মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৪৪- মৃত্তিকা

-আচ্ছা আমাকে তোর ভালো লাগে?
হঠাৎ করে প্রশ্ন করে বসে মৃত্তিকা। ইমন
ছেলেটা অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।
কি বলবে বুঝে উঠতে পারে নাহ।
-আচ্ছা আমি যাইরে টিউশনের সময়
হয়ে গিয়েছে
-আমি এই নিয়ে কত বার জিজ্ঞাসা করলাম?
-হয়তো পাঁচ বারের মতোন
-তোর ইচ্ছে করে নাহ আমাকে ভালোবাসতে?
-করে
-তাহলে করিস না কেন?
-আসলে জানিস মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেরা সব কিছু পারে নাহ
-কি পারে নাহ? প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই
এলোমেলো ভাবে হাটতে হাটতে চলে যায় ইমন। পা গুলো যেন ঠিক মতো পরছে নাহ।
পিছন থেকে তাকিয়ে থাকে মৃত্তিকা ইমনের
চলে যাওয়ার পথে। মৃত্তিকা যখনই
ছেলেটাকে ভালোবাসার কথা বলবে তখনই ছেলেটা জানি কেমন
হয়ে যায়। চোখে কেমন জানি ভয়
থাকে। মৃত্তিকা সেই ভয় দেখতে পায়।
ইমন কিছুই প্রকাশ করে নাহ। ইমনের
চোখের ভয়গুলো দেখে দিন কাটে মৃত্তিকার।
প্রায় দু বছরের বন্ধুত্ত ওদের। ভার্সিটিতে এক বার এক প্রজেক্ট এর
কাজের মাধ্যমে দুজনের দেখা হয়। প্রথম দিনেই সজোরে একটা থাপ্পড় দেয়
ইমনকে। আসলে পিছনের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরে যেতে নেয়
মৃত্তিকার উপর। পরে নাহ। কিন্তু মৃত্তিকার হাতে থাকা সাইন্স প্রজেক্ট
টা পরে ভেঙে যায়। ছেলেটা একটু পরিমাণ শব্দ না করেই
চলে যায়। প্রজেক্ট এর ভাঙা টুকরো গুলো উঠাতে গিয়ে রক্ত আবিষ্কার করে ফ্লোরে।
ছেলেটা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ
উঠিয়ে ফেলে। এই দুই বছরের বন্ধুত্বে ইমন কখনোই কিছু
দাবি করেনি। সেদিন রাতেও মৃত্তিকা জেদ ধরে চা খাবে।
রাতে প্রায় আড়াইটা। কোনো স্টল খোলা না পেয়ে নিজেই
চা বানিয়ে নিয়ে যায়। চা দিয়ে আসার সময় একটা শব্দও
করেনি ছেলেটা। ছেলেটা কেমন জানি। অনেক
জানতে চেয়েছে মৃত্তিকা। কিছুই বলেনি ইমন। মাঝে মাঝে খুব অসহ্য
লাগে ছেলেটাকে। সেদিন বিকেল বেলা পার্কের বেঞ্চে বসে গল্প করছে ওরা। মৃত্তিকার
হাতে ইমনের হাত। ইমনের মুখে অস্বস্তিকর একটা ছাপ।
-শোন ইমন তুই তো কোনোদিন আমাকে বলবিনা যে তুই
আমাকে ভালোবাসিস। তাই আমিই বললাম তোকে ভালোবাসি।
-ও আচ্ছা
-তুই এমন কেন?
-কেমন?
-এই যে অনুভুতি হীন
-নিউরন গুলো হয়তো কাজ করে নাহ
-আমাকে বউ বানাবি?
-নাহ
-কেন?
-হাতটা ছাড়বি?
-নাহ জোড় করে হাতটা ছাড়িয়ে নেয় ইমন। ছেলেটা কেন যেন ভয়ে কুকড়ে থাকে।
-আমি উঠিরে
-কেন?
-একটা কাজ বাকি আছে
-কি কাজ আমাকে বল
-নাহ এখন নাহ। সময়
আসলে জানতে পারবি
-এখন বল
-নাহ
হালকা মৃদু হেসে উঠে পরে ইমন।
মৃত্তিকা যেন আজ এক নতুন ইমনকে দেখছে। খুব অবাক হলো ইমনের
হাসি দেখে। হাসিতে রহস্য ছিল। তাই
হয়তো আর পিছু ডাক দিল নাহ। কিন্তু ছেলেটা একই। ছেলেটার হাটা আজও
এলোমেলো। একটুও ব্যাতিক্রম নাহ।
সপ্তাহ খানিক ইমনকে আর খুজে পাওয়া যায় নাহ। অস্থিরতায়
ভোগে মৃত্তিকা। নাহ এবার দেখা হলে সরাসরি থাপ্পড় মারবে সে।
ছেলেটা আসলেই বড্ড খারাপ। বেশ কিছুদিন পর মৃত্তিকার বাসায়
একটা কুড়িয়ার আসলো। সে কিছু বই
অর্ডার করেছিল তাই হবে হয়তো।
মেয়েটা বই পড়তে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু নাহ।
কাগজে মোড়ানো প্যাকেটে কোনো বই ছিল নাহ। একটা ডায়েরী ছিল।
ডায়েরী টা ২০১১ সালের। খুলে উল্টালো ডায়েরী টা। লাল
কালিতে লিখা
"তোর অথবা তোমার জন্য" প্রথম পৃষ্ঠার লিখা পড়া শুরু করলো।
" আমি জানি আমি তোর সাথে অনেক খারাপ আচরণ করি। একটা কারন আছে। তুই
যেমন আমাকে ভালোবাসিস আমিও একটা মেয়েকে ভালোবাসি। তুই
আমাকে তোর ভালোবাসার কথা বলেছিস কিন্তু আমি এখনো সেই মেয়েটিকে আমার ভালোভাসার কথা বলিনি। জানিস মেয়েটার নাম
অনেক সুন্দর। জানিস তার নাম কি। তার
নাম হলো..................... "
ডায়েরী টা ঠাস করে বন্ধ
করে রেখে দেয়। আর পড়তে পারছে নাহ
মৃত্তিকা। লিখাগুলো যে ইমনের
তা বুঝতে ভুল হয়না মেয়েটার। কিন্তু এমন
কেন করলো ইমন। চোখের
পানি বুঝি থামছেই নাহ।
দুপর গড়িয়ে বিকেল হলো।
বালিশটা অনেকটা ভিজে গেছে চোখের
পানিতে।
কান্না মাখা চোখে ডায়েরীর প্রথম
পৃষ্ঠাটা আবার খুলে।
নামটা দেখা লাগবে। ইমনকে তোহ
কনগ্রাচুলেশন জানাতে হবে। প্রথম
পৃষ্ঠায় নামটা নেই। দ্বিতীয়
পৃষ্ঠা উল্টাতেই " মৃত্তিকা"
নামটা ভেসে উঠলো।
মৃত্তিকার চোখ যেন বড় বড় হয়ে গেলো।
পুরো ডায়েরী জুড়ে শুধু "মৃত্তিকা"
লিখা। প্রতিটা পৃষ্ঠায় একই নাম। এখন
তো আনন্দে মুখে হাসি আসার কথা।
কিন্তু মেয়েটা তখনো কান্না করছে।
ইমনকে সাথে সাথে ফোন দেয় মৃত্তিকা।
-হ্যালো ওই তুই কই?
-তোর বাসার সামনে। সেই দুপুর
থেকে দাড়িয়ে আছি।
-তুই দাড়া আমি এখনি আসছি।
বাসা থেকে বের হলো। মেয়েটার
চোখের পানি যে চিক চিক
করছে সেটা ভালো করেই
বুঝতে পারছে ইমন।
মেয়েটা কাছে এসেই "তুই একটা শয়তান
" বলে থাপ্পড় মারলো ইমনকে।
-আগে বললে কি হতো?এত
নেকামি করা লাগে? তুই আর কখনোই আমার সাথে দেখা করবি নাহ কথাও
বলবি নাহ
-আচ্ছা।
ইমন হাটা দেয়। থামিয়ে দেত মৃত্তিকা।
-আমাকে জড়িয়ে ধরবি নাহ?
-এটা তোহ পাব্লিক প্লেস
-তোহ কি হইসে। জড়িয়ে ধর!
ইমন জড়িয়ে ধরার আগেই মেয়েটা জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।
-এই মৃত্তিকা আসতে কাঁদ। চোখের পানি দিয়ে তোহ শার্টটা ভিজে যাবে।
-ভিজুক। মৃত্তিকা আরো জোরে কান্না করা শুরু করে দেয়.......