লেখা:অস্পষ্ট আমি(আপন)
--------------------------------------------
cng তে বসে আছে অভ্র। যাত্রা উদ্দেশ্য
ধানমন্ডি লেক। নীলাদ্রির
সাথে দেখা করতে যাচ্ছে অভ্র। আজই
ওদের দুজনের শেষ দেখা।
নীলাদ্রি বলেছে সে নাকি আর
অভ্রের সাথে সম্পর্ক আর রাখতে চায় না। কথাটা শুনে অভ্র
প্রথমে মজা ভেবে নিলেও
পরে নীলাদ্রি শিওর করলো অভ্র কে।
কিন্তু কি কারণে ব্রেক আপ করতে চায়
নীলাদ্রি সেটা অভ্র জানে না।
ওকে বলেও নি কারণ টা। অভ্র cng
বসে ভাবছে ওদের সেই প্রথম
দেখা হওয়ার কথা। ওদের
হাসি খুশি মূহুর্ত গুলোর কথা। কত সুখেই
না ছিলো দুজন। কিন্তু
কেনো যে নীলাদ্রি হঠাৎ বদলে গেলো?
অভ্র নীলাদ্রি কে প্রথম
দেখেছিলো আজ থেকে দুই বছর
আগে একুশের বই মেলায়।
একটা স্টোরে দুজন
একসাথে ঢুকেছিলো। অভ্র "হুমায়ন
আহমেদের" "হিমুর মধ্য দুপুর"
বইটি খুঁজছিলো মনে মনে। অভ্র যখন সেলস
মেন কে বলতে যাবে বইটির
কথা তখনি নীলাদ্রি আর অভ্র একসাথেই
একই বইটির কথাই বলে উঠে। অভ্র
প্রথমে নীলাদ্রির দিকে না তাকালেও এই ঘটনার পর
তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।
নীলাদ্রি কে দেখে স্টেচু হয়ে যায় অভ্র। এত সুন্দর
একটা মেয়ে কি করে হতে পারে?
চোখের কাজল টা যেনো নীলাদ্রির সৌন্দর্য
বাড়িয়ে দিয়েছিলো আরো বহুগুনে।
হঠাৎ করে ঘোর ভাঙে অভ্রের।
অভ্র : স্যরি, একসাথে বলে ফেললাম।
আপনি আগে নিন।
নীলাদ্রি : না না এখানে আরো অনেক
আছে। আপনি আগে নিন।
অভ্র : হুম, আপনি হিমু সিরিজ খুব পছন্দ
করেন তাই না?(অভ্র ভাব নেয়ার জন্য
কথা বারাচ্ছে)
নীলাদ্রি : হুম। (কিছুটা বিরক্ত নিয়েই
কথাটা বলে নীলাদ্রি)
অভ্র : আমিও। আচ্ছা আর কি কি বই
নিবেন আপনি?(অভ্র আবারো আগ বারিয়ে কথা বলে)
নীলাদ্রি : আপনি জেনে কি করবেন?
আপনি কি বই বিক্রি করেন?(আগের থেকে একটু
বেশি বিরক্তি নিয়ে বললো নীলাদ্রি)
অভ্র : না মানে। এখানে কোন বই
থাকলে খুঁজে দিতাম। তাই আর কি।
কথাটা বলেই এক গাল হাসে অভ্র। কিন্ত নীলাদ্রি অভ্রে কে কিছু
না বলে চলে গেলো। অভ্রও আর কিছু বললো না। কিন্তু
নীলাদ্রি কে দেখে অভ্রের মনে কেমন
যেনো একটা ভালো লাগা কাজ
করছিলো। "লাভ এত ফার্স্ট সাইট"
বলতে যদি কিছু থাকে তাহলে সেটাই
হয়েছে অভ্রের। কিন্তু অভ্র কি করে ঐ
মেয়ের সাথে কথা বলবে? মেয়ের ভাব
দেখে অভ্র একটু পিছু পা হলেও দমে যায়
নি। সেদিন বই মেলা থেকে শুরু করে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত
পুরো সময়টা নীলাদ্রি কে ফলো করে অভ্র।
নীলাদ্রির বাসা পর্যন্ত যেয়ে খুব খুশিই
হয় অভ্র। কারণ নীলাদ্রির বাড়ি অভ্রের
বাড়ির থেকে হেটে যেতে কয়েক
মিনিটের রাস্তা। আর সবচেয়ে বড়
কথা হলো নীলাদ্রি কলেজে যাওয়ার
সময় অভ্রদের বাসার সামনে দিয়েই
যেতে হয়। অভ্র এলাকার ছোট ভাইদের
দিয়ে নীলাদ্রির সম্পর্কে সব তথ্য নেয়।
নীলাদ্রির কোন বয়ফ্রেন্ড নেই
জানতে পারে অভ্র। সেদিনের পর
থেকে অভ্র প্রতদিন বারান্দায়
এসে নীলাদ্রির জন্য অপেক্ষা করতো ও
কখন বাসা থেকে বের হয়।
নীলাদ্রি বাসা থেকে বের হলেই অভ্র
নীলাদ্রির পিছু পিছু যেতো।
এভাবে বেশ কয়েকদিন অভ্র
নীলাদ্রি কে ফলো করতে থাকে।
নীলাদ্রি ও বুঝতে পারব যে অভ্র
প্রতিদিন ওকে ফলো করে। নীলাদ্রিও
বিষয় টা খুব ইনজয় করে। কিন্তু অভ্রর
দিকে খুব রাগি রাগি ভাব নিয়ে তাকায়। আর সেটা দেখে অভ্রের
হাওয়া বেরিয়ে যায়। কোন
দিকে লুকোবে খুঁজে পায় না অভ্র।
নীলাদ্রি প্রতিদিনী ভাবে অভ্র ওর
সাথে কথা বলবে। কিন্তু অভ্র
কথা বলে না দেখে নীলাদ্রি একদিন
খুব রাগি রাগি ভাব নিয়ে ডাকে অভ্র কে।
নীলাদ্রি : এই যে মিস্টার এই দিকে আসুন।
অভ্র : (ভয়ে ভয়ে কাছে যায়) জী? কিছু বলবেন?
(নীলাদ্রি : কি বেপার? প্রতিদিন
এভাবে আমার পিছু নেন কেনো?
অভ্র : কই না তো।
আমি তো প্রতিদিনী এই সময় এইদিক
দিয়ে যাই। আপনি আমার সামনে যান
তাই আপনার কাছে মনে হয় আমি আপনার পিছু নেই।
নীলাদ্রি : চুপ, আবার
মুখে মুখে কথা বলা হচ্ছে? আর যদি কখনও দেখি তাহলে পুলিশ
দিয়ে ধরিয়ে দিবো। কথাটা বলেই নীলাদ্রি হাটা ধরে।
কিছুদূর গিয়ে আবার পিছু ফিরে তাকায় নীলাদ্রি। দেখতে পায় অভ্র
চলে যাচ্ছে বাসার দিকে। এটা দেখে নীলাদ্রি মুচকি হাসে।
"স্টোপিড একটা " বলেই আবার
হাটা ধরে নীলাদ্রি।
নীলাদ্রি ভেবেছে অভ্র ওর কথা শুনবে না। পরেরদিন সকালেই
আবার পিছু নিবে। কিন্তু নীলাদ্রির ভাবনা মিথ্যে করে দিয়ে পরদিন অভ্র
নীলাদ্রির পিছু নেয় নি। তবে বারান্দায়
দাড়িয়ে দেখছিলো নীলাদ্রি কে। নীলাদ্রি সেটা দেখতে পায় নি।
নীলাদ্রি ভেবেছিলো আজ আসে নি কাল আসবে। কিন্তু না,
এবারো নীলাদ্রির ভাবনা ভূল করে দিলো অভ্র। পর পর কয়েকদিন
নীলাদ্রির পিছু নেয় নি অভ্র।
নীলাদ্রি কেমন যেন একটা শুন্যতা অনূভব করছে। তবে কি সেও অভ্রের
প্রেমে পরে গিয়েছে? হ্যা নীলাদ্রি ও অভ্রের
প্রেমে পরে গিয়েছে। অভ্র কে এই কয়েকদিন খুব মিস করছে নীলাদ্রি।
"কেনো সেদিন এভাবে বলেতে গেলাম ছেলেটা কে?" ভাবছে নীলাদ্রি।
প্রায় পাঁচদিন পর আজ নীলাদ্রি দেখা পায় অভ্রের। তবে আজ
পিছু পিছু নয়। কোথা থেকে যেনো আসছে অভ্র।
হয়তো কোথাও গিয়েছিলো। কিন্তু তা দেখে নীলাদ্রির কি লাভ।
"ইচ্ছে মত বকে দিবো গাধাটা কে। এই কয়দিন কেনো আমার পিছু নেয় নি?"
ভাবতে থাকে নীলাদ্রি। অভ্র ভয়ে ভয়ে এগুতে থাকে নীলাদ্রির
দিকে। নীলাদ্রি ভেবেছিলো অভ্র নীলাদ্রির সাথে কথা বলার জন্য
দাড়াবে। কিন্তু এবারো নীলাদ্রির ভাবনা ভূল করে দিয়ে পাশ
কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো অভ্র। তা দেখে নীলাদ্রি আবার পিছু
হেটে গিয়ে অভ্রের সামনে দাড়ায়। নীলাদ্রি : এই ছেলে, আমাকে তুমি দেখনি?
অভ্র : ইয়ে মানে... দেখেছি।
নীলাদ্রি : তাহলে দাড়ালে না কেনো?
অভ্র : আপনি তো না করেছিলেন
যেনো আপনার সামনে না দাড়াই।
নীলাদ্রি : এতদিন কোথায় ছিলে? আমার পিছু নাও নি কেনো?
অভ্র : আমি আপনার পিছু
নিলে আপনি পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলেছেন। আর আমি পুলিশ কে ভয় পাই। তাই.....
নীলাদ্রি : হুম, খুব ভদ্র ছেলে। কি নাম তোমার?
অভ্র : ইয়ে মানে.. আমি অভ্র।
নীলাদ্রি : হুম ভালো। শুনো কাল
থেকে চাইলে পিছু নিতে পারো। আর এখন
থেকে আপনি ছেরে তুমি করে বলা অভ্যাস করো।
কথাটা বলেই চলে যায় নীলাদ্রি। অভ্র কিছুই
বুঝতে পারে না নীলাদ্রি কি বললো। কিছু বুঝতে না পারলেও পরদিনন
থেকে ঠিকই পিছু নেয় নীলাদ্রির। সেই
থেকে দুজনের একসাথে পথ চলা। অনেক
ভালো কিটছিলো ওদের দিন গুলো। কিন্তু কিছুদিন ধরে হঠাৎ
বদলে যেতে থাকে নীলাদ্রি। এভয়েড
করে চলে অভ্র কে। আজ সকালে তো ফোন সরাসরি বলেই
দিয়েছে অভ্রের সাথে আর রিলেশন
রাখবে না নীলাদ্রি। কথাটা শুনে অভ্র প্রথম কষ্ট পেলেও
পরে নিজেকে সামলে নেয় এই
ভেবে যে এতে মনে নীলাদ্রির ভালোই হবে। আর অভ্র চায়
নীলাদ্রি ভালো থাক। cng র ড্রাইভারের ডাকে ভাবনার জগত
থেকে বাস্তবে আসে অভ্র। বুঝতে পারে চোখের
কোনে কি যেনো ভেজা ভেজা লাগছে।
চোখ গুলো মুছে নেয় অভ্র। তারপর cng
ভারা দিয়ে এগিয়ে যায় অভ্র। গিয়ে দেখতে পায়
নীলাদ্রি বসে আছে একটা গাছেন
নিচে। আজ ওকে অনেক বেশি সুন্দর
লাগছে। আজ আবারো অভ্র নীলাদ্রির
প্রেমে পরে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই। এ প্রেম
ক্ষনস্থায়ী। অভ্র নীলাদ্রির কাছে।
নীলাদ্রির পাশে বসে অভ্র, কিন্তু
তা দেখে নীলাদ্রি উঠে একটু দূরে গিয়ে বসে। তাতে অভ্র কষ্ট পায়
নি। ও জানতো এমনটা হবে। কারণ আজ এই
নীলাদ্রি অভ্রের সেই আগের
নীলাদ্রি নয়। আজ এ এক অন্য নীলাদ্রি। প্রথমে মুখ খুলে অভ্র
অভ্র : নীলাদ্রি, কারণটা জানতে পারি?
নীলাদ্রি : আমি কারণ
বলতে পারবো না অভ্র। আমি শুধু
জানি আমি তোমার সাথে আর
রিলেশন রাখতে পারবো না।
অভ্র : কিন্তু নীলাদ্রি......
নীলাদ্রি : কোন কিন্তু নয় অভ্র।
আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল।
আজকের পর থেকে আর কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করার
চেষ্টা করবে না। আর হ্যা আগের মত আর
কখনও আমার পিছু নিবে না।
অভ্র : ঠিক আছে নীলাদ্রি। তোমার
ভালোর জন্য আমি সব করতে পারি।
কিন্তু আমার একটা শেষ ইচ্ছে পুরোন করবে?
নীলাদ্রি : কি তারাতারি বলো। আমাকে যেতে হবে।
অভ্র : নীলাদ্রি, আমি শেষ বারের মত
তোমার কোলে মাথা রেখে একটু
ঘুমাতে চাই। আমারর এই ইচ্ছেটা একটু পুরোন করবে?
নীলাদ্রি : কিন্তু.....
অভ্র : এই শেষবার নীলাদ্রি।
কথা দিচ্ছি বেঁচে থাকতে আর কখনও
তোমার সামনে পরবো না।
নীলাদ্রি : ঠিক আছে। কিন্তু আমার হাতে বেশি সময় নেই।
কথাটা বলার পর অভ্র আগের মত
নীলাদ্রির কোলে মাথা রেখে শুয়।
কিন্তু আগের শুয়া থেকে আজ অভ্রের শুয়া একটু কেমন
যেনো লাগছে নীলাদ্রির। ছেলেটার
প্রতি মায়া বেরে যাচ্ছে কেনো ওর?
নীলাদ্রির বুঝতে পারছে আর অভ্রকে ওর
কোলে রাখা যাবে না। অভ্রকে উঠার
জন্য বলে নীলাদ্রি। কিন্তু অভ্র কোন
সারা দিচ্ছে না। আরো কয়েকবার অভ্র
কে ডাকে নীলাদ্রি। কিন্তু কোন সারা না পেয়ে কেমন
যেনো লাগে নীলাদ্রির। অভ্রের শরিরে হাত দিয়ে দেখে ওর পুরো শরির
ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। ভয় পেয়ে যায় নীলাদ্রি।
সাথে সাথে অভ্রে নিশ্বাস দেখে নীলাদ্রি। এ কি অভ্রের নিশ্বাস
পরছে না কেনো? এভাবে নীল
হয়ে যাচ্ছে কেনো অভ্রের মুখটা?
নীলাদ্রি শুনেছিলো কষ্টের রঙ
নাকি নীল হয়। ছেলেটা কি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে?
এতো ভালোবাসে ছেলেটা ওকে?
নীলাদ্রি বুঝতে পারলো অভ্র
ওকে কতটা ভালোবাসতো। কিন্তু
ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সব
শেষ হয়ে গিয়েছে নীলাদ্রির।
কান্নায় ভেঙে পরে নীলাদ্রি। তখন
অভ্রের ফোনে ওর টাইমার
দিয়ে রাখা রেকর্ডিং টা বেজে উঠে,
"নীলাদ্রি আমি জানি না তুমি কেনো আজ
আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছো।
তোমাকে কারণও জিজ্ঞেস করবো না।
জানি তুমি বলবে না। তোমাকে আমার জীবন থেকে চলে যেতে হবে না নীলাদ্রি।
আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাবো। অনেক দূরে চলে যাবো। মনে আছে নীলাদ্রি একবার বলেছিলা তুমি আমার জীবন?
কি ভূলে গিয়েছ তো? আমি জানতাম
ভূলে যাবে। ভূলে না গেলে আমার
থেকে দূরে যেতে পারতে না।
নীলাদ্রি তুমি জানো না জীবন
দূরে চলে গেলে দেহটা বেঁচে থাকে না।
তাই আমিও বেঁচে থাকতে পারলাম না।
ভূলে যেও অভ্র নামে তোমার
জীবনে কেও এসেছিলো। তাহলেই
তুমি ভালো থাকতে পারবে।
ভালো থেকো তুমি। বিদায়
নীলাদ্রি বিদায়।"