দুপুরে অফিস থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । মোবাইলের
রিং বাজতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । ওপাশ থেকে অনিকার কন্ঠস্বর ।
তুমি ঠিক পাঁচদিন পর বাড়ি আসবে । কথা শেষ না করেই কল
কেটে দিল অনিকা ।
এপাশ থেকে কল করলাম । রিং বাজছে কিন্তু রিসিভ করছেনা ।
বুঝতে বাকী রইলোনা ষোড়শী বউ আমার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছে ।
কিন্তু পাঁচদিন পরে কেন ? নিশ্চয় বিশেষ কিছু ।
অনিকা আমার জীবনে নতুন । দেড় মাস হল আমার জীবনে তার
আবির্ভাব । এই প্রথম তার আবদার আমার কাছে । যে কোন মূল্যেই
হোক আমাকে তা রক্ষা করতে হবে । সে খুব অভিমানী, আবেগ প্রবন
। যেদিন আমি ওকে রেখে ঢাকায় চলে এলাম, সেদিন
আমাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল
।
আমার বুকে মূখ লুকিয়ে ও কেবলই ক্ষীন স্বরে বলেছিল,
তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবোনা । ওর তপ্ত দীর্ঘশ্বাস
আমার বুকে আছড়ে পড়েছিল । আমিও বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম । নিজের
অজান্তেই দু ফোটা অশ্রু ঝরে পড়েছিল আমার চোখ থেকে ।
ওকে শেষ স্বান্তনা টুকু দিয়েছিলাম এইতো কিছুদিন পর
ওখানে বাসা পেলে তোমাকে নিয়ে যাবো ।
চলে আসার সময় একবার পিছনে ফিরে চেয়েছিলাম ।
অনিকা দাড়িয়ে আছে শ্বেত পাথরের মূর্তির মত । সকালের সূর্যের
আলোয় ওর অশ্রু ভেজা মুখ খানা চিকচিক করতেছে ।
তারপর চলে এলাম ঢাকায় । বিয়ের পর মাত্র পাঁচদিন ওর সঙ্গ
পেয়েছিলাম । চাকরি জীবনের বাধ্য বাধকতায় সবকিছু
ছেড়ে চলে আসতে হল কর্মস্থলে । শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের ফাকে বার
বার মনে অনিকার কথা । কিন্তু কর্তব্যের
ভেড়াজালে বন্দি আমি । বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাইনা ।
শেষে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি । বহু চেষ্টায় কাঠ-খড়
পুড়িয়ে দশ দিনের ছুটি পেলাম ।
এর মধ্যে বাড়ি যাওয়ার দিনটা ঘনিয়ে এল । অনিকার
মোবাইলে দিলাম । রিসিভ করার সাথে সাথে তার
একটি প্রশ্ন, ছুটি হয়েছে ?
আমি উচ্ছসিত । বললাম আজ রাত তিনটা চারটায় তোমায়
জাগাবো । ঠিকঠাক এসো বলে কলটা কেটে দিল ।
রাত সাড়ে দশটার বাস ধরলাম । বাস যেন শামুক
গতিতে এগিয়ে চলছে । আর বাসের আগে ছুটে চলছে আমার মন ।
মহিপাল নেমে যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌছালাম তখন
ঘড়িতে রাত সাড়ে তিনটা । বাড়ির দিকে চোখ পড়তেই
দোতলায় অনিকার ঘরে আলো দেখতে পেলাম । আমি নিশ্চিত ও
এখনো ঘুমায়নি । রিক্সা থেকে নেমে বাসায় উঠতেই
দেখি অনিকা আমার জন্য দাড়িয়ে আছে দরজায় ।
আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিল সে । সত্যি অতুলনীয়
সে হাসি ।
ড্রেস চেন্জ করে হাত মূখ ধুয়ে বেরিয়ে আসতেই আচল পেতে দিল
আমার সামনে । এই প্রথম আমার চোখে চোখে তাকাল ও । মুগ্ধ
হয়ে গেলাম আমি । নির্ঘুম রাত যাপন ওর চঞ্চলা দৃষ্টিতে কোন
ছায়া ফেলতে পারেনি । মায়াভরা নিশ্পাপ মূখচ্ছবিতে তারুন্য
আর যৌবনের প্রাচুর্য ছড়াচ্ছে । দুজনের মূখে কোন কথা নেই । শুধু
চেয়ে আছি একজন আরেক জনের দিকে । একসময়
নীরবতা কাটিয়ে অনিকা বলল রাত জেগে এসেছ, তুমি ক্লান্ত ।
এখন বিশ্রাম নাও ।
-আমি ক্লান্ত নই অনিকা । আমি সতেজ, আমি উদ্দিপ্ত ।
আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে বলে উঠল অনিকা । কিছুক্ষন প র দেখি ও
সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে । ওর সাথে আমিও কখন
যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না ।
ঘুম ভাঙলো সকাল দশটায় । অনিকাকে হাতড়িয়ে খুজে পেলাম
না । তাই চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে আছি । হ্ঠাৎ নরম স্পর্শ পেলাম
আমার শরীরে ।
চেয়ে দেখি অনিকা আলতো করে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু
খাচ্ছে । ওর শরীরের পরিচিত মিষ্টি গন্ধটা আমাকে আবেশিত
করে ফেলেছে ঐ মুহুর্তে । ওর স্পর্শ পেয়ে আমি আবার চোখ বন্ধ
করে ফেললাম । সে এবার আমার বন্ধ চোখের
দুষ্টুমি বুঝতে পেরে আঙ্গুল দিয়ে চোখ মেলে ধরলো । দেখি দুষ্টু
মেয়েটা এবার মিষ্টি মিষ্টি হাসছে । চট করে ওর হাত
ধরে বুকে টেনে নিলাম ।
এ সময় ও লজ্জা পেয়ে গেল । বলল উঠ, চা-নাস্তা রেডি ।
তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও ।
অনেক দিন পর মা, ছোট বোন, অনিকাকে নিয়ে নাস্তা করলাম ।
নাস্তা সেরে রুমে গিয়ে শার্ট গায়ে দিচ্ছি এমন সময়
অনিকা একটু চমকে গিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছ ? আজ তুমি এক মুহুর্তের
জন্যও কোথাও যেতে পারবেনা । আজকের দিনটা শুধু আমার । আজ ১৪
ফেব্রুয়ারি । বিস্মিত হলাম আমি । এমন দিনটির কেন আমার একবার
ও মনে হলোনা ।
এতক্ষনে আমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল । ঠিক ঠিক পাঁচ
দিনের পরের দিনটিই ১৪ ফেব্রুয়ারি । আর এই বিশেষ দিনটির জ
ন্য অনিকার এত্তসব আয়োজন । আমি তখন ভাবছি এমন
দিনে তাকে কি উপহার দিবো । ব্যাগ থেকে নীল
শাড়িটা বের করে বললাম, আজকের দিনে তোমার জন্য আমার
ছোট্ট উপহার ।
অনিকা তখন দারুন উচ্ছাসে তা লুপে নিয়ে বলল, তুমি বের হও ।
আমি এখনই এটা পরে আসছি ।
আমার মনে তখন কিশোর সুলভ চপলতা । পতির সামনে নীল
ভূষনা হতে লজ্জা কিসের বলে ওর চোখের দিক তাকালাম ।
অনিকা তখন আমার দিকে চেয়ে একটা লাজুক হাসি দিল । তার
সেই হৃদয় নিংডানো ভূবন
ভোলানো হাসিটা আমাকে সম্মোহিত করে দিল ।
একটু ইতস্তত করে ও ছেড়ে দিল সকালের শাড়িটা ।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম আমি তার কাছে । জড়িয়ে ধরলাম
পেছন থেকে । অজানা এক সুখানুভুতি যেন আবিষ্ট করে ফেলল
আমাকে । সুখের অতল
গভীরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ওকে নিয়ে । ওর শরীরের
কোমল স্পর্শ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে বারবার ।
এমন ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসুক সবার জীবনে । সবার দাম্পত্য জীবন
হোক সুন্দর ও মধুময় ।
লিখা :- ব্রেকলেস মাইন্ড