লাগছে দেখো ত?
-হা হা হা এই মুটকি মহিলাকে আর
কেমন লাগবে!
-কি আমি মুটকি ।
আসলে তোমাকে জিগ্যেস করাই ভূল
হয়েছে।
এই জিসান আসো আমরা যাই।
-আব্বু যাবে না
-না এই
বুড়োকে আমরা সাথে নিচ্ছি না।
-আমার বয়েই গেছে মুটকির
সাথে যাওয়ার।
নীলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল।
পাশেরর ভাড়াটিয়ার মেয়ের
গায়ে হলুদ, আরো দু দিন আগেই শক্ত
করে আশরাফ ভাই বলে গিয়েছে,
জাহিদ সাহেব, আপনাদের কিন্তু সম্পূর্ণ
অনুষ্ঠানে থাকতেইই হবে।
আমার একটু অফিসের কাজ থাকাই
বাসাই রয়ে গেলাম।
ছুটির দিন অফিসের কাজ এত
বোরিং লাগে, যা বলার বাইরে।
হঠাৎ দরজায় কে যেন নক করল।
দরজাটা খুলতেই দেখি রহিমা বুবু(দাদী)
-আরে বুবু তুমি
-বুবু একটা চিঠি দিয়ে বলল
তারাতারি চলে আয়, রেখার
শইলডা বেশি বালা নারে।
মনে অয়না আর বাঁচব।শেষ বারের মত
তরে দেহনের
লাইগা আমারে এইডা দিয়া পাডাইছে।
তুই দেরি করিস না ভাই।
নীলা রাতে ফেরার পর, আমার মূখের
অবস্তা দেখেই ও বুঝে ফেলল আমার কিছু
একটা হয়েছে।চিঠিটা ওর
হাতে ধরিয়ে বিছানায়
গিয়ে শুয়ে পড়লাম।রেখা আর আমার
বেপারটা নীলা সবটাই জানত।
জিসানকে ঘুম পাড়িয়ে নীলা ও
বিছানায় শুয়ে পরল।
আমার বুকের
মাঝে নীলা মাথা রেখে, হাত
দিয়ে বুকে আঁকাজোকা করতে লাগল।
জানি ও কিছু বলতে চাচ্ছে।
-কিছু বলবে(আমি)
-যাবে না(নীলা)
-কোথায়
-রেখাকে দেখতে
-না
-কেন
-ইচ্চে নেই
-দেখো মৃত্যুর আগ
মুহূর্তকালে পুরোনো কিছু
মনে রাখতে নেই।
শেষ পর্যন্ত নীলার
জোরাজোরিতে যেতেই হল।
ট্রেনে বসে আছি উদ্যেশ্য রেখার
গ্রামের বাড়ি।ট্রেনের
জানালা দিয়ে কবি কবি ভাব
নিয়ে চেয়ে আছি, আর কি যেন
ভাবছিলাম।
রাজশাহীর কোন এক গ্রামের
কলেজে আমি পড়তাম।পড়ালেখা শেষ
করে সেই কলেজেই শিক্ষক
হিসেবে নিয়োগ হই আমার।সেই
কলেজের অনার্স এর ছাত্রী ছিল রেখা।
ছাত্র থাকতেই রেখাদের বাসার
লজিং মাস্টার ছিলাম আমি।সেই
সুবাদে আমাদের এক
সাথে কলেজে আসা যাওয়া,কেয়ারিং দুষ্টামি,
ঘুরাঘুরি সবই চলত আমাদের মাঝে।কারণ
আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন থেকেই
আমি আর রেখা খুব ফ্রি ছিলাম।
সেদিন রেখার বাবা আমাদের
দুজনকে ডাকলেন।
-দেখো বাবা সাগর অনেক দিন ধরেই
ভাবছি তোমাদের একটা কথা বলব বলব।
-হ্যা চাচা বলেন
-দেখো বাবা,তোমার বাবা-
মা যেহেতু নেই,আমি তাদের হয়েই
ভাবছিলাম আমার
রেখা মাকে তোমার হাতে তুলে দেব।
যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
তাছাড়া তোমাদের চলাফেরাই
ভালবাসা অনুভব করেই আমি এ
ডিসিশনটা নিয়েছি।এখন তোমাদের
হাতে সব।
সেদিন ই আমাদের দু জনের ইচ্ছায়
আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
তার পরেই
আমি বুঝতে পারি আসলে আমাদের
বিয়েটা ছিল চরম একটা ভুল।কারণ
আমরা দুজনেই দুজনের
বিপরীতধর্মী ছিলাম।যেমন এর একটা ধরণ
হল রেখা আমার সাথে যেমন
ফ্রি ভাবে চলত,তেমনি সবার সাথে এমন
ফ্রি।যা আমি মুটেও পছন্দ করতাম না।আর
এজন্যে আমার ফ্রেন্ডরা রেখা আর ওর
বেস্টফ্রেন্ড আনিসকে নিয়ে আমার
কাছে অনেক কিছু বলত।যা আমার
নিরবে সহ্য করতে হত।
সেদিন ট্রেনিং এর
জন্যে ঢাকা চলে আসলাম।এক সপ্তাহ
ট্রেনিং এর কথা ছিল কিন্তু তিন
দিনেই সেটা শেষ হয়ে গেছিলম।খুব
খুশি হয়েছিলাম,যাক ভালই হল
রেখাকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে।ওর
জন্য কিছু কেনা-কাটা করে দ্রুত বাসার
উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
আসতে রাত হয়ে গেল।রেখাকে ফোন
করিনি মেয়েটা আমাকে দেখে খুব
খুশি হবে।
রুমে ঢুকে রেখাকে আনিসের
সাথে যেভাবে দেখলাম, তাতে আর
নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।
ঢাকাতে ফিরে আসলাম,পরদিন
ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দিলাম।
সেদিন রেখাকে ক্ষমা করে দিলেও
পারতাম কিন্তু আমাকে মনে হয় সেই
ক্ষমার শক্তি বিধাতা দেননি।তাই
হইত ..
-কি ভাই নামবেন না?
-ও হ্যা ভাবতে ভাবতে টেরই
পাইনি আমার গনতব্যে এসে পড়েছি।
এখান থেকে কিছু পথ রিকসায় তার পর
পায়ে হেটে সেই কলেজ পর্যন্ত,তার পর
বকুলতলা পাড় হয়েই রেখাদের বাড়ি।
রেখাদের বাড়িতে ঢুকতেই
থমথমে পরিবেশ।
বাড়িভরা লোক,কারো মূখের
দিকে তাকালেই দেখা যায়
একটা আহত ভাব।সবাই গম্ভীর হয়ে আছে।
সাত বছর পর
আমাকে দেখে কারো কারো চেহারা আরো খারাপ
দেখাচ্ছিল।কিন্তু কেউই কিছু বলছিল
না।আমিও কাওকে কিছু
না বলে সোজা রহিমা বুবুর
কাছে চলে গেলাম।
রহিমা বুবু আমাকে দেখেই কান্না শুরু
করল।
-বুবু রেখা.... __
-ভাইরে তুই বহুত দেরী কইরা ফালাইছছ।
আমাকে নিয়ে রেখাদের পেছনের
কবরস্থান এর নতুন একটা কবর
দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,ঐ
যে অইহানে রেখা হুইয়া আছে।মরার
আগে মাইয়াডা বারেবারেই
আমারে জিগায়ছে তুই
আয়বেনি আয়বেনি।ক্যান্সারের
সাথে বহুত লড়াই করছে তরে একবার
দেহনের লাইগা।কিন্তু তুই
বেশি দেরীতে আইলি।একটা বক্স আমার
হাতে দিয়ে বুবু বলল, নে,
রেখা এইডা তরে দেওয়নের
লাইগা কইছিল।
বুবুকে শান্তনা দেব নাকি আমি নিজেই
শান্ত হব বুঝতে পারছিলাম না।
কাউকে কিছু না বলে চলে আসছি।
আসার পথে আনিছের
সাথে দেখা,দুজনেই থ হয়ে গেলাম।
কারো মূখে কোন কথা নেই।
আমি পাশকাটিয়ে চলে আসছিলাম,
আনিস আমার হাতে ধরল।চোখ লাল
করে ওর দিকে তাকালাম। আনিস
আরো নরম হয়ে বলল,
পারলে ক্ষমা করে দিও।
আনিসের
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার
হাটা ধরলাম।বকুল তলায় এসে আর
এগুতে পারছিলাম না।কে যেন কানের
কাছে এসে বলল,
-এই চলনা একটু বসি।এই
জাইগাটা না আমার খুব প্রিয়।যখন
আমি তোমার কাছ থেকে খুব
দূরে থাকব,তখন এখানে বসে আমার সেই
প্রিয়
গানটা শুনবে দেখবে আমি তোমার
কাধে মাথা রেখে আমিও গান শুনছি।
এই, এই দেখ চাকু দিয়ে যে আমার আর
তোমার নামের প্রথম অক্ষর লিখছিলাম
গাছটায়, তা কিন্তু এখনো আছে। J + R
দেখছ জাহিদ অক্ষরগুলা গাছাটায়
কিভাবে ফুটে উঠেছে।
গাছের শেকড়টাতে বসলাম।
রহিমা বুবুকে রেখার
দেয়া বক্সটা খুললাম।খুলে দেখি এর
ভেতর রেখার দেয়া সেই ঘড়িটা,
যেটা রেখা আমাকে আমাদের
ফুলসজ্জার
রাতে দিয়েছিল,আমি এটা ডিবোর্স
পেপারের
সাথে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।ঘড়িটা
দেখে আর
নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম
না কেঁদেই ফেললাম।
-এই বোকা তুমি কাঁদছ কেন? রেখা যেন
আমার কাধে মাথা রাখল।
-আচ্ছা গানটা একটু বাজাও না খুব
শুনতে ইচ্ছে করছে
রেখার পছন্দের সেই
পুরনো গানটা মোবাইলে অন করলাম
আষাঢ় শ্রাবণ, মানে না ত মন
ঝর ঝর ঝরেছে,
তোমাকে আমার মনে পড়েছে।
আলোর তরিতে বেয়ে দিন চলে যায়,
আধারের মন জ্বলে তারায় তারায়।
আমার এ মন কেন শুধু আকুলায়,
বরষণ কোথা যেন কোথা হয়েছে,
তোমাকে আমার মনে পড়েছে,
তোমাকে আমার মনে পড়েছে।