মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

>> January 14, 2014

ছুটির দিনের, শীতের দুপুর...

একটা গল্প বলি; ২০০৭ এর দিকের কথা

আরব আমীরাতের আদালত, ৬ বাংলাদেশীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। তাদের অপরাধ; তাদের একজন, এক পাকিস্তানীকে রান্নার বটি দিয়ে এক কোপে দুই টুকরো করে ফেলেছে

...অবাক হওয়ার মতো খবর

আমার প্রচুর বন্ধু-বান্ধব সেখানে থাকে; তাদের কাছ থেকেই শুনি যে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের যত অপরাধ হতো তার ৯৯ ভাগ অপরাধী পাকিস্তানী, সুদানী এবং সোমালীরা। এখনও চুরি হলে প্রথম নাম আসে সুদানী এবং সোমালীর... ধর্ষন এবং ড্রাগস এর অপরাধী হলে প্রথম নাম আসে পাকিস্তানীদের

বাঙালিরা আরবদের কাছে মিসকিন জাতি হলেও খুবই বিশ্বস্ত। বাঙালিরা দেশে যাই করুক বিদেশে সৎ জীবন যাপন করে। বাঙালীরা চুরি করে না, ড্রাগস-এর ব্যবসা করে না, ধর্ষণ, খুন তথা কোন ধরনের অপরাধে জড়িত হয় না।

সময়ের আগে বাঙালিরা কর্মস্থলে পৌঁছায় ... নিয়োগকর্তাদের মধ্যে, বাঙালিরা হচ্ছে প্রথম পছন্দ।

ঘটনার শুরু: আরবদের পুরনো একটি বড় বাড়িতে বেশ ক'জন ব্যাচেলর বাঙালি, পাকিস্তানী, ভারতীয় কয়েকটি রুম ভাগাভাগি করে বসবাস করতো। পেশায় এরা সবাই সাধারণ শ্রমিক। তারা বিভিন্ন কন্ট্রাকটারদের অধীনে ঠিকা কাজ করে। এক শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে দুই রুমমেট রান্নার জন্য তরকারি কুটছিল;

এমন সময় ঐখানে এক পাকিস্তানীর আগমন ঘটে। একথা, সেকথা বলার পর এক পর্যায়ে কটাক্ষ সূরে সে বলতে শুরু করে, “তোমাদের খাওয়া দাওয়া, চলা-ফেরা সব ইন্ডিয়ানদের মতো”

একজন উত্তর দেয় ‘ওমা ইন্ডিয়ানদের মতো হতে যাবে কেন? আমরা আমাদের মতো করে খাই, আমরা আমাদের ষ্টাইলে চলি... আমরা স্বাধীন... মুর্খের মতো কথা বলো কেন?’

পাকিস্তানীটি তখন উত্তর দেয় “তোমাদের জন্মটা কি আমার অজানা? ইন্ডিয়াকে পাকিস্তানীরা .... করে গাভিন করেছিল আর তারপরে তোমাদের ঐ তথাকথিত সোনার বাংলার জন্ম”

এক বাঙালি তখন তাকে মুখ সামলে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে... অন্য বাঙালিটি তাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলে

পাকিস্তানীটি তখন আরও গলা উঁচিয়ে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে “৭১ সালে পাকিস্তানীরা ৯৯% বাঙালি নারীকে গর্ভবতী করে এসেছিল; এরপর থেকে বাঙালি একটা কালো, একটা সাদা, ... যেমনটি তোমরা দুইজন দুই রকম”

এক বাঙালি আর ধৈর্য রাখতে পারে না। হাতের কাছে থাকা রান্নার বটি দিয়ে এক কোপে পাকিস্তানীকে দুই টুকরা... অর্থাৎ ধড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে।

পলকের মধ্যে ঘটে যায় ঘটনা... ছুটে আসে আশে পাশের মানুষ... আসে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাতকড়া লাগিয়ে হত্যাকারীকে ধরে নিয়ে যায়।

ঘটনার অতঃপর: স্থানীয় মিডিয়ায় ফলাও করে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি প্রকাশ পায়। মুখে মুখেও খবরটি পৌঁছে যায় এক শহর থেকে অন্য শহরে। এরপর আদালতে মামলা উঠে... মামলায় বাঙালিটি খুন করেছে বলে স্বীকারোক্তি দেয়। তার ফ্ল্যাটে সেই সময়ে থাকা সে সহ ৬ জন বাঙ্গালীকে গ্রেফতার করা হয়। আমীরাতের নিয়ম অনুযায়ী হত্যার সাজা হত্যা অর্থাৎ মৃতু্যদন্ড।

তবে, নিহতের নিকটাত্মীয়রা (স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা) যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে সাজা মওকুফ হতে পারে। অথবা যদি ৮০ লক্ষ দিরহাম (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২ কোটি) নগদ অর্থদন্ড পরিশোধ করা যায় তবে হত্যাকারী মুক্তি পেতে পারে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হলো নিহতের পরিবারের সাথে, কিন্তু লাভ হলো না... তারা কেবল উল্লিখিত অর্থদন্ডের পক্ষে অবস্থান নিলো

সেই ৬ জন হলো বিদেশের মাটিতে, দিন আনে দিন খায় ... এত টাকা পাবে কোথায়?

... দেশীয় মিডিয়ায় কথা উঠতে শুরু হলো; আর যাইই হোকক, ছেলেটি দেশপ্রেমিক

দেশের অপমান সে সহ্য করতে পারেনি বলেই পাকিস্তানীকে হত্যা করেছে; তার সাহায্যার্থে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিতত

ঘটনার বিস্তারিত শুনে আবুধাবী এলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী... কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ হলো... তারা জানালেন যদি নির্দিষ্ট তারিখের আগে অর্থ পরিশোধ করা হয় তাহলে সে মুক্তি পাবে। এবার শুরু হলো প্রচারণা এবং অর্থ সংগ্রহ। দলমত নির্বিশেষে সকল বাঙালি এক কাতারে। এ যুবককে আমাদের বাঁচাতেই হবে।

অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাঙালিরা আজ পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে যত কাজে হাত দিয়েছে সবগুলোতে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে এবং এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলো না

...হ্যা সেই ৬ টি ছেলেকেই বাঁচানো গিয়েছিল

অবশেষে আবুধাবীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নির্দিষ্ট তারিখের একদিন আগে নগদ অর্থ পরিশোধ করে বীরের মর্যাদায় ছাড়িয়ে আনলেন তাদের

সর্বশেষ: এ ঘটনায় পুরো আরব ভূখন্ডে বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাঙালিদের এখন চরম ভয় পায় পাকিস্তানীরা। এখন কোন জায়গায় বাঙালিদের পাশে পাকিস্তানীরা বাসাবাড়ি ভাড়া নিতে সাহস পায় না। কর্মক্ষেত্রে বাঙালিদের সাথে কথাবার্তা বলতে এখন তারা হিসাব করে কথা বলে। অন্যদিকে অন্যান্য ভাষাভাষীদের মাঝে বাঙালি জাতি একটি দেশপ্রেমিক জাতি হিসেবে সম্মান লাভ করে।

(কিছু গল্পের উপসংহার থাকে না... যেমন, এটার নেই)