এটাকে হরর কাহিনী বলছি বটে…….. তবে এই কাহিনী তাদের জন্য, যারা আমার মতো ভূতে ভয় পাও…..কথা দিলাম, তোমাদের ভয় দেখাবো না……….তবে এই গল্প পড়ে যদি তোমাদের মন ভেজে, ভালো লাগে তবে সেই মালা আমার প্রাপ্য নয়……তা তোমাদেরই………যাক, আজকের গল্পে আসি………..আমার আজকের গল্প ভারতের অন্যতম একটি ভৌতিক স্হান “ bhangar fort ” নিয়ে……………………………
অনীক, নীলাদ্রি, সূর্য, রুদ্র আর রঞ্জন- ওরা পাঁচ বন্ধু কলকাতার একটা নামী কলেজে ইতিহাসের ছাত্র । ওদের পাঁচ জনেরই খুব প্রিয় স্যার ছিলেন এই কলেজেরই ইতিহাসের অধ্যাপক জর্জ ডি’সুজা । ইনি একজন বাঙালী খ্রিষ্টান । বি.এ. পরীক্ষা হয়ে যাবার পর ওরা ঘুরতে যাবার মতো একটা জায়গা খুঁজছিল । জর্জ স্যার ওদের পরামর্শ দেন, “ভারতের একটি খুব সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান রাজস্থান । তোমরা ওখানে যেতে পার । আর সেক্ষেত্রে আমিও তোমাদের সঙ্গ নেব ।” ওরা খুব খুশী হয় । নির্দিষ্ট দিনে ওরা পাঁচজন জর্জ স্যারের সাথে রাজস্থানে পৌঁছে যায় । তিন-চার দিনে রাজস্থান দেখে ওরা পৌঁছে যায় ভানগড়ে ‘ভানগড় দুর্গ’ দেখতে । ভানগড় পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর হয়ে যায় । ভানগড় ফোর্ট থেকে ৩০ মিনিটের দুরত্বে ওরা একটা হোটেলে উঠে । হোটেলের লনে বসে lunch খেতে খেতে sir ওদের ভানগড় দুর্গের গল্প শোনান । ওরা sir ‘র কাছ থেকে জানতে পারে, দুর্গটি সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা প্রভাস রাজগুরুর নির্দেশে তৈরি হয় । ওরা আরো জানে, এইরকম একটা ভৌতিক স্থান ভারতে আর দুটো নেই । কোনো এক যাদুকরের এই দুর্গে অপঘাতে মৃত্যু হয় । মৃত্যুকালে তিনি অভিশাপ দেন, যে এই দুর্গে রাত্রি যাপন করবে তারই অপঘাতে মৃত্যু হবে । ওরা অবাক হয়ে জর্জ sir ‘র কথা শুনছিলো । খাওয়া শেষে sir ওদের বলেন, “ তোমরা তৈরি হয়ে নাও, চলো একবার দুর্গটা দেখে আসি । অন্ধকার হলে আর যাওয়া যাবে না । ” দুর্গে ঢোকার সময় Archaeological Survey of India ’র sign board স্যার ওদের দেখান, যেখানে লেখা আছ রাত্রে দুর্গে থাকা আইনত নিষিদ্ধ । দুপুর ৩ – ৩০ নাগাদ ওরা ভানগর দুর্গে পৌছায় । দুর্গের ভেতরে আরো ৭ / ৮ জন পর্যটক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । এই দুপুরেও দুর্গের অন্দরে খুব অন্ধকার । আস্তে আস্তে sir ওদের torch জেলে দুর্গের ভেতরটা দেখাচ্ছিলেন । ওনার হাতে guide of bhangarh fort । ওরা অবাক চোখে দুর্গের সৌন্দর্য দেখছিলো । একই সাথে ভয়ঙ্করতা ও সৌন্দর্য যেন হাত ধরাধরি করে আছে । প্রকৃতিপ্রেমী জর্জ sir সমানে ওনার camera ’য় একের পর এক ছবি তুলছেন । অনীক বলে ওঠে, “ এ রকম জায়গায় ভূত থাকবে না তো থাকবে কোথায় ? দেখেছিস দুর্গের এই পশ্চিম দিকটায় দুপুরেও কেমন যেন গা ছমছমে অন্ধকার আর দেখ, মাটিতে শ্যাওলা জমে মাটি কেমন পিচ্ছিল হয়ে আছে । এখান থেকে পা পিছলে নীচে পড়লে নির্ঘাত মৃত্যু । এখানে ভূত প্রেত না থাকাটাই অস্বাভাবিক । ” অনীকের কথা কানে যেতেই রুদ্র বলল, “ অনীক, তুই না well-educated ? how could you say that ? ভুত বলে কিছু হয় না, ভুতের সৃষ্টি ভীতি থেকে আমাদের মনে ।” জর্জ sir রুদ্রের কথা শুনে আনমনে বললেন, “কোন কিছু আছে বলা যত সহজ, নেই বলা তত সহজ নয় ।” এইভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা দুর্গটা চষে ফেলার পর রঞ্জন ওদের বলল, “ এবার চল, হোটেলে ফিরে যাই, সূর্য ডুবে গেছে প্রায় । এরপর হোটেলে ফিরতে অসুবিধা হব । ” সবাই ওর কথায় সম্মত হলো । শুধু জর্জ sir ওদের বলল, “ তোমরা এগোও, আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই হোটেলে ফিরে যাব সূর্যাস্তের কয়েকটা ছবি তুলে । ” ওরা একটু আপত্তি করলো sir কে একা ওখানে ছেড়ে যেতে । দুর্গ তখন প্রায় ফাঁকা, ক্রমশ অন্ধকার নেমে আসায় সবাই হয়তো ফিরে গেছে । sir বললেন, “ তোমরা নিশ্চিন্তে যাও আমি ফিরছি ।” ওরা আর কথা না বাড়িয়ে দুর্গ থেকে বেড়িয়ে হেঁটে হেঁটে হোটেলে চলে এল । হোটেলের ঘরে বসে চা খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে ওরা লক্ষ্যই করে নি যে কখন রাত দশটা বেজে গেছে । রুদ্র হঠাৎ ঘড়ি দেখে বলল, “ কি রে, রাত দশটা বাজে, sir তো ফিরল না । এত রাত করছেন কেন ? উনিই তো বললেন রাতে ওখানে থাকতে দেয় না । তবে এত দেরী কেন করছেন ? ” ওরা ক্রমশ চিন্তিত হয়ে পড়ে । sir কে ওখানে একা ছেড়ে আসা একদম উচিত হয় নি । রাত সাড়ে এগারোটা …. বারোটা – না sir এখনো ফেরেন নি । ওরা ঘরে বসে গভীর চিন্তামগ্ন । একটা অজানা ভয় যেন সারা ঘরটাকে গ্রাস করেছে । হঠাৎ দরজায় কেউ কড়াঘাত করে, ওরা সচকিত হয়ে ওঠে । এত রাত্রে কে এসেছে ? তবে কি sir ফিরেছেন ? তাড়াতাড়ি নীলাদ্রী উঠে গিয়ে দরজা খোলে, দেখে sir দাঁড়িয়ে । কিন্তু স্যারকে যেন কেমন কেমন লাগছে, চুল উস্কো-খুস্কো, এক দৃষ্টিহীন দৃষ্টিতে যেন তাকিয়ে । ওরা কিছু বলে ওঠার আগেই স্যার বলেন, “শোনো, তোমরা চলে আসার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে । দুর্গের পশ্চিম দিকের ওই পিচ্ছিল জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আমার মতোই আরেকজন সূর্যাস্তের ফটো তুলছিলেন ।হঠাৎ করে পা পিছলে তিনি দ্বোতলা থেকে পড়ে যান । তারপর শুধু একটা আর্তনাদের আওয়াজ শুনেছি । আমি তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসে দেখি, ততক্ষনে সব শেষ । কিন্তু জান, উনিও আমার মতো খ্রিষ্টান । so, my son, মানুষের শেষ সময় যে পাশে দাঁড়ায়, তার মধ্যেই তো আছেন ঈশ্বর । আমি ওনার দেহ দুর্গের বাইরে রেখে এসেছি, বাকী কাজটুকু তোমাদের করতেই হবে । একজন মানুষ হিসেবে আর আমার প্রিয় ছাত্র হিসেবে এটা তোমাদের করতেই হবে শক্ত মনে । ধরো, It is my order.” ওরা প্রত্যেকে ওদের প্রিয় স্যারের কথা মেনে নেয় ও স্যারের সাথে দুর্গে পৌঁছায় । স্যারের তত্তাবধানে ও নির্দেশে ওরা মাটি কেটে গর্ত করে ।গর্ত হয়ে গেলে sir বলেন, “যাও, তোমরা মৃতদেহটা নিয়ে এসো । আমি এখানেই আছি ।” ওরা অন্ধকারের মধ্যেও হাতে হাত লাগিয়ে মৃতদেহটা গর্তের কাছে এনে দেখে, স্যার সেখানে নেই । অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা ।ওরা torch জ্বালিয়ে জোরে জোরে ডাকতে থাকে, “স্যার, স্যার, আপনি কোথায় গেলেন, স্যার? ” কিন্তু স্যারের তো কোনো চিহ্নই কোথাও নেই । এত রাত্রে ওদের এখানে একা রেখে স্যার গেলেন কোথায়? ওদের এবার বেশ ভয় করতে লাগল । হঠাৎ সূর্যের torch’র আলোটা অলক্ষ্যে গিয়ে মৃতদেহের মুখে পড়ে । আর সেদিকে চোখ যেতেই ওরা নিস্তব্ধ, নির্বাক, বধির হয়ে যায় । এ কি করে সম্ভব? এক মুহূর্ত আগেও যে মানুষটা ওদের সাথে ছিল, যার নির্দেশে তারা এতকিছু করল, এই মৃতদেহটি আর কারোর নয়, সেই জর্জ স্যারেরই । মাথার চারদিকে রক্ত শুকিয়ে আছে । কিন্তু,মুখে কোনো বিকৃতি নেই । ঠোঁটের কোণে এখনো যেন মিষ্টি হাসি লেগে আছে । তবে যে মানুষটি তাদের এখানে নিয়ে এলেন, তিনি কে ? কিন্তু ওদের তখন র কথা বলার সামর্থ্য নেই । ওদের চোখ দিয়ে শুধুই জল পড়ছে অবিাম ধারায় । ওরা নিস্তব্ধ ভাবে পরম যত্নে স্যারের মৃতদেহটা নির্দিষ্ট জায়গায় শুইয়ে মাটি ঢেকে দেয় । তখন পূবের আকাশ ক্রমশ সূর্যের আভায় লাল হতে শুরু করেছে । ওরা গাছের সরু ডাল ভেঙে একটা ক্রস তৈরী করে স্যারের সমাধির উপর পুঁতে দেয়, কিছু বন্য ফুল পরম শ্রদ্ধায় সাজিয়ে দেয় স্যারের সমাধির উপর আর প্রিয় স্যারের পবি্ত্র আত্মার শান্তি কামনায় নতজানু হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে । হঠাৎ স্যারের সমাধির পাশে রুদ্র একটি চিরকূট পায়, সবাইকে ডেকে চিরকুটটি খুলে দেখে sir ’র হাতের লেখা – “ let there be light…… Amen . ” আকাশের চিরপথিক সূর্যের লাল আভাটা যেন আজ ওদের চোখের জলের সাথে মিশে ধূয়ে যাচ্ছে । আকাশের সূর্যটা আর জর্জ স্যার আজ ওদের কাছে সমার্থক ।