মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৫৭- নীরবে নিভৃতে যুগ যুগ ধরে . .

লেখা : Cloudy sky ( এফ এ তারেক )

আল্লাহর দোহাই লাগে আমারে আর মাইরেন
না ! আপনার
দুইটা পায়ে পড়ি আমারে একটু দয়া করেন !
ও আল্লাহ রে . .
.
চুপ কর হারমজাদী ! আর কত ?
তোরে বিয়া কইরাই আমি ভুল করছি । তোর বাপ
যে এত বড় চিটার কে জানত !
.
খবরদার ! আমার বাপেরে নিয়া কিছু কইবেন
না ! ভাল হইবোনা কইলাম !
.
হায় হায় ! . . . . বাচ্চার দেখি এখনো তেজ
কমে নাই ! আজইকা তোরে আমি . .
.
ও বাবাগো . . ও মাগো . .
.
মার ! . . বাচ্চারে আরো মার । . . বাচ্চার
চৌদ্দগুষ্টির কপালে ঝাড়ু মারি । আমার
সহজ সরল পোলাটারে এমনি কইরা ঠকাইল !
আমার এত সুন্দর পোলারে এই
কালিটা গছাই দিল ! কতা আছিল চল্লিশ
হাজার দিবো !
পুরা টেকা না আইনতি পাইল্লে আইজ
থেইকা তোর ভাত বন্ধ . . বাচ্চা ! তোর বাপ
আস্ত একটা শয়তান !
কি লম্বা লম্বা দাড়ি রাখছেরে . .
কি আমার মাওলানারে . . ভন্ড
মাওলানারে আমি . .
.
এসব কি কন আম্মা ! আমার ছোট ভাইটা আজ
একমাস ধরে বিছানায় ! ও যদি হঠাত্
অসুস্থ না হইত বাবা আপনাদের সব
টাকা দিয়ে দিত সময় মত ।
.
কি ! তুই আমারে টেকার গরম দেখাস ! হুনছস
রে রইসউদ্দী . . তোর বউ আমারে . .
.
. . বাচ্চা ! . . বাচ্চা ! তোর এত বড় সাহস !
আমার মায়ের মুখের উপর কথা কস !
মগুরটা কই গেল রে . .
আজইকা তোরে আমি . . . .
.
আয়েশার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভাল
না । ডাক্তার দেখানো দরকার । শরীরের
বিভিন্ন জায়গায় কালো রক্ত ঝমাট
বেঁধে আছে । কিন্তু ডাক্তার তো দুরের
কথা , শাশুড়ি ওকে রাতে খেতেই দেয়নি ! !
.
বিয়ে হয়েছে মাত্র আট মাস । এমন কোন দিন
নাই , রইসউদ্দী আয়েশার গায়ে হাত
তুলেনি । আয়েশার অপরাধ একটাই , তার
বাবা প্রতিশ্রুত যৌতুক দিতে পারেনি ।
.
গভীর রাত । সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন । বিয়ের
পর থেকে একটা রাতও ঠিক মত
ঘুমাতে পারেনি আয়েশা । আজ খুব
করে ইচ্ছে করছে লম্বা একটা ঘুম দিতে ।
খাটের তলায় বড় একটা দড়ি আছে । আর
জানালার পাশের ঐ যে আম গাছটা . .
আম গাছটা যেন
হাতছানি দিয়ে ডাকছে আয়েশাকে ।
আয়েশা আজ কিছুতেই
নিজেকে ফেরাতে পারছে না ।
চুপি চুপি খাটের নিচ থেকে রশিটা বের করে নেয়
। নিজের মধ্যে এক ধরনের মুক্তির স্বাদ
পেতে থাকে আয়েশা । এইতো আর একটু ,
তারপরই চির শান্তির ঘুম . . তারপরই
স্বাধীনতা . . তারপরই মুক্তি . .
.
গাছের সাথে দড়ি ঝুলানো হয়ে গেছে । এখন আর
কোন ভয় নেই ।
আয়েশা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের
ওপারের রাস্তায় । শেষবারের মত মা-
বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে । ছোট
ভাইটা একমাস ধরে জন্ডিসে ভুগছে ।
ভাইটার মলিন চেহারা বারবার চোখের
সামনে ভেসে উঠছে ।
.
আয়েশা ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছে । দুরের ঐ
চাঁদটাও বুঝি কাঁদছে আয়েশার মত ।
তাইতো বারবার মেঘের আড়ালে মুখ
লুকাচ্ছে । যাবার বেলায় চাঁদটাকে দু-
চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে আয়েশা ।
ঐ চাঁদের সাথে যে তার গভীর সখ্যতা ।
ছোট্ট জানালাটা দিয়ে প্রতি রাতে ঐ
চাঁদটার সাথে কত কথা বলত । সুখের
কথা . . দুখের কথা . . পাথর চাপা কষ্টের
কথা . . বোবা কান্নার বোবা কথা . .
.
আয়েশার হাত দুটো কাঁপছে । মোড়ায়
দাঁড়িয়ে যেইনা মুক্তির মালাটা গলায়
পরবে , অমনি একটা মৃদু কন্ঠস্বর
ভেসে এল . .
.
মা . . ! ও মা . . !
তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে এখন ? ?
.
আয়েশা নিজের অজান্তেই চিত্কার
দিয়ে মোড়া থেকে সরে যায় ।
কি করছি ! এ আমি কি করছি ! হায় খোদা !
আমি নিজেকে মারতে গিয়ে নিজের সন্তানকেই
মেরে ফেলছি !
.
না , আজও পারলো না । এ নিয়ে গত
একমাসে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার
চেষ্টা করেছে আয়েশা । প্রতিবারই শেষ
মুহুর্তে এসে তার অনাগত সন্তানের
কথা মনে পড়ে । নিজের মায়া হয়ত ত্যাগ
করা যায় । কিন্তু সাতটি মাস ধরে নিজের
ভেতর যে প্রানটাকে সে আগলে রেখেছে , তার
মায়া কি করে ত্যাগ করবে আয়েশা ।
.
রাত প্রায় শেষের দিকে ।
চারদিকে এখনো কি অদ্ভুত
মায়াবী সাদা জোছনা । পুকুর পাড়ের
জোনাকিগুলোর যেন ক্লান্তি নেই এতটুকু
। খালি জ্বলছে আর নিভছে ।
মাঝে মাঝে আয়েশার
জোনাকি হতে ইচ্ছে করে খুব . . . .
দিনের বেলায় বাবলা গাছের পাতার
নিচে লুকিয়ে থাকবে । আর রাতে দখিনের নরম
বাতাসে ডানা মেলে জোছনায়
লুটোপুটি খাবে । কেউ
তাকে খুঁজে পাবেনা . . কেউ
তাকে মারতে পারবে না . . কেউ তাকে "কালি"
বলতে পারবে না . . তার মা-
বাবাকে গালি দিতে পারবে না . . . . ।
.
আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম . . . .
পূবের আকাশটা লাল হয়ে উঠেছে । দুর
থেকে ভেসে আসছে ফজরের আযান । একটু পর ই
ভোর হবে । সাদা বকের দল
ইতিমধ্যে বাসা ছাড়তে শুরু করেছে ।
গন্তব্য তাদের দুরের জলা . .।
লাল আকাশে সাদা বকগুলোকে দেখে খুব
কান্না পাচ্ছে আয়েশার । এই
মুহুর্তে আয়েশারও সাদা বক
হতে ইচ্ছে করছে । ভোরের শীতল
বাতাসে ডানা মেলতে ইচ্ছা করছে । বুক
ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে . .
আয়েশা জানে , কিছুক্ষন পরই ভোর হবে ।
মুখোমুখি হতে হবে আরেকটি নতুন সূর্যের ,
নতুন দিনের । আর নতুন দিন মানেই কিছু
কুত্সিত মানুষের সেই পুরনো চেহারা ।
আগের চেয়ে আরও বেশী কুত্সিত ,
আরো বেশী ভয়ংকর । তাই
আরেকটি অপ্রত্যাশিত ভোরের
সামনে দাঁড়িয়ে আয়েশা . . . .
.
আসলেই কি কখনো ভোর আসবে আয়েশার জীবনে ?
.
সূর্য উঠলেই কি ভোর হয় ? ?