মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২২৯- অবশেষে নীল

ঘড়ির কাটা বলে দিচ্ছে রাত
এগারটা বাজে।বাইরে প্রচন্ড
বৃষ্টি হচ্ছে। নীল টেবিলে বসে আছে।
পূর্বেই করেরাখা প্ল্যনটা আবার একবার
মনে মনে রিভিউ করে নিল সে।নাহ,আর
দেরি করা যাবে না।সময় হয়ে গেছে। নীল উঠে পরল।সদ্য
কেনা রেইনকোটটা পরে নিল।
হাতে তার নিজের তৈরি বিশেষ
গ্লাভস টা পড়ল।এত রাতে বাসার মেইন গেটে নিশ্চই
তালা দেওয়া হয়ে গেছে।নীল
ছাদে গেল।তারপর নিঃশব্দে পাইপ
বেয়ে নিচে নেমে এল।গন্তব্য
বেশি দূরে নয়,এইত পাশের গলি।
,,,
নীল দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার একপাশে।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে।
সেইসাথে প্রচন্ড বাতাস
বইছে,আকাশে বজ্রপাতও হচ্ছে।এই গলির
রাস্তাটি বেশ অন্ধকার।শুধু অজানা উৎস
থেকে আসা সামান্য
আলো রাস্তাটিকে দৃশ্যমান করার
বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।তবে এই
আলো অন্ধকারকে একটুও দূর
কররে পারছে না, বরং অন্ধকারের
অস্তিত্বকে যেন আরও
ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে।শুধু যখন
বিজলি চমকায় তখন গলির
এইমাথা থেকে ওই মাথা স্পষ্ট
ভাবে দেখা যায়।নীল একটি বৈদ্যুতিক
খুটির সাথে হেলান
দিয়ে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির জন্য
অপেক্ষা করছে। অন্ধকারে কাজ
করতে করতে নীলের
বেশ অভ্যাস হয়ে গেছে,তাই সে গলির
মাথা পর্যন্ত বেশ দেখতে পাচ্ছে।কিন্তু নীল
যদি নড়াচড়া না করে তাহলে সে যার
জন্য অপেক্ষা করছে সে কাছ থেকেও
নীলকে ঠিকমত দেখতে পাবে কিনা সন্দেহ আছে।
এই গলিটা বেশ নোংড়া।নীল যেখানে দাঁড়িয়েছে তার পাশেই
রাস্তার অপজিটে ডাস্টবিন। সেখানে ময়লা উপচিয়ে পড়ে রাস্তার
প্রায় অর্ধেক ব্লক হয়ে আছে। ময়লাগুলো বৃষ্টির পানির
সাথে মিশে বেশ দূরগন্ধ ছড়াচ্ছে।নীল
অবশ্য ইচ্ছে করেই এই ময়লার
পাশে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই ময়লার
কারণেই তার কাঙ্ক্ষিত
ব্যক্তিকে অবশ্যই তার কাছেদিয়েই
যেতে হবে,,,,চাইলেও রাস্তার অপর পাশ
দিয়ে যেতে পারবে না।
,,
এইতো লোকটা গলির মুখদিয়ে প্রবেশ
করল।বেশ
মোটাসোটা ভুঁড়িওয়ালা স্বাস্থবান
লোক।ভালোই হল এত স্বাস্থবান
হওয়ায়,সহজেই কাজ শেষ করা যাবে।
লোকটা নীলের প্রায়
কাছে চলে এসেছে। এমন সময় বজ্রপাত হল এবং সেই
আলোতে লোকটা নীলকে দেখে এক
মুহূর্ত যেন স্থির হয়ে গেল।
সে এখন চাইলেই উল্টা ঘুরে দৌড়
দিতে পারে।তবে সেটা বোধহয় খুব
একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না,নীল খুব
সহজেই তাকে ধরে ফেলতে পারবে।
লোকটিও মনেহয় তা বুঝতে পারল। তাই সে নীলের
দিকে না তাকিয়ে সোজা সামনের
দিকে হাটতে থাকল।নীল স্পষ্ট
দেখতে পাচ্ছে লোকটির
পা কঁাপছে,সে আগাতেই পারছে না।এই
অবস্থায় যে কোন সাধারণ মানুষের
মায়া হবে।কিন্তু এটাই যে নীলএর
পেশা এখানে কম্প্রোমাইজ
করলে চলবে কিভাবে???
লোকটি নীলের একদম
কাছে চলে এসেছে।নীল হাত মুষ্টিবদ্ধ
করল।তারপর হাতের তালুতে গ্লভসে সেট
করা সুইচে হালিকা চাপ দিল।
সাথে সাথে দুইহাতের গ্লাভসের
ওপরের অংশ থেকে দুইটি করে মোট
চারটি পঁাচ ইঞ্চি লম্বা,আত্যন্ত সরু ও
ধারালো ব্লেড বের
হয়ে এল।লোকটি প্রায়
টলতে টলতে নীলকে অতিক্রম করল
এবং প্রায় সাথে সাথেই
বিদ্যুৎগততে চলল নীলের দুই হাত।
মুহূর্তে পায়ের নিচে রাস্তায়
জমে থাকা পানি লাল হয়ে গেল।
ডাস্টবিনের পাশে এতক্ষণ
বসে থাকা কুকুরটি ঘেউ ঘেউ
করতে করতে ভয়ে ময়লার
পেছনে লুকানোর চেষ্টা করল
এবং লোকটির শেষ চিৎকার বজ্রপাতের
শব্দের মাঝে হারিয়ে গেল।কাজ শেষ
করে ওপরের দিকে তাকাল নীল।
দোতলার জানালায়
একটি নারীমূর্তি দঁাড়িয়েআছে।
বজ্রপাতেত আলোয় রাত্রিকে স্পষ্ট
দেখতে পেল সে।রাত্রির মুখে কোন
ঘৃণা বা ভয়ের কোন ছাপ নেই।শুধু বুকের
মাঝে চেপে রাখা কষ্টগুলো যেন
ফুলে ফেঁপে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।।।।
চোখের কোণের অশ্রুই তার
বহিঃপ্রকাশ।।।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ভার্সিটিরর ক্যম্পাসে বটগাছের
নিচে বসে আছে নীল।
রাত্রি পাশে এসে বসল।কাল রাতের
সেই রাত্রি আর এখনের রাত্রির
মধ্যে বিশাল পার্থক্য। এখন সে একদমই
স্বাভাবিক,হাসিখুশি।
হাতের টিফিন
ক্যারিয়ারটা পাশে রেখে বলল,
--আজ আসতে পারব না,তাই
বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে এলাম।
একটু কষ্ট করর গরম করে খেয়ে নিও।।
নীল সকালে হোটেলে খায়,আর দুপুর ও রাতের খাবার
রাত্রি নিজে গিয়ে রান্না করে দিয়ে আসে।
রাত্রির সাথে পরিচয়ের পর গত প্রায়
তিন বছর যাবত
মোটামোটি এই রুটিনই চলছে।।। আজ কেন
রাত্রি আসতে পারবেনা সে জানে।
আজ সন্ধ্যায় রাত্রকে ছেলেপক্ষ
দেখতে আসছে।তাই নীল আর কিছু
জিজ্ঞাস করল না।কারণ জিজ্ঞাস করলে রাত্রি মিথ্যাও
বলতে পারবে না ,শুধু শুধু
অস্বস্তিতে পরবে।নীল চাইলেই এই
ছেলেকে শেষ করে বিয়েটা বন্ধ
করে দিতে পারে।আগের দুইজনকে তাই করেছে
।তবে এই ছেলেটা ভালো,আগের
দুইজনের মত মুখোশধারী শয়তান না।
রাত্রি অবশ্য আগের দুইজনের কথা জানে।
তবে নীল এটাও
জানে যে এভাবে রাত্রিকে সারাজীবন
চিরকুমারী করে রাখলেও রাত্রি কিছু বলবে না।কিন্তু
এবার আর নীল কোন বাঁ্ধা দিবে না।।।
,,,,,,,,,
,,,,,,,
নীল রাত্রিদের বাসায় বসে আছে।বেশ
সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাসাটি।
আর হবে না ই বা কেন???একমাত্র মেয়ের
বিয়ে বলে কথা।গতকাল
রান্না করে দিয়ে আসার সময়
রাত্রি বিয়ের কারড দিয়ে এসেছে।
নীল বসে বসে ভাবছে কাল
থেকে খাওয়া দাওয়ার কি হবে।
বুয়া রাখার তো প্রশ্নই উঠে না।কারণ
বাইরের কাওকে বাসায়
ঢুকতে দেয়া যাবে না। কাল
থেকে হয়তো তিনবেলাই
বাইরে খেতে হবে।। এমন সময় একটি ছোট্ট
মেয়ে নীলের হাতে একটি কাগজ
দিয়ে গেল।নীল খুলল চিঠিটি :
"নীল আমার বাবার সারাজীবনের
জমানো তিন কোটি টাকাই
বাবা আমার একাউন্টে দিয়ে দিছে।
তোমাকে কিচ্ছু করতে হবেনা,যা করার
আমি করব।তুমি শুধু তোমার ওই
কাজটা ছেরে দিবা প্লিজ।প্লিইইইইইজ"
নীল উঠে দাঁড়াল।
পারবেনা সে রাত্রির এই অনুরোধ
রাখতে।বাবা মা মারা যাওয়ার পর
কিভাবে কিভাবে যেন সে এই
রাস্তায় এসে পরেছে।সেজন্যই
তো সে অনাথ হওয়া সত্বেও
পড়ালেখা চালিয় যেতে পেরেছে।
কিন্তু এখন আর ফেরার কোন
রাস্তা নেই,সে চাইলেও আর পারবেনা।
নীলদের ফেরার সব রাস্তা বন্ধ।।।
চিঠিটা বুকপকেটে রেখে নীল
বেরিয়ে এল রাত্রিদের বাসা থেকে।
থাকুক কিছু স্মৃতি বুকপকেটে বন্দি।।।।।।