মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২০৫- সমাপ্তিটা ভালোবাসার

লেখাঃ ফাহমিনা রহমান ফাম্মি

অল্প আলো সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যায়, পেছনে রেখে না। মৃদুলের অবস্থাও ঠিক তাই তার সামনে ধাবমান আলো দেখেই তার এগিয়ে যেতে হবে পিছনে যত আঁধারই থাক। কিন্তু বর্তমানে সে পুরোপুরি উদ্ভ্রান্ত, কোন পথই খুঁজে পাচ্ছেনা আলো তো দূরে থাক। সমস্যাটা ইলাকে নিয়ে। হুট করেই ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, মৃদুল এখন কি করবে কিছুই বোঝতে পারছে না। তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। না সে পারছে ইলাকে ভুলতে না পারছে ওর বিয়েটা মেনে নিতে। ভালোবাসাময় সম্পর্কগুলো এত যন্ত্রনা বয়ে আনবে কে জানতো! আবার সুন্দর মুহূর্তগুলোও এত তাড়াতাড়ি শেষ হযে যায়। এইত সেদিনই ইলার সাথে পরিচয় ভার্সিটি কোচিং করতে যেয়ে। ক্লাসের সবচাইতে শান্ত মেয়েটিই ইলা। আর মৃদুল যেন দমকল বাহিনীর ছুটে চলা সদস্য এক মিনিট বিরাম নেই তার। কিভাবে কিভাবে জানি তাদের এই প্রেমটা হয়ে যায়, ইলাও তার সম্মতি জানিয়ে দেয়। তবু ইলার পিছনে কম ঘুরে নি মৃদুল।কোচিং শেষে পিছুপিছু বাসা পর্যন্ত যাওয়া, কারণে অকারণে এক নজর দেখার জন্যে কত প্রতীক্ষা!অতঃপর একদিন চুপিসারে হৃদয়ের কথটা জানানো। ইলা সেদিন বেশ চটপটে হয়ে উত্তর দিয়েছিল, ক্লাসে তো কথার রেলগাড়ি ছুটে আর এই ভালবাসি কথাটি বলতে এত দিন সময় লাগে? তাও মেসেজ দিয়ে বলতে হয়। কাল যেন জনাবের দেখা পাই। পরদিন দেখা করে বেশ সাহস নিয়েই মৃদুল প্রথম ইলার হাতটা ধরে, অসম্ভব এক ভালোলাগা। ভালবাসি কথাটি বলতে দু'জন সময় নিয়েছে অনেক কিন্তু তাদের মাঝে ভালোলাগার ব্যাপ্তি ছিল অসীম।সেদিনের সেই ব্যাস্ত রাস্তায় দু'জন হেঁটেছে অনেক পথ কৌতূহলী সবার দৃষ্টি এড়িয়ে। মৃদুলের তখন মনে হয়েছিল এই শীতল হাত ধরেই সে পাড়ি দিতে অনেকটা পথ। জীবনের বাকিসব তখন তার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। আজো সব তার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। ইলাকে ছাড়া সে থাকবে কেমন করে? তার জীবনের আনাচে কানাচের সব গলি-উপগলিতে ইলা নামক মানবীর বিচরণ সর্বত্র। হঠাৎ মোবাইলের শব্দে চিন্তাছেদ ঘটে মৃদুলের। ইলার মেসেজ, বিকালেই একটা চায়নীজে দেখা করতে বলেছে। দীর্ঘশ্বাস ঢেকে উঠে পরে সে, একটা টিউশনি শেষ করে তবেই যেতে হবে। বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে টিউশনিতে যেতেও ইচ্ছে করছে না তবু যেতে হবে নাহলে এই টিউশনিটাও যাবে। টিউশনি শেষ করে যেতে যেতে মৃদুলের প্রায় চারটা বেজে যায়। রেস্তোঁরার এক কোণে ইলা বসে আছে। তাকে দেখেই হাত নাড়ায় ইলা।বসার পর ইলা বলে উঠে তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে যুদ্ধ বিধস্ত এলাকা থেকে আসছো, কি হয়েছে? স্মীত হেসে মৃদুল, বলে নাহ কিছু হয়নি। তারপর তোমার খবর বলো বিয়ে কবে?সব ফাইনাল? মৃদু স্বরে ইলা বলে হু, সব ঠিকঠাক। কাল ওরা আংটি পরিয়ে গেলো, সামনের মাসেই বিয়ে। আমাদের ভালবাসার তাহলে এখানেই সমাপ্তি ঘটবে ইলা? জিজ্ঞেস করে মৃদুল।মাথা নাড়ে ইলা। স্পীকারে তখন অল্প ভলিউমে বাজছে সফট রক গান,

I was standing All alone against the world outside
You were searching For a place to hide
Lost and lonely
Now you've given me the will to survive
When we're hungry, love will keep us alive
Don't you worry
Sometimes you've just gotta let it ride
The world is changing Right before your eyes
Now I've found you
There's no more emptiness inside
When we're hungry,love will keep us alive
I would die for you
Climb the highest mountain
Baby, there's nothing I wouldn't do
Now you've given me the will to survive
When we're hungry,love will keep us alive
When we're hungry,love will keep us alive
When we're hungry,love will keep us alive.....

আমাদের ভালোবাসাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে হঠাৎ বলে উঠে ইলা। হু আর বাঁচিয়ে রাখবে, মৃতপ্রায় করে দিল এই ভালোবাসা বলে মৃদুল। ক্ষণিক পরে ইলা বলে আজ উঠি মৃদুল, বাসায় বান্ধবীর কথা বলে আসছি বেশীক্ষণ থাকা যাবেনা। উঠে চলে যায় ইলা। শূণ্য জায়গায় বসে থাকে মৃদুল এভাবে। বাকি জীবন তার কিভাবে যাবে সে কিছুই জানেনা। প্রচণ্ড হতাশা গ্রাস করে আচমকা তাকে।

বাসায় ফিরেই ইলা দেখে ড্রয়িং রুমে সেই উজবুকটা বসে আছে। মৃদুলের সাথে সে আজ ইচ্ছে করেই বেশি কথা বলেনি, সে চায় না তার কথায় ছেলেটার কষ্ট আরো বাড়ুক। তাই নিজের খারাপ লাগাটাকে আড়াল করে চলে আসছে হঠাৎই। কিন্তু এখানে এসে এই লোকটাকে দেখে মেজাজ আরো বিগড়ে গেল তার। রুমে যেতেই ইলার মা বললেন ছেলেটা সেই কবে থেকে তোর জন্যে অপেক্ষা করছে। আমার জন্যে কেন অপেক্ষা করছে ক্ষেপে বলে ইলা। কেন মানে?কয়দিন বাদে সে তোর স্বামী হবে। আজ এসেছে তোকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যেতে। ইলা মা'র উত্তরে বলে দেখো মা সে এখনো আমার স্বামী হয়নি যখন হবে তখন বলও,যাবো। দেখ মা সব তো ঠিকঠাকই এখন আর ঝামেলা বাড়াস না, তোর বাপ তো জানিস কেমন বদমেজাজী। তাছাড়া ছেলেটাও খারাপ কিছু মিন করতে পারে, আমার কথাটা শোন মা। যা তুই। অবশেষে মায়ের আকুতিতে ইলা যেতে রাজি হল। কিন্তু গিয়েই বোঝলো কি ভুলটা সে করেছে। ইলা চুপ দেখে লোকটাই কথা বলা শুরু করে, ইয়ে মানে আমার নাম সাদ আহমেদ। তুমি ছোট করে সাদ ও ডাকতে পারো। আচ্ছা কি খাবে বলো তো? আমি অর্ডার দিচ্ছি। যদিও এটা শুধু সে মুখে বললো পর্যন্ত, কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল ইলার পেটের দিকে। শাড়ি পড়ায় অনেকটা জায়গায়ই দেখা যাচ্ছি আর সেই লোকটার কু'নজর ছিল সেদিকেই। মনে মনে ইলা বলে শালা তোর নাম সাদ আহমেদ না হয়ে বদ আহমেদ হওয়া উচিত। মেয়েরা ছেলেদের দৃষ্টি দেখেই অনেক কিছু বোঝতে পারে, ইলা এই লোকটার দৃষ্টিতে শুধুই কামনার লুলুপ বাসনা দেখতে পায়। অস্বস্তি লাগে ইলার, বলে আমি কিছু খাবো না খেয়েই আসছি। আজ যাই, টায়ার্ড লাগছে খুব। কি মনে করে জানি লোকটাও বলে আচ্ছা ঠিক আছে, আরেকদিন হবে। চল উঠি।

রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পরে ইলা,তার মা অনেক ডাকাডাকি করে গেছেন কিন্তু দরজা খুলেনি সে।এ বিয়ে কিভাবে মেনে নিবে সে।না পারছে কাউকে বলতে,না পারছে মৃদুলকে বিয়ে করতে।এখন আরো এক বছর বাকি তার এম বি এ কমপ্লিট করতে।এখনই বিয়ে করা সম্ভব না।বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি এই চিন্তায়ই মৃদুল আর আগ বাড়ছে না ইলা তা জানে তাই জোর করতে যায়না মৃদুলকে।রাতে ইলার মেসেজ দেখেই মৃদুল এর খারাপ লাগে,ইচ্ছে করে আগের মতন ছুটে যেতে।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাটাও কঠিন,তবু ধীরে ধীরে সরে যেতে হবে মৃদুলকে ইলার জীবন থেকে।সে চায় না তার কারণে ইলার জীবনটা নষ্ট হোক।এভাবে দেখতে দেখতে পার হয়ে যায় কয়েকদিন।ইলার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে আর ক্রমে ক্রমে যেন দূরত্ব বাড়ছে মৃদুল এর সাথে।এখন ইলা যোগাযোগ না করলে সে যেচে কথাই বলতে চায়না।সব বোঝে ইলা তবু মৃদুলকে সান্তনা দিতে পারেনা,উল্টো নিজেরই কান্না পায়।বিচ্ছেদের ব্যাথা কত গভীর তা সেই জানে যে তার ভুক্তভুগী।বাস্তবতা তাদের দু''জনকে দূরে ঠেলে দিয়েছে কিন্তু ভালবাসা থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি।দুজনের ভালবাসা আজো একই আছে।

বিয়ের আর কয়েকদিন বাকি, আজও সেই বদ আহমেদটা ইলাদের বাড়িতে উপস্থিত। মনে মনে সে যথোপযুক্ত পরিকল্পনাই করে এসেছে তবু ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে বিয়ের আগে একটু ভাল বোঝাপড়ার জন্যে কিছু সময়ের জন্যে ঘুরতে যাওয়াটা খারাপ কিছুনা। ইলার বাসার সবাই ও তাতে দোষের কিছু দেখে না, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইলাকে নিয়ে। সে কিছুতেই যাবে না। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়ে শেষমেশ পাঠানো গেল। আজ ইলাকে এমনিতেই সুন্দর লাগছে, তার উপর নীল রঙ্গা শাড়িতে একদম মানিয়েছে তাকে। ঠিক যেন শান্ত দিঘীতে ফোঁটা একটা নীলকলম। হাইওয়ে ছেড়ে গাড়ি যখন শহর ছাড়লো ইলা ব্যাগ্রভাবে জিজ্ঞেস করে আমরা কোথায় যাচ্ছি? আপনি এদিকে কই যান। হেসে সাদ আহমেদ বলে ব্যাস্ত হচ্ছো কেন ইলা সোনা, বাসায় তো বলেই আসছি। বলে আসলে কি? আমাকে নামিয়ে দিন আমি চলে যাবো ইলা বলে। চলে তো যাবেই সময় হোক তারপর শয়তানী মার্কা হাসি দিয়ে বলে সাদ, সে জানে আজ সবই তার দখলে ইলার কিছুই করার নেই। নির্জন একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় সাদ, আশে-পাশে কোন বাড়ি নেই আর। মধ্য বয়স্ক একটা লোক শুধু সালাম দিয়ে গেইট খুলে দেয়। কথাচ্ছলে ভিতরে নিয়ে যায় ইলাকে সাদ, বাড়িটা আসলে দেখার মতই। মনে হয় পুরনো কোন জমিদার বাড়ি ছিল। ইলা তাই ঘুরে ফিরে দেখতে থাকে কিন্তু বড় মত একটা হল ঘরে যেতেই দরজা আটকে দেয় সাদ। ইলার আকুতিতে যেন আরো ক্ষ্যাপা হয়ে উঠে সাদ। বাধা দিয়েও লাভ নেই ইলা বোঝে। ক্রমশ এগিয়ে আসছে লোমশ একটা হাত ইলার দিকে। প্রচণ্ড একটা আর্তচিৎকারে ঝাপসা হয়ে যায় ইলার পৃথিবী। এরপর ইলা নিজেকে আবিষ্কার করে একটা সাদা কেবিনে। উৎসুক কয়েকটি দৃষ্টির নজরদারিতে ইলা যখন চোখ মেলে তাকায় স্বস্তি পায় যেন সবাই। কেবিনের এক কোণে ইলা মৃদুলকেও দেখতে পায়। এখন কেমন লাগছে মা? ইলার মা-ই প্রথম কথা বলেন। হু ভালো লাগছে বলে ইলা।হঠাৎ করেই ইলার বাবা বলেন, তুই চিন্তা করিস না মা। বেজন্মাটা লাপাত্তা হয়েছে ওর ঠিক শাস্তি-ই আমি দিব। এর সাথে বিয়ে ঠিক করে কি ভুল-ই না করেছিলাম আমি। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। মি. এহসানের কথায় রেগে উঠেন ইলার মা বলেন , তোমার মেয়ের কথা ভাবো আগে। তার ভবিষ্যতৎ কি দিয়ে ঠিক করবে তুমি? বাকি জীবন আমার মেয়েটা কি শাস্তি উপভোগ করবে তুমি বোঝতে পারছো? উফ মা চুপ কর প্লীজ, লোকটা পালিয়েছে ভালোই হয়েছে তাকে বিয়ে করা এমনিতেই আমার পক্ষে সম্ভব হত না। কেঁদে উঠে ইলা, আমার এই জীবনের আর কোন মূল্য-ই নেই। কেন মরলাম না তখন আমি মা? এই সময় কথা বলে মৃদুল। তোমাকে আমার জন্যে বাঁচতে হবে ইলা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এতদিন আমার ভালবাসার জোর ছিল না আজ এমন একটা ঘটনার সম্মুখীন হয়ে বুঝতে পারছি এর শক্তি কত প্রবল। না আমি তোমাকে করুণা করে না, অত্যন্ত ভালোবেসেই চাইছি। ইলার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর চেয়েছিলাম সে সুখী হোক তাই সরে গিয়েছিলাম, কিন্তু আজ এর পরে চাই আমার কারণে সুখী হোক। আমাকে কি একটা সুযোগ দেয়া যায় না আন্টি? কাছে এসে ইলার মা হাত রাখেন মৃদুলের মাথায়, তুমি আমাকে বাঁচিয়ে দিলে বাবা। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক তোমরা থাক আমি যাই বলেই ইলার বাবাকে নিয়ে বের হয়ে যান উনি। কেবিনে শুধু মৃদুল ও ইলা। মৃদুল এসে পাশে বসে ইলার, তখনও তার চোখের কোণায় জল তা আনন্দের না বেদনার জানেনা মৃদুল।

খুব আয়োজনের সাথেই ইলা ও মৃদুলের বিয়েটা হয়ে যায়। আজ ইলাকে খুব সুন্দর লাগছে ওর পছন্দেই বিয়ের শাড়িটা নীল কিনা হয়েছে। বাসর ঘরে ঢুকে মৃদুল খানিকটা বিভ্রান্তই হয় লাল গোলাপের পাঁপড়ি ছিটানো বিছানাতে ঠিক যেন নীল পরী বসে আছে। ঘোমটাটা সরিয়েই ইলার স্নিগ্ধ মুখটা দেখে যেন তৃপ্তি মিলে তার। আলতো করে ইলার হাত স্পর্শ করে বলে, "আমরা মিশিনি ভালোবেসে সব মানুষ যেভাবে মেশে, আমরা গিয়েছি প্রাজ্ঞ আঁধারে না-জানার টানে ভেসে।"

আমি তোমার জীবন আঁধারে ঢেকে দিলাম মৃদুল? উহু তুমি-ই হচ্ছো আমার জীবনের আলো পাগলী, বলে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে ইলাকে মৃদুল। কিন্তু এমন একটা ঘটনার পরও... উফ চুপ করো তো এমন রাতেও এসব বলতে হবে? থামিয়ে দেয় সে ইলাকে। তুমি তো জানোই আমি তোমাকে ভালবাসি এটা জানার পরও আর কিছু জানার আছে তোমার? উহু আর কিছু নেই, তবে আজকে তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে এটা জানি। হেসে বলে ইলা। কি সারপ্রাইজ? জিজ্ঞেস করে মৃদুল। ফিচলা হাসি হেসে ইলা বলে তোমরা কি ভেবেছিলে সেদিন ঐ বদ আহমেদ আমাকে সত্যি ধর্ষণ করেছিল? নাতো কি? অবাক হয়ে বলে মৃদুল। তা নয় জনাব,আপনাকে পাবার জন্যেই এই নাটক করতে হল। মানে কি হতভম্ব হয় মৃদুল। আসলে সেদিন ঠিক-ই ঐ লোকটা আমার উপর চড়াও হতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই আমাদের যে গেইট খুলে দেয় সেই লোকটাই আমাকে উদ্ধার করে ওর হাত থেকে।এই সাদ আহমেদ নাকি প্রায়ই মেয়ে নিয়ে ওই বাড়িতে যেত, দারোয়ানটা সব জানতো তাই একদিন কয়েকজন লোক নিয়ে আক্রমণ করে। এবং ভাগ্য ক্রমে আমি বেঁচে গেলাম। পুলিশি শাস্তি তারা দিতে চায় নি তাই তারাই সাদ আহমেদকে শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে একটা মেয়ের ধর্ষণের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট কতখানি। এইটুক বলে থামে ইলা। হুম সবই বুঝলাম কিন্তু পরে তোমার হাসপাতালে আসা এবং ডাক্তারের রিপোর্ট এসব মিথ্যা? জিজ্ঞেস করে মৃদুল। আরে গাধা ওসব ও বানানো, আমার একটা বান্ধবী আছে ঐ হাসপাতালেই ইন্টার্নিশিপ করছে। তাকে বলতেই সব মেনেজ করে দিলো আর ওখান থেকে ঐ দারোয়ান চাচাই আমাকে এনেছে। ভেবে দেখলাম এর চাইতে আর তোমাকে পাওয়া সম্ভব না তাই এই উপস্থিত বুদ্ধিটা কাজে লাগালাম। উনিও আমাকে সাহায্য করেছেন। কি কেমন অভিনয় করলাম এত দিন? ভ্রু নাচায় ইলা। তবে রে... এই ছিলো তোমার মনে মনে বলে মৃদুল ধরতে যায় ইলাকে।

পরবর্তী দুই বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। ইলা এবং মৃদুল দু'জনই নিজেদের নিয়ে সুখী।মৃদুলের অবস্থাও আগের মত নেই। মোটামোটি ভাল একজন ব্যাবসায়ী সে আজ। অনেকটা নিজের ইচ্ছায় আর কষ্টে আজ এই পর্যন্ত এসেছে সে। পাশে ইলা আছে ছায়ার মতন কিন্তু এখন তাদের মাঝে আসতে যাচ্ছে তৃতীয় একজন। হ্যাঁ তাদের বাবুইটা। অনেক স্বপ্নের পর তাদের প্রতীক্ষার পালা এবার। মৃদুল তখন অফিসে ছিল ফোন পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসে। ইলার ব্যাথা উঠায় তাকে ভর্তি করা হয়। মৃদুল এসে দেখে ডাক্তাররা ব্যাস্ত রক্ত যোগাড় করতে। ইমরানকে আগেই বলা ছিল মৃদুল ফোন দিয়ে তাকে আসতে বলে। ইলার সাথে তার ব্লাড গ্রুপ মিলে। সব মেনেজ করার পর অপারেশন শুরু হল। ভিতর ভিতর মৃদুল টেনশনে অস্থির। এক ইলার জন্যে এবং দুই তার অনাগত সন্তানের জন্যে। অবশেষে ডাক্তার এসে হাসিমুখে জানালেন মেয়ে হয়েছে। দু'জনই ভাল আছে।

মৃদুলকে দেখে ইলা বলে ময়নার বাপ তোমার ময়নাকে একটু কোলে নাও তো বাপ মেয়েকে একসাথে দেখি। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে অবাক হয়ে মৃদুল ভাবে এই পুচকিটা তারই একটা অংশ। কি আশ্চর্য! পিটপিট করে আবার তাকানোও হচ্ছে। মেয়েকে মায়ের কাছেই দিয়ে শুইয়ে দেয়। শোন আমার মেয়ের নাম রাখলাম মৃদুলা তোমার মৃদু আর আমার লা দুইটা মিলেই মৃদুলা। বাহ বেশ মিলিয়েছ তো বলে মৃদুল। হুম এখন মৃদুলার আব্বু আমাকে আর মেয়েকে দু'ছত্র কবিতা শোনান প্লীজ শোনে ঘুমাই। ভরাট কন্ঠে মৃদুল আবৃতি করতে থাকে নজরুল এর কবিতাটি,

তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তো আমি কবি।
আমার এ রূপ-সে যে তোমায় ভালোবাসার ছবি।।
আপন জেনে হাত বাড়ালো-
আকাশ বাতাস প্রভাত-আলো,
বিদায়-বেলার সন্ধ্যা-তারা
পুবের অরুণ রবি,-
তুমি ভালোবাস ব’লে ভালোবাসে সবই?
আমার আমি লুকিয়েছিল তোমার ভালোবাসায়,
তুমিই আমার মাঝে আসি’
অসিতে মোর বাজাও বাঁশি,
আমার পূজার যা আয়োজন
তোমার প্রাণের হবি।
আমার বাণী জয়মাল্য, রাণি! তোমার সবি।।
তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি....