মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৬১- শুভ্র মুক্তা

লিখা: (খালেদুল ইসলাম প্রিয়)


পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন
হচ্ছে "কেমন আছেন?"। অথচ আমরা এই কঠিন
প্রশ্নের উত্তর না ভেবে দিয়ে দেই।
-হ্যালো শুভ্র স্যার!
- বলো মুক্তা
- স্যার,আপনি কেমন আছেন?
- ভাল আছি। তুমি কেমন আছো মুক্তা?
- না স্যার আপনি ভাল নেই।
মিথ্যে কথা বলছেন?
- তুমি কিভাবে জানলে যে আমি ভাল
নেই?
- আমি জানি স্যার
- কি করে?
- আম্মু আপনাকে আজকে ও
টাকা দিতে ভুলে গেছে। তাই
আপনি আপনার ঘর ভাড়ার
টাকা দিতে পারেন নি।
বাড়িওয়ালা আপনাকে অনেক
কথা বলেছে। তাই আপনার মন খারাপ।
ভাল নেই আপনি। অথচ আমার
কাছে বললেন ভাল আছেন!
শুভ্র স্যার বেশ অবাক হলো।
মুক্তা কিভাবে জানলো এতো কিছু! ওর
আম্মু যে টাকা দেই নাই
সেটা জানতে পারে কিন্তু ওনার
সাথে বাড়িওয়ালার কথোপকথন,
বাড়ি ভাড়া না মেটানো এসব
কিভাবে জানলো? ব্যাপার টা খুব
ভাবাচ্ছে শুভ্র স্যার কে।
ভাবতে ভাবতে হয়তো শুভ্র স্যার ভুলেই
গেছে যে, ফোনের ওপাশে মুক্তা তার
উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে।
- শুভ্র স্যার!?
- হুম মুক্তা!
- কি হলো কথা বলছেন না যে?
-
আচ্ছা মুক্তা তুমি কিভাবে জানলে যে আমি বাড়ি ভাড়া দিতে পারি নি,
বাড়িওয়ালার
সাথে কথা কাটাকাটি হইছে
- আমি জানি স্যার
- কিভাবে?
- গেস করেন
তো কিভাবে জানতে পারি আমি?
- পারছি না। তুমি ই বলো
- আমি আপনার বাসার নিচে এখন
দাড়িয়ে আছি। যখন আপনার রুমের
সামনে গিয়েছিলাম তখন আপনি আর
আপনার
বাড়িওয়ালা কথা বলতেছিলেন।
আমি শুনছি। তারপর চলে আসছি।
এখনো নিচে দাড়িয়ে অাছি
- এখনো?
- হ্যাঁ। স্যার আমি উপরে আসছি।
- আচ্ছা আসো
অনিচ্ছা সত্ত্বেও
মুক্তাকে আসতে বললো শুভ্র স্যার।
অনিচ্ছা থাকার ও কারন অাছে। কারন
একটা ছেলের বাসায়
একটা মেয়ে আসা সবাই ভাল
চোখে দেখে না। কিন্তু শুভ্র স্যারের
কিছু করার নেই। মুক্তা যখন একবার
বলেছে সে আসবেই। শুভ্র স্যার
না করলে ও সে আসবে। কেউ
আটকাতে পারবে না।
মুক্তা মেয়েটা প্রচন্ড রাগী। রাগ
ওঠলে যা মন চায় তাই করে। একবার
রেগে শুভ্র স্যার কে বলেছিলো,
"আমি আপনাকে মেরে ফেলবো"। শুভ্র
স্যার তখন অবাক হয়ে মুক্তার
দিকে তাকিয়ে ছিলো। আরেকবার
রেগে শুভ্র স্যারকে "পেঁয়াজের রস"
দিয়ে চা বানিয়ে দিয়েছিলো। শুভ্র
স্যারকে চা খাওয়ার পর জিজ্ঞেস
করেছিলো, "স্যার চা টা কেমন
হয়েছে? " শুভ্র স্যার বলেছিলো, "খুব ভাল
হয়েছে মুক্তা" তখন মুক্তা বলেছিলো,
"তাহলে আপনাকে আমি রোজ
চা বানিয়ে দিবো"। শুভ্র স্যার তখন ভয়
পেলেও মুক্তা তখন
চাপা হাসি দিয়েছিলো।
মুক্তা শুভ্র স্যারের বাসার
সামনে এসে দরজায় টোকা দিলো। শুভ্র
স্যার দরজা খুললো।
মুক্তা একটি কাঁচা হলুদ রংয়ের
শাড়ি পরে দাড়িয়ে আছে। কাঁচা হলুদ
রংয়ের শাড়িতে মুক্তাকে খুব সুন্দর
লাগছে। হলুদ রংয়ের
শাড়ি,হালকা মেকআপ,কানে দুল,
ঠোঁটে লিপষ্টিক, ছাড়া চুল সব
মিলিয়ে মুক্তাকে খুব সুন্দর লাগছে। শুভ্র
স্যার মুক্তাকে দেখে এক প্রকার
ঘোরে চলে গেলো।
- স্যার আমি কি দরজায়
দাড়িয়ে থাকবো না ভেতরে ঢুকবো?
না কি চলে যাবো?
মুক্তার কথা শুনে শুভ্র স্যারের ঘোর
ভাঙলো। মুক্তা চোখ গরম
করে তাকিয়ে আছে। চোখ গরম করার
কারন হলো সে অনেকক্ষণ ধরে দরজায়
দাড়িয়ে আছে কিন্তু শুভ্র স্যার
এখনো তাকে ভেতরে যেতে বলেনি।
আর একটি লোক নিচে নামার সময় শুভ্র
স্যার আর মুক্তাকে একটি লোক
দেখেছে এবং কিভাবে যেন একটু আঁড়
চোখে তাকিয়েছে যা মুক্তার একদম ই
সহ্য হয় নি।
শুভ্র স্যার একটু সরে দাড়ালো আর তার
সাথে সাথেই মুক্তা ঘরে ঢুকে পড়লো।
শুভ্র স্যারের বলার অপেক্ষায়
সে থাকেনি। ঘরে ঢুকে মুক্তার
আরো রাগ হলো। ঘর টা বেশ ছোট তার
উপর আবার অগোছালো।
- এটা কি বাসা না গোয়াল ঘর?
- এটা বাসা মুক্তা। ছোট্টা বাসা
- ছোট বাসা হলেই এমন গরুর ঘরের
মতো করে রাখতে হবে? জিনিস পত্রের
কি ছিড়ি। এমন
দেখতে বিশ্রী লাগে না আপনার?
কিভাবে থাকেন এখানে?
- অভ্যাস হয়ে গেছে মুক্তা।
- তাতো হবেই আপনার
কথাটা বলেই মুক্তা তার কাঁচা হলুদ
রংয়ের শাড়ির অাঁচল কোমড়ে গুজলো।
তারপর সে ঘর গুছাতে আরম্ভ করলো।
সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখছে। শুভ্র স্যার
বাধা দেই নি কারন
বাধা দিলে মুক্তা কিছুতেই শুনবে না।
উল্টো শুভ্র স্যারকে ধমক দিবে। শুভ্র স্যার
খানিকটা অবাক ও হলো।
যে মেয়েটা নিজের বাসায় কিছু
করে না সে মেয়েটা কি সুন্দর করে ঘর
গুচাচ্ছে!
শুভ্র স্যার লক্ষ করলো মুক্তা সিগারেটের
প্যাকেট আর অ্যাস
ট্রে টা হাতে নিয়েছে।
দেখে মনে হচ্ছে এটা ফেলে দিবে।
শুভ্র স্যার বাধা দিয়ে বললো:
-মুক্তা ওটা ফেলো না
- তো কি করবো?
-এটে রেখে দাও। আমার লাগে।
না হলে ঘর নোংরা হয়ে যায়
- এটা মেরে আপনার
মাথা ফাটিয়ে দিবো আমি
শুভ্র স্যার আর কিছু বলার সাহস পায়নি।
কারন বললে হয়তো সত্যিই
মুক্তা ওটা মাথায় ছুড়ে মারবে।
মুক্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।
-দেখুন তো এখন কি রকম
লাগছে বাসা টা?
- খুব সুন্দর লাগছে মুক্তা।
তোমাকে ধন্যবাদ
- দেখুন স্যার ওসব ধন্যবাদ - ঠন্যবাদ
দিয়ে আমার কাজ হবে। আমার প্রচুর
ক্ষুদা লাগছে। কিছু খাবো।
- তুমি বসো আমি বাইরে থেকে কিছু
নিয়ে আসছি
-না। বাহির থেকে আনলে হবে না।
নিজে বানিয়ে খাবো। বাসায়
কি আছে খাওয়ার মতো?
-চাল আর ডিম।রেধে খেতে হবে
- আমি ভাত রাধতে পারি না যে,
-আমি শিখিয়ে দিবো মুক্তা?
- না। আমি নিজে বানাবো। অন্য
কি আছে?
- চা বানিয়ে খেতে পারো। কিন্তু
পেয়াজ কিন্তু নেই।
শুভ্র স্যারের
কথা শুনে মুক্তা হেসে দিলো।
রাগী মেয়েটা এখন আর রেগে নেই।
সে এখন হাসছে।
হাসাছে কারন,মুক্তা শুভ্র
স্যারকে যে পেঁয়াজের রসের
চা খাইয়েছিলো তা শুভ্র স্যার
এখনো মনে রেখেছে।
মুক্তা রান্নাঘরে যেয়ে চা বানাতে লাগলো।
শুভ্র স্যার তে দেখছে। মুক্তাকে আজ
অনেক বড় বড় লাগছে।
-আচ্ছা মুক্তা,তুমি যে এতো কিছু
করছো কেউ যদি দেখে ফেলে?
- দেখলে দেখবে। তাতে আপনার কি?
-কি ভাববে সবাই?
- যা ভাবার তাই ভাববে
- যদি জিজ্ঞেস করে "তুমি কে?"
তাহলে কি বলবো?
- বলবেন আমি আপনার বউ। ওকে?
- ওকে?
-কেন বলবেন? আমি কি আপনার বউ?
- না
-তাহলে বলবেন কেনো?
- আচ্ছা বলবো না
- না বলবেন
- আচ্ছা
- না
শুভ্র স্যার আর কিছু বলেনি।
মুক্তাকে আজকে সত্যিই বউ বউ লাগছে।
মেয়েরা বিয়ের পর নিজের সংসার
যেভাবে গুছিয়ে নেয় মুক্তা ঠিক
সেভাবে গুছিয়ে দিলো। আবার চা ও
বানাচ্ছে। ঠিক যেন নতুন বউ।
-স্যার চিনির ভিতর এতো পিঁপড়ে কেন?
- মনে হয় ঢাকনা লাগানো ছিলো না
-লাগানো ছিলো। তবুও
কিভাবে আসলো?
- আমি জানি না মুক্তা
-আচ্ছা স্যার,পিঁপড়ে চিনির
কাছে ছুটে আসে কেন?
- চিনি পছন্দ করে বলে
-হয়নি স্যার
- তাহলে?
-চিনি ভালবাসে বলে
- ও, আচ্ছা বুঝলাম
-আর আমি বারবার আপনার
কাছে ছুটে আসি কেন?
শুভ্র স্যার কোন জবাব দেই নি কথাটার।
মুক্তার মন খারাপ হলো। শুভ্র স্যার
কি কিছুই বুঝে না? এমন নিরাসক্ত মানুষ
হতে পারে!? অযথাই
মুক্তা কি মুক্তা মেয়েটা বারবার
ছুটে আসে শুভ্র স্যারের কাছে? শুভ্র
স্যার কি কোনদিন ও বুঝবে না?
নাকি শুভ্র স্যার বুঝে। নাকি সে ও
মুক্তাকে,,,,? কিন্তু মুখ
ফুটে বলতে পারছে না। মুক্তা এসব
ভাবছে আর চা বানাচ্ছে।
মুক্তা আর শুভ্র স্যার একসাথে বারান্দায়
বসে চা খাবে আর গল্প করবে।
প্রকৃতি দেখবে। দখিনা বাতাস
এসে মুক্তার
চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিবে।
মুক্তা হাত দিয়ে ঠিক করবে। শুভ্র স্যার
তা দেখবে।
প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকবে তাদের।
গাছের মগডালে থাকা পাখি গুলো ও
দেখবে তাদের। তারা ভাববে, "একজন
মানুষ আরেকজনকে ভালবাসছে। দুজন দুজন
দুজনাকে ভালবাসছে।
এটা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর
সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য"।