মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৩৫- আসক্ত

লেখকঃমাজহারুল ইসলাম

তপু।মধ্যবিত্ত পরিবারের সহজ-সরল অদ্ভূত
রকমের মায়াময় চেহারার এক ছেলে।দেখলেই কেমন
মায়া লাগে।
.
বাবা-মার খুব আদরের ছেলে।তিন ভাই-বোনের
মধ্যে সবার ছোট।
.
মাত্রই ইন্টার পাশ করল।বেশ ভাল রেসাল্ট করেছে।
কিন্তু হলে কি হবে এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভর্তি নামক যুদ্ধে সে জয়লাভ করতে পারেনি।
তাই ঢাকাতেই একটা জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
.
যেদিন থেকে ভার্সিটিতে ভর্তি হল,সেদিন
থেকেই ও মানসিকভাবে ব্যাপক অবষাদগ্রস্থ
বলা চলে।কত স্বপ্ন ছিল ভাল
একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে ভাল
কিছু করার।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।
.
এখন চাকরী তো দূরের কথা কতদিন
যে লাগে পড়াশোনা শেষ করতে তাই বা কে জানে!
.
বাবার এত টাকাও নেই যে প্রাইভেট
ভার্সিটিতে পড়বে।
.
রাতে ঘুমাতে পারেনা তপু।চোখ বন্ধ করলেই তার
অপূর্ণ স্বপ্নগুলো তার গলা চেপে ধরে।
সে ছেলে মানুষ।ছেলেদের তো আবার কান্না করতেও
বারণ।ওটাতো আবার মেয়েদের সম্পত্তি।
.
ক্লাস শুরু করল তপু।কারো সাথেই তেমন মিশত না।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ওর মেধার পরিচয়
পেয়ে কিছু সুবিধাভোগী বন্ধু ওর
চারপাশে ছারক্যাল তৈরী করা আরম্ভ করল।
.
এর মধ্যে রিয়াদ নামক এক ছেলের সাথে ওর বেশ
ভাল সখ্যতা গড়ে উঠল।রিয়াদ ওকে বেশ ভাল সঙ্গ
দিত।ওর সুখ-দুঃখের কথা শুনত।তপুর,রিয়াদকে খুব
ই ভাল লেগে যায়।শুধুমাত্র রিয়াদের স্মোক
করাটাই ও মেনে নিতে পারেনা।রিয়াদকে তপু
অনেকবার অনুরোধ করে স্মোক ছেড়ে দিতে।
কিন্তু রিয়াদের এক কথা,
--দোস্ত লাগলে সাত-সাগর আর
তেরো নদী পাড়ি দিমু,বাট স্মোক
ছেড়ে দেয়া...দিস ইস কুয়াইট ইমপসিবল।
.
মীরা।
তপুর ডিপার্টমেন্টেই পড়ে।
দেখতে যে আহামরি সুন্দরী তা নয়।
লম্বা করে,পাতলা করে রোগা মেয়ে।শরীরে যে খুব
বেশি আকর্ষণ তাও নয়।কিন্তু মেয়েটার মুখে এমন
একটা কিছু আছে যা একটু সময় নিয়ে বের
করতে হয়।সেই কিছু একটা সবাই বের
করতে পারেনা,সেজন্য সুন্দর একটা মন থাকতে হয়।
.
খুব সাধারণ চলাফেরা মীরার।বেশিরভাগ দিনই
কালো একটা বোরখা পরে আসে।মুখটা অবশ্য
খোলা থাকত।চোখের মধ্যে কি যেন আছে।শুধুশুধুই
তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।
.
তপু এক নিদারুণ মোহের মধ্যে পড়ল।প্রতিদিন
প্রাইভেট পড়িয়ে আগেই চলে আসত ভার্সিটিতে।
মীরা হয়তো,আজ একটু আগেও আসতে পারে-এই
আশায়।তপুর কষ্টগুলো কমতে লাগল।আগের মত আর
বুকের মাঝে গভীর রাতে পাথর চেপে বসত না।
এখনো রাতে ঘুম আসেনা।কিন্তু
সেটা দুঃখে নয়,মীরার কথা চিন্তা করে।
.
একটু চাপা স্বভাবের ছেলে তপু।তাই কাউকেই
নিজের মনের কথা বলল না।এভাবে প্রায় ৮মাস
গেল।ওদের এক্সাম হল।
.
একদিন সাহস নিয়ে তপু মীরার সাথে গেল
কথা বলতে।
.
--একটু বস_তে পারি__ই এখানে।(নিজের
গলাটা নিজের কাছেই অদ্ভূত লাগছে তপুর)
--জ্বি,বসেন।
--আমি তপু।
--জ্বি জানি।আমি মীরা।
--হুম।তো আপনি......(কোন প্রশ্ন খুঁজে পাচ্ছেনা তপু।
মীরা মিটিমিটি হাসছে।)
--কিছু বলবেন?
--না,তেমন কিছু না।মা_নে রিকশাওয়ালাদের কত
কষ্ট তাইনা__?(প্রশ্নটা করে নিজেকেই নিজের
কাছে আহাম্মক মনে হচ্ছে তপুর।)
মীরা হাসি লুকাবার
চেষ্টা করে বললঃমানে আপনি রিকশা চালান
নাকি??
তপু একটু বোকা বনে গেল।
--না না।তা না....মানে___
--হুম।হাসতে হাসতেই বলল মীরা।
--শীত চলে এল তাইনা?
--হুম,তো?
--না,কিছুনা।মানে আপনার প্রিয় ছিজন কোনটা?
--গ্রীষ্মকাল।
--কি?
--হুম।(মুচকি হাসতে হাসতে বলল,মীরা।)
--ও আচ্ছা।
.
আর কি জিজ্ঞেস করবে তাই ভাবতে লাগল তপু।
কিন্তু মাথায় কোন প্রশ্ন আসছে না।সব কিছু
কেমন ঘোলাটে লাগছে।কোন মেয়ের সাথে আলাপ
করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই ওর।
.
একবার ভাবল মনের কথা বলেই ফেলি।কিন্তু
সাহসে কুলালো না।মেয়েটাও কেমন যেন!
নিজে থেকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনা।
এভাবে একপাক্ষিক আলাপ করতে কারো ভাল
লাগে!
.
--একটা কথা বলব,যদি কিছু মনে না করেন?
--বলেন।
--
ইয়ে,মা_নে হইছে কি...না মানে গ্রীষ্মকালে তো অনেক
গরম তাইনা?(যে কথা বলতে চেয়েছিল
তা বলা হলনা।)
--হুম।তো?এতে মনে করার কি আছে?
(হাসি লুকাতে লুকাতে বলল মীরা।)
--আপনার প্রিয় ছিজন কেমনে হল__?
--এমনিতেই।(মেয়েটা হাসছে।হাসির মাঝে এক
নির্মল পবিত্রতা।)
.
--আপনার প্রিয় খাবার?(অদ্ভূত
প্রশ্নগুলো করে নিজেকেই নিজের
কাছে বোকা মনে হচ্ছিল তপুর।কিন্তু সে মীরার
সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল।তা যে কথাই হোক।
--পান্তা ভাত।(একটু জোড়েই হেসে ফেলে মীরা।)
--আপনার বাড়িতে কে কে আছে?
--এখনো আমার কোন বাড়ি নেই।আমি বাবার
বাড়িতেই থাকি।মজা করে বলল মীরা।
--না,মানে....
--আচ্ছা আজ যাই।বাসায় যেতে হবে।আল্লাহ
হাফেজ।(কেন যেন আর কথা বাড়ারে চাইল
না মীরা।
যাওয়ার সময় মীরার চোখটা কেমন যেন
কান্নাভারা ছিল।)
.
চলে গেল মীরা।আর বলা হলনা তপুর মনের কথা।
.
সেদিন রাতটা যে কি ভিষণ ভাল লাগল তপুর।এই
প্রথম একজনের এতটা সান্নিধ্য সে পেয়েছে।
সারারাত মনের আয়নায় শুধু মীরার হাসির
প্রতিবিম্ব।
.
সুখ বেশিদিন সয়না সবার।
সেদিনের পর তিন সপ্তাহ কেটে গেছে।কিন্তু
মীরার দেখা নাই।তপু শেষকালে রিয়াদের
সাথে শেয়ার করল সবকিছু।রিয়াদ ওকে আসলেই
সত্যিকারের বন্ধু মনে করত।
.
--দোস্ত মীরার তো বিয়ে হয়ে গেছে গেল সপ্তাহে।
তাই ভার্সিটিতে আসেনা।তপু আকাশ
থেকে পড়ল।একটা অদ্ভূত শুণ্যতা কাজ করছিল ওর
বুকের ভেতর।মেয়েটার সেদিন চলে যাওয়ার সময়
কান্নাভরা চোখ দুটিও মনে পড়ল।
.
মীরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।বাবা-মায়ের
কথা অমান্য করার সাধ্য তাদের থাকেনা।
.
দিনদিন চ্যাঞ্জ হতে লাগল তপু।পড়াশোনা প্রায়
বাদ দিয়ে দিল।হঠাৎ করেই শুরু করে দিল স্মোকিং।
.
এরপরের গল্পটা শুধুই হতাশার।
একটা তরতাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার।
তপু বাজে ছেলেদের সাথে মেশা শুরু করল।
.
মীরার স্মৃতিগুললো ঝাপসা হলেও মুছে যায়নি।
এখনও নেশার ঘোর কেটে গেলে মীরার
কথা ভেবে লুকিয়ে অস্রু ঝরে তপুর।
.
বাসার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে দেয় তপু।
ঠিকমত কথা বলেনা।কথা বললেও কেমন
রাগারাগি করে।
.
সবাই কেমন একটা ঘৃণার চোখে দেখত তপুকে।
সে সুবিধাভোগী বন্ধুরাও সরে যেতে লাগল।
.
না,রিয়াদ সরে যায়নি।এখনও শত খারাপ ব্যবহার
সহ্য করে তপুকে আগের জীবনে ফিরিয়ে আনার
চেষ্টা করে যাচ্ছে।
.
মীরার দেখা আর পাওয়া যায়নি।
বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটির লেখাপড়া বন্ধ
হয়ে গেছে।মেয়েটির মনের কথা জানেনি তপু।
মীরা তপুর মনের কথা জানত কিনা,তাও
জানেনা।
.
(স্বপ্নপূরণের হতাশা,আর প্রথম প্রেমের
বেদনা সইতে না পেরে তপুর মত কিছু সরল
ছেলেগুলো ঝরে যায়।এদের
প্রতি কারো সহানুভূতি কাজ করেনা,কাজ
করে কেবল ঘৃণা।)