এই নিয়ে তিন দিন। একই অনুভবের পুনরাবৃত্তি।
ঠিক তিনদিন আগে বৈদেহীর দাদা নিলামে ওঠা এই ড্রেসিং টেবিল টি সস্তায় কিনে এনেছেন। বেশ অনেকদিন ধরেই শখ ছিল। যদিও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে শখ মেটাতে গেলে অনেক দাম দিতে হয়। এক্ষেত্রে ভাগ্য ভালই বলতে হবে।
অদ্ভুতভাবে সুন্দর এক অসাধারন কারুকার্য করা আয়নার কাঠের ফ্রেমে। এক সুন্দরী রমণী তার দুই হাত দিয়ে যেন ঘিরে রেখেছে আয়না টিকে। সবচেয়ে অদ্ভুত ওই রমণীর চোখ দুটি। যেন ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে আয়নার সামনে বসা মানুষ টির উপর।
পরদিন সকালে উনিভারসিটি যাওয়ার আগে চুল টা আঁচড়াতে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসল বৈদেহী । কিন্তু এ কি! কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে নিজেকে। যেন চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা। খুবই সাধারন দেখতে বৈদেহীর কোনোদিন ই নিজেকে সুন্দরী ভাবেনি। রূপ নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিলনা তার কখনো। কিন্তু আজ এমন লাগছে কেন?নিজের প্রতিচ্ছবি যেন নিজের কাছেই অন্য রূপে ধরা দিচ্ছে। মা এর ডাকে তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে থেকে উঠে পড়ল সে।
পরদিন সন্ধ্যায় পাড়ার একটি বাড়িতে বিয়ের নিমন্ত্রন ছিল বাড়ির সকলের। সবাই চলে গেছে আগেই। সামনে পরীক্ষা বলে বৈদেহী পরে যাবে ঠিক করেছিল। পড়া শেষ করে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে সাজতে বসল সে। নিজেকে দেখতে লাগল ভাল করে। দেখতে দেখতে নিজেই নিজের প্রেমে পরতে ইচ্ছা হল তার। এত সৌন্দর্য তার! আগে কেউ কখন দেখেনি কেন?
মোহাবিষ্টের মত নিজের হাত টি চোখে, মুখে, ঠোঁটে বোলাতে লাগলো বৈদেহী । অনুভব করলো এ তার নিজের হাত নয়।এ যেন কোনো এক পুরুষের হাত যে তার ভালবাসার নারী কে আদর করছে। বাইরের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজে চমকে উঠল সে। দেরি দেখে দাদা বোধহয় ডাকতে এসেছেন।
বৈদেহী ভয় পাচ্ছিলো। গতকাল সন্ধ্যের অভিজ্ঞতা নাড়িয়ে দিয়েছে তাকে। যা সে অনুভব করেছিল তা যে স্বাভাবিক নয় সেটা সে বুঝতে পেরেছে।অদ্ভুত এক ভয় চেপে বসেছে তার মনে। ঠিক করেই নিয়েছে ও আয়নায় আর মুখ দেখবেনা সে।
মাঝরাত-
পড়তে বসেও বৈদেহীর মন পড়েছিল আয়নার দিকে। আয়না যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল বারবার। আর পারলনা সে। ওই ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা যেন সম্ভব ছিলোনা। গিয়ে বসল আয়নার সামনে। মনে হল কাঠের সেই নারী যেন মুচকি হাসল তাকে দেখে। ভাল করে নিজের দিকে তাকাল বৈদেহী । আবার সেই আবেশ ধরানো অনুভূতি । নিজের হাতকে অন্য কারোর হাত মনে করে সেই হাতের আদর খাওয়া । নেশাচ্ছন্ন বৈদেহী লক্ষ্যই করেনি আয়নায় তারই প্রতিচ্ছবির পেছনে এসে দাড়িয়েছে একটি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন আকার । ক্রমশ সেই আকার এগিয়ে আসে আর দুই ধোঁয়া হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেয় বৈদেহীর গলার দিকে।
শেষাংশ -
মাঝরাতে অদ্ভুত আঁ আঁ শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে বৈদেহী দাদা ছুটে আসেন। বোনের ঘরের দরজা ভেঙ্গে লক্ষ্য করেন এক অমানবিক দৃশ্য। তার বোন এক অজানা আক্রোশে নিজেই নিজের গলা টিপে ধরে রেখেছে দুই হাত দিয়ে। সেই হাতের বাঁধন প্রবল চেষ্টায় তার দাদা যখন মুক্ত করেন তখন বৈদেহী শুধুই একটি প্রাণহীন দেহ।