মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৫১- আমিও ভালোবাসি তোমায়

লেখা:অস্পষ্ট আমি


--এই যে শুনুন.....
পেছন থেকে ছেলেটি কে দেখে ডাক দেয় তানিশা।
তানিশারা এই এলাকায় নতুন এসেছে। ওর
বাবা সরকারী চাকরি করার কারণে কিছুদিন পরপর
বিভিন্ন জেলায় বাসা বাধতে হয় ওদের। এবার
এসেছে এই কুমিল্লা তে। ওর বাবা মা আগেই
চলে এসেছে। তানিশা গিয়েছিলো ওর খালার বাড়ি।
বাসা বদলানো ঝামেলা ভালো লাগে না ওর তাই
চলে গিয়েছিল। আজ এসেছে এখানে। তানিশা ওর
বাবাকে আগেই বলে দেখেছিলো। কিন্তু ওর
বাবা স্টেশনে আসে নি। তাই ও নিজেই বাসায়
যেতে হবে। কিন্তু এই এলাকায় ও নতুন বলে কিছু
চিনে না। আশেপাশে কাউকে অনেক্ষন
ধরে দেখা না যাওয়ায় হতাশ হয়ে পরেছিলো। কিন্তু
হঠাৎ ই একটা ছেলে কে দেখতে পায় তানিশা। তাই
পেছন থেকে ডাক দেয়। ছেলেটি তাকিয়ে কিছুক্ষনের
জন্য কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ভুলে যায় দুনিয়া।
তানিশা ও অবাক হয়ে যায় ছেলেটির চেহারা দেখে।
সে কি সত্যি দেখছে? এটা কি সত্যি তাশিন?
হ্যা ছেলেটি তাশিন ই। নিজেকে সামলে তাশিন বলে:-
--জী... আমাকে বলছেন?
--জী মানে..(কিছু বলতে পারছে না তানিশা। কে যেন
গলায় কথা আটকে দিয়েছে। এতদিন পর
তানিশা দেখছে তাশিন কে। কিন্তু তাশিন
কি ওকে চিনতে পারে নি? নাকি চিনেও না চিনার ভান
ধরেছে?)
কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার জিজ্ঞেস করে তাশিন
--কিছু বলবেন?
--এখানে ........... স্কুলটা কোন দিকে?
(নিজেকে সামলে বলে তানিশা)
--ঐ যে ওখান থেকে রিক্সা নিয়ে চলে যান।
হেটে যেতে পারবেন না। কষ্ট হবে।
--থ্যাঙ্কস
বলেই চলে যায় তানিশা। গিয়ে রিক্সায় উঠে সে।
পেছনে একবার তাকিয়ে দেখে তাশিন তাকিয়ে আছে ওর
দিকে। রিক্সা ছেরে দিয়েছে। যতক্ষন তাশিন
কে দেখা যায় ততখন দেখছিলো তানিশা। আর
ভাবছিলো কতটা বদলে গিয়েছে ছেলেটা।
আগে তানিশা কে দেখলেই ছুটে আসতো। আর আজ
ওকে না চিনার ভান করলো। কান্না পাচ্ছে তানিশার।
একটা ভূলের জন্য আজ ওরা দুজন কত দূরে।
আর অন্যদিকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাশিন
ভাবছে মেয়েটা কতটা বদলে গিয়েছে। একসময়ের চঞ্চল
একটা মেয়ে আজ চসমা পরাতে চেহারায় কতটা গম্ভির
ভাব চলে এসেছে। ওকি বিয়ে করেছে? নাকি নিজের ভূল
বুঝতে পেরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে? আবার ভাবে,
আমি কি ভাবছি এসব? ও কত সুখেই তো আছে।
বিয়ে তো করেছেই হয়তো। আমাকে মনে রাখবে কেন?
ভাবতে ভাবতেই আনমনে হাটছে তাশিন।
বিকেল বেলা তানিশা ধোয়া উরা কফির মগ
নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে। চারাপাশের পরিবেশ টায়
চোখ বোলায় একবার। হঠাৎ একটা গাছের
নিচে তানিশার চোখ আটকে যায়।
একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে গাছের নিচে। ছেলেটি আর
কেউ নয় ছেলেটি তাশিন। তাশিন
একা দাড়িয়ে কি করছে ওখানে? তাশিনের কাছে যাওয়ার
জন্য ছুটে যায় তানিশা। কিন্তু সিরি থেকে নেমেই আর
কাউকে দেখতে পায় নি সেই গাছটির নিচে। কিছুটা কষ্ট
পেলেও আবার বারান্দায় ফিরে যায় তানিশা। বারান্দায়
বসে তানিশা ভাবছিলো ওদের সেই মধুর স্মৃতি গুলোর
কথা।
তখন তানিশা রা ছিলো চাঁদপুর। সেখানেই
একটা কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে তানিশা।
কিছুদিন ভালোই কলেজে যাচ্ছিলো তানিশা। কিন্তু
কিছুদিন পর তানিশা কে কলেজের কয়েকটা ছেলে রোজ
টিজ করতো। তানিশার
সেগুলো ভালো লাগতো না তাই সে প্রিন্সিপাল এর
কাছে বিচার দিয়েছিলো ঐ ছেলেগুলোর নামে।
প্রিন্সিপাল ছেলে গুলো কে শাসিয়ে দিলেও পরদিন
ছেলে গুলো আবার তানিশা কে বিরক্ত করছিলো।
এবার গায়ে ও হাত দিচ্ছিলো। তখনই পাশ
দিয়ে তাশিন যাওয়ার সময় এই ঘটনা দেখে এগিয়ে যায়
এবং তানিশা কে সাহায্য করে। তাশিন ছিলো কলেজের
মধ্যে সবথেকে দাপটশীল। সব ছেলেরা ওকে ভয়
পেতো তাই ছেলে গুলো কিছু না বলে চলে গেলো।
তখন থেকে তানিশার সাথে তাশিনের পরিচয়। তাশিন
ছেলেটা একটু উগ্র টাইপের হলেও চরিত্রের দিক
থেকে ছিলো পিওর। কোন মেয়ের সাথে ওর কোন
রিলেশন ছিলো না। তাই তানিশা আর তাশিনের
মাঝে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কিন্তু বন্ধুত্ব
শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে তানিশা কে প্রপোজ
করে তাশিন। তানিশা ও অনেক আগে থেকেই তাশিন
কে ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু তাশিন
কে পরিক্ষা করার জন্য তাশিনের কথায়
তানিশা রিএক্ট করে বসে। কলেজ ক্যাম্পাসে সবার
সামনে তাশিনের গালে চর মারে। আর বলে যেন আর
কখনও ওর সামনে না পরে। আরো বলে যে ওর মত
একটা ফালতু ছেলে যেন আর কখনও ওকে ডিস্টার্ব
না করে। আর ওর থেকে দুরে চলে যায়।
তানিশা ভেবেছিলো তাশিন কথাগুলো কিছুক্ষন পরেই
ভূলে যাবে। অথবা ভালোবাসার
টানে চলে আসবে তানিশার কাছে। কিন্তু
তানিশা বুঝতে পারে নি তাশিনের কাছে তানিশার
কথা গুলো ছিলো সত্যি। তাই সেদিন তাশিন
চলে আসে কুমিল্লা ওর মামার বাসায়। পরদিন
তানিশা কলেজে গিয়ে তাশিন কে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু
কোথাও পায় নি। সেদিন তানিশা যখন
জানতে পারে যে ভালোবাসার মানুষের কথায় তাশিন
সত্যি সত্যি দূরে চলে গিয়েছে। কিন্থ
তানিশা জানতে পারে নি তাশিন কোথায় গিয়েছে।
এরপর কেটে যায় বেশ কিছু বছর। এতদিনে তাশিন
কে অনেক খুঁজেছে তানিশা। কিন্তু কোথাও পায় নি।
কিছুদিন পর ওর বাবার বদলি হয়ে যায়। চলে যায় অন্য
একটি এলাকায়। তারপরও তানিশা তাশিন
কে ভূলতে পারে নি। কিছুদিন হলো তানিশার বাবার
আবার কুমিল্লায় বদলি হয়েছে। কিন্তু কাল
তানিশা এখানে আসার সময় দেখতে পায় সেই
না দেখা মুখটা। যে মুখটা দেখার জন্য এতদিন
অপেক্ষা করেছে তানিশা। কিন্তু তাশিন তানিশার
সাথে কোন কথা বলে নি। এখন আবার তাশিন
এখানে কি জন্য এসেছিলো বুঝতে পেরেছে তানিশা।
তানিশা কে দেখার জন্যই এসেছিলো। কিন্তু ওর
সামনে আসতে নিষেধ করাতে দূর থেকেই চলে গিয়েছে।
হঠাৎ কি ভেবে তানিশা হাতের মগটা রেখে ছুটে যায়
নিচে। বাড়ির পাশে দাঁড়ানো রিক্সাটায় দ্রুত
উঠে তানিশা।
রিক্সাওয়ালা কে বলে কুমিল্লা শালবনবিহার যেতে। ওর
হঠাৎ করেই মনে পরে তাশিন একবার
ওকে বলেছিলো ওর মামার বাড়ির পাশে শালবনবিহার
আছে। কিন্তু কোথায় সেটা বলে নি। আর মামার
বাড়িতে এসে তাশিনের মন খারাপ থাকলে সেই
শালবনবিহারে গিয়ে বসে থাকে। তানিশাদের
বাসা থেকে রিক্সাত মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্ব
শালবনবিহার। তানিশা পৌছে যায় সেখানে।
একটা টিকিট নিয়ে ঢুকে যায় ভিতরে।
তানিশা পুরো শালবনবিহার তন্ন তন্ন করে খুঁজে।
কোথাও পাচ্ছে না তাশিন কে। এমন সময় হঠাৎ
দেখতে পায় একটা ফুল গাছের নিচে বসে আছে তাশিন।
কি যেন ভাবছে, আর কাঁদছে।
তানিশা বুঝতে পেরেছে তাশিন এখনও
ওকে ভালোবাসে। তানিশা আস্তে আস্তে পেছন
থেকে গিয়ে বসে তাশিনের পাশে।
আলতো করে তাশিনের কাধে হাত রাখে। হঠাৎ তাশিন
চমকে উঠে পিছনে তাকায়।
তাকিয়ে দেখে তানিশা বসে আছে ওর আশে। আর অঝর
ধারায় কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। সুন্দরী মেয়েদের
একটা বিশেষত্ব আছে, সেটা হলো ওদের যেকোন
মূহুর্তেই ভালো লাগে। সৌন্দর্য আর বেরে যায়।
তানিশা কাঁদলেও অপরুপ লাগে। তানিশা আর একটু
গা ঘেষে বসে নিজের মাথাটা রাখে তাশিনের বুকে। আর
আস্তে করে বলে "আমিও ভালোবাসি তোমায়"