মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৫৪- একটুকরো ভালোবাসার গল্প

~ আল-রাব্বি

আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।
তৃতীয় বারের মতো পালন করবো আমারা।
মানে আমি আর নীলা।
তিন বছর আগে টিক এই দিনটাতেই আমি বাধ্য
হয়ে বুক ভরা ভয় নিয়ে বসেছিলাম বিয়ের পিড়িতে।
একদম হুট করেই বিয়েটা এসেছিলো আমার জীবনে।
লেখাপড়া ছেড়েছি মাত্র।
ইচ্ছা ছিলো পত্রিকাতে কাজ করার তাই কাজ
খুজার পেছনে জুতার ক্ষত টা বড় করা ছাড়া তেমন
কোন কাজ ছিলোনা হাতে।
এমন নয় যে আমাকে চাকুরী করতেই হবে। বাবার
ব্যবসা মোটামুটি ধরনের বড় হওয়ার জন্য, বাবার
ইচ্ছা ছিল আমি যেনো উনার স্থানটা নিয়ে সব কিছু সামলাই।
কিন্তু আমি স্বাধীনতা খুব
বেশি পেয়েছি বলে আমার পরিবার আমার
ইচ্ছাটা কে গুরুত্ব দিলো।
লীনা আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।
এতোটা সুন্দরী নয় আবার কুৎসিত
বলে তাকে অপমান করাটা একটু বড় ধরনের পাপের মধ্যে পড়ে।
গোলগাল চেহারা। শ্যামা র্বণের চামড়া। আর ইষৎ
রাঙ্গা গাল। সব মিলিয়ে মায়াবতী টাইপের।
সেদিন গিয়েছিলাম ওর বিয়েতে,- মানে ওর
বিয়ে অন্য কোন পাত্রের সাথে হচ্ছে। আমার
বাবা-মা আর আমি সেই
বিয়েতে অতিথি মাত্র।
কিন্তু একটা স্বপ্নময় অঘটন আমাকে সে দিনই
বসিয়ে দিলো নীলার পাশের
সাজানো চেয়ারটাতে আর সাজিয়ে দিলো আমার জীবনটা।
বিয়ের দিন সকালে পাত্র পক্ষের পাত্রের এক
চাচা, আঙ্কেল মানে নীলার বাবা কে ফোন
দিয়ে ক্ষমা জড়িত কন্ঠে বললেন এই
বিয়েটা হচ্ছে না। পাত্র
নাকি বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। উনারা খুব
দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং সেই সাথে বললেন,
আঙ্কেল যদি রাজি থাকেন তবে তারা অন্য
আরেকটা পাত্র নিয়ে আসবে।
কিন্তু আমার শশুর বলে কথা। রাজি'র
বদলে মাহা বাজি ধরে ফেললেন।
ঐ লোকটাকে ঝাড়ি মেরে বললেন, "
লাগবেনা আপনাদের ভালো মানুষি দেখানো।
আমি আজকেই আমার মেয়ের বিয়ে দেবো।
আপনারা সকল বর যাত্রী নিয়ে আসবেন দাওয়াত খেতে।"
বিশাল আকারের চেলেঞ্জ । এতো অল্প সময়ের
মধ্যে পাত্র পাওয়া তো একদম অসম্ভব।
আমার বাবাও এগিয়ে আসলেন বন্ধুর চেলেঞ্জ
জিতাতে। খুজ নিতে লাগলেন উনার পরিচিত
সব নীলার উপযোগী বিবাহযগ্য অবিবাহিত
দের। কিন্তু কাউকেই পাওয়া গেলো না। এতো অল্প
সময়ে কেউই রাজি হয় না। হওয়ার কথাও না।
আঙ্কেল আর বাবা দুজনই যখন হাতাশার
জালে আটকে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন তখনই আমার
বাবার মুখে খুব নীচু স্বরে উচ্চারিত হল আমার
ক্ষুদ্র নামটা। আর আঙ্কেলের মুখে ফুটলো চঁন্দ্র
বিজয়ী নভোচারীর হাসি।
এই কথাটা যখন আমার কানে গেলো তখন
আমি স্থান-কাল-পাত্র ভূলে কথা শিখেনি এমন
অবুজ বালকের মতো শূন্য দৃষ্টি নিয়ে স্থির
হয়ে বসে রইলাম। তাছাড়া আর কিবা করার ছিলো আমার!
প্রেম কিংবা প্রেমিকা কোনটাঈ হয়নি কখনো। তাই স্বাধীনচেতা হয়েও এই
একটি দিনে পুরাপুরি পরাধীন হয়ে গেলাম মা- বাবার কাছে।
আমার পছন্দ আছে কিনা? কোন ধরনের
আপত্তি আছে কিনা? রাজি কিনা? এই ধরনের
সহস্র প্রশ্ন যখন আমার কানের পাশে চলছে, তখন
আমি খুব ধীর শব্দে প্রশ্ন কর্তাদের
উদ্দেশ্যে বললাম, " আমি সকালে গোসল করিনি,
এখানে কি গোসল করতে পারবো?"
জানিনা কি এমন কথা বললাম যে,
পুরো বাড়িটা রূপ পাল্টে নতুন এক রূপ ধারন করলো।
একটু আগে স্থবির হয়ে থাকা মানুষ গুলো আবারও
উজ্জীবিত হয়ে পুরাদমে নাচানাচি কান্ড।
আমাকে গোসল করানো হল। শেরওয়ানী-পাঞ্জাবী আনা হল।
আমি এই পৃথিবীতে একমাত্র পাত্র,
যে কিনা নিজের হবু শশুর বাড়িতে বর সেজে বিয়ে করেছে।
ঘড়ির কাঠা যেনো ঘুরছে না। নীলা দুই বার ফোন
করে ফেলেছে, আমার বাসায়
যেতে দেরী হচ্ছে কেনো সেটা জানতে। যদিও এখন
আমার অফিসের কোন কাজ নেই তারপরও
বসে আছি নীলার রাগী চেহারাটা দেখার জন্য।
তাকে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে রাগাই কারন
সে রেগে গেলে তার গালের উপরটা টিক নাকের দুই
পাশটাতে লালচে বর্ন ধারন করে।
যেটা ভিঞ্চি দেখলে মোনালীসা আঁকার চিন্তাও করতো না।
অফিস থেকে বেরিয়ে একটা ফুলের
দোকানে ঢুকলাম। একটা ফুলের তোড়া তো দিতেই হয়
নীলাকে। কিন্তু আধ ঘন্টা নিবিড়
চেষ্টা চালিয়েও মনমতো ফুল পেলাম না।
আসলে ফুল আর নীলা, দুইটার মাঝে বাস্তবিক
কোন পার্থক্য আমি পাইনি কখনো। তাই শেষ-মেষ
বাধ্য হয়ে কিনতে হলো, অর্কিডের দুটো ডাল।
কলিং বেলে বাজাতেই দরজা খুলে দিলো নীলা।
খানিকটা রাগ মিশিয়ে বললো, " আজ
এতো দেরী করলে কেনো? "
আমি উত্তরে বললাম, " একটু কাজ ছিলো তাই,
এতো চিৎকার করার কি আছে?"
নীলা অবাক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে থাকালো।
তার চোখের গভীরতা অসীম।
আমি দেখতে পেলাম সেই অসীমতার মাঝে শুরু হয়েছে জলোচ্ছ্বাস।
আমি আর দেরি না করেই পেছনে লোকানো অর্কিডসহ হাতটা তুলে ধরলাম
তার সামনে। প্লাবন নামবে নামবে করছে তার
চোখে। অপর হাত থেকে অফিসের
ব্যাগটা ফেলে দিয়ে নীলাকে বাহুডোরে বেধে কানের
কাছে মুখ নিয়ে বললাম "হ্যাপি বার্থডে"।
নীলা চোখ তুলে থাকালো আমার চোখের দিকে।
তখন আমার চোখে ছিলো রসিকতার হাসি।
নীলা খামচে দিলো আমার বুকে। হুহু
করে কেদে বললো, " তুমি এতো পাগল কেনো?"