হগার্ট হেলেন রোডের ফুটপাথ ধরে হাটছে সাদ। জানুয়ারীর
মাঝামাঝি সময় লন্ডন শহরের অবস্থা অনেকটা ড্রাকুলার
বরফে ঢাকা দুর্গের মত হয়ে যায়। আজও তার বেতিক্রম নয় বাহিরে প্রচন্ড
বরফ পরছে, রাস্তায় চলতে ভাল বেগ পেতে হচ্ছে ওকে,
হাতে একটা চকলেটের প্যাকেট রয়েছে,
মায়ার জন্য। আজ একটা বিশেষ দিন সাদের জীবনে,মায়ার জন্মদিন।
মায়া হচ্ছে সাদ এর বেস্ট ফ্রেন্ড। অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। ভেম্পায়াররা মানুষের রুপে যেমন ঠিক তেমন। পরীর মত সুন্দর বলা যাবে না কারণ পরীরা অনেক
ভাল হয় আর এই মেয়ে হচ্ছে বদের হাড্ডি। সারাদিন ওনার একটাই
কাজ সাদকে জ্বালানো। মেয়েটা এত পেরা দিতে পারে মনে হয়
অলেম্পিকে এই কেটাগরিতে কোন গেম
থাকলে নিশ্চিত ও গোল্ড মেডেল জিতত।
একই ইউনিভার্সিটিতে পরে ওরা দুজন,থাকে একসাথে হার্লো এর
ছোট্ট একটা দোতালা বাড়িতে। যে পেরা দেয় সে উপরতলার
বাসিন্দা আর যে খায় সে নিচতলার। এই মেয়েটাকে নিয়ে ভিষন
বিপদে আছে সাদ। কলেজের ক্লাস ১০ টায় এই মেয়েকে ঘুম
থেকে উঠাতে বেজে যায় সাড়ে ১০ টা।
মেয়ে মানুষ অথচ প্রতিদিন সাদকে রান্না করে খাওয়াতে হয়। তাও
যদি হত, প্রতিদিন একই জাতীয় সংগীত শুনতে হয়, কি রান্না করেছ একটুও
মজা হয় নি, আমি রান্না করলে অনেক
টেস্টি হত ব্লা ব্লা ব্লা। আর তখন
যদি মহারানীকে রান্নার কথা বলা হয় তাহলে বলে, ওকে ডান,
আগামীকাল। কিন্তু এটা চিরন্তন সত্য
বাক্য যে আগামীকাল সাদকে ই রান্না করতে হবে।
তবে সত্যি কথা বলতে কি, সাদের সবচেয়ে বেশি মায়ার এই জ্বালাতন
গুলুই ভাল লাগে। পেরা খেতে খেতে কখন যে মেয়েটার
প্রেমে পরে গেছে সে নিজেও জানেনা।
***ফেসবুকে ঢুকে বার্থডে উইশ গুলো চেক করছে মায়া। নাহ সাদের কোন মেসেজ
নেই। তার বার্থডে শুরু হয়ে অলরেডি ৩০ মিনিট
চলে গেছে কিন্তু সাদ এখনো ওকে উইশ করলো না। আজ আসুক
বাসায় ওকে বুঝাবো কত ধানে কত ফ্রাইড রাইস।
আচ্ছা সাদ কি ভুলে গেছে আজ ওর বার্থডে,
নাকি ওর মনে নেই। এসব কথা ভাবতে ভাবতে অভিমানী কালো মেঘ
মায়ার চোখে এসে ভরে গেল। দু এক ফোটা বৃষ্টি ও বর্ষন হল।
মায়া সাদকে অনেক আগে থেকেই
ভালবাসে মায়া জানে সাদ ও মায়াকে প্রচন্ড ভালবাসে কিন্তু
মুখে কখনো ভালোবাসি বলে না। আসলে বলতে যে চায়না এমন না, অনেক
বার বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কখনোই বলে উপসংহার
টা টানতে পারেনি। আস্ত ভিতুর পোনা একটা (মায়ার ডিম পছন্দ না তাই
সে ভিতুর ডিমের পরিবর্তে সাদকে ভীতুর পোনা ডাকে)।
কখনো আর বলতে পারবে বলে মনে হয়না।
আজ আসুক ভীতুর পোনাটা,ইচ্ছেমত বকে বলে দেব ভালবাসি এই গাধাটাকে।
***** চকলেটের প্যাকেট
টা আকরে ধরে হাটছে সাদ। নাহ আজ যে করেই হোক কথাটা বলতেই
হবে কিন্তু কিভাবে? এ নিয়ে কমতো আর চেষ্টা করেনি কিন্তু বরাবরই তার মুখ থেকে নিক্ষেপ হওয়া বাক্য গুলো আই লাভ বার্গার, আই
লাভ ইয়োগা অথবা আই লাভ নান্নার বিরিয়ানি টাইপের
কিছু একটা হয়ে গেছে তাই মুখে না বলাই শ্রেয়। এর চেয়ে বরং এই
চকলেটের প্যাকেটের উপর কিছু একটা লিখে দেয়া যাক।
ভাবনা অনুসারে ভীতুর পোনা লিখা শুরু করল I think I am in love with
you, is it? উহ শান্তি।
বাসায় পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ১ টা বেজে গেল ওর। বাড়ির উঠান
থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মায়ার ঘরের
বাতিটা এখনো জ্বলছে, অর্থাৎ মায়া এখনো ঘুমায় নি। উহা শিট
এখনো তো ওকে উইশ ই করা হয় নি। এক দৌড়ে দোতালায় গেল সাদ।
কলিং বেল চাপার আগেই দরজা খুলে গেল। সাদ খুব স্বাভাবিক
ভাবে মায়াকে জিজ্ঞেস করল ...... - বেল চাপার আগেই দরজা খুলে দিলে।
- এত রাতে এই মহান গরু ছারা আর কে আসবে।
- তারপরেও শিওর না হয়ে দরজা খোলা উচিত নয়।
- হইসে, আমার এত কেয়ার করতে হবে না।
সাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল মায়া।
গলার কাঁপা স্বর আর রক্তবর্ণ চোখ স্পষ্ট জানান দিচ্ছে একটু আগে মায়া কেঁদেছে।
- এত রাতে জেগে আছ কেন?
- তর কি? ( রেগে গেলে সাদকে তুই তুই করে বলে মায়া)
- আমার কিছু না।
- তাইলে যা গিয়া ঘুমা।
- আচ্ছা। এটা একটু নেও।
- কি এটা?
- চকলেটের প্যাকেট। আমি যাই।
- ঐ দাড়া। উপরে এইগুলা কি লিখসস?
- লেখা ই তো আছে।
- হাতের লেখা এত খারাপ কেন, কিছু বুঝা যাচ্ছে না।
- বুঝতে চেষ্টা কর তাহলেই
বুঝতে পারবে।
- হুম। এইটা তো সরাসরি এ বলতে পারতে। এত পেচিয়ে বলার কি দরকার ছিল।
- পারিনা তো।
- হুম। গাধারা কিছু ই পারে না। বাই
দা ওয়ে, আমাকে বার্থডে উইশ কে করবে। উইশ
না কৈরা আমারে আইসস জিগাইতে তোরে লাভ করি কিনা!
- উপস সরি। হেপি বার্থডে।
- থেঙ্ক ইউ। আমার বার্থডে গিফট কৈ?
- যেটা দিলাম ওটাই
তো বার্থডে গিফট। -নো মিস্টার। এটা তো প্রোপোস করেছেন
সে জন্যে দিয়েছেন। যান গিয়ে বার্থডে গিফট নিয়ে আসেন।
- স্টল সব বন্ধ হয়ে গেছে। কি আনবো এত
রাতে?
- কি আবার চকলেটস।
আমি জানিনা কিছু যাও গিয়ে নিয়ে আস।
মুখ গোমড়া করে ঘর থেকে বের হল সাদ। ধুর শালা, কেন যে এই ভেম্পায়ার
টাকে ভালবাসি বলতে গেসিলাম। আগে ত শুধু জ্বালাইতো এখন তো রিতিমত অত্যাচার করবে। ফাইসা গেলাম বস পুরা ফাইসা গেলাম....