রাত তিনটা।অনেকের কাছে গভীর
রাত।কিন্তু আবিরের কাছে মাত্র
রাতের শুরু।সবাই
ঘুমিয়ে গেলে আবির ড্রাগ নিবে।
আবির নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের
সন্তান।বাবা স্কুলের সামান্য
কেরানি।মাসে বেতন ৮ হাজার ৫০০
টাকা।যা আজকের দিনে চলার জন্য
যথেষ্ট নয়।
তারা থাকে রেলওয়ে কলোনির
পাশের ছোট্ট একটি বাসায়।এই
বাসাটি তার দাদা মোহাম্মদ
আজমল সাহেব বানিয়েছিলেন।
আবির জাতীয়
ভার্সিটি থেকে অনার্স করছে।
ভালো ছাত্র।।
তবে সে ইয়াবা,ফেনসিডিলে
আসক্ত।।নেশার
টাকা জোগাতে গিয়ে সে নীলার
দেয়া রোলেক্স ঘড়িটা আজ মাত্র
৪০০ টাকায় বিক্রি করে দিল।
নীলা আবিরের গ্রার্লফেন্ড।।দুজন
দুজনাকে খুব ভালোবাসে।
নীলা জানে না যে আবির নেশায়
আসক্ত।
দুপুরবেলা, আবির কলেজ
থেকে আসে ভাত খেতে চায়।
সেদিন বাসায় কেবল ডাল আর পটল
ভাজি রান্না হয়েছিল।আবিরের
প্লেটে সেগুলো তুলে দিতেই
আবির ভাতের প্লেট
সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয়।
বলে প্রত্যেকটা দিন আর একই খাবার
ভালো লাগে না।এইগুলা মানুষ খায়?
আবিরের মা বলে,বাপ মাসের শেষ
তো তাই তোর আব্বার
হাতে টাকা নাই।এখন
এইগুলা দিয়া খাইয়া নে তারপর
রাতে ডিম ভাইজা দিমুনে।আবির
কিছু না বলে ঘর থেকে বের
হয়ে যায়।তার মা ভেজা চোখ
নিয়ে তাকিয়ে থাকে দরজার
দিকে.....
আবিরের ৪০০ টাকা শেষ। আজ
এখনো সে ড্রাগ নিতে পারে নি।।
বন্ধুদের কাছ
থেকে টাকা পাওয়া যাবে মনে হয়
না।এমনিতেই ওরা অনেক
টাকা পাওনা।তাই সে বাসার
দিকে পা বাড়ালো।বাসায়
গিয়ে তার ড্রয়ার থেকে ছোট্ট অথচ
ধারালো চুরি টা নিয়ে চলে গেল।
বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা অন্ধকার
গলিতে।এ গলি দিয়ে মানুষ
রাতে তেমন আসে না।
সে সিগারেট
টানতে টানতে অপেহ্মা করে।।
সিগারেট প্রায় শেষ,এমন সময় দেখল
একটা রিক্সা আসছে।
রিক্সা ল্যাম্পপোস্টের
নিছে আসতেই সে দেখল রিক্সায়
রোকরা পরা একক মেয়ে।
সে রিক্সার পথ আটকে দাড়াল,বলল
আফা যা আছে দেন।মেয়েটি তার
দিকে তাকিয়ে আছে।কিচ্ছু
বলছে না সে।আবির মেয়েটির হাত
থেকে চুড়িজোড়া খুলে দিয়ে উল্টো দিকে হাটা দেয়।
হঠাত মেয়েটি তাকে পিছন
থেকে ডাকে "আবির"!!!
সে পিছনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি নীলা।
এতহ্মন হিজাব পড়া ছিল
বলে তাকে আবির
চিনতে পারে নি।আবিরকে আর
কথা বলার সুযোগ
না দিয়ে নীলা চলে যায়...
আবির বাসায় ফিরে রাত ৮ টায়।
বাসায় ডুকার
আগে সে বাইরে থেকে তার বাবা-
মার কথা শুনতে পায়।।তোমার
পোলা আজ খায় নাই।
কেন?
-ও তো পটল
দিয়া খাইতে পারে না।
-কি করুম কও।যা বেতন পাই তা তো ওর
পড়াশোনা আর বাজারে যায়গা।আর
কয়ডা দিন কষ্ট কর।
-আল্লাহ কেন যে গরিব
বানায়া দুনিয়ার পাডাইল
-খাড়াও বেতন পাইলে একটা বড়
দেইখা ইলিশ মাছ আনমু।আবির ইলিশ
মাছ অনেক পছন্দ করে।
কথাগুলো শোনার পর আবির আর
বাসায় যায় না।রাস্তায়
হাটতে থাকে।।আর তার অনেক
কান্না আসতে থাকে।একসময়
কান্না এসেও পড়ে।আর তার
চোকে রাস্তার সোডিয়াম
লাইটগুলি ঝাপসা হয়ে ওঠে।।।
আবির বাসায় ফিরে রাত ১১ টায়।
ফিরে দেখে তার মা তার জন্য
খাবার নিয়ে বসে আছে।তার জন্য
ডিম ভাজা হয়েছে।সে খেতে বসল।।
আর বলল "মা-পটল তরকারী দাওতো"।
তার মা বললেন কেন বাপ?
-কেন আবার। খামু তাই।
-তোর তো পটল পছন্দ না।
-মা!!!!দিতে কইছি,দেও তো
তার মা পটল তরকারী এনে দেয়।
আবির নিজ হাতে তরকারী নেয়।
কিন্তু খায় না।
-কিরে বাপ,খাস না যে।
-মা?
-কি বাপ?
-মনে আছে ছোট বেলায়
আমারে খাওয়াইয়া দিতা?
-মনে থাকব না কেন।
-আমারে আজকে একটু
খাওয়াইয়া দিবা?
-এই নে! হা কর।
-হাআআআ..
-আরো জোরে হা কর।
- হাআআআআআআ...
আবির নেশা ছেড়ে দেয়।সে আর
নীলার সাথে যোগাযোগ করে নি।
তার বিকেক
তাকে আটকে রেখেছে।নীলার
চুড়িজোড়া এখনও তার কাছে।।আবির
চিরজীবন এইগুলো রেখে দিবে।
কিছুদিন পর আবিরের সিলেটের
চা বাগানে ভালো চাকরি হয়।।
দুইমাসের বেতন অগ্রিম নিয়ে নেয়
সে।।কারন আজ নীলার বিয়ে।আবির
গয়নার দোকানে গিয়ে সুন্দর
একজোড়া চুড়ি কিনে।।
সে এইগুলো নীলাকে দিবে।।
বিয়ে রাত ৯ টায়।।এখন ৭ টা বাজে।
আবিরের কেন যেন
হাটতে ইচ্ছা করছে।। আবির হাটছে।
রাস্তার সোডিয়াম
লাইটগুলি আবার
ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।।।।।।