মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৯২- স্বার্থপর

লেখকঃ মাজহারুল ইসলাম।


তন্বী।অনার্স থার্ড ইয়ার এ পড়ছে। বাবা গত হয়েছে আরো চার বছর আগে।
উপার্জনের দায়িত্ব মায়ের কাঁধে। নিজে কয়টা টিউশনি করে নিজের
পড়াশোনার খরচটা জোগাড় করে তন্বী।অন্য দুইটা ছোট ভাই।কিছু
না করলে মায়ের পক্ষে একা সংসার
টা চালানো সম্ভব না।

লক্ষ্মী মেয়ে তন্বী।পরিবারের কথা চিন্তা করে সব ত্যাগ করার
মানসিকতা ওর।এক বোরকা দিয়েই বছর পার করে দেয়।

সৌন্দর্য কতটা পবিত্র
হতে পারে তা তন্বীকে দেখেই বোঝা যায়।মনের মধ্যে শিহরণ কাজ
করে।মনকে নির্মল আনন্দ দেয়।চমকিত করে,এত সাধারণ
একটা মেয়ে কিভাবে এত সুন্দর হয়?

রাদিফের সাথে রিলেশনটা হঠাৎ ই হয়ে গেছে।তন্বী চাইনি।তবুও হয়ে গেল।

রাদিফ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তন্বীর নিকটতম প্রতিবেশী।ছোটবেলা থেকেই তন্বীর সাথে আলাপ।
ঢাকা ভার্সিটিতে ফোর্থ ইয়ারে পড়ে রাদিফ।খুব ভাল ছেলে।

দীর্ঘ ৬ বছর সাধনা করার পর তন্বীর মনের কথা জেনেছে রাদিফ।আজ
সাড়ে তিন বছর তাদের সম্পর্কের।
.
সেই প্রথম সাক্ষাতের কথা ভেবে আজো শিহিরিত হয়
রাদিফ।এক রিকশায় যাওয়ার পথে বারবার তন্বীর হাত
জড়িয়ে ধরেছে রাদিফ।তন্বী লজ্জায় লাল হয়ে বলেছেঃকি করেন!
--আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা তুমি আমার
পাশে তাই.....
--বিশ্বাস
না হলে রিকশা থেকে নামেন!(কপট
রাগে বলেছিন তন্বী)
--এমন কর কেন?
-- কেমন করি?
--কেমন করি মানে?এভাবে হাত
ধরবেন না।ব্যাথা লাগে। রাদিফ হাতে আরো জোরে চাপ
দিয়ে বলেঃদিব,ব্যাথা দিব।এতদিন আমাকে কম ব্যাথা দেও নাই!
--
আপনারে ব্যাথা পাইতে কেডা বলছে?
--তুমিই তো কইছ?
--কব্বে?
--মুখে কও নাই,ভাব-ভংগিতে বলছ।
৬টা বছর ঘুরাইছ।
--মাত্র!(হেসে কুটিকুটি হয়েছিল
তন্বী)
--মানে কি?ফাযলামি করো?
--এতদিন কষ্ট না দিলে হতনা?
--আপনারে আমি কষ্ট পাইতে বলিনি,আপনি কষ্ট পাইছেন কেন?দেশে কি মেয়ের অভাব
পড়েছিল?
--দেশে আমার তনু একটাই।
--তনু কে?
--আজ থেকে তুমি আমার তনু!
--তনু মানে জানেন তো
--হুম জানি।
--আচ্ছা রাদু!
------------
------------
এই সাড়ে তিন বছর ঐ হাত ধরাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে রাদিফ।না তার
ইচ্ছা হয়নি বেশি কিছুর।আর জানত ইচ্ছা হলেও লাভ নেই।তন্বীকে ও চিনত।
আর ওর নিজের ও চিন্তা ছিল তন্বী তো ওর ই হবে।এত
তাড়াহুড়ো কিসের?
.
দিন ভালই যাচ্ছিল।কিন্তু মধ্যবিত্তের
স্বপ্নের মাঝে বাঁধা আসবে না তাইকি হয়? রাদিফকে তন্বী জরুরী ডেকে পাঠাল
কিছু বলার জন্য।
.
--রাদিফ,কিছু কথা বলা দরকার।
--বল!
--আজ এই
মূহুর্তে আমাকে বিয়ে করতে পারবে?
--মানে কি পাগল?(হেসেই
উরিয়ে দিল রাদিফ)
--আমি ফান করছি না।আম্মু
আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে।এই সমাজে বাবা না থাকলে মেয়েদের
কোন সিকুইরিটি থাকেনা।তখন বাধ্য হয়েই হোক বা অন্য কারণেই হোক
তাকে একজন জীবন- সংগী বেছে নিতে হয়।মামা আমার
জন্য একজন পাত্র ঠিক করেছেন। ছেলে ভাল জব করেন।আম্মু আমার মত
চেয়েছেন।আমি না করলে হয়তো জোড় করবেন না।বাট আম্মুকে না করার ক্ষমতা আমার নেই,তা তুমিও ভাল জান।
(নিশ্চুপ,নিরবে কথাগুলো শ্রবণ করছে রাদিফ।স্কুল-কলেজের
সেরা বিতার্কিক ছেলেটি আজ ভাষাশুণ্য।কি বলবে সে?কি বলার আছে?)
--তনু,তুমি তাহলে কি চাইছ?
--তুমি যদি এখন আমাকে বিয়ে করতে পার তাহলে আমি ঐটা ক্যানছেল করে দিব।
অন্যথায়....
--কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? তুমিতো আমার সবই জান তনু!
--আমার কথাও তুমি সব জান!
--আম্মুকে বললে বুঝবে না?
--আমার বাবা নেই রাদু......(হুম,কান্নায় কন্ঠরোধ তনুর)
--কয়টা দিন সময় দাও আমাকে! (ভিক্ষা করার মত কাতর কন্ঠ রাদিফের)
--আমি পারব না রাদু।মাকে এ
কথা বললে মা সইতে পারবে না।
তিনি জানেন না আমার রিলেশন এর কথা।আমার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস।
আমি আগেই তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে হ্যাপি করতে পারব
না।বাট তুমি বোঝনি।শুধু বলেছ
দেখা যাক।হুম।আজ দেখ।ভাল করে চশমা খুলে দেখ।(কান্নায়
মুখটা ভেসে গেছে মেয়েটার) আরো অনেক কথা অনেক কান্না অনেক হাহাকার হয়েছিল সেদিন।কিন্তু
কাজের কাজ কিছুই হয়নি।তন্বীর বিয়ে হয়ে গেল।
.
রাদিফ পাল্টে গেল।সাজানো জীবন এলোমেলো হয়ে গেল।ঠিকঠাক লেখাপড়াটাও শেষ হলনা।
কূলে এসে তরীটা ডুবে গেল।
.
তন্বীকে আজো ভোলেনা রাদিফ। মনে মনে আজো আশায়
থাকে,খুঁজে বেড়ায় প্রিয়তমাকে।
.
তন্বী স্বার্থপর।এই সমাজ তাকে স্বার্থপর বানিয়েছে।তার স্বার্থপরতা আমরা দেখি।
দেখিনা তার গভীর রাতের হাহাকার,ফুক ফাটা আর্তনাদ।
শুনিনা তার হৃদয়ের ক্রন্দন।তাদের দোষ দেয়ার আগে নিজেকে যাচাই
করা উচিত।রাদিফ স্ট্যাব্লিশ হলে তন্বীকে আরেকজনের ঘর
করতে হতনা।