মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৫৫- একটি অহেতুক প্রেমের গল্প

লিখাঃ রক্তাভ নীল

ছেলেটা রোজ রাস্তার ধারের
চা স্টলের ছোট্ট বেঞ্চিটায় বসে থাকে । তবে তাকে কখনো চা কিংবা সিগারেট
টাইপের কিছু খেতে দেখেনি মেয়েটা ।
ছেলেটা মাঝে মধ্যে মেয়েটার পিছু পিছু অনেকটা দূর হেটেও যায় । আবার
ফিরে আসে । এসে সেই বেঞ্চিটাতেই বসে থাকে ।
মেয়েটা রোজ বাসা থেকে বেরোবার সময় একবার ,
আবার বাসায় ফেরার সময় একবার । ছেলেটাকে কখনো মেয়েটার পথ
মাড়াতেও দেখেনি মেয়েটা । কিংবা দেখেনি মুখ তুলে তাকাতেও ।
তাহলে মেয়েটা বুঝলো কি করে ছেলেটা ওর
পিছুই নিচ্ছে , কিংবা ওর জন্যই ওখানে বসে থাকে !
মেয়েটার বোঝার কথা নয় । মেয়েটা তাও
বুঝতে পারে ছেলেটা তার পিছুই নেয় । মেয়েটা রোজ ভাবে আজ
ছেলেটাকে খুব করে ধমকে দেবে । আর
বলবে যেনো তার পিছু আর
কখনো না নেয় । মেয়েটা কেবল
ভাবে’ই । কখনো সাহস করে পিছু
তাকানোও হয়না । আর বলা তো দূরের কথা !
হুট করেই কোন একদিন ছেলেটা মেয়েটার
মুখোমুখি পড়ে যায় । ছেলেটা চট
করে মাথা নামিয়ে নেয় । মেয়েটাও
পাশ কাটিয়ে ফিরে যায় ।
পরদিন মেয়েটা ছেলেটাকে আবার
দেখে বেঞ্চিটায় বসে থাকতে ।
মেয়েটা পা ফেলে সেদিকে যায় ।
তারপর ছেলেটার দিকে চোখ রগড়ে তাকায় ।
“এই যে ...”
ছেলেটা হকচকিয়ে উঠে মেয়েটাকে চোখের
সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ।
“জ্বি আমি ?”
“জ্বি না , আপনার নিচের কাঠের তক্তাটাকে ডাকছি”
ছেলেটা মাথা নিচু করে বসে থাকে ।
মেয়েটা আবার বলে ,
“আপনি রোজ এখানে বসে থাকেন কেনো ? মেয়ে দেখলেই লাইন মারতে হয় ?”
“আমি এমনিই এখানে বসে থাকি !”
“এমনিই বসে থাকেন ভালো কথা , পিছু নেন কেনো ?”
ছেলেটা এবারে বেশ ভয় পায় ।
ভাবে এই বুঝি চড়
না খেয়ে বসে আবার !
“আমি পিছু নেইনি তো !”
“আপনি পিছু নেননি ?” মেয়েটা চোখ সরু
করে বলে ।
মেয়েটার সরু চোখ দেখে আর
ধমকী খেয়ে বলেই ফেলে –“হ্যা , না মানে ..ইয়ে”
“কাল থেকে যেনো আর না দেখি আশেপাশে ঘুরঘুর করতে ।
দেখলেই এক থাপ্পরে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিবো”
“ইয়ে মানে এক থাপ্পড়ে তো বত্রিশটা ভেলা যাবেনা ,
ষোলটা ফেলা যাবে বড়জোর । তাও
আপনাকে অসুরের শক্তি দিয়ে মারতে হবে”-ছেলেটা মুখ
ফস্কে বলে বসে । ছেলাটার
কথা শুনে মেয়েটা আরো রেগে যায় ।
“আবার কথা বলে অভদ্রের মতো !”
ছেলেটা এবারে চুপ মেরে যায় ।
“আর কক্ষনো পিছু নিবেন না”
“ঠিক আছে”
আর কক্ষনো এখানে এসে বসবেন না”
“জ্বী”
“মনে থাকবে ?”
“জ্বী”
মেয়েটা গটগট করে হেটে চলে যায় ।
ছেলেটা কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে সেও চলে যায় ।
মেয়েটা বাসায় যেয়ে ভাবে ,
‘নাহ্...ব্যাপারটা বাড়াবাড়িই
হয়ে গেলো । ছেলেটাকে ওভাবে না বললেও হতো ।
তাছাড়া ছেলেটা কেবল পিছুই নিতো । তেমন কিছু করেওনি কখনো’
মেয়েটা আরো ভাবে কাল ছেলেটাকে স্যরি বলে দিলেই হলো ।
কিন্তু পরদিন আর ছেলেটা আসেনা । বেঞ্চিটা ফাঁকা পড়ে থাকে ।
রাস্তার কোথাও ও আর ছেলেটাকে দেখা যায়না । একদিন
দুদিন তিনদিন । এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যায় ।
মেয়েটা ভেতরে ভেতরে অনুতপ্ত হয় । মেয়েটা ভাবে ‘এ কি হলো !’
তারপর হুট করেই কোন একদিন ছেলেটার
সাথে মেয়েটার দেখা হয়ে যায় ।
ছেলেটা মেয়েটাকে দেখেই দ্রুত পাশ
কাটিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয় ।
মেয়েটা চট করে যেয়ে সামনে দাড়ায়

“এই দাড়ান...দাড়ান বলছি...”
ছেলেটা ওখানেই দাড়িয়ে যায় ।
“আপনি এতোদিন আসেন নি কেনো ?” –
মেয়েটা জানতে চায় ।
“আপনি’ই তো বললেন আর আপনার
সামনে না পড়তে !”
“আমি বললেই আপনি শুনবেন কেনো ?
কে হই আমি আপনার ?”
মেয়েটার এহেন
প্রশ্নে ছেলেটা ভিরমি খায় ।
“জ্বী মানে ...কেউনা”
“কেউ না হলে পিছু নিতেন কেনো ?”
“ইয়ে মানে...”
“এতো মানে মানে করেন কেনো ? পছন্দ
করেন আমাকে ?” – ফস
করে বলে বসে মেয়েটা ।
ছেলেটা মাথা নিচু
করে দাড়িয়ে থাকে ।
পা দিয়ে মাটিতে আঁচড় কাটে ।
“হুমম” - ছোট্ট করে বলে ছেলেটা ।
“কি করেন ? চাকরি-বাকরী কিছু করেন ?
না এখনো পড়াশুনাই করছেন ?”
“জ্বী চাকরি খুঁজছি আপাতত”
“কোথায় খুঁজছেন ! আপনি তো সারাক্ষন
এখানেই বসে থাকেন ! খুঁজেন কখন ?”
“জ্বী মানে...”
“অতো জ্বী জ্বী করেন কেনো ?
আমি অতো জ্বী জ্বী করা পছন্দ করিনা”
“জ্বী...মানে হ্যা”
মেয়েটা ফিক করে হেসে দেয় ।
“এভাবে এখানে বসে না থেকে চাকরী-
বাকরী কিছু একটা করুন”
“জ্বী আচ্ছা”
মেয়েটা হাটা দেয় । তারপর আবার
ফিরে আসে ।
“শুনুন...”
“কি ?”
“কাল থেকে আর পিছু নেবেন না”
“তাহলে !”
“কাল থেকে পাশে হাটবেন”
মেয়েটা এবারে আর পিছু ফিরে তাকায় না । জোর কদমে হেটে চলে যায় । মেয়েটার পিছু তাকানো উচিৎ ছিলো । তাকালে দেখতো ছেলেটার বোকা বোকা চেহারাটা লাল হয়ে আছে।
ওটা দেখতে পেলে মেয়েটা ছেলেটাকে আরো ছোট্ট একটা কথা বেশী বলে যেতো । চার
অক্ষরের একটা শব্দ ।