মুনমুন সুগন্ধি ।
সুগন্ধি বলেই সবাই তাকে ডাকে ।
শরীরের ভেতর থেকে এক সময় ভুর ভুর
করে মিষ্টি একটা গন্ধ বের হতো ।
হয়তবা এ কারনেই নাম তার সুগন্ধি ।
মাতাল হাওয়ায় চুলের
ওড়া দেখলে ভীষণ লোভ
হতো ছুঁয়ে দেখতে ।
কিন্তু সে ছিল অধরা । দাম্ভিক ।
কারো কাছে ধরা না দেয়ার জন্যই
হয়তোবা তার সৃষ্টি ।
ভেতরে ভেতরে বিন্দু বিন্দু প্রেম
জমতে শুরু করেছিল তখন থেকেই ।
ছোটাছুটি , হই হুল্লোড়
করে ঘুরে বেড়ানো , এ সবই ছিল তার শখ ।
যৌবনের ফুল যখন ফুটতে শুরু করল তখন
সে হোল কিছুটা গম্ভীর , কিছুটা উচ্ছল ।
ফুলের সৌন্দর্য ছিটকে পরতে শুরু
করেছিলো চারিদিকে । যুবক , বৃদ্ধ
প্রত্যেকেই তাকে এক নজর দেখার
লোভ সামলাতে পারতোনা । সারাক্ষণই
সেজেগুজে ঘুরে বেড়াতো , যেন
সবার চোখকে তৃপ্ত করাই ছিল তার কাজ ।
বন্ধুত্ব হয়েছিল তার , পাশের বাড়িরই
এক ছেলের সঙ্গে । তারই সমবয়সী । শুরু
হয়েছিল তার সঙ্গে ঘোরাঘুরি ,
দুষ্টামি আর আড্ডা দেয়া ।
কারো কোন বাধাই যেন বাধ মানছিল
না তখন । মাঝে মধ্যে ছেলেটির
বাসাতে সময় কাটানো ,
এ যেন ছিল তার নিত্য কর্ম । এ
নিয়ে প্রচুর বদনামও হয়েছিল তার ।
সদ্য ফোটা দুই গোলাপকে একাকি বদ্ধ
ঘরে সময় কাটানোকে কেউই
ভালো চোখে দেখছিলনা । যারা প্রেম করার জন্য
এগিয়ে এসেছিল তারাও সবাই সরে গেলো ।
এভাবে কেটেছিল অনেক দিন । তারপর
হুট করে দুরুত্ব বেড়ে গেলো ছেলেটির সঙ্গে ।
তারপর শুরু হোল তার অন্য জীবন ।
সেজেগুজে একা চলে যেতো এলাকার বাইরে ।
পড়ন্ত বিকেলে আসতো নিয়ম ভঙ্গ করে ।
লেখাপড়ায় ছিল না তেমন
মনোযোগী । অনেকে অনেক রকম মন্তব্য
ছুড়ে দিত তার দিকে ।
এত কিছু করেও তার দাম্ভিক
পথচলাকে স্থিমিত করা যায় নি ।
বাড়ির সবাই তাকে বিয়ে দেয়ার
জন্য উঠে পরে লেগে গেলো ।
সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জীবনে বিয়ের
পিড়িতে সে বসবেনা ।
সেজেগুজে পাড়ার বাইরে গিয়ে সময়
কাটানো তার অভ্যাসে পরিণত হোল ।
ভেতরে ভেতরে মুচরে গেলাম আমি ।
এ পথ থেকে তাকে ফেরাতেই হবে ।
এক বন্ধুর মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব
দিলাম তাকে । এত কিছু জানার পরও
ভালবাসার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম
তখন আমি । যোগ্যতাও ছিল ।
প্রতিউত্তরের অপেক্ষায় ছিলাম
কিছুদিন । কিন্তু সে ছিল নির্বাক ।
আত্মহত্যার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু সেবারের মত আজরাইল আমার
মৃত্যুকে ক্ষমা করে ফেরত
গিয়েছিলো । জন্ম নিয়েছিল
ভেতরে ভেতরে রাগ আর ক্ষোভ ।
মা- বাবার পছন্দ করা শিক্ষিত ও
চাকুরীজীবী মেয়েকে বিয়ে করে সুগন্ধির
ওপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু বিধি বাম । বিয়ের রাতেই
রিতা তার পছন্দের ছেলেটির গল্প
শুনিয়েছিল আমাকে ।
বাসরঘরে বউয়ের
মুখে খোলাখুলি ভাবে তার
প্রেমিকের গল্প কোন স্বামীই সহ্য
করতে পারে না । তাই রেগে গিয়ে রিতাকে বলেছিলাম ,
হতে পারি কাগজে কলমে আমি তোমার
স্বামী ; কিন্তু আজ
থেকে তুমি স্বাধীন ।
তুমি ইচ্ছা করলে আমার
কাছে থাকতে পার অথবা চলেও
যেতে পার , তোমার কোন
অমর্যাদা আমি করবোনা ।
তবে তোমার কাজে আমি যেমন
হস্তক্ষেপ করবোনা , তেমনি আমার
কাজেও তুমি কোন হস্তক্ষেপ করবেনা ;
এটা আমার অনুরোধ ।
এভাবে কেটেছিল বিয়ের পর তিন
দিন তিন রাত । পুরুষালি স্বভাবের
কারণে মাঝে মধ্যে তাকে স্পর্শ করার
চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে যে তার
সবকিছু তার প্রেমিকের জন্য
তুলে রেখেছিল সেটা আমার
জানা হয়ে গেল ।
ভেবেছিলাম প্রেমিকের জন্য
প্রেমিকারা ধৈর্য ধরে যত্ন
করে নিজেকে সংযত
করে রাখতে পারে (?)
কি অপরাধ করেছিলাম আমি ?
প্রেমিক হিসেবেও ব্যারথ হলাম ,
অতঃপর স্বামী হিসেবেও ।
অথচ দেখতেও তো আমি তত খারাপ
ছিলাম না ।
তিন দিন তিন রাত পর রিতার
নাইউরি যাওয়ার পালা । নিয়ম
অনুযায়ী তার মা বোন খালারা সবাই
এসেছিলেন । হাসিমুখে সবাইকেই
আপ্যায়িত করেছিলাম ।
যখন তার বিদায় নেয়ার পালা , রুমের
মধ্যে আমি আর সে একা । হঠাৎ ধপ
করে বসে পরল সে আমার পাশে ।
আর শুরু হোল কান্নার ঝড় ।
সে কি কান্না । স্তব্ধ
হয়ে গিয়েছিলাম আমি । কিছু
বুঝে উঠার আগেই হাত জোর
করে দাঁড়িয়েছিলো আমার সামনে ,
আর বলেছিল , যদি কোন ভুল
করে থাকি ; তবে ক্ষমা করে দেবেন ।
চমকে উঠে বলেছিলাম ,
একি ক্ষমা চাইছ কেন ?
এমন ভাবে তুমি কথা বলছ যেন , তোমার
সঙ্গে আমার আর
কখনো দেখা হবে না ।
হয়েছিলও তাই । রিতা চলে গেল । আর
কোনোদিন ফেরেনি । অনেক
চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর
যোগাযোগ করতে পারিনি ।
হতাশায় যখন ভেঙ্গে পরেছিলাম তখন
হঠাৎ একদিন বাবা বললেন , কাল
বিকেলে তৈরি থাকিস । কাজীর
কাছে যেতে হবে । কাজীর কাছে গিয়ে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল
দুজনের মধ্যে । নিজেকে বেশ মুক্ত
মনে হয়েছিল । কাঁধের ওপর
থেকে সমস্ত দায়িত্ব সরে গেলো ।
একটা রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম
সারা শহর । ভেতরে ভেতরে একটা পুলক
অনুভব করছিলাম ।
পৃথিবীতে আর কোন
মেয়ে আমাকে দোষারোপ
করতে পারবে না । এখন যদি সবার
সামনে নষ্টও হয়ে যাই কারো কিছু
বলার থাকবেনা । বুক ভরে শ্বাস
নিলাম ।
স্বামী ; কিন্তু আজ
থেকে তুমি স্বাধীন ।
তুমি ইচ্ছা করলে আমার
কাছে থাকতে পার অথবা চলেও
যেতে পার , তোমার কোন
অমর্যাদা আমি করবোনা ।
তবে তোমার কাজে আমি যেমন
হস্তক্ষেপ করবোনা , তেমনি আমার
কাজেও তুমি কোন হস্তক্ষেপ করবেনা ;
এটা আমার অনুরোধ ।
এভাবে কেটেছিল বিয়ের পর তিন
দিন তিন রাত । পুরুষালি স্বভাবের
কারণে মাঝে মধ্যে তাকে স্পর্শ করার
চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে যে তার
সবকিছু তার প্রেমিকের জন্য
তুলে রেখেছিল সেটা আমার
জানা হয়ে গেল ।
ভেবেছিলাম প্রেমিকের জন্য
প্রেমিকারা ধৈর্য ধরে যত্ন
করে নিজেকে সংযত
করে রাখতে পারে (?)
কি অপরাধ করেছিলাম আমি ?
প্রেমিক হিসেবেও ব্যারথ হলাম ,
অতঃপর স্বামী হিসেবেও ।
অথচ দেখতেও তো আমি তত খারাপ
ছিলাম না ।
তিন দিন তিন রাত পর রিতার
নাইউরি যাওয়ার পালা । নিয়ম
অনুযায়ী তার মা বোন খালারা সবাই
এসেছিলেন । হাসিমুখে সবাইকেই
আপ্যায়িত করেছিলাম ।
যখন তার বিদায় নেয়ার পালা , রুমের
মধ্যে আমি আর সে একা । হঠাৎ ধপ
করে বসে পরল সে আমার পাশে ।
আর শুরু হোল কান্নার ঝড় ।
সে কি কান্না । স্তব্ধ
হয়ে গিয়েছিলাম আমি । কিছু
বুঝে উঠার আগেই হাত জোর
করে দাঁড়িয়েছিলো আমার সামনে ,
আর বলেছিল , যদি কোন ভুল
করে থাকি ; তবে ক্ষমা করে দেবেন ।
চমকে উঠে বলেছিলাম ,
একি ক্ষমা চাইছ কেন ?
এমন ভাবে তুমি কথা বলছ যেন , তোমার
সঙ্গে আমার আর
কখনো দেখা হবে না ।
হয়েছিলও তাই । রিতা চলে গেল । আর
কোনোদিন ফেরেনি । অনেক
চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর
যোগাযোগ করতে পারিনি ।
হতাশায় যখন ভেঙ্গে পরেছিলাম তখন
হঠাৎ একদিন বাবা বললেন , কাল
বিকেলে তৈরি থাকিস । কাজীর
কাছে যেতে হবে । কাজীর কাছে গিয়ে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল
দুজনের মধ্যে । নিজেকে বেশ মুক্ত
মনে হয়েছিল । কাঁধের ওপর
থেকে সমস্ত দায়িত্ব সরে গেলো ।
একটা রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম
সারা শহর । ভেতরে ভেতরে একটা পুলক
অনুভব করছিলাম ।
পৃথিবীতে আর কোন
মেয়ে আমাকে দোষারোপ
করতে পারবে না । এখন যদি সবার
সামনে নষ্টও হয়ে যাই কারো কিছু
বলার থাকবেনা । বুক ভরে শ্বাস
নিলাম ।