লিখা -- কাইছ রায়হান
কপালের টিপটা ঠিক
মাঝখানে পড়ছে নাহ। কপালটাও
সামান্য কুচকে গেছে। বিন্দু বিন্দু
ঘামের ফোটা জমেছে। লাল
হয়ে গেছে চেহারাটা। হুমম রাগ
উঠেছে। মেয়েটা রাগলে লাল
হয়ে যায়। লাল গালে তিলটা বেশ
সুন্দর দেখায় তখন।
টিপটা কোনোভাবে কপালে বসালো।
একেবারে মাঝামাঝি বসে নি।
মেয়েটার রাগ এখনো আছে। তাই
চেহারাটা এখনো লাল। খুব ব্যস্ত সে।
হাতে সময় নেই একদম।
মেয়েটা এখনো ঠিক
মতো শাড়ী পড়তে পারে নাহ।
শাড়ী পড়ার সময় বাচ্চাদের
মতো লাফালাফি করে। ছোট
বোনটা শাড়ী পড়িয়ে দেয়।
'এই,এই কোমড় এত টাইট করছিস কেন
কাতুকুতু লাগে' এই
বলে মেয়েটা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেয়।
আজকেও তাই হলো।
শাড়ী পড়তে গিয়েই সব সময় শেষ।
ছেলেটার সাথে দেখা করবে কখন।
ছেলেটা সেই কখন
থেকে অপেক্ষা করছে।
দেরি করলে আবার রাগ করে দিবে।
বাসন্তী রঙের শাড়িতে বেশ
মানিয়েছে মেয়েটাকে।
হালকা কমলা রঙের শাড়িটা। নুপুরের
ঝনঝন আওয়াজ শোনা যায়। হুমম নূপুর
পড়েছে সে। নূপুর
পড়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে চুলের
খোপা খুলে যায় আবার।
দৌড়ে গিয়ে আয়নার সামনে বসে।
ঘেমে গেছে। চিবুক বেয়ে গলার
ভাজে ঘাম এসেছে। চিকচিক করছে।
দৃশ্যটা খুবই মোহনীয়। মন ভুলানো।
আবার চুলগুলো সাজিয়ে নেয়। কষ্ট হয়।
কোমড় অবধি চুল। কম কিসের।
ছেলেটা তো কোমড় অবধি চুল দেখেই
পাগল। কতবার যে চুলের
কথা বলে ছেলেটা।
মেয়েটা শুনতে শুনতে পাগল হয়ে যায়।
ছেলের একটাই কথা, '
আমি যদি তোমার রুপের আগুনে খুন হই
তাহলে তোমার চুল অন্যতম কারন। '
এমনই পাগলামি করে ছেলেটা।
মেয়েটা খিল খিল
করে হেসে লজ্জায় লাল হয়ে যেত।
ছেলেটা ঠিক যেই জায়গাটাতে তিল
সেখানটায় চুমু খেতো।
মেয়েটা গতকাল রাতেই মেহদি দেয়।
দুহাত ভরে বুঝি ফুল ফুটে মেয়েটার।
ভোর সকালে ফুল
ফুটলে যেমনটি দেখায় ঠিক তেমনটাই
দেখায় মেহদির রঙ মেয়েটার হাতে।
একদিন ছেলেটা বলে মেহদি দিতে।
বলে যে তোমায় প্রথম দেখেছিলাম
মেহদি রাঙা হাতে। মেয়েটা তাই
খুব যত্ন করে মেহদি দেয়।
একদম নতুন বউয়ের মতোন লাগছে। নতুন
বউরা ভীষণ লাজুক হয়। মেয়েটাও
লজ্জা পাচ্ছে ভীষণ।
দৌড়ে গিয়ে দড়জায় খিল
দিয়ে আসে।
লজ্জা কাউকে দেখাতে চায় নাহ। শুধু
ছেলেটাই দেখবে এ লজ্জা।
খাটে বসে ড্রয়ার
থেকে চিঠিটা বের করে।
ছেলেটার চিঠি। খুব যত্ন করে ভাজ
খোলে চিঠিটার। পড়তে শুরু করে।
" শোনো তুমি কমলা রঙের
একটা বাসন্তী শাড়ি পরবা আর
আমি পাঞ্জাবী। দুজনে মিলে খুব
ঘুরবো।ফাগুনের প্রথম দিনেই মরতে চাই
তোমার রুপের মোহে। তোমার চুল!
তোমার হাসি! উফ! পাগল
হয়ে যাবো আমি!"
চিঠিটা পড়ে আর খিল খিল
করে হাসতে থাকে। লজ্জায় খুব লাল
হয়ে যায় মেয়েটা। আবার পড়া শুরু
করে।
"চুলে খুব সুন্দর একটা খোপা করবে। কিছু
চুল সামনে রাখবে"
মেয়েটা তাড়াতাড়ি করে কিছু চুল
চোখের সামনে ফেলে রাখে।
"সেই এলোমেলো চুলের
ফাকা দিয়ে তোমার চোখ দেখবো।
আর শোনো। হাতে মেহদি দিবা।
তোমার মেহদি রাঙা হাত
ধরে ঘুরে বেড়াবো।
পাখি হয়ে যাবো। তোমার পায়ের
নূপুরের উত্তাল ঝনঝন শব্দ শুনবো। এইতোহ
আর মাত্র কটা দিন।
জমানো ভালোবাসা গুলো দিয়ে দিবো তোমাকে।
খুব যত্নে রেখেছি। সারাজীবন
যত্নে রাখবো। এখন তাহলে আসি।
আমার জন্য অপেক্ষা করো কিন্তু।"
চিঠি পড়ে মেয়েটা কিছুক্ষণ হাসে।
কিন্তু এরপর আর হাসে নাহ।
একলা রুমে চিঠি ভাজের আওয়াজ
শোনা যায়। জানালার এক
কোনা দিয়ে রোদ এসে বিছানার এক
কোনা ভিজিয়ে দিয়েছে।
বসে বসে অপেক্ষা করে ছেলেটার
জন্য। কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে পরে।
চোখের নিচের কালো দাগটা এখন
দেখা যায়। এতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল নাহ।
বিছানার যে কোনে রোদ
সেখানে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পরে।
একসময় ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে মেয়েটা।
ছেলেটার আসার কোনো নাম গন্ধ
নেই।
সূর্যের আলো দিয়ে চোখ মেখে যায়
মেয়েটার। বন্ধ চোখ থেকে কেন
জানি পানি গড়িয়ে পরে। নাকের
উপর দিয়ে গড়িয়ে টুপ করে বিছানায়
পরে বন্ধ চোখের পানি। ভিজে যায়।
কিন্তু রোদের আলোয়
সহজে শুকিয়ে যায় নাহ।
ছেলেটা আর আসে নাহ। প্রতি বসন্তেই
মেয়েটা হাতে মেহদি দিয়ে কমলারঙের
শাড়ি পরে বসে থাকে। ছেলেটা কখন
জানি এসে তার
মেহদি রাঙা হাতে হাত রেখে টান
দেয়।
ছেলেটা তাকে অপেক্ষা করতে বলেছে।
মেয়েটা অপেক্ষা করে যায়।
বুঝতে চায়না যে ছেলেটা আর
আসবে নাহ। ছেলেটা যে আর নেই।
পাগলের মতো ছেলেটা আর
বলবে নাহ, " আমি যদি তোমার রুপের
আগুনে খুন হই তাহলে তোমার চুল অন্যতম
কারন। "
মেয়েটা অপেক্ষা করে যায়।
ছেলেটাকে পাবার অপেক্ষা......