মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৯৩- ভালবাসা আজকাল

লেখা - Md Mahedi Hasan Ninad

আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে...
ঘড়িতে এখন সকাল
১০টা বেজে ১৪মিনিট!
.
এখনও খাটের উপরে উপুর
হয়ে শুয়ে আছে অনিম ।
শুয়ে শুয়ে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন
দেখছে...
.
অনিম রাস্তার মধ্যে হাটছে,
হাটতে হাটতে এক সুন্দরী মেয়ের
সাথে ধাক্কা খায়, ধাক্কা খাওয়ার
পরেই অনিম আর
মেয়েটি একে অপরকে দেখে দুজন
দুজনের প্রেমে পরে যায় !
কি সাংঘাতিক ধাক্কা!!
সাথে সাথে মেয়েকে দেখে "আই
লাভ ইউ"ও বলে ফেলে সে... মেয়েটিও
তার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে...
এরপর থেকে অনিম আর সেই
মেয়েটি একসাথে চুটিয়ে প্রেম
করতে থাকে...
.
হঠাত করেই কলিমের এক
লাথি খেয়ে খাট থেকে পড়ে যায়
অনিম...
সাথে সাথেই তার "ভালবাসার
স্বপ্ন" দেখাও শেষ হয়ে যায়!!
.
ওই কলির বাপ !! (কলিমকে তাদের
মেসে সবাই কলির বাপ নামে ডাকে)
সাতসকালে তোর মনে কলির মার
কথা মনে পড়ল নাকি!!
লাথি মারলি ক্যারে!!
.
এখন সাতসকাল!! সকাল দশটা বাজে!!
আর ঘুমের মধ্যে আমারে অমনে মুখ
ভ্যাটকাচ্ছিলি কেন
রে হতচ্ছাড়া!!
.
তোরে ভ্যাটকাবো কেন!!
(মেঝে থেকে উঠতে উঠতে)
আমি স্বপ্নের মধ্যে আমার
"বিউটি"র সাথে প্রেম করতেছিলাম!
স্বপ্নের মধ্যে দেখলাম,
আমি বিউটির হাত
ধরে... ...বিউটি আমার হাত ধরে...
দুজন দুজনার হাত
ধরে... ...পার্কে বসে... ...ঝালমুড়ি খাচ্ছিলাম...
এরপর আমি বিউটিকে আমার
"পাজেরো সাইকেল"
টাতে বসিয়ে নিয়ে গিয়ে...
খোলা রাস্তায়
ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম...
আর তুই ব্যাটা মাঝ রাস্তায়
এসে ট্র্যাফিক জ্যাম
বাঁধিয়ে দিলি!!
.
ইশ!! প্রতিদিন তোর এই প্রেমের গল্প
শুনতে শুনতে বুড়ো হয়ে গেলাম!
রিয়েল লাইফে কোন
মেয়েকে দেখলে তখন তো তার
সামনে যেতেও ভয় পাস!
আর স্বপ্নের মধ্যে...
(কথাটা বলতে গিয়ে হেসে ফেলে কলিম)
আর কি না এক সাইকেল!! সেটারও আবার
নাম দিছে পাজেরো!!
কানা পুলার নাম পদ্মলোচন আর কি!!
.
ধুর্! প্যাঁচাল! আমাকে এভাবে ঘুম
থেকে কেন জাগালি বল...
.
.
- আমার লাল রঙের টিশার্ট
টা কোথায়!সকাল
থেকে খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না!
.
- কোথায় আবার!! দেখ! আমাদের
এখানে একজন মজনু আছে না! সেইই
হয়তো নিয়েছে...
.
- ফাহিমই নিয়েছে !! তুই শিওর তো?
.
- শিওর না তো কি!! ওই ব্যাটায়
প্রতিদিন সকালে হিরোদের মত
সাজগোজ করে গার্লস স্কুলের
গেটের
সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই
স্কুলের ক্লাস নাইন এ
পড়ুয়া একটি মেয়েকে দেখার জন্য।
কিন্তু মেয়েটির সাথে তার আম্মু
থাকে বলে কথা বলার সুযোগ পায়না।
শুধু ভ্যাবলাদের মত করে তার
দিকে তাকিয়ে থাকে... কিন্তু
গতকাল ও ডিসিশন
নিয়েছে যে আজকের
ভালোবাসা দিবসে ও ওর মনের কথা ওই
মেয়েটিকে বলবেই। সেইজন্যই
হয়তো তোর নতুন
টিশার্টটি পড়ে ওখানে গেছে...
.
- ব্যাটা ফহিন্নি! সারাদিন
খালি মেয়েদের পিছে পিছে ঘুর ঘুর
করে! শত শত মেয়েকে দেখে ক্রাশ
খায়। কিন্তু কোন মেয়েকেই
প্রপোজ করার সাহস করে না। কারণ ও
ভাবে, কাউকে যদি প্রপোজ করার পর
সে ওর প্রপোজাল এক্সেপ্ট
করে ফেলে এবং পরে যদি আবার অন্য
কোন মেয়েকে তার পছন্দ হয়! তখন
কি করবে! ও করবে প্রপোজ! ব্যাটায়
আজকে এসে নিক! ওর আগামী চৌদ্দ
গুষ্টিও যাতে কারো সাথে প্রেম
করার সাহস না করে সেই ব্যবস্থা করব

.
_ ব্যাটার কারনে আমাকে সকাল
সকাল লাথি খেতে হয়েছে, আমার
বিউটির
সাথে পার্কে বসে ঝালমুড়ি খাওয়াটাও
মিস হয়ে গেছে(স্বপ্নে) । ব্যাটায়
আজকে আসুক, আমিও ওকে দেখে নিব।
.
ট্রিং...ট্রিং...ট্রিং...
ঐ মিয়া! চাপেন না ক্যা!! বারবার
বেল বাজাই তবুও রাস্তার
মাঝে আইয়া খারায়া আছেন! চাপেন...
ঐ ব্যাটা! চাপুম মানে!
রাস্তা কি তোর দাদা তোর
দাদীবাড়ির লোকজনের কাছ
থেকে যৌতুক নিছিল নাকি?হ্যাঁ??
আমার দাদার না হইলেও এটা আপনার
কোন দাদার না...
এটা সরকারী রাস্তা...
কি! এত্ত বড় সাহস!! আমার সাথে তর্ক
করিস! আজকে তোরে খাইছি...
এই
বলে লোকটা রিক্সাওয়ালাকে মারতে উদ্ধত
হল...
রিক্সাওয়ালাও ছাড় দেয়ার নয়! সেও
ওই লোকটার হাতটি জোরে চেপে ধরল
তার মুঠিতে...
.
রাস্তার মধ্যেইএকটা গ্যাঞ্জাম
হচ্ছে...
কিছু লোক জমে গেছে সেখানে...
কয়েকজন লোক এসে তাদের
ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করছে ।
রাস্তার প্রায় সব লোকের মনোযোগ
তখন তাদের দিকেই... শুধু তিনজন
ছাড়া...
.
এদের মধ্যে একজন, ড্রেনের
পাশে বসে শরীরে জমে থাকা উত্তপ্ত
গরম জল ড্রেনের পানিতে নিক্ষেপ
করছে ,
দ্বিতীয় জন, হাতে একটি বেনসন
সিগারেট এবং ম্যাচ
নিয়ে সিগারেটটি জ্বালানোর
চেষ্টা করছে...
এবং তৃতীয় জন, সেই ফাহিম,
যিনি গার্লসস্কুলের
সামনে দাঁড়িয়ে তার সেই পছন্দের
মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করছেন...
.
তার পাশেই জসিম মিয়ার চায়ের
দোকান...
জসিম মিয়ার দোকান থেকে এক কাপ
চা নিয়ে চায়ে চুমুক দিল ফাহিম...
.
মিনিট দুয়েক পরেই স্কুলে ছুটির
ঘন্টা বেজে উঠল...
.
মেয়েটি স্কুলের গেইট
দিয়ে বেড়িয়ে বাইরে রিকশার জন্য
অপেক্ষা করতে লাগল,
আজ তার সাথে তার
মা কে দেখা যাচ্ছে না... হয়ত কোন
কাজের চাপে আসতে পারেন নি...
তবুও ফাহিমের
মনে কিছুটা উত্তেজনার
সৃষ্টি হল...
মেয়েটির
কাছে যাবে কি যাবেনা...কিছু
বলবে কি বলবেনা...
এ নিয়ে সে কিছুটা কনফিউজড হল...
.
কিন্তু পরক্ষনেই
সে দাঁড়িয়ে পড়ল... তার মনে সাহস
সঞ্চার করল...
আজ সে তার মনের
কথা মেয়েটিকে বলবেই...
.
হাতে থাকা চায়ের
কাপটি দোকানের
বেঞ্চিতে রেখেই সে মেয়েটির
সাথে দেখা করার
উদ্দেশ্যে পা বাড়াল...
.
সে হেঁটে চলেছে মেয়েটির দিকে...
মেয়েটিও সেখানে ঠায়
দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সে এখন মেয়েটির প্রায়
নিকটে এসে পড়েছে...
ফাহিমের উদ্দেশ্য হচ্ছে,
সে মেয়েটির কাছে যাবে
এবং মেয়েটির ফর্সা কোমল
হাতটি ধরে বলবে,..."ভালবাসি"...
.
কিন্তু কিছুটা হঠাত করেই সেই
মেয়েটি তাকে ডেকে উঠল, "এই!
ফাহিম ভাইয়া!"
.
হায়রে বগা! যেই মেয়েকে সে একটু
পরে প্রোপোজ করতে যাচ্ছে,
তার মুখে এখনই ভাইয়া!!!
.
সে এক প্রকার
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
"জ্বী আপু!"
.
- আমার নাম ঈশিতা।
- উম্ম! আমার নাম ফাহিম!
- হ্যাঁ জানি! (কিছুটা হাসির ইমু
হবে)
- অ্যাঁ!! মানে কিভাবে?
- আপনার বন্ধু আদিব এর কাছ
থেকে আপনার নাম জেনেছি ।
- উম্ম!!!
(আরেকদফা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)
আদিব!! তুমি আদিবের বোন!!!!
- আরেহ না! (কিছুটা লজ্জা পেয়ে)
আদিব আমার বয়ফ্রেন্ড!!!
- মানে!! তুমি আদিবের
গার্লফ্রেন্ড!!!!!
- হ্যাঁ!! আদিবের সাথে আমার ২বছর
ধরে রিলেশন চলতেছে। আচ্ছা, আদিব
কোথায় বলতে পারেন?
- না!!! (অনেকটা উদাসের মত। হঠাত হঠাত
টাশকি খেলে পুলাপানদের যেমন
অবস্থা হয় সেইরূপ)
- ইশ! দেখুন তো! আজ
ভ্যালেন্টাইন্স ডে, আর
আমি আদিবের সাথে কিছুক্ষন
ঘুরে বেড়াবো বলে আম্মু যেন
স্কুলে আমাকে নিতে না আসে সেইজন্য
কত চালাকি করে আম্মুকে আজকের
জন্য আসতে মানা করলাম! আর সেই
আদিবেরই খোজ পাওয়া যাচ্ছে না...
- হুম!! (এই বলে সে অন্য
পথে হাটা শুরু করল)
- হুম! এই! আপনি কোথায় যাচ্ছেন!
শুনুন! একটু শুনুন প্লিজ!
.
(মেয়েটি পিছন থেকে ডেকেই
চলেছে! কিন্তু কে শোনে কার কথা!
ফাহিম সেইদিকে ভ্রূক্ষেপ
না করে সামনের দিকে হাটতে থাকল।
কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলের
গান ছেড়ে দিল "মেয়ে! তুমি কেন
আমার হলে না!")
.
হাটতে হাটতে সে মেসের
দরজা দিয়ে গিয়ে সে তার
রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকার
সাথে সাথেই তার
পিঠে এলোপাথাড়ি কিল-
ঘুসি পড়তে থাকল। অনিম আর কলিম
মিলে ফাহিমকে শাসাচ্ছে,"ফহিন্
নির ব্যাটা ফহিন্নি! তুই আমার
সাধের লাল
গেঞ্জি টা নিয়ে গেছিস! তাই
আমি আমার জোলেখার
সাথে আজকে মিট করতে পারি নাই!!!
আজকে তুই শেষ..." অনিমও
তাকে নানা রকম
কথা বলে শাসাচ্ছে ।
.
অনিম আর কলিমের বেধড়ক মার
খেয়ে খাটের উপর উল্টা হয়ে পড়ে রইল
ফাহিম...।।
.
আজ কত শখ করে চুপিসারে কলিমের
লাল রঙের নতুন গেঞ্জিটা পড়ে,
অনিমের "এক্স"
পারফিঊমটা গায়ে মেখে(অনিম এর
টের পায়নি, পেলে...) কত
সুন্দরভাবে সেজেগুজে ঈশিতার
সাথে দেখা করতে গিয়েছিল!
কিন্তু তার প্রেম শুরু হওয়ার
আগেই তার ব্রেকআপ হয়ে গেল!
ব্যাটার আমও গেল আবার ছালাও গেল!
.
ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে, অনিম,কলিম
আর ফাহিমের একজনেরও দিনটি শুভ হল
না!
.
তারা এক বালতি আফসোস
নিয়ে সারাদিন ঘরে বসে "টম এন্ড
জেরি" দেখে।
বিকেলবেলা তারা তাদের নিজ নিজ
সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়।
(অনিমের পাজেরো সহ)
কিন্তু তারা যখনই পার্কের
বেঞ্চিতে, ফুসকাওয়ালার
দোকানের পাশে কিংবা বাইকে থাকা যুগলদের
বসে থাকতে দেখে, তখনই তাদের
বুকের মাঝে ধড়ফড় ধড়ফড় শুরু হয়ে যায়!
মনের মধ্যে জমাট
বেধে থাকা দুঃখগুলো ঘোচাতে তারা শেষমেশ
গান ধরে----------
.
এ মনের সেলফোনে চারজার কেন
জোটে না!
বেকার বলে কি কোন গার্লফ্রেন্ড
আজও পটে না!!!
বাইকের পিছে চড়ে...ওরা যে বেড়ায় ঘুরে...
ভাঙ্গা সাইকেলে প্রেম
জোটে নাআআ...।।