দুটো উচ্ছল কিশোর - কিশোরীর জন্য, যারা প্রতিদিন
বিকেলবেলা খুনসুটি করতে করতে স্কুল
থেকে বাসায় ফিরে আমার
বারান্দার সামনে দিয়ে.........
ওরা সব সময়
এতো আনন্দে থাকে যেন
দুটি দেহে একি প্রাণ। হঠাত
দেখি মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছে আর
ছেলেটা প্রাণপণ
চেষ্টা করছে বোঝানোর। কিন্তু,
মেয়েটা কোন ভাবেই
কান্না থানাচ্ছে না বরঞ্চ বেড়েই
চলেছে.....
ঘটনাটি দেখে আমার নিজের
জীবণের বহু
পুরনো একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল।
যখন আমিও ছিলাম এক উচ্ছল
কিশোরী আর আমার সাথে ছিল এক
সপ্নসখা কিশোর। -- ও আচ্ছা --
বলতেই ভুলে গেছি ....
আমি নিশি আর ও ছিল নীল।
আমরা একি পাড়ায় একি স্কুল এ
বেড়ে উঠেছি আর
আমরা পারিবারিক ভাবেও
কাছাকাছি ছিলাম বিধায়
সারাদিন প্রায় এক সাথেই
কাটানো হত.........
এক সাথে চলার কারনে আমাদের
জীবনে আর কোন বন্ধুর প্রয়োজন অনুভব
হত না। এভাবে আমরা স্কুল এর
গন্ডী পেড়িয়ে কলেজ এর পালাও
শেষ করে ফেলি। এবার সময় এর
প্রয়োজন এ নীল ঢাকায়
চলে আসে পড়তে আর আমি রয়ে যাই
একা......
কথামত চিঠি আদান প্রদান হলেও
দেখতে দেখতে ছয়মাস
কেটে গেল.......তখন ও লিখল যে ও
সামনের সপ্তাহে আসবে.....
অই দিনটা যেন আর আসছিল
না...অধির আগ্রহ
নিয়ে আমি অপেক্ষমাণ ছিলাম অই
একটা দিনের জন্য।
ও আসার পর বিকেলে আমাদের
বাড়ি এলো দেখা করতে, সবার
সাথে দেখা করে ও আমার
রুমে আসতেই বাইরে তুমুল বিষ্টি শুরু
হলো। আমি জানলার
পাশে দাড়িয়ে বিষ্টির
ঝাপটা গায়ে নিচ্ছিলাম এমন সময়
নীল
এসে নিশি ব্ললে ডেকে উঠল.......
আমি না তাকিয়ে পিছন
ফিরে রইলাম কারন আমার
কান্না মাখা মুখখানা নীল
কে দেখাতে চাচ্ছিলাম না.....
ও এসে আমাকে নিজের
দিকে ফিরিয়ে বলল, "এতদিন এ
আমি বুঝেছি নিশি ছাড়া আমার
জীবন অন্ধকার "
আমি বললাম, " তো ? "
নীল বলল, "নিশি তুই কি আমার
হবি?? "
আমি বললাম, " আমি তো তোরই
গাধা, চল বিষ্টিতে ভিজি। "
হঠাত, বিষ্টির ছিটায় বত`মান এ
ফিরে এলাম, দেখি আবার ও তুমুল
বিষ্টি এসেছে। আর, এমন
বিষ্টি দেখলেই আমার
ভিজতে ইচ্ছা করে। এমন সময় ভিতর
থেকে নীল এসে বলল, "
নিশি ছাদে চল, বিষ্টি আমাদের
জন্য অপেক্ষা করছে। "
চারিদিকে তুমুল
বৃষ্টি হচ্ছে,মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর
সকল কালিমা ধুয়ে দেয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর
মাঝে নীল বারান্দায়
দাড়িয়ে বৃষ্টির তীব্রতা অনুভব
করছে। হঠাৎ করে তার চোখে পড়ল দু
'বিল্ডিং পর একটি ছাদে এক
জোড়া ছেলে মেয়ে ভিজছে সারা পৃথিবী ভুলে।
তাদের দেখে মনে হচ্ছে যেন
ওদের জন্যই আজ এই বৃষ্টির আয়োজন।
ওদের দেখে নীলের নিজের
জীবনের মিষ্টি সময়টার
কথা মনে পড়ে গেল, যখন সে আর
নিশি এমন মাতাল
হয়ে বৃষ্টি বিলাস করত। করত
জীবনের প্রতিটি ক্ষণ এর চরম
উপভোগ।
ভালবেসে বিয়ে করেছিল নীল
আর নিশি। তাদের ছিল আবাল্য
প্রেম আর বন্ধুত্ত। পারিবারিক
ভাবে তাদের প্রেম
কে মর্যাদা দিয়ে বিয়ের আয়োজন
করা হয়েছিল। খুব সুনদর ও
মিষ্টি করে শুরু হয়েছিল তাদের
ছোট্ট টোনাটুনির সংসার।
একটা মাঝারি মানের
চাকরি ছিল নীল এর আর ছিল
একটা মিষ্টি বউ। সকাল সকাল
বউয়ের বকুনি দিয়ে শুরু হত নীলের
দিন, কারন নিশির
বকা না খেয়ে ঘুম
থেকে উঠতে ইচ্ছা করত
না কোনদিন। তারপর,
তাড়াহুড়ো করে নাসতা সেরে অফিসে যাওয়ার
আগে একটা ছোট্ট চুমু ছিল বরাদ্দ।
আর,দুপুরে খাওয়ার সময় গিন্নির কল
আসা ত বাধ্য ছিলই। খাওয়ার একটু
দেরি হলেই প্রাপ্য ছিল ঝাড়ি।
তারপর শুধু অপেক্ষা কখন
সন্ধা হবে আর কখন
নীড়ে ফিরবে ক্লান্ত পাখি।
নীড়ে ফিরেই দেখতাম কি অধীর
আগ্রহ নিয়েই
নিশি নাসতা বানিয়ে অপেক্ষা করছে তার
নীলের জন্য। একসাথে চা এর মৃদু চুমুক
দিতে দিতে চলত আদর আর খুনসুটি।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল নীল আর
নিশির স্বপ্নিল সংসার। কখনও
প্রেমিকা, কখনও বউ আবার কখনও
মা এর মত ভুমিকা নিয়ে কি অদ্ভুত
ভাবেই
না নিশি ভড়িয়ে তুলেছিল আমার
জীবন।
নতুন চাকরির
কারনে আমি নিশি কে নিয়ে হানিমুনে ও
নিয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু এ
নিয়ে নিশি র কোন অভিযোগ ছিল
না। ও জানত আমার কি পরিমান
আগ্রহ ছিল হানিমুনে যাওয়ার।
উল্টো ও আমাকে স্বান্তনা দিত
যে আমাদের তো প্রতিদিন ই
হানিমুন এই কথা বলে।
প্রায় এক বছর পর আমরা এক সপ্তাহের
জন্য হানিমুনে যাই।যা ছিল আমার
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। হানিমুন
থেকে আসার দু মাস পর
আমরা জানতে পারি যে নিশি মা হতে চলেছে।
এ খবর শুনে মনে হচ্ছিল জীবনের সকল
চাওয়া বুঝি পুরন হল।দুই পরিবার এর
খুশির কোনো ঠিকানা ছিল না।
দেখতে দেখতে দীর্ঘ নয়মাস
চলে গেল, অবশেষ এ এলো সেই
চুড়ান্ত দিন যখন আমি আমার সন্তান
কে প্রথম হাতে নিব।
হাসপাতালে ও'টি র
বাইরে দাড়িয়ে আমি অধীর
আগ্রহে আমার অনাগত সন্তান এর জন্য
অপেক্ষা করছিলাম।
হঠাৎ করে ডাক্তার এসে বলল, কিছু
সমস্যার কারনে নিশির অপারেশন
করা লাগবে। আমার মাথায় যেন
আকাশ ভেংগে পড়ল। সব কিছু
ভুলে আমি ডাক্তার
কে নিশি কে বাচাতে বললাম।
মুহৃ্তের জন্য আমি বাচ্চার কথাও
ভুলে গেলাম।
দীর্ঘ অপারেশন এর পর ডাক্তার
এসে বলল, যে নিশি আর নেই।
হঠাৎ করে কাঁধে হাত পড়ায়
চমকে উঠে বর্তমানে ফিরে এলাম।
দেখি নিলি এক কাপ
চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হা,
"নিলি" আমার নিশির শেষ উপহার।
ও যেতে যেতে আমাকে "নিলি"
উপহার দিয়ে গেছে।
যাকে অবলম্বন করে গত ১৮ বছর
বেচে আছি। আজ নিলির ১৮তম
জন্মদিন।
মেয়েটা তার মায়ের মতই হয়েছে,
একই চোখ-মুখ, একই হাসি,গান, একই
স্বভাব। এখন ওর মাঝেই
খুজে ফিরি আমার নিশি কে।