-কি ব্যাপার কোথায় তুমি?
-এইতো রিকশায়!
-ও আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসো কেমন?
-আর একটু বসো আমি আসছি!
-আচ্ছা আসো!
আজ ইরার সাথে জয়ের দেখা করার
কথা।ইরার ভার্সিটিতে শীতের ছুটি শুরু
হয়েছে।গতো ছয় মাস আগে তাদের শেষ
দেখা হয়।আজ ইরা পার্কে বসে আছে।জয়
প্রতিবারের মতোই দেরি করেছে আজও।
প্রায় চল্লিশ মিনিট যাবৎ
ইরা অপেক্ষা করছে জয়ের জন্য!এবার
রেগে গিয়ে সে জয়কে ফোন দেয়!
-জয় তুমি কোথায় হ্যা?
তুমি কি আসবে না?
-এইতো প্রায় এসে গেছি।আর দশ মিনিট
বসো প্লিজ।
-আরো দশ মিনিট!
-প্লিজ ইরা রাগ কোরোনা!
এইতো আসছি।
-তুমি একটা....
-ইরা ইরা?
টুট টুট শব্দ করে ফোনটা কেটে যায়!রাগ
করেছে ইরা!মেয়েটার রাগ খুব বেশি!
জয়কে রোজ তার রাগ সহ্য করতে হয়!জয়
জানে ইরা রাগ করবে কিন্তু তার
কি করার আছে!
টিউশানি ছেড়েতো আর
সে চলে আসতে পারবেনা!
ইরাকে সে এ কথাটি প্রতিবার
বোঝায়!কন্তু ইরা প্রতিবার
তা ভুলে যায়!
আজো মানাতে হবে ইরাকে!
মনে মনে ভয় পাচ্ছে সে!ইরার রাগ
অত্যন্ত ভয়ানক!রাগ হলে কিছু না ভেবেই
এলোপাথারি মারতে থাকে কিল
ঘুসি!জয় রাস্তায় একবার রিকশা দাড়
করিয়ে ফুল কেনে ইরার জন্য।ফুল খুব
ভালোবাসে মেয়েটা!তাই তার জন্য
জয় আজ তাজা কিছু গোলাপ ফুল
নিয়ে নিলো!
পনের মিনিট পর জয় পৌঁছালো পার্কে!
দূর থেকে দেখে ইরা পার্কের তের নম্বর
সিটটায় বসে আছে!জয় এবার পেছন
থেকে ইরার চোখ ধরে ফেললো!
একি,ইরার চোখ যে ভেজা!
অভিমানে কাঁদছে মেয়েটা!
-এই ইরা কাঁদছো তুমি?
-তোমার কিছু আসে যায় তাতে!
-কি বলছো এসব?আমার অবশ্যই কিছু
আসে যায়!
-না!যদি যেতো তবে রোজ
এতো দেরি করতে পারতেনা!
-দেখো ইরা তোমায় বহুবার
বলেছি,আমি টিউশানি করে পরিবার
চালাই!
এভাবে টিউশানি ছেড়ে আমি আসতে পারবোনা!
একথা বলে জয় চুপচাপ বসে থাকে।কিছু
বলছেনা কেওই!দুজনই একেবারে নিরব।
প্রায় দশ মিনিট কেটে যায় এভাবে!
এবারে জয় ইরা দিকে তাকায়!
ইরা মুর্তা হয়ে বসে আছে!জয়ের খুব
মায়া হয় ইরাকে দেখে!
-
দেখো ইরা তুমিতো জানো আমি তোমায়
কতোটা ভালোবাসি!
আমাকে কি একটিবার বোঝার
চেষ্টা করতা পারোনা?
-একটা কথা বলবো?
-বলো বলো!
-
আসলে আমি বাড়াবাড়ি করেফেলেছি!
আমায় ক্ষমা করেদাও তুমি!
-কি বলছো কি!এসব আর বলবেনা!
-বলবো!যদি ওই ফুলগুলো না দাও!
এবারে জয় তার হাতের ইরার
জন্যে আনা ফূলগুলি ইরাকে দায়ে দেয়!
ইরা জয়ের কাঁধে মাথা রেখে জয়ের
হাত ধরে বসে থাকে!তাদের এ
বন্ধনে যেন কারো নজর দেবারো হিম্মত
নেই!জয় আর ইরার সম্পর্ক প্রায় দেড় বছরের!
তাদের পরিচয় হয় একটি বিয়ের
অনুষ্ঠানে!জয় ইরাকে প্রথম দেখেই
একেবারে ফিদা হয়ে যায়!
ভালোই চলছিলো তাদের সম্পর্কটা!
ইরা ঢাকা ভার্সিটির দ্বিতীয়
বর্ষে পড়তো!আর জয় পড়তো ময়মনসিংহ
ইন্জিনিয়ারিং কলেজের চতুর্থ বর্ষে!
জয় তার বাড়ির বড় ছেলে!তার
বাবা প্যারালাইজড্
হয়ে বর্তমানে ঘরে বসা!জয়ের মা আর
ছোটবোন নিরার দায়িত্ত্ব এখন জয়েরই!
তাই সে টিউশানি করে রোজ!
অমানবিক পরিশ্রম করতে হয় তাকে রোজ!
এভাবেই চলছিলো জয় আর ইরার জীবন!
এক বছর পর
জয় খুব ভালো ফলাফল নিয়ে ভার্সিটির
গন্ডি পেরিয়ে এবার চাকরির
পেছনে ছুটবে!ঢাকা যেতে হবে এবার
তাকে!সে ইরাকে কিছু জানায়না।
ভাবে সে ইরাকে সারপ্রাইজ দেবে!
চাকরির ইন্ঢারভিউ
দিতে ঢাকা পৌছে যায় সে!এক
সাথে কয়েকটি ইন্টারভিউ থাকায়
তাকে ঢাকায় কিছুদিন থাকতে হয়!
সে ভাবে সবগুলো ইন্টারভিউ দেবার পর
রেজাল্ট আসুক!তারপর যদি কোন
একটা চাকরি পেয়ে যায়
তবে ইরাকে গিয়ে বললে ইরা খুব
খুশি হবে!যোগাযোগ কম হওয়ায় ইরার
জানার কথা না যে জয় ঢাকায়!
এক সপ্তাহ পর!
জয়ের সব ইন্টারভিউয়ের ফলাফল
এসে গেছে!
সে একটা ভালো চাকরি পেয়ে গেছে!
সাথে সাথে বাড়িতে ফোন
করে সে এ খবর জানিয়ে দেয়!তার
মা আর ছোট বোন নিরা খুব খুশি হয়!
বাবাও খুশি হয়!এবার সে যাবে ইরার
কাছে!পরদিন
সকালে ঢাকা ভার্সিটির
ক্যাম্পাসে এসে যায় জয়!
খুজতে থাকে ইরাকে!ফোন
দেয়না তাকে চমকে দেবার জন্য!
এদিক ওদিক খুজছে সে ইরাকে!হঠাৎ
খুজে পায় ইরাকে!কিন্তু
সে ইরাকে চমকাতে এসে নিজেই
চমকে গেলো!তার ইরা ক্যাম্পাসের এক
ছেলের হাতে হাত রেখে হাটছে!
নিজের চোখকে যেন তার বিশ্বাস
হচ্ছেনা!মনে মনে ভাবছে "এটা আমার
ইরা না"!ভাবতে ভাবতে ইরাকে ফোন
করে!দূর থেকে দেখে ইরা তার ফোন
বের করে কল কেটে দিচ্ছে!কয়েকবার
ট্রাই করার পর ইরা ফোন ধরে!জয় দূর
থেকে দেখে ইরা ছেলেটির
থেকে একটু
দূরে সরে এসে ফোনে কথা বলতে থাকে!
-কোথায় তুমি ইরা?
-ক্লাসে!বার বার ফোন
কেটে দিচ্ছি তাও বোঝোনা?
-ও আচ্ছা সরি!ডিস্টার্ব করলাম!
ক্যারি অন!
-হুম বাই!
-ওকে টাটা!
জয়ের চোখে তিলে তিলে আঁকা সব
স্বপ্ন যেন এক এক করে তাসের ঘরের
মতো চুরমার হয়ে ভুপতিত হতে লাগলো!
কি না করেছে সে ইরার জন্য!আর আজ!আজ
ইরা অন্যের!এসব
ভাবতে ভাবতে চলে আসে জয়
ময়মনসিংহ!
এক সপ্তাহ পর জয় ঢাকায়
চাকরিতে জয়েন করতে যায়!
মাঝে ইরাকে আর একটিবারো ফোন
দেয়নি!আশ্চর্য ব্যাপার ইরাও
তাকে একবার ফোন করেনি!জয় তবু
তাকে ভোলেনি!রোজ তার
কথা ভাবে সে!এভাবেই তার দিন
কেটে যাচ্ছে!
ছয় মাস পর কোন এক সন্ধায় জয়ের
ফোনে ইরার কল-
-হ্যালো?
-জয় কাল ময়মনসিংহ আসছি!
দেখা করতে পারবে!
-পারবো!
-কাল তাহলে বিকেল পাঁচটায়
পার্কে যাবা!
-ওকে!
জয় সেদিনই জরুরি ভিত্তিতে তার
বসকে বলে ছুটি নিয়ে চলে আসে ময়মনসিংহ!
ইরা তাকে কি বলতে চায়!এ
কথা ভাবতে ভাবতে সেদিন
রাতে তার ঘুম আসছেনা!কোন
রকমে কেটে গেলে সে দিনটি!পরদিন
সময় মতো জয় পার্কে পৌছে যায়!আজ
সে অপেক্ষা করছে ইরার জন্য!
ইরা এলো তবে এক ঘন্টা পর!
-কখন এলে?
-এইতো এক ঘন্টা আগে!
-কিছু বলার আছে!
-বলো!
-আমি আর এ
রিলেশানটা এগোতে চাচ্ছিনা!
-হুম জানি!
-কিভাবে?
জয় ইরাকে সব কথা খুলে বলে!জয়
তাকে ভার্সিটিতে দেখেছে,ফোন
কাটতে দেখেছে,মিথ্যে বলতে দেখেছে এসব
জানায় ইরাকে!
-এবার বুঝলে কিভাবে জানলাম!
-বেশ করেছি!এইযে শোন তোমার
কি আছে?কিছুইতো নেই!আর নিশানের
(ইরার বয়ফ্রেন্ড) সব আছে!টাকা,নাম,আভ
িজাত্য,ঐশ্বর্য!ওকে বড় বড় অনেকেই
চেনে!তোমাকে কেও চেনে?
-ধন্যবাদ আমায় তা মনে করিয়ে দেবার
জন্য!
-আজ থেকে তোমার আর আমার পথ
আলাদা!টাটা!
-টাটা
মনে প্রচন্ড আঘাত নিয়ে জয়
ফিরে আসে!তার মনের ঝড়
থামছেনা কিছুতেই!
ভাবছে সে কি করবে!
ভাবতে ভাবতে ইরাকে ভুলে থাকার
আইডিয়া চলে এলো!ইরা আসার
আগে জয় ব্লগ লিখতো!আবার সে তাই
করবে!চাকুরির পাশাপাশি ব্লগ
লিখতে শুরু করে আবার জয়!তার খুব সুনাম
ছিলো ব্লগ লিখায়!তার
পুরোনো ব্লগার
বন্ধুরা তাকে সাদোরে আমন্ত্রন
জানায়!চলতে থাকে জয়ের জীবন!
ছয় বছর পর!
জয়কে ডাকা হয়েছে তরুণ লেখকদের বই
রিলিজ দেয়ার অনুষ্ঠানে!জয় একটুপর
স্টেজে ওঠে বক্তব্য রাখবে!
এতখন
সে পুরোনো স্মৃতিগুলি মনে করছিলো!
একটি বই হাতে নিতেই যেন তার
চোখের সামনে সব ভেসে উঠলো!একদিন
ইরা বলেছিল জয়কে কয়জন চেনে!আর
আজ!আজ গোটা বাংলাদেশ
তাকে চেনে!কোথায় আজ ইরা আর
নিশান?তাদের কি আজ কেও চেনেনা?
কোথায় আজ তারা?
এসব ভাবতে ভাবতে জয়ের
কারো ডাকে চেতনা ফিরে এলো!
-স্যার আপনার বক্তব্য দেবার সময় হয়েছে!
-যাও আসছি!
-আচ্ছা স্যার!
জয় একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যায়
বক্তব্য দিতে!মনের লুকায়ীত
ব্যাথা নিয়ে সে কিছু কথা বলে!
"আজ আমি হয়তো এতোটা সফল
হতে পারতামনা যদিনা একজন
আমাকে একটা কথা না বলতো!কেও
একজন একদিন আমাকে বলেছিল
আমাকে কতজন মানুষ চেনে!সেদিন উত্তর
দিতে পারিনি!আজ উত্তরটা হয়তো তার
জানা!দার্শনিকদের
মতো কথা আমি বলবোনা!কারণ একটু
ভাবলেই দেখবেন
জীবনে সাধারণভাবে থেকে আপনি কোন
মুল্যই পাবেন না!আপনার
থাকতে হবে টাকা,নাম-ডাক আর
ঐশ্বর্য্য"
ধিক্কার জানাই ইরার মতো সে সব
মানুষদের যাদের জন্য জয়ের
মতো সাধারণ মানুষেরা একদিন নিজের
কন্ঠে উচ্চারিত করে জীবনের মূল
জিনিস হচ্ছে টাকা,নাম-ডাক আর
ঐশ্বর্য্য...