মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৮৫- ভালবাসার গুন্ডা

লিখা : নূরুজ্জামান ভূইয়া ।


-এই রবিন শোন !
~কি বলবি ? জলদি বল, আমার কাজ
আছে !
-তোর আবার কাজ ? এখন
যাবি রনি,মাহিন, আর কি যেন নামটা ?
ও বাপ্পী- ঐই গুন্ডা পোলাদের
সাথে গুন্ডামি করবি এইতো কাজ,
তাইনা ?
~গুন্ডামি করলে আমি করব তোর কোন
সমস্যা ? আর শুন রিয়া, তুই
ওদেরকে খারাপ ভাবতে পারছ, কিন্তু
তারা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড !
-গুন্ডাদের বেস্ট ফ্রেন্ডরা তো গুন্ডাই
হবে ।
~কি আমি গুন্ডা ?
তো আমাকে ডাকছিস কেন,
গোন্ডাদের সাথে তোর কি কথা ? ধূর
ফালতু ! মোডটাই দিল নষ্ট কইরা !
কেন যে ফালতুদের
কথা আমাকে শুনতে হয় ।
কথাগুলো বলে নিজের গন্তব্যের
দিকে রওনা দিল রবিন । তার জন্য
বসে আছে রনিরা । আজ সবাই
মিলে শহরের কৃপন লোকটার গাছ
থেকে ডাব
পেরে খাবে বলে কথা ছিল !
তাই একটু আগে গিয়েই
বসে মিটিং করতে লাগল !
এদিকে রিয়াও রবিনের কোন
পাত্তা না পেয়ে মন খারাপ করেই
চলে আসল ।
রবিন খুব চটপটে স্বভাবের একটা ছেলে ।
দেখতে যেমন তার উচ্চতা-তেমনি সুদর্শন
। বন্ধুদের সাথে আড্ডা,গান আর
ঘুরাঘুরি করতে সে ভীষন ভালবেসে ।
আর বেশিরভাগ সময়ও কাটে বন্ধুদের
সাথে দুষ্টামি, খেলাধুলা আর অন্যের
গাছের ফলচুরি করে খাওয়াতে ।
পড়ালেখায় ভালই মেধাবী সে ! কিন্তু
দুষ্টামিতে একদম পটু সে ।
কলেজে দুষ্টামির জন্য অনেক বার
প্রিন্সিপাল স্যারের হাতে মারও
খেতে হয়েছে, কিন্তু তার
দুষ্টামি এতটুকুও কমেনি । দুষ্টু
হিসেবে কলেজে অনেক
মেয়েরা তাকে এক নামেই চিনে,
কিন্তু আজ অবধি অনেক মেয়েই
তাকে প্রপোজ করেছে !( মেয়েদের এই
উদ্ভূদ আচরণটা আমার কাছে বড়ই অবাক
লাগে । যে ছেলেটাকে একটু শয়তান
টাইপের দেখে সেই ছেলেটাকেই ভাল
পায় ।) সে প্রেম বিষয়টাকে তেমন
পাত্তা দেয়না ।
অন্যদিকে শান্ত শিষ্ট স্বভাবের
রিয়া নামের মেয়েটাও পড়ালেখায়
অনেক মেধাবী । রবিন আর রিয়া একই
সাথে পড়ালেখা করে, তাই তাদের
মধ্যে তুই তুকারি সর্ম্পক ।
অন্যদিকে রিয়া, রবিনে ফুফাতো বোন
। দেখতে সে কম সুন্দরি নয় ।
কলেজে অনেক ছেলে তাকে ডিস্টার্ব
করেছে, যেইনা রবিনের কাজিন
পরিচয়টা জানতে পারত- এমনি লেজ
গুটিয়ে পিছিয়ে পড়ত !
রিয়ার জীবনে এখনো প্রেম আসেনি ।
কিন্তু মনের অজান্তেই
রবিনকে ভালবেসে ফেলে । কিন্তু মুখ
ফোঁটে কোনোদিন বলতে পারেনি ।
আবার যখনি রবিনের খুব
কাছে যেতে চাইত, রবিনটা কোন একটা কাজ দেখিয়ে দূরে সরে যেত !
রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে, বিছানায় শুয়ে রবিনের কথাই
ভাবতে লাগল রিয়া । কীভাবে রবিনকে বলা যায় তার
ভাললাগার কথাটা ? তার বন্ধুদের হেল্প নিলে অবশ্য ভাল হবে, কিন্তু রবিনের
সাথে ওর বন্ধুদেরকে গুন্ডা বলে দিয়েছে, রবিন
যদি বলে দেয়- তবে তো তারা হেল্প করবে না ।
চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল রিয়া ।
হারিয়ে গেল তার স্বপ্নের পুরুষটিকে নিয়ে স্বপ্ন রাজ্যের ভূবনে ।
পরের দিন রিয়া তখন কলেজে গেল !
প্রথম ক্লাসটা শেষে একটা গাছের নিচে বাতাসে এসে দাড়াল ।
একটা ছেলে কেমন
জানি উসকো ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
ছেলেটাকে দেখতে মাস্তান টাইপের দেখতে পেল সে ।
ছেলেটা পাশে থাকা আরেকটা ছেলেকে রিয়াকে ইঙ্গিত
করে দেখাল । তারপর রিয়া সেখান
থেকে চলে আসল । কলেজের ওপাশটায়
এসে দেখল রবিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে,কিন্তু কিছু
না বলে একটা গাছের নিচে বসে পড়ল
রিয়া । কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করল মাস্তান টাইপের ছেলেটা তার
পিছনে এসে দাড়িয়ে আছে ।
-এই মেয়ে তোমার নাম কি ? মাস্তান
টাইপের ছেলেটা রিয়াকে প্রশ্ন
করলো ।
~কেন আপনাকে নাম বলতে হবে কেন ?
-তোমাকে আমার ভাল লাগছে !
আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি !
~আমি কি বাজারের পণ্য যে, আপনার
ভাল লাগলেই যা মন চাই তাই
বলে দিবেন । ওদের কে ডাকব ! না এখান থেকে চলে যাবেন ?
রবিনদের দিকে ইঙ্গিত করে দেখাল
রিয়া ।
-কেন ওদের কে কি আমি ভয় পায়
নাকি ? এই পোলাপান এদিকে আস ।
রবিনদেরকে ডাকল ছেলেটা । রবিন দূর
থেকে অনেকক্ষণ লক্ষ্য করছিল ! এবার
কাছে এসে বলল কি হয়েছে ? ডাকছিস কেন ?
-তোদের কথা বলল এই মেয়েটা !
ওকে দেখে রাখিছ, ওরে আমার ভাল
লাগছে ! রবিন সহ্য করতে পারলোনা । মুহুর্তের
মধ্যে ছেলেটার উপর ঝাপিয়ে পড়ল ।
তার বন্ধুরাও ছেলেটাকে বেদম
পেটালো । ছেলেটা অনেক মার খেয়ে কুড়িয়ে-
কুড়িয়ে চলে গেল । নিজের প্রিয়
মানুষটার হিরোগিরিটা কাছে থেকেই খুব
উপভোগ করল রিয়া । সেদিন খুশি মনেই রবিনকে একটা ধন্যবাদ
দিয়ে বাড়ি ফিরল রিয়া ।
বিনিময়ে পেল একটা কোচা, সেদিন না বললি আমরা গুন্ডা- এখন দেখ
গুন্ডাদেরই কাজে লাগল । বিকেল বেলায় রবিন আর
রনি একটা ব্রীজের উপরে বসেছিল । এমন সময় কয়েকটা ছেলে রবিন আর
রনিকে কিছু না বলেই পেঠাতে শুরু করল
। রনি কিছু না বুঝার আগেই দেখল রবিনের পিছু
থেকে একটা ছেলে মাথায় আঘাত
করল ! মুহুর্তের মাঝেই তার উপরও আঘাত
করলো । দুজনেই ব্রীজের উপর
লুটিয়ে পরে গেল ।
কিছুক্ষণ পর পরিবারের সকল জানতে পারল রবিন আর রনি মার
খাওয়ার খবর । রিয়াও জানতে পারলো সেটা ।
তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে ছুটে যায়
। রবিনের মা কাঁদতে লাগল পাশে বসে ।
রিয়া চুপিচুপি কাছে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগল । এই অবস্থার জন্য রিয়া নিজেকেই
দায়ী মনে করতে লাগল ! তার জন্যই তো আজ রবিন আর
রনিকে এভাবে মার খেতে হলো । পাঁচদিন পর রবিনকে হাসপাতাল
থেকে বাড়ীতে আনা হল । রিয়া রবিনকে দেখতে গেল, রবিনের
হাসিমাখা মুখটা দেখে রিয়ার মনে একটা প্রশান্তি আসল ।
-কিরে রবিন কি অবস্থা ?
~গুন্ডামী করতেছি ।
-এবার কার জন্য রে ?
~কেন তোর জন্য
কি আরো গুন্ডামী করতে হইব নাকি ?
-তোর মত একটা গুন্ডা থাকলেতো ভালই
হত ।
~কেন আমাকে নিয়োগ দিবিনা ?
-আগামিকাল ১০ আমার অফিসে তোর
ইন্টারভিউ ।
একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল রিয়া ।
রবিন কোন দিন রিয়ার মাঝে তার জন্য
এতটা ভালবাসা আছে বুঝতে পারেনি ।
সেদিন রিয়া বান্ধবী ইতি এসেছিল
রবিনকে দেখতে, তার মাধ্যমেই সমস্ত
খবর জানতে পারল ।
পরের দিন রবিন কলেজে গেল !
একটা গাছের নিচে দাড়িয়ে ছিল
একা !
হঠাত্ পেছন থেকে কে গুন্ডা বলে ডাক
দিল ।
পিছনে ফিরে রিয়াকে দেখতে পেল ।
~তোর ইন্টারভিউ কবে ?
-আমার অফিসে একজনই এপলিক্যন্ট ! তাই
উনাকে আমি নিয়োগ দিলাম ।
একটা লাল গোলাপ
দিয়ে রবিনকে তার চিরদিনের
গুন্ডা হিসেবে নিয়োগ করে নিল
রিয়া । রবিনও সাদরে গ্রহন করলো ।