলিয়ে দিয়েছে । এত কিছু করেও
আমার বোন কি পেয়েছে জানো ?
পেয়েছে একরাশ লাচ্ছনা ,বঞ্চনা আর
শুনেছে নানা ধরনের কটু কথা ।।।
যেদিন সে শুনেছে তার
স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে সেদিনই
পাগল হয়ে যায় । তারপর থেকে আমার
বোন এই রুমেই আছে । এখনও লাল
সবুজ পতাকা আর লাল সবুজ
শাড়ি নিয়ে বসে আছে অপেক্ষায়
যে তার স্বামী ফিরবে...
.
একটা কষ্ট কি জানো দাদা ভাই ?
যারা বীরাঙ্গনা , যাদের ইজ্জতের
বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই
স্বাধীনতা তাদের কেউই সম্মান পায়
নি । দুই লাখ মা ,বোনের হৃদয়ের রক্ত
আর শরীরে রক্তও আছে আমাদের
পতাকায় তবে নেই তাদের কোন মূল্য
। নেই কোন সম্মান...
.
আমিও যোদ্ধা আমাকে সরকার
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেয় কিন্তু
এতে আমার বিন্দুমাত্র কোন সুখ
নেই । যারা প্রকৃত যোদ্ধা তার
কখনও অর্থ সম্পদ
দাবি করতে পারে না । আমরা চাই
যোগ্য সম্মান । চাই ভালবাসা । আর
চাই এ দেশটার উন্নতি । কিন্তু কেউ
আমাদের খবর নেয় না । মাস
গেলে টাকা পাই । আরে ভাই ,
আমরা টাকার জন্য যুদ্ধ
করি নি করেছি এ দেশের মানুষের
শান্তির জন্য... "
.
কথাগুলো শুনে আমি আর সাবিত যেন
মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি ।
আমরা সাংবাদিক । আমরা নিজেদের
দেশপ্রেমিক দাবি করি । আমাদের
সামনে দশজন
মিলে একজনকে মারলে আমরা দূর
থেকে সেটার ছবি তুলি কিন্তু কখনও
ফেরাতে চেষ্টা করি না ,জানের
ভয়ে ।
হ্যা , তবুও আমরা দেশপ্রেমিক !
আমাদের কত সম্মান !!!
.
লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশ ।
বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ।
আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক ।
তবে এই
স্বাধীনতা সহজভাবে আসে নি ।
১৯৭১ সালে এক
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভেতর
দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে ।
মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ
হন এবং দুই লক্ষ মা বোন নির্যাতিত
হন । পৃথিবীর কোন জাতিই এত কম
সময়ে স্বাধীনতা অর্জন
করতে সক্ষম হয় নি ।
আমরা পেয়েছিলাম কারণ তখন ছিল
আসল দেশপ্রেমিক । আর এখন নকল
দেশপ্রেমিকে দেশ
ছেয়ে গিয়েছে.... .
আমরা দেশপ্রেমিক
এটা বলতে বলতে আমাদের মুখের
চারপাশ
দিয়ে লালা ঝরে পড়ে তবে তাতে কি আমরা সত্যিই
দেশ প্রেমিক !!!
.
সাবিত বাইক চালাচ্ছে আর
আমি পিছনে চুপচাপ বসে আছি ।
কারও মুখে কোন কথা নেই..... হঠাৎ
আমার
ফোনটি বেজে উঠলো ,"টেউ টেউ
টেউ ,টেউ টেউ ,টেউ...টেউ টেউ টেউ
টেউ..." । ওমা চিনেন নি কোন গান ???
আরে হিন্দি সিনেমার সালমান
খানের
বডিগার্ড সিনেমার গান...
আমরা আবার খুব দেশপ্রেমিক
কি না তাই দেশি গান
পকেটে নিয়ে ঘুরি না ।
মনে নিয়ে ঘুরে বেড়াই । মনের এতই
গভীর রাখি যে মন
থেকে মুখে আনতে আনতে পিঙ্ক
লিপস গাইতে থাকি !!!
.
ফোনটা রিসিভ করলাম ।
যথারীতি আমার স্ত্রীর ফোন... .
> এই , কই তুমি ? কখন
থেকে বসে আছি খাবার
নিয়ে...ক্ষুদা পেয়েছে তো...
> এই তো আসছি...
.
জুলেখা বানু তার স্বামীকে দেশের
জন্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু
আমার স্ত্রী আমাকে কত্ত
ভালবাসে । একদম চোখের আড়াল
হতে দেয় না...
.
দেশপ্রেম কি ? আমার ছেলের বই এ
আছে দেশ কে ভালবাসা ,দেশের
মানুষকে ভালবাসা হচ্ছে দেশপ্রেম ।
সেই সূত্র ধরে , আমার স্ত্রীও মস্ত
বড় দেশপ্রেমিক...
হ্যা ,আমরা সকলেই হাজী মাইক
দিয়ে বলা কথা যত দূর পর্যন্ত
শোনা যায় ততটা বড় বড়
দেশপ্রেমিক..!
.
আর কিছু বলার নেই ।
ধিক্কার ,ধিক্কার শুধুই ধিক্কার ।
রাশি রাশি ধিক্কার , এক রাশ
ধিক্কার...