মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৬১- মেয়েটি

লেখা-- Kais Rayhan

সময়টা রাত। ঠিক রাত না। মধ্যরাত। বাস
খুব স্পিডে চলছে। জানালার এক কোনা খোলা ছিল। সেখান
দিয়ে বাতাস ঢুকছে। শরীরটা শির শির করার মতো বাতাস।
হালকা হালকা কেপে উঠছে শরীর।
বাসের মৃদু আলোতে বুঝতে পারলাম
হাতের লোমগুলো দাড়িয়ে গিয়েছে। মেয়েটার খুব আবদার। কিছু হলেই
কান্না করে দিত। আমি একদমই চুপচাপ
থাকতাম। আর সেই আমি এত বড়
একটা কাজ করে বসবো কে জানে।
প্রথম দেখাটা মনে পরে। খুব সাদাসিধে একটা মেয়ে। ক্লাস
শেষে বসে ছিলাম। হুট করে এসে বলে ভালোবাসি।
মনে মনে ভাবলাম হয়তো একটু বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। তাই
বলে ফেলেছে। নয়তো মেয়েরা মরে যাবে তাও ভালোবাসি বলবে নাহ।
তবে মেয়েটার চোখের চাহনি খুব
ভালো লেগেছিল। সেদিন থেকেই
কথার ঝুরি খুলা হয়ে গেলো। খুব ছোট্ট বেলাতেই
বাবা মা মারা যায় আমার। মামার কাছে বড় হই। সবাই
বলে মামারা নাকি ভালো হয় নাহ। মোটেও নাহ। আমার
মামা আমাকে মা বাবার অভাব বুঝতেই দেয় নি।
আমি খুব একগুঁয়ে। মেয়েটা একটা সময়
আমাকে সহ্য করতে পারতো নাহ। কিন্তু
কেন জানি ছেড়ে যায় নাহ। মনে পরে।
সেদিন খুব কাঁদে মেয়েটা। কি আর
করার। আমারও কেমন জানি লাগছিল।
বুকে হাহাকার হলে যেমন লাগে ঠিক
তেমনটাই লাগছিল। মাথায় কি যেন
একটা ভুত চাপলো। রাস্তা ভর্তি কাদার
মাঝেই মেয়েটার সামনে হাটু
গেড়ে বসে পড়লাম।
রাস্তাটা খুব ব্যাস্ত ছিল। কিন্ত হঠাৎ
করে এমন বসে পড়ায় সবাই এক মিনিটের
মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমার তো লজ্জায় রীতিমত অবস্থা খারাপ। কিন্তু মেয়েটা আমার
অবস্থা দেখে কান্না থামিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। হাসিটা কেন
জানি খুব ভালো লেগেছিল। সেই থেকেই
ভালোবাসি মেয়েটাকে। একদিন
রিকশায় ঘুরছিলাম। মন খারাপ ছিল
মেয়েটার। অপরাধটা অবশ্য আমার ছিল।
আমি নাকি মোটেও রোমান্টিক নাহ। রোমান্টিক হলে নাকি রিকশায়
নিয়ে ঘুরতাম। তাই ভাবলাম
রিকশা ভ্রমনটা সেড়ে ফেলি। নাহ রিকশা ভ্রমন শেষেও মেয়েটার মন
খারাপ দূর হলো নাহ। সময়টা বিকাল ছিল।
খোলা মেলা একটা মাঠে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত
দেখছি দুজন। মেয়েটা বড্ড বেশি মন খারাপ করে ফেলেছে।
চারপাশে তাকালাম। দেখলাম কেউ
আছে নাকি। নাহ কেউ নেই। ঠোট
ছুঁইয়ে দিলাম মেয়েটার ঠোটে। ফেরার
পথে দেখি মেয়েটা চুপ হয়ে আছে।
ঠোটে মুচকি হাসি। চেহারাটা অসম্ভব
রকম লাল হয়ে আছে। শ্যামলা রঙের
মেয়েরা লজ্জা পেলে এত লাল হয় জানা ছিল নাহ।
একদিন পাগলামি করে বসি। হুমম আমি।
মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
কি করা যায়। কিছুই বুঝতে পারছিলাম
নাহ। কি আর করবো। পাগলের মতো হাত
আর ব্লেড নিয়ে কাপুরুষ এর মতো বসে পরি।
বাম হাতে এখনো কাটা দাগটা আছে।
খুব বকা খেতে হয় মেয়েটার কাছে। ঐদিনই প্রথম লজ্জার
মাথা খেয়ে মামার সামনে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই।
বলে ফেলি যে তোমাকে ছাড়া বাচা সম্ভব নাহ। কিভাবে যেন মামা বিয়ের
শানাইয়ের ব্যাবস্থা করে ফেলেন। তেমন কিছুই করতাম নাহ।
ছোটখাটো একটা চাকরী। মাস শেষে সাত হাজার টাকা বেতন।
মেয়েটার কষ্ট হয়। তবু ঘুমাতে যাওয়ার
সময় প্রতিদিন দেখি খুব শক্ত করে আমার
হাতটা ধরে রাখে। ঘুমের মাঝেও শক্ত হয়ে থাকে হাতটা।
খারাপ সময় আসে। মেয়েটার খুব বড়
একটা সমস্যা হয়। দোষটা নিজের কাধে চাপিয়ে নেই। ক্ষতি নেই।
ভালোবাসাকে বাড়তে সুযোগ
দিলাম। বেড়েও গেলো। মেয়েটা ঘুরতে খুব ভালোবাসে।
গতকাল হুট করেই বললাম ব্যাগ গুছাতে। মেয়েটা অবাক
হয়ে জিজ্ঞাসা করে কেন? আমি বললাম যে অফিস আর
ভালো লাগে নাহ। মেয়েটা বুঝতে পেরেছিল আমার কথা।
চোখের পানিতে চিক চিক একটা ভাব
চলে আসে। প্রিয় মুখ খুশি হলে বুঝি আনন্দে চোখের
পানি চিক চিক করে। জানালার কোনা দিয়ে বাতাস আসার
কারনে মেয়েটার চুলগুলো মুখে এসে পরছে। চুল
গুলো সরাতেও পারছি নাহ। আমার বাম হাতের উপর
মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা। ডান হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।
ছুটানোর উপায় নেই। ভালোই লাগছে। চুলগুলো মুখের উপর
না পড়লেই মনে হয় খারাপ লাগতোহ। বাইরে হালকা হালকা আলো দেখা যাচ্ছে।
সকাল হচ্ছে। সোনালী সকাল। সোনালী সকালে সমুদ্র দেখলে মনে হয়
মেয়েটা অনেক খুশি হবে.........