মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৬৭- নিঃসঙ্গ ছায়া

সে চলে যায়, চলে যায় ধীরে....
চেনা দীঘির শূণ্য পাড়টায়, আমার শুধু
একা ছায়া পড়ে! সে বিষণ্ণ!!! মায়ার
মিথ্যে জালে। হয়তবা ক্লান্ত এই পথে....
একরাশ মমতা হাতে, পথের
মোড়ে দাঁড়িয়ে, ওমা! আমার
দেখি শূণ্যতা বাড়ে! শুধু শূণ্যতাই
বাড়ে.....
প্রার্থনা গুনগুনিয়ে কবিতাটায় সুর
বসানোর চেষ্টা করে। অথচ আজ
থেকে দশদিন আগেও এই কবিতায় ওর চরম
এলার্জী ছিল। কেন একটা কবিতা, তার
শ্রোতা কিংবা পাঠকের মন খারাপ
করিয়ে দেবে?
কবিতা হবে ভালবাসাময়, মন ভাল করার
উপাদানে ভরপুর। আর এই কবিতা কিনা! ও
যুক্তি খুঁজে পেতোনা। কবিতার
প্রেক্ষাপট এই সুন্দর দীঘির পাড়টা।
যেখানে প্রার্থনা এখন একা বসে আছে।
পানিতে খুঁটিয়ে দেখছে, আসলেই
কি তার একা ছায়া পড়ল!
"প্রার্থু....!" প্রার্থনা পানিতে তার
নিঃসঙ্গ ছায়ার দিকে চোখ রেখেই
জবাব দিল,
-হুঁ
-এখানে একা বসে আছিস যে??
-সেটা তো তোকে বলার প্রয়োজনবোধ
করছি না!
-স্বপ্ন খুক করে হেসে ফেলে। কেমন যেন
বিষন্নতামাখা হাসি।
প্রার্থনা ঘুরে ভাইয়ার দিকে তাকায়।
-তুই অন্নেক শুকিয়ে গেছিসরে ভাইয়া!
-হযতবা।
-প্রার্থনা রেগে যায় আবার।
-হয়তবা কেন? তোর তো ভাল থাকার
কথা! নিজের ইচ্ছেতে গেছিস,
আমাদের কথা ভাবিসনি! স্বার্থপর।
প্রার্থনা দু'হাতে মুখ ঢাকে।
-সেদিকে তাকিয়ে স্বপ্ন ছোট্ট
করে শ্বাস ফেলে।
-প্রার্থু...
-ভাইয়া, ফেরা যায় না?? আমি, আম্মুনি,
আব্বুই সব্বাই তোকে ভীষণ মিস করি।
তোর প্রতিটা ছিবর মাঝে আম্মুনির
কান্নার গন্ধ। আব্বুই
তো এখনো প্রতি সন্ধ্যায় দাবার বোর্ড
হাতে তোর রুমে গিয়ে বসে থাকে। এই
বুঝি তুই ফিরলি! এই ভাইয়া, শুধু একবার
ফিরে আয় পুরোপুরি! দেখিস
তোকে কেউ বকা দেবে না। রাত
বিরেতে যত খুশি গীটার বাজাস,
কম্পিউটারে সাউন্ড বক্স এড করে ফুল
ভলিউমে র্যাপ গান শুনিস। আমার চুল
টানিস, তবু তুই ফিরে আয়।
-স্বপ্ন আবার সেই বিষণ্ণ হাসি হাসে।
উদাস ভঙ্গীতে দীঘির জল দেখে।
-ভাইয়া, তুই যত বিরক্তিকর কবিতাই
শোনাস না কেন, আমি রাগব না।
দীঘির জলে তোর একা ছায়া পড়লেও
আপত্তি থাকবে না। তুই শুধু ফিরে আয়...
প্রার্থনা ভাইয়ের হাত চেপে ধরে।
আকুল হয়ে ডাকে,
-ভাইয়া...?
-বল প্রার্থু।
-শৈল্পীপু কে নিয়ে তোকে আর
ক্ষেপাব না। চুরি করে তোর
বিচ্ছিরি ইনবক্স ও ঘাঁটবোনা!
-স্বপ্ন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তুই আমার ইনবক্স
ঘাঁটতি??আর বিচ্ছিরি ইনবক্স মানে??
-শৈল্পীপুর স্পেলিং প্রবলেম মারাত্বক!
আই থিংক হাতের লেখাও খারাপ,
তাইনা?
নইলে মেডিকেলে পড়বে কেন??
-আর কী থিংক হয় তোর??
-শৈল্পীপুর চশমার ফ্রেমটা সেকেলে।
আমার মনে হয় ওটা জাদুঘরের আইটেম।
প্রার্থনা কেমন যেন
ষড়যন্ত্রী ভঙ্গীতে বলে।
তবে কী জানিস ভাইয়া?"
-কী??
-আমি ঐদিন
শৈল্পীপুকে কাঁদতে দেখেছি।
স্পেলিং ভুল করা প্রাগৈতিহাসিক
চশমা চোখের
মেয়েটাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম
ঠিক তখুনি।
-হুমম...
-তুই খুব পঁচারে ভাইয়া। আব্বু-আম্মু
তোকে লেখাপড়া শিখিয়ে ভুল
করেছে। জানিস না, ক্ষমতাবানদের
দোষ ধরতে নেই?? যার যত ক্ষমতা, তার
অপরাধ করার অধিকার ও তত বেশী! তবু
তুই... নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়
প্রার্থনা। নরম স্বরে ডাকে,
-ভাইয়া...
-বল।
-তোর কী খুব কষ্ট হচ্ছিল, যখন...যখন....
-যখন কীরে, প্রার্থু??
প্রার্থনা ফিসফিসিয়ে বলে,
-যখন... তোর বুকের উপর ভারী কিছু
একটা চাপাচ্ছিল, ওরা?
তোকে শ্বাসরোধ করছিল একটু একটু করে...
-প্রথম কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করেছিলাম খুব।
তবে এতগুলো লোকের
সাথে পেরে উঠিনি। শ্বাস
নিতে হাঁসফাঁস করছিল বুকটা।
মুখে ভেতর রক্তের নোনা স্বাদ
পাচ্ছিলাম। একটা সময় শূণ্য লাগছিল সব।
আব্বুই, আম্মুনি আর তোকে মনে পড়ছিল।
শেল্পীর হাসি শুনতে পাচ্ছিলাম
থেকে থেকে। কেমন যেন অন্ধকার
ঘিরে ধরছিল। তবে... শেষ পর্যন্ত
ঘুরেফিরে তোর চেহারাটাই ভাসছিল।
এখানটায় বসে বিরক্তিকর
কবিতাটা শোনাচ্ছিলাম তোকে। আর
তুই ক্ষেপে যাচ্ছিলি খুউব। একসময় রাগ
না সামলাতে পেরে কেঁদেই ফেললি।
আমি হাত বাড়ালাম তোর
কান্না মুছে দিতে। তারপর সব শূণ্য
হয়ে গেল। আর কিছু নেই! কিচ্ছু নেই।
প্রার্থনা দীঘির জলে চোখ ফেরালো।
কান্না সামলাচ্ছে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে।
টলটলে জলরাশির উপর ভীষণ রাগ
হচ্ছে ওর। নিজের নিঃসঙ্গ
ছায়াটাকে কি অসহায়ই
না লাগছে সেখানে!
-প্রার্থু, তুই সবসময় চাইতি এখানটায় তোর
একা ছায়া পড়ুক। আর
আমি তোকে কতভাবে ক্ষেপাতাম!
বলতাম, দীঘিতে তোর না। বরং আমার
একা ছায়া পড়েছে। এখন দেখ, সত্যিই
তোর একা ছায়া পড়েছে... শুধু তোর। আর
আমি একরাশ শূণ্যতা! শূণ্যতার
ছায়া কোত্থাও নেইরে!!!
-ভাইয়া শোন...
সে মুছে যায়, মুছে যায় হঠাৎ... তীব্র
অনুভূতি তবু জাগিয়ে রাখে, এই
আমাকে দিন-রাত। চেনা দীঘির শূণ্য
পাড়টায়, আমিত্বের নিঃসঙ্গ
ছায়া ফেলে ... অপেক্ষা জমাই ক্লান্ত
পথের মোড়ে। ওমা! আমার
দেখি তাতেও শূণ্যতা বাড়ে!!! শুধু
শূণ্যতাই বাড়ে....."
প্রার্থনা চেঁচিয়ে কাঁদছে। না,
সে তার নিঃসঙ্গ ছায়া চায় নি.... একদম
চায় নি! একদমই না...........