মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২০১- রাফির স্বপ্নপূরণ

লিখাঃ অর্থহীন আদি(তন্ময়)


ছোটবেলা থেকেই রাফির স্বপ্ন ছিল
ইঞ্জিনিয়ার হবে।ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার
তেমন কোন সামর্থ্যই ছিল না তার।
মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেরা এমনই।
তবে ছেলে হিসাবে সে ভদ্র, ছাত্র
হিসাবেও অত্যন্ত মেধাবী ছিল।সেই
রাফিই আজ মস্তবড় ইঞ্জিনিয়ার।
চলে যাই কয়েকবছর আগেকার ঘটনায়....
এস এস সিতে আশানরূপ ফলাফল
করতে না পারলেও এ+ পেয়ে ভাল
একটা কলেজে ভর্তি হয়েছিল রাফি।
রাফির বয়স যখন ১২ তখনই তার
বাবা মারা যান।পরিবারের সমস্ত ভার
এসে পড়ে রাফির মায়ের উপর।
পিচ্চি বোন,রাফি এবং তাদের মা।এই
তিন সদস্য নিয়েই রাফির পরিবার।
অধ্যবসায়ের দরুণ ইন্টারে আশানরূপ ফল
করতে সক্ষম হয়েছিল রাফি।এবার
রাফির স্বপ্নপূরণের সময় হয়েছে।মায়ের
ইচ্ছে ছেলেকে মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার
বানাবেন।দারিদ্র্যের চরম
কষাঘাতে ভাল কোন
কোচিং সেন্টারেও এডমিশন
নিতে পারেনি রাফি।
কলেজের তনয় স্যারের সহযোগীতায়
নিজেকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য
করে তুলছিল রাফি।তনয় স্যারের জন্যই
কলেজের লেখাপড়া চালিয়ে এ পর্যন্ত
আসতে পেরেছে সে।রাফির যখন যে বই
দরকার,যা দরকার কোন কিছুর অভাব
বুঝতে দেননি এই তনয় স্যার।আজ রাফির
বাবা বেঁচে থাকলে যা করতেন তনয়
স্যার ঠিক সেই ভূমিকাই পালন
করেছিলেন বা এখনও করে আসছেন।
দিনটি ছিল মেঘাচ্ছন্ন। সকাল থেকেই
টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছিল।আজ রাফির স্বপ্ন
পূরণের দিন চলে এসেছে।ভদ্র ও
মেধাবী হলেও রাফির একটা মারাত্মক
বদঅভ্যাস ছিল।সেটা হল আলসেমি।এই
আলসেমি করে সকাল বেলায়
দেরি করে ঘুম থেকে উঠার জন্য কতবার
যে বিছানায় গোসল করেছে তার
হিসেব একমাত্র রাফি আর তার মা-ই
ভাল জানেন।
সকাল সকাল রাফিকে পড়ার
টেবিলে দেখে তার মা তো অবাক।
রাফির জীবনে এটাই প্রথম সকাল
যে সকাল এসেছে একটা নির্ঘুম রাতের
অবাসানের পর।
-- কিরে,এত সকালে পড়ার টেবিলে?
-- হুম,মা।
-- ঘটনা কি?
-- আজ না ভর্তি পরীক্ষা,ভুলে গেছো?
-- না,ভুলি নি।তবে তুই এত সকালে পড়ার
টেবিলে ব্যাপারটা কেমন কেমন
লাগছে আমার কাছে।
-- কেমন কেমন লাগার কি আছে?
-- থাক,পরে কথা বলব।তুই মনোযোগ
দিয়ে পড়,আমি তোর জন্য খাবার
তৈরি করছি।
৯টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষ
করে বাসা থেকে বের হয় রাফি।তারপর
সোজা চলে যায় রিমির
সাথে দেখা করার জন্য।
বলে রাখা ভাল,এ গল্পের অন্যতম চরিত্র
হল রিমি।রাফির ভালবাসার মানুষ।দশম
শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এদের প্রেম
শুরু হয়।এস এস সি পরীক্ষা শুরু হবার আগের
দিন এদের প্রথম ব্রেক আপ হয়।পদার্থ
পরীক্ষার আগের দিন আবার ব্রেক আপ
পর্বের ইতি ঘটে।আবার শুরু হয় প্রেম।
এভাবে ব্রেক আপ,হাসি-
খুশি এবং ঝগড়া-ঝাঁটির মাধ্যমেই
তাদের রিলেশনশীপ এপর্যন্ত
গড়িয়েছে।
-- খাইছো?
-- মা,খাইয়ে দিছে
-- সবকিছু মনে করে নিয়েছেন?
-- আবার আপনি?
-- কথার উত্তর দাও
-- হুম,নিছি।
-- এবার যাও তবে
-- কোথায়?
-- ভাগাড়ে (মুক বাকানোর ইমু হবে)
-- আচ্ছা
-- মানে কি? তোমার
দেরি হয়ে যাচ্ছে তো,তাড়াতাড়ি যাও
-- ভাগাড়ে না? হুম,যাচ্ছি
-- গাধা,আমি মজা করছিলাম
-- হে হে আমিও (দাঁত বের করে হাসি)
যাই......
-- সবঠিক মতন দিও কিন্তু।আর খবরদার
হলে অন্য কোন মেয়ের দিকে ভুলেও
তাকাবা না।কাউকে কোন সাহায্য
করবা না।
-- যথা আজ্ঞা
যথাসময়ে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়
রাফি।অধিকাংশ অবজেক্টিভই
দেখছে ওর কমন আছে।
ধীরে সুস্থে পরীক্ষা দিয়ে বাসায়
চলে আসে রাফি।
আজ রবিবার।রবিবার কোন বিশেষ কিছু
না।বিশেষ কিছু হল আজ রাফির
ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।
এদিকে রাফির মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।
হাসপাতালে দৌড়া-দৌড়ি,মায়ের
সেবা এসব কিছু করতে গিয়ে আজকের
দিনটির কথা ভুলেই গিয়েছিল রাফি।
রিমি কিন্তু ভুলে নি।
সে যথাসময়ে রাফির রেজাল্ট জানার
জন্য প্রচেষ্টা শুরু করে দেয়।
রাফির রেজাল্ট জানার পর নিজের
চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিল
না রিমি।বুয়েটের টপ টেন
লিস্টে রাফির স্থান
দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিল
না রিমি।হাসপাতালে এই খুশির
সংবাদটা দিতে যাওয়ার পর
সে একটা থমথমে পরিবেশ অনুভব করে।
রিমিকে দেখার পর কান্না আরম্ভ
করে রাফি।
রিমি ভেবেছে রাফি তার
রেজাল্টের কথা জানার পর
আনন্দে কাঁদছে।কিন্তু না,এটা আনন্দের
কান্না না।শোকের কান্না।কোন কিছু
আর বুঝতে বাকি রইল না রিমির।
রাফির মা মারা গিয়েছেন।এ
পৃথিবীতে রাফির একমাত্র আপন ছিল
তার মা।উনিও
তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
অন্ত্যেষ্টিক্রি
য়া শেষে বাড়ি চলে আসে রাফি আর
তার ছোট বোন।মা হারানোর শোক
অনুভব করার বয়স এখনও রাহার হয়নি।
রাফির ছোট বোনের নাম রাহা।
এতকিছুর মাঝে রাফিকে তার
রেজাল্টের
কথা জানাতে ভুলে গেছিল রিমি।
-- রাফি....
-- (ভাঙ্গা কন্ঠে) হুম বল
-- তোমার রেজাল্ট কি?
-- কিসের রেজাল্ট?
-- ভর্তিপরীক্ষা
-- আমার দ্বারা কিছুই হবে না রিমি।
আমি আসলেই একটা হতভাগা।
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে।আজ
মাকে...
কথা বলতে বলতে আবার কান্না শুরু
করে দিল রাফি
-- একটা কথা বলি?
-- হুম
-- তুমি তো....
-- আমি,কি?
-- বুয়েটে তোমার স্থান নবম
-- এটা মজা করার সময় না রিমি
-- জানি।আমি একমদই মজা করছি না
-- সান্তনা দিয়ে আর কি লাভ,রিমি?
-- এই নাও পেপার।নিজের চোখেই
দেখে নাও
-- পেপারে নিজের রোল
নম্বরটা দেখে নির্বাক হয়ে রইল রাফি।
তারপর রোল নম্বরটার অবস্থান
দেখে আরেকটা বড় রকমের ধাক্কা খায়
রাফি
-- হয়েছে,বিশ্বাস?
-- হুম
রিমিকে জড়িয়ে আবার কান্না শুরু
করে দেয় রাফি
-- এখন আবার কি হল?
-- আজ যদি আমার
মা বেঁচে থাকতেন,তাহলে.....(কান্নার
ইমু)
-- তোমার মা উপর থেকে সব
দেখছেন,চিন্তা করো না।উনি খুব
খুশি হয়েছেন তোমার রেজাল্ট দেখে
এভাবে বিভিন্ন রকমের
সান্তনা দিয়ে রাফির কান্না থামায়
রিমি।অবশেষে রাফির স্বপ্ন
বাস্তবে পরিণত হল।বুয়েট
থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করার পর
একটা বড়
কোম্পানিতে চাকরী পেয়ে যায়
রাফি।
রাফির এ মহৎ কীর্তির কথা রিমির
পরিবারের কেউই জানতো না।আর
রিমির বাবা এমনিতেও
রাফিকে দুচোখে দেখতে পারতো না।
রিমির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে তার
পরিবার।এদিকে রিমির
সাথে অনেকদিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল
রাফির।রিমি ভেবেছিল ভাল
চাকরী পেয়ে,অর্থসম্পদের মালিক
হয়ে রাফি হয়ত রিমিকে ভুলেই গেছে।
আজ রিমির বিয়ে।বিয়ের দিনই ঘটল এক
বিরাট কান্ড।বিয়ের আসরে রিমি ও
তার পরিবারের সামনে উপস্থিত হয়
রাফি।কোনকিছু আর বুঝার বাকি রইল
না তার।রাফিকে দেখে রিমির
বাবা আবারো ক্ষেপে গেল...
-- এই অনাথের বাচ্চা,তুই এখানে কিজন্য
এসেছিস?
-- রিমিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য
-- এ্যা,শখ কত।যা ভাগ এখান থেকে।তোর
সাহস হল কিভাবে এতবড় কথা বলার?
-- (নিশ্চুপ হয়ে রইল রাফি)
রিমি সবকিছু জেনেও চুপ করে রইল।
রিমি রাফির বর্তমান
অবস্থা বলতে যাবে ঠিক এসময়েই
রিমির হবু বর (রিয়াদ) রাফিকে সালাম
দিয়ে বলল....
-- স্যার,আপনি এখানে?
-- হুম,তুমি?
-- ইয়ে মানে আজ আমার
বিয়ে তো তাই।
রিমিকে দেখিয়ে বলল রিমিই তার বউ
হতে যাচ্ছে।রাফিকে স্যার
ডাকতে দেখে রিমির
বাবা রিয়াদকে বলল....
-- বাবা,এই অনাথটাকে তুমি স্যার
বলছো কেন?
-- না আঙ্কেল,উনি তো আমাদের
কোম্পানির কম্পিউটার
ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে একজন।
আমি উনার আন্ডারে কাজ করছি।
রাফি স্যার আমাদের কোম্পানির
সিনিয়র অফিসার।
-- রাফির কথাগুলো বুলেটের মত তীব্র
গতিতে রিমির বাবার কানে প্রবেশ
করে।
সবকিছু জানার পর রাফির
কাছে ক্ষমা চাইতে গেলেন রিমির
বাবা।অতঃপর রাফির সাথেই রিমির
বিবাহ কার্য সম্পাদিত হল।
ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর রিমিকে বউ
বানানো,,সব স্বপ্নই বাস্তবে রূপায়িত
করে ফেলল রাফি।হয়ে গেল রাফির
স্বপ্নপূরণ।।