করে মাত্র রাস্তায় বের হয়ে এলাম। রাস্তায় বের হয়ে পকেট
থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি বন্যার
১৭টা মিসকল। কল ব্যাক করার মত মোবাইলে টাকা নেই তাই
মোবাইলটা পকেটে রাখতে যাব ঠিক সেই সময় আবার বন্যার ফোন।
--হ্যালো(আমি)
--কই তুই(বন্যা)
--এইত মাত্র টিউশনিটা শেষ করে বের হলাম।
--দুপুরে খেয়েছিস কিছু।
--হুম খেয়েছিস।
--মিথ্যা বলতেছিস কেন।
--আচ্ছা বুঝস যেহেতু তাহলে আবার জিজ্ঞাস করিস কেন।
--বাজে কয়টা সে দিকে খেয়াল আছে।
--হুম আছে।একদিন না খেলে কিছু হবে না।
--সত্যি করে বলত তোর কাছে খাবার কিনার মত টাকা আছে ত।
--না নেই(নরম গলায়)
--আচ্ছা তুই বাসায় আয়। আমি খাবারের ব্যবস্থা করতেছি।
এই বলে বন্যা লাইনটা কেটে দিল। বন্যা।
আমার খালাত বোন।আমাদের সম্পর্কটা তুই করে কারন আমাদের বয়সের
মাঝে পার্থক্য তেমন বেশি না।বন্যা অর্নাস প্রথম বছরের ছাত্রী। আমার বাসা আর তাদের
বাসার দূরত্ব মাত্র দুই মিনিটের রাস্তা।
আমি জানি সে এখন খাবার নিয়ে আমার বাড়ি যাবে।কারন আমার
না খাওয়াটা সে সহ্য করতে পারে না।
আমার কথা আর কি বলব।সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।দেখার মত
বন্যা ছাড়া আর কেউ নেই।পিতা- মাতা দুজনেই গত হয়ে গেছে।আজ
থেকে দুই বছর আগের কথা আমি যখন অর্নাস
প্রথম বছরের ছাত্র ছিলাম(এখন তৃতীয়
বছরের ছাত্র) তখন এক সড়ক দুর্ঘটনা তার দুজন
একসাথে মারা যায়।পরিবারে এখন একমাত্র সদস্য আমি।কারন
আমি আমার পিতা মাতা একমাত্র সন্তান
ছিলাম। সেই থেকে কয়েকটা টিউশনি করে শত
কষ্টে নিজের পড়ালেখাটা চালিয়ে রেখেছি। কারন কষ্ট করে অর্নাসটা কমপ্লিট করতে পারলে হয়ত জীবনে উন্নতি করা যাবে। কিন্তু টিউশনি করে পড়ালেখা এবং পেট
চালাতে খুব দায় হয়ে যায়।মাস শেষ দেখা যায় হাতে অল্প কিছু
টাকা রয়েছে। এভাবে চলতে গিয়ে কতদিন
যে না খেয়ে রয়েছি তার হিসাব নেই।
.
বাসায় গিয়ে দেখি সত্যি বন্যা আমার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে।
--কিরে আসতে এত সময় লাগে।সেই কোন সময় থেকে দাড়িয়ে আছি।তোর আসার
কোন খবর নেই।
--আমি কি গাড়ি নাকি যে দৌড়ে চলে আসব।
--হইছে হইছে আর প্যাঁচাল পারতে হবে না।
এখানে কিছু খাবার আছে। খেয়ে নে।আমার আবার
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
--তোকে খাবার আনতে কে বলেছে (মনে মনে খুশি হয়েছি)
--আচ্ছা তুই জানিস না তুই না খেয়ে থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে।
আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে খাবার নিয়ে বসে পড়লাম কারন
পেটটা ক্ষুদায় জ্বালা-পোড়া করছিল।খাবার শেষ
করার পর সে আমার হাতে ১০০০ হাজার টাকার
একটা নোট দিল আর বলল--
--এইনে এই টাকাটা রাখ।
--তুই টাকা পেলি কোথায়।
--একটা টিউশনি করা শুরু করছি।এই মাসের
টাকাটা অগ্রিম নিয়ে নিছি। জানি এখন তর এই টাকাটার খুব দরকার।
এই কথা বলে বন্যা চলে গেল। আমি তার চলে যাবার পথাটা চেয়ে রইলাম।
মেয়েটা আমাকে খুব ভালবাসে সেই ছোট
বেলা থেকে কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত তার ভালবাসার মূল্য দিতে পারিনি।
তিন মাস পরের কথা।আজ বন্যার বিয়ে।বর
আমেরিকা থেকে এসেছে।বিবাহের কিছুদিন
পরে বন্যাকে নিয়ে চলে যাবে। মেয়েটি আমার কাছে বার বার
ছুটে আসে কারন আমি যদি তাকে একবার
বলি ভালবাসি তাহলে জীবনেও সে এই
বিয়ে করবে না।কিন্তু আমি তাকে ভালবাসি বলতে পারি নি কারন
আমার হাত-পা যে বাধা। আমি তাকে এখন
যদি বিয়ে করি। তাহলে তাকে বাড়ি নিয়ে কি খাওয়াব।
কারন আমি এখনও একজন ছাত্র।তার চেয়ে ভাল আমি দুর থেকে ভালবেসে যাই।
বিবাহের কিছু দিন পর সে আমেরিকা চলে যায়।