মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৪৬-অশ্রু

লিখা: বিস্কুট পাগলা (ধূসর কাব্য)

-কিরে বাবা কেমন আছিসরে তুই?
- আমিতো ভালো আছি মা৷তোমরা কেমন
আছ সবাই?বাবা আর ছুটকীর খবর কি? ওরা কেমন আছে মা?
-আমার সবাই ভালো আছিরে৷তোর
বাবা আর ছুটকীও ভালো আছে৷
-জানো মা,তোমাদের সকলের কথা খুব
মনে পড়ে৷ভাবছি আসবো কয়েকদিনের মাঝেই৷
-আয়রে বাবা৷এসে দুটোটিন
থেকে যা৷তোর বাবা রোজ বলছেন
তোকে আসতে৷আর ছুটকীতো পাগল হ তুই
আসবি ভেবে৷এই নে ছুটকীর সাথে কথা বল৷
-দাদা?কিরে কবে আস তুই?
-আসবোরে জলদিই আসবো!কেমন আছিস
তুই?
-বলবো না৷এসে দেখে যা!
-তোর জন্য কি আনবো বল!
-আনবি সত্যিই?
-আরে হ্যাঁ রে পাগলী!
-শোন্ শোন্ একটা পুতুল,চুলের ফিতা আর লিপস্টিক আনিস!
-আচ্ছা আনবোরে!মা কে দে!
-হ্যাঁ বল বাবা!
-তোমার জন্য সারি কিনেছি মা আর
বাবার জন্য সাদা শার্ট আর
লুঙ্গি৷ছুটকীরগুলো কিনেই চলে আসবো মা৷
-কবে আসবি জানিয়ে দিস বাবা!
-আচ্ছা মা!রাখি তবে!বিল উটছে যে!
-রাখ বাবা!নিজের খেয়াল রাখিস আর ভালো থাকিসরে৷
-তোমরাও
ভালো থেকো মা৷খোদা হাফেজ!
এটিই ছিলো শাওনের তার মায়ের সাথে শেষ কথা।শাওন তার
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।তার একটি বোন আছে নাম শৈলি।
শৈলিকে শাওন ছুটকি বলে ডাকে। শাওনের
বাবা সরকারী চাকুরী করতেন।
তিনি গত দু বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় প্যারালাইজড্ হয়ে যান!
এরপর থেকে শাওনের কাধেই এসে পড়ে তার পুরো পরিবারের
দায়িত্ত্ব।শাওন তার পরিবারের প্রতি নিজের দায়িত্ত্ব অত্যন্ত
নিষ্ঠার সংগে পালন করছে।তার
জীবন্টা কিছুটা কঠিন কিন্তু খুব সুন্দর। ছাত্র হিসেবে ভাল সে।গ্রামের
ছোট্ট একটি স্কুল থেকে মেট্রিক পাস
করার পর কলেজ পার করে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়
সে।নিজের খরচ সে নিজেই যোগায়। বাবা প্রতি মাসে পেনশন পান আর
শাওন টিউশান পরিয়ে কিছু টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ যোগায়।
ভালোই যাচ্ছে তার জীবন।অনেক স্বপ্ন তার চোখে! অনেক বড় মানুষ হবার স্বপ্ন।
*****
-কিরে তামিম কথায় যাচ্ছিস?
-মিটাং করতে।তুই কি যাবি ভাই?
-কিসের মিটিং?
-তুই জানিসনা? সরকার কি ঘোষনা দিয়েছে দেখিসনি?
-কই নাতো!একটু খুলে বলবি কি হয়েছে?
-দেখ ভাই এখন বলা সময় নেই!
-তামিম একবা.....
-নারে ভাই।তুই রুম্ যা।গিয়ে আবির
ভাই কে পাঠিয়ে দিস। আমি পরে এসে সব বলবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
শাওন কিছু বুঝতে পারছেনা। কি বলে গেলো এগুলো তামিম।রাগ
হচ্ছে তার তামিমের উপর। এতো করে জানতে চাইলো কিন্তু
বেটা কিছুতেই বললো না।আবির ভাই কে জিজ্ঞাসা করবে ভাবল সে।আবির
ভাই এই ভার্সিটির ছোটখাটো একজন নেতা বললেই চলে।উনি জানবেন
হয়তো বেপারটা।উনিই পারবেন বলতে...
শাওন চলে যায় রুমে।
গিয়ে দেখে আবির ভাই নেই। মিটিং করতে চলে গেছেন
উনি কিছুক্ষন আগেই।রুম মেট হাসিবকে বসে থাকতে দেখলো শাওন।
কিছু বুঝে উঠতেই পারছেনা শাওন। অবশেষে হাসিবের কাছে জানতে চাইল সব।
-কি হয়েছেরে হাসিব?
-আমিওতো বুঝলামনা কিছুই।আবির ভাই হঠাত করে বললেন মিটিং আছে আর
তার সংগে যেতে।আমি ঘুমোচ্ছিলাম তাই যাইনি।জানতে চাইলাম যখন তখন
উনি বললেন না কিছুই।বললেন এসে সব জানাবেন।
-আমার তামিমের সংগে দেখা হয়েছিলো একটু আগে।
তার কাছ থেকে কতো করে জানতে চাইলাম কি হয়েছে কিন্তু কিছুই বললোনা সেও।
-আচ্ছা উনারা আসুক।এসে বলবেন বলেছেন যেহেতু তবে এলেই জানতে চাইব সব।
-হুম এটাই ভাল হবে। হাসিবের সংগে কথা বলে শাওন
গোসল করতে চলে গেলো।এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে তামিম আর আবির
ভাইয়ের জনয অনেকটা সময় বসে রইল। কিন্তু তারা এলোইনা।
পরে মনে পড়ে গেল তার ছোট বোনটার কথা।তার জন্যেতো বেশকিছু
জিনিস কিনতে হবে। এগুলি কিনে আনতে আনতে তামিম আর
আবির ভাই হয়তো এসেই যাবেন।এই কথা ভেবে সে চলে যায়
বাইরে বোনের জন্যে কিছু কিনতে। বাইরে গিয়ে সে বোনের জন্য
দুটো পুতুল,একটি সুন্দর লাল জামা,লিপস্টিক কিনলো, চুলের জন্য
ক্লিপ আর ফিতা কিনে নিয়ে গেল। আসার পথে দোকান
থেকে মাকে ফোন করলো!
-মা কেমন আছ?
-ভালো আছিরে।বাবা দেশের
অবস্থা খুব বেশি ভালোনারে।তুই যতো দ্রুত পারিস চলে আয়রে বাবা দয়া করে।
-কি হয়েছে মা?
-তুই জানিস না নাকি?
-না মা জানিনাতো।বলত
মা কি হয়েছে আসলে...
-আজ সরকার ঘোষনা দিয়েছে ঊর্দুই
হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। এর জন্যেই দেশে তুমুল বিক্ষোবের
শূচনা হয়েছে।বাবা তুই চলে আয় জলদি। আমার যে খুব ভয় করছে।
-আচ্ছা মা তুমি এত ভেবোনা।ছুটকীর
জিনিসগুলো কিনলাম। আমি আগামিকাল চলে আসবো মা।
তুমি একদম ভয় পেয়োনা।
- আচ্ছা বাবা তাড়াতাড়ি চলে আসিসরে।
-আচ্ছা ঠিকাছে মা রাখছি আমি।
ভালো থেকো আর সবার খেয়াল রেখো।খোদা হাফেজ মা।
-আচ্ছা বাবা টা টা।
শাওন রুমে চলে আসে। এসে দেখে আবির ভাই এসে গেছেন।
তামিম আসেনি।ব্যানার বানাতে গেছে৷আবির ভাইয়ের
কাছে সব জানতে চায় শাওন।আবির ভাই সব খুলে বলে।
-হয়েছে কি আবির ভাই?
-ওই কুকুরের জাত আমাদের
ভাষা কেড়ে নিতে চায়।আমাদের প্রাণ থাকতে তা হতে দিবোনা।
সরকার এই ঘোষনা দিয়েছেতো!এবার দেখবে আমরা কি করি।
-আপনারা যাই করেন
আমাকে সাথে নিয়েন ভাই।
-তুই যাবি?
-যাবো।এই ভাষা তোমার একার নয় যে।এ যে আমার আপন মায়ের মুখের
ভাষা।প্রান দিয়ে দেব তবু ভাষা দেবনা।আমাদের
মাতৃভাষা কেবলই বাংলা।
*****
আজ ২১শে ফেব্রুতারি ১৯৫৭।
দেয়ালে একটি ছবি বাধানো। ছবিটির মধ্যে ফুলের মালা দেয়া আছে।ছবিটির
ছেলেটি আজো হাসছে।
-শৈলি?
-কি মা?
-এই নে এই লাল জামাটা পরে নে মা।
-প্রতি বছর
২১শে ফেব্রুয়ারিতে এটাইতো পরি মা। দাদার স্মৃতি যে এটা।
-তোর দাদা বীর শহীদ।ওই দেখ তার
ছবি।আজও তার মুখে বিজয়ের হাসি...
*****
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মিছিলে যায়
শাওন।বাড়ি ফিরে আসার পথে সে রাস্তায় ভাষার জন্য নিজের
প্রাণ য্ন হাতের মধ্যে এনে দেশের পায়ে অর্পণ করে দিতে প্রস্তুত হলো।
মিছিলে যাচ্ছে সে।হঠাত গুলি এসে লাগে তার বুকের বাম
দিকে।হাসি মুখেই ঝরে পরে শাওন। হাসিব বেঁচে ছিল সেদিন।
হসপিটালে হাসিবকেই সব কিছু দিয়ে যায় শাওন না ফেরার
দেশে আর ওগুলো তার পরিবারের কাছে পৌছে দিতে বলে।
*****
আজ আবার শাওনের মায়ের চোখে পানি।
তা দেখে শৈলি বলছে "মা দাদা মরেনি। দেশের মাটিতে,ভাইয়ের
মনে,বোনের মায়ায়,বাবার দোয়ায়,মায়ের ভাষায়,দেশের নামের
মধ্যে দাদা বেঁচ আছে।চিরকাল থাকবে।
প্রভাতফেরীতে যায় শৈলি আর সবার
সংগে গায় "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি"
তার চোখও আজ ভেজা। দেশে মাটিতে ভাইয়র জন্য
ঝড়ে পড়ছে ফোটা ফোটা অশ্রু……