লিখা - রূপকথার মেঘবালক
অফিস থেকে বাসায় ফিরেই সোফায় বসে পড়লেন
রহিম সাহেব। শরীরটা কেমন যেন খারাপ
লাগছে তার। মাথায় একটু
পানি ঢাললে ভালো লাগতো।
উঠতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলেন
মেঝেতে।
.
আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে বসার ঘরে এলেন সালমা।
স্বামীকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভয়
পেয়ে গেলেন। ধরে সোফায় বসিয়ে দিল রহিম
সাহেবকে।
.
: কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?
-- বুঝতে পারছি না!! মাথায় একটু
পানি ঢেলে দাওতো.....
: চলো......
..........
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে প্রায়।
বারান্দায় বসে আছেন রহিম সাহেব। এখন
কিছুটা ভালো লাগছে তার। এসময় তার
স্ত্রী এসে বলল, " চা খাবে?"
.
-- হুম, এক কাপ চা পেলে মন্দ হত না। এক কাজ কর
চা বানিয়ে নীলাকে পাঠাও। ওর সাথে দু
চারটা কথা বলি।
: আচ্ছা পাঠাচ্ছি......
.
নীলা রহিম সাহেবের একমাত্র মেয়ে। সবেমাত্র
বিবিএ কমপ্লিট করল। এর মধ্যে নীলার
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পাত্র
একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিনিয়র
অফিসার। দেখতে শুনতে বেশ ভালো। তাই
সম্বন্ধটাতে সম্মতি দিয়েছে।
.
বিয়ের মাত্র ৮ দিন বাকী। কত খরচ পড়ে আছে!
রহিম সাহেবের সঞ্চয়ে যে তিন লাখ
টাকা আছে সেগুলোই একমাত্র সম্বল।
অর্থজোগাড়ের আর তেমন কোন উৎস নেই বললেই
চলে।
.
→ বাবা, চা নাও.....
-- হুম, দে কি করছিস?
→ টিভি দেখছিলাম।
-- গয়নাগুলো পছন্দ হয়েছে তোর?
→ হুম হয়েছে। আর কিছু বলবে বাবা?
.
রহিম সাহেবের মেয়ের সঙ্গে আরও কিছুক্ষন গল্প
করার ইচ্ছা ছিল। মেয়েটার সঙ্গে দিনের পর দিন
তার কোন কথা হয়না। কথা বলার মত সুযোগই
তৈরি হয়না। আজ একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি সুযোগটা ব্যবহার করতে চাচ্ছিলেন।
সেটা আর সম্ভব হলো না। নীলা তার
সঙ্গে কথা সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ বোধ করছে না।
.
তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে বাবার
সামনে থেকে যেতে পারলে বাঁচে!! যেন সে বাবার
সঙ্গে কথা বলছে না, কথা বলছে তার ভার্সিটির
রাগী কোন প্রফেসরের সঙ্গে!!
.
রহিম সাহেবের মন সামান্য খারাপ হলো,
তবে তিনি মন খারাপ ভাবটা তেমন গুরুত্ব
দিলেন না। মেয়েরা বড় হলে বাবার কাছ
থেকে দূরে সরে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
.
জগতের অনেক সাধারন নিয়মের মধ্যে একটা হলো-
'মেয়েরা বড় হলে মা'র দিকে ঝুঁকে পড়ে,
ছেলেরা ঝুঁকে পড়ে বাবার দিকে।'
.
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় মাথায় আবার
যন্ত্রনা শুরু করে দিল রহিম সাহেবের।
মনে মনে ঠিক করলেন কাল একবার ডাক্তারের
কাছে যাবেন।
.
পরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে উনার পরিচিত
এক ডাক্তারের ক্লিনিকে গেলেন। বেশ কিছু
পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হলো রহিম
সাহেবকে। রিপোর্ট নেয়ার জন্য ২
ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলা হল-
.
২ ঘন্টা পর.....
~রহিম সাহেব, আপনার সমস্যাটা অত্যন্ত
জটিল। খুব দ্রুতই আপনার অপারেশন করতে হবে।
-- ডাক্তার সাহেব কি হয়েছে আমার?
~ আপনার মাথার ভিতরে রক্ত জমাট
বেধেঁ আছে যার কারণে মস্তিষ্কে স্বভাবিক রক্ত
চলাচল ব্যাহত হচ্ছ।
-- অপারেশনে কত খরচ হবে?
~ ১ লাখের মত খরচ হবে।
-- ও আচ্ছা.... ঠিক আছে।
~ আপনি কিন্তু
তাড়াতাড়ি অপারেশনটা করে ফেলুন,
নয়তো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
-- জ্বী।
.
বাসায় ফিরেই রিপোর্টগুলো লুকিয়ে রাখলেন
রহিম সাহেব। বাসার কাউকেই তার রোগের
কথাটা জানানো যাবেনা। আর অল্পকদিন পরেই
মেয়েটার বিয়ে। এখন যদি তার নিজের অপারেশন
করে তবে মেয়ের বিয়ের খরচের ব্যাপারটা সংশয়ের
মধ্যে থেকে যাবে।
.
এমনিতেই জমানো টাকায় বিয়ের খরচই ঠিক
ভাবে সামলানো যাচ্ছে না। তার উপর অপারেশনে ১
লাখ টাকা খরচ করা কিভাবে সম্ভব!!
.
৭দিন পর.....
নীলার বিয়েটা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হল।
নীলাকে বিদায় জানাতে রহিম সাহেবের বেশ
কষ্ট হলো, তার সেই ছোট্ট নীলাকে যেন আজ
হারিয়ে ফেলেন!!
.
১৫ দিন পর......
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন রহিম সাহেব। চোখ
দুটো বন্ধ, কোন নড়াচড়া নেই।
তাকে ঘিরে কান্নার রোল পড়েছে। সালমা বেগম,
নীলা কেউই যেন বিশ্বাস
করতে পারছে না তিনি বেঁচে নেই।
..............
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় রহিম
সাহেবকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তাররা অপারেশন করলেও
তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
.
ডাক্তারের মতে আর কিছুদিন
আগে অপারেশনটা করলে হয়তো তাকে বাচাঁনো যেত!!!
..................................
(কিছু কিছু আত্মত্যাগ হয়তো এভাবেই
অপ্রকাশিত থেকে যায়)